ঢাকা ১১:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

১১০২ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির আসামি এস আলমসহ ৬৮

  • আপডেট সময় : ০৯:১৬:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
  • ১১ বার পড়া হয়েছে

মোহাম্মদ সাইফুল আলম -ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: নামসর্বস্ব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ১১০২ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ৬৮ জনকে আসামি করে পৃথক দুই মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার (১৯ মে) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছে বলে সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. তানজির হোসেন ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। আসামি ৬৮ জনের মধ্যে সাইফুল আলমসহ একাধিক ব্যক্তি আছেন, যারা দুটি মামলার আসামি।

নামসর্বস্ব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ৫৫৩ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয়েছে। এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান মেসার্স হুদা এন্টারপ্রাইজের নামে ভুয়া বিনিয়োগ প্রস্তাব তৈরি করে, জাল কাগজপত্র উপস্থাপন করে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রাথমিকভাবে ১০৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করেন। পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সীমাতিরিক্ত ঋণ মঞ্জুর করে ৫৫৩ দশমিক ২১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।

ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে কোনো বৈধ সিআইবি রিপোর্ট, ট্রেড লাইসেন্স, বীমা নথি, আইনজীবীর সার্টিফিকেট কিংবা সম্পদের প্রকৃত মূল্যায়ন ছাড়াই ঋণ প্রদান করা হয়। আর ঋণ বিতরণের পর এই অর্থ ভেনাস ট্রেডিংস, রিজেনেবল ট্রেডার্স, আব্দুল আওয়াল অ্যান্ড সন্সসহ আরো কয়েকটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্থানান্তর করে শেষ পর্যন্ত এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠানে ১৩০ কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়। এতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে দুদকের অভিযোগ।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মোহাম্মদ সাইফুল আলমকে, যিনি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান। এছাড়া ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শাখা ব্যবস্থাপকসহ মোট ৩১ জন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।

অন্যদিকে দ্বিতীয় মামলায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে ৫৪৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ মোট ৩৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে বাস্তবে অস্তিত্বহীন সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে ১৫২ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা অনুমোদন করা হয়। পরে পরবর্তী বছরগুলোতে কোনো টাকা পরিশোধ না করেও কাগজে-কলমে তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ সীমা বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০২৩ সালে ৪৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত উত্তোলন করা হয়। মোট ৫৪৮ দশমিক ৮০ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে তা বিভিন্ন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের পর এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এতে মানি লন্ডারিংয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিনিয়োগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে সিআইবি রিপোর্ট, ব্যবসা ও ঠিকানা যাচাই, বীমা পলিসি, ট্রেড লাইসেন্স ও আইনগত ছাড়পত্র ছাড়াই ঋণ অনুমোদন দেন। এতে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিশ্বাসভঙ্গের গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে দুদক জানায়। প্রধান আসামি মোহাম্মদ সাইফুল আলম, মাহফুজুল ইসলাম, সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী। এ ছাড়া ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিএমডি, এএমডি, ইভিপি পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ৩৭ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

১১০২ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির আসামি এস আলমসহ ৬৮

আপডেট সময় : ০৯:১৬:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: নামসর্বস্ব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ১১০২ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ৬৮ জনকে আসামি করে পৃথক দুই মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার (১৯ মে) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছে বলে সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. তানজির হোসেন ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। আসামি ৬৮ জনের মধ্যে সাইফুল আলমসহ একাধিক ব্যক্তি আছেন, যারা দুটি মামলার আসামি।

নামসর্বস্ব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ৫৫৩ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয়েছে। এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান মেসার্স হুদা এন্টারপ্রাইজের নামে ভুয়া বিনিয়োগ প্রস্তাব তৈরি করে, জাল কাগজপত্র উপস্থাপন করে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রাথমিকভাবে ১০৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করেন। পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সীমাতিরিক্ত ঋণ মঞ্জুর করে ৫৫৩ দশমিক ২১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।

ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে কোনো বৈধ সিআইবি রিপোর্ট, ট্রেড লাইসেন্স, বীমা নথি, আইনজীবীর সার্টিফিকেট কিংবা সম্পদের প্রকৃত মূল্যায়ন ছাড়াই ঋণ প্রদান করা হয়। আর ঋণ বিতরণের পর এই অর্থ ভেনাস ট্রেডিংস, রিজেনেবল ট্রেডার্স, আব্দুল আওয়াল অ্যান্ড সন্সসহ আরো কয়েকটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্থানান্তর করে শেষ পর্যন্ত এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠানে ১৩০ কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়। এতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে দুদকের অভিযোগ।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মোহাম্মদ সাইফুল আলমকে, যিনি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান। এছাড়া ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শাখা ব্যবস্থাপকসহ মোট ৩১ জন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।

অন্যদিকে দ্বিতীয় মামলায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে ৫৪৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ মোট ৩৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে বাস্তবে অস্তিত্বহীন সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে ১৫২ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা অনুমোদন করা হয়। পরে পরবর্তী বছরগুলোতে কোনো টাকা পরিশোধ না করেও কাগজে-কলমে তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ সীমা বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০২৩ সালে ৪৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত উত্তোলন করা হয়। মোট ৫৪৮ দশমিক ৮০ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে তা বিভিন্ন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের পর এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এতে মানি লন্ডারিংয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিনিয়োগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে সিআইবি রিপোর্ট, ব্যবসা ও ঠিকানা যাচাই, বীমা পলিসি, ট্রেড লাইসেন্স ও আইনগত ছাড়পত্র ছাড়াই ঋণ অনুমোদন দেন। এতে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিশ্বাসভঙ্গের গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে দুদক জানায়। প্রধান আসামি মোহাম্মদ সাইফুল আলম, মাহফুজুল ইসলাম, সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী। এ ছাড়া ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিএমডি, এএমডি, ইভিপি পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ৩৭ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।