ঢাকা ০৪:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫

১০ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৮০ হাজার কোটি টাকা

  • আপডেট সময় : ০২:৪১:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ অগাস্ট ২০২২
  • ৯৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। করোনাকালীন এবং করোনা পরবর্তী আড়াই বছর ধরে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরেও ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধ করছেন না। এতে করে দেশে রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছরের ৩০ জুন শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৯ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ দশমিক ৫৯ শতাংশই ১০ ব্যাংকের। বাকি ৩৬ শতাংশ রয়েছে ৫১টি ব্যাংকের। এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রহিতাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের পরিবর্তে ঋণ যাতে দিতে না হয় সেজন্য একের পর এক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সুদ কমিয়ে পরিশোধেরে মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রকৃত ঋণ পরিশোধকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। আর যারা ঋণ পরিশোধ করেনি তারা লাভবান হয়েছেন। এসব কারণে অনেক ব্যবসায়ী আগে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করলেও পরে করেননি। ফলে তারাও খেলাপি হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছর ঋণ গ্রহিতারা ঋণ পরিশোধ করেননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কিছু বলেনি। ক্ষেত্রবিশেষে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। পরিণামে যা হওয়ার তাই হয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তবে সঠিক হিসাব করলে দেশের খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে খেলাপি ঋণের শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকায় প্রথম তিনটিসহ পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক। বাকি পাঁচটি হলো বেসরকারি ব্যাংক। দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি রাষ্ট্রায়ত্ব জনতা ব্যাংকে। ব্যাংকটিতে চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক। এই ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ হাজার ৫৫৮ টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে এবং সম্মিলিতভাবে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকটির খেলাপির পরিমাণ ৯ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ব বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ২৪৯, রুপালী ব্যাংকের ৬ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানে ধারাবাহিকভাবে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৫১১ কোটি টাকা, এবি ব্যাংকের ৪ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা, পদ্মা ব্যাংকের ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা এবং ওয়ান ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, এক হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে এমন ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক; ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। ইউসিবিএল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংকের এক হাজার ৫৭২ কোটি টাকা, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের এক হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা, উত্তরা ব্যাংকের ১ হাজার ৩২২ কোটি টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংকের এক হাজার ১৮২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

১০ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৮০ হাজার কোটি টাকা

আপডেট সময় : ০২:৪১:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ অগাস্ট ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। করোনাকালীন এবং করোনা পরবর্তী আড়াই বছর ধরে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরেও ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধ করছেন না। এতে করে দেশে রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছরের ৩০ জুন শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৯ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ দশমিক ৫৯ শতাংশই ১০ ব্যাংকের। বাকি ৩৬ শতাংশ রয়েছে ৫১টি ব্যাংকের। এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রহিতাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের পরিবর্তে ঋণ যাতে দিতে না হয় সেজন্য একের পর এক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সুদ কমিয়ে পরিশোধেরে মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রকৃত ঋণ পরিশোধকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। আর যারা ঋণ পরিশোধ করেনি তারা লাভবান হয়েছেন। এসব কারণে অনেক ব্যবসায়ী আগে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করলেও পরে করেননি। ফলে তারাও খেলাপি হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছর ঋণ গ্রহিতারা ঋণ পরিশোধ করেননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কিছু বলেনি। ক্ষেত্রবিশেষে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। পরিণামে যা হওয়ার তাই হয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তবে সঠিক হিসাব করলে দেশের খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে খেলাপি ঋণের শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকায় প্রথম তিনটিসহ পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক। বাকি পাঁচটি হলো বেসরকারি ব্যাংক। দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি রাষ্ট্রায়ত্ব জনতা ব্যাংকে। ব্যাংকটিতে চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক। এই ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ হাজার ৫৫৮ টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে এবং সম্মিলিতভাবে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকটির খেলাপির পরিমাণ ৯ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ব বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ২৪৯, রুপালী ব্যাংকের ৬ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানে ধারাবাহিকভাবে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৫১১ কোটি টাকা, এবি ব্যাংকের ৪ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা, পদ্মা ব্যাংকের ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা এবং ওয়ান ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, এক হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে এমন ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক; ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। ইউসিবিএল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংকের এক হাজার ৫৭২ কোটি টাকা, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের এক হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা, উত্তরা ব্যাংকের ১ হাজার ৩২২ কোটি টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংকের এক হাজার ১৮২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।