নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকবেশে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন চক্রের সদস্যরা। এরপর টার্গেট করা বাড়ির গ্যারেজের তালা ভেঙে মোটরসাইকেল চুরি করতেন তারা। এভাবে চক্রটি গত ১০ বছরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত পাঁচশ দামি মোটরসাইকেল চুরি করেছে। চক্রটির নেতৃত্ব দিতেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বেলদারহাট গ্রামের মো. সুবহান ব্যাপারীর ছেলে জসিম ওরফে সোহাগ (৩৫)।
সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়া বটতলা এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা তদন্তে এই চোর চক্রের সন্ধান পায় পুলিশ।
গত শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার মহজনপুর এলাকা থেকে চোর চক্রের মূলহোতা জসিম ওরফে সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আদালতের মাধ্যমে তাকে তিনদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবারও অভিযান চালানো হয়। অভিযানে জসিমের চার সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন জসিমের অন্যতম সহযোগী মো. হারুন (২৮), আশিক বিশ্বাস (১৯), মো. রাজীব (২০) ও মো. মহসীন (২০)। তাদের সবার বাড়ি আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। এসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে নিজ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, মোটরসাইকেল চোর চক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্প্রতি দুটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা তদন্তে নেমে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দুর্র্ধষ এই চোর চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতা জসিমকে গ্রেফতার করা হয়। মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, জসিম ঢাকার শীর্ষ মোটরসাইকেল চোর। গত ১০ বছরে জসিম ও তার চক্রের সদস্যরা পাঁচশ মোটরসাইকেল চুরি করেছেন। তার বিরুদ্ধে ডিএমপিসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ১২টি মামলা রয়েছে। তিনদিনের রিমান্ডে জসিমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার (১৬ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের রাধানগর বাজারের হারুনের গ্যারেজ থেকে চোরাই তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
১০ বছরে পাঁচশ মোটরসাইকেল চুরি: জসিম উদ্দিন বলেন, গ্রেফতার জসিম মোটরসাইকেল চুরি শুরু করেন ২০১৩ সালে। তার ভায়রাভাই শাহ আলমের হাত ধরে মোটরসাইকেল চুরিতে হাত পাকায় জসিম। পরে তিনি নিজেই গ্রুপ তৈরি করেন। বর্তমানে সাতজন থাকলেও তার গ্রুপে মোট ২০ জন কাজ করেন। ঢাকা শহরেই তারা চুরি করেন। গত ১০ বছরে ঢাকা শহরে তার গ্রুপ পাঁচশ মোটরসাইকেল চুরি করেছে।
ঢাকার বিভিন্ন থানায় ডজন মামলা: তিনি আরও বলেন, জসিমের বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় ১২টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার হয়ে তিনি ১০ বারের বেশি কারাগারে গেছেন। সর্বশেষ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কারাগার থেকে ছাড়া পান জসিম। জেল থেকে বের হয়ে আবারও মোটরসাইকেল চুরি করতে গিয়ে গ্রেফতার হন।
চার ভাই অপরাধ জগতে: জসিমের বাবা সুবহান ব্যাপারী পেশায় কৃষক। মাদারীপুরের বেলদারহাট গ্রামের বাড়িতে কৃষিকাজ করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু তার চার ছেলে সবাই অপরাধ জগতে বেপরোয়া। জসিমের বড় ভাই ডাকাত হানিফ ২০১৮ সালে ও তার ছোট ভাই ডাকাত ইয়াসিন ২০১৪ সালে ক্রসফায়ারে নিহত হন। জীবিত দুই ভাই দুর্র্ধষ অপরাধী হিসেবে পরিচিত। এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি জসিম উদ্দিন বলেন, চক্রের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করতেন। যেসব এলাকায় মোটরসাইকেল চালাতে কাগজ লাগে না ওইসব এলাকায় বিক্রি করায় তারা ধরা পড়তেন না। অনেক সময় চক্রের সদস্যরা মোটরসাইকেলের যন্ত্রপাতি খুলেও বিক্রি করতেন।
১০ বছরে পাঁচশ মোটরসাইকেল চুরি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ