প্রযুক্তি ডেস্ক : নিজেদের কোয়ান্টাম সুপারকম্পিউটার গবেষণার রোডম্যাপ প্রকাশ করল মাইক্রোসফট। এতে মূল উপাদান হিসাবে থাকবে টপোলজিক্যাল কিউবিট নামের নতুন প্রযুক্তি যা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে গবেষণা করে যাচ্ছেন কোম্পানিটির গবেষকেরা। এর আগে মধ্যবর্তী অনেকগুলো ধাপ পার হতে হবে। কিন্তু মাইক্রোসফট বলছে, ১০ বছরেরও কম সময়ে তারা এই কিউবিট ব্যবহার করে একটি কোয়ান্টাম সুপারকম্পিউটার বানাতে পারবেন যা প্রতি সেকেন্ডে ১০ লাখ কোয়ান্টাম অপারেশন সম্পন্ন করতে পারবে। বর্তমানে এলামেলোভাবে এগিয়ে চলা মাঝারি সক্ষমতার কোয়ান্টাম কম্পিউটিংকে পরের ধাপে নিতে যখন গোটা ইন্ডাস্ট্রি গলদঘর্ম, তখনই এই নতুন ঘোষণা দিল মাইক্রোসফট।
আমরা মনে করছি, এই রোডম্যাপটি কয়েক দশকের পরিবর্তে কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের কোয়ান্টাম সুপারকম্পিউটারের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবে”- প্রযুক্তি সাইট টেকক্রাঞ্চকে বলেছেন কোম্পানিটির অ্যাডভান্সড কোয়ান্টাম ডেভেলপমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিসটা স্ভোরে। গত বছর গবেষকদলটি প্রথমবারের মতো ‘মেজরনাভিত্তিক’ কিউবিট তৈরি করতে সক্ষম হলে কোম্পানিটি একে বড় ধরনের সাফল্য হিসাবে প্রচার করেছিল। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এই কিউবিটগুলো অনেক বেশি ‘স্টেবল’ তবে এগুলোকে তৈরি করা বেশ জটিল।
এই প্রযুক্তির ওপর শুরুতেই বাজি ধরেছে মাইক্রোসফট। সেই ঘোষণার এক বছর পর গবেষক দলটি একটি পিয়ার রিভিউ করা গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির ‘ফিজিক্যাল রিভিউ বি’ সাময়িকীতে। সেটিকে কোয়ান্টাম সুপার কম্পিউটারের পথে প্রথম সোপান বলেছে প্রতিবেদনটি। এই পর্যায়ে মাইক্রোসফট আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি ডেটা এবং অধিক ডিভাইসের ফলাফল ব্যবহার করেছে।
“আজকে আমরা এই মৌলিক সক্ষমতার পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি।”-সেভারে বলেন। “তবে, বিজ্ঞান ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহারিক প্রয়োগের জন্য এগুলো এখনও সুবিধাজনক ও নির্ভরযোগ্য নয়। ইন্ডাস্ট্রির ব্যবহার উপযোগী সক্ষমতায় পৌঁছানো হচ্ছে এর পরের ধাপ। আমাদের শুধু ভৌত কিউবিটগুলো অপারেট করতে পারলেই হবে না, সেগুলোকে ভুল সংশোধনে সক্ষম কোডে ফেলতে হবে যেন সেগুলোকে লজিক্যাল কিউবিট এককে ব্যবহার করা যায়।”
স্ভোরে বলেন কোনো কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে সে পর্যায়ে নিতে হলে সেটিকে প্রতি সেকেন্ডে দশ লাখ কোয়ান্টাম অপারেশন করতে সক্ষম হতে হবে এবং ভুলের হার হবে প্রতি এক লক্ষ কোটিতে একবারের কম। এখন পরবর্তী ধাপ হচ্ছে হার্ডওয়্যার সুরক্ষিত কিউবিট সৃষ্টি করা এবং স্ভোরে বলেছেন দলটি তা তৈরিতে বেশ অগ্রগতি দেখিয়েছে। কিউবিটগুলো বেশ ছোট, দৈর্ঘ্যে ১০ মাইক্রনের চেয়েও কম এবং এক কিউবিট অপারেশনে সময় লাগবে এক মাইক্রো সেকেন্ডের চেয়েও কম। তারপর দলটি কিউবিটগুলোকে ‘এনট্যাঙ্গল’ করার চেষ্টা করবে ব্রাইডিং নামে এক পদ্ধতিতে যা নিয়ে একুশ শতকের শুরু থেকেই নানা জল্পনা কল্পনা চলছে-আর এর বেশিরভাগই তাত্ত্বিক আলাপ।
এর পরের ধাপে তৈরি করতে হবে ক্ষুদ্রাকায় মাল্টিকিউবিট সিস্টেম সেখান থেকে পরের ধাপ পূর্ণ কোয়ান্টাম সিস্টেম – এটি একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প, সন্দেহ নেই। এখন দেখার বিষয় মাইক্রোসফটকে সেটি অর্জন করতে কতোটা পথ পাড়ি দিতে হয়। দলটি কিভাবে সেই যাত্রা সম্পন্ন করবে তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে – লিখেছে টেকক্রাঞ্চ। আইবিএমসহ অনেকেই একই ধরনের ফলাফল অর্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছে।