নিজস্ব প্রতিবেদক : এক দশক ধরে দেশে প্রতি বছরই বাড়ছে বাইসাইকেলের চাহিদা। আমদানিনির্ভর এ খাতটিতে বেড়েছে উৎপাদন। স্থানীয় বাজারে দেশের মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ উৎপাদন করছে দেশীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। যার অন্যতম হচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ আরএফএল। হবিগঞ্জে আছে প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিমুখী একটি কারখানা। সেখানে উৎপাদিত বাইসাইকেল রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের ১০ দেশে। আগামী পাঁচ বছরে দেশের ৮০ শতাংশ জোগান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাড়াতে চায় আরএফএল-এর বাইসাইকেল ব্র্যান্ড ‘দুরন্ত’।
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত কারখানায় কাজ করেন কয়েক হাজার শ্রমিক। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে দেশে বাইসাইকেলের আনুমানিক চাহিদা বছরে ২০ লাখ পিস। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে দেশের চাহিদার ৮ লাখ পিস বাইসাইকেল জোগান দেয় আরএফএল-এর দুরন্ত বাইসাইকেল। দেশে প্রায় ১৮শ কোটি টাকার এই বাজারে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৭-৮ শতাংশ। করোনায় স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও যানজটে নিরাপদ যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার বাড়ায় চাহিদা বেড়েছে আগের তুলনায় ২৫ শতাংশ।
বাংলাদেশে বেশি বাইসাইকেল উৎপাদন করে আরএফএল ও মেঘনা গ্রুপ। ২০১৪ সালে ‘দুরন্ত’ নামে বাইসাইকেল বাজারজাত শুরু করে আরএফএল। খুব অল্প সময়ে দেশের বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় বাইসাইকেল ব্র্যান্ড ‘দুরন্ত’। বর্তমানে ট্রাই, কিডস, জুনিয়র, অ্যাডাল্ট, এমটিবি, লেডিস, ট্র্যাডিশনাল ও ই-বাইক ক্যাটাগরিতে নানা ধরনের সাইকেল রয়েছে। সাধারণ দুরন্ত বাইসাইকেলের দাম ৮ থেকে ২০ হাজার টাকা হলেও ই-বাইসাইকেলের দাম ৩০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, আরএফএল-এর বাইসাইকেল উৎপাদন ও বিপণনে বর্তমানে আড়াই হাজারের বেশি জনবল কর্মরত। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি রয়েছেন নারী শ্রমিকও। কারখানাটিতে কাজ করা নারী শ্রমিক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ৯ বছর ধরে কাজ করি, যা বেতন পাই পরিবার নিয়ে ভালোই চলতে পারি। দুরন্ত বাইসাইকেলের প্রধান অপারেটিং অফিসার মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কারখানাগুলোতে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই এলাকায় কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে অনেক নারী-পুরুষ কাজ পেয়েছেন। গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব কিছুটা হলেও ঘুচেছে।’ তিনি বলেন, ‘কারখানাটি পরিবেশবান্ধব। আন্তর্জাতিক মানদ- মেনে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা দেশীয় সাইকেলের বাজারের ৮০ শতাংশ জোগান দিতে চাই। বর্তমানে হবিগঞ্জের এই কারখানাটিতে বছরে আট লাখ ও রংপুরের গঙ্গাচড়ার কারখানায় তিন লাখ সাইকেল উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।’
২০১৫ সালে আরএফএল বাইসাইকেলের রপ্তানি শুরু হয়। রপ্তানি শুরুর দুই বছর পরই জাতীয় রপ্তানি ট্রফি অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮৩ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক কোটি ২০ লাখ ডলার ও ২০২০-২১ অর্থবছরে এক কোটি ৮৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে আরএফএল। রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় পরপর দুবার (২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছর) পেয়েছে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি। বর্তমানে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও বেলজিয়ামসহ ১০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইংল্যান্ডের আরগোস, স্পোর্টসডিরেক্ট, টয়রাস্ ও ট্যানডেম, জার্মানির স্কুল এবং ডেনমার্কের এশিয়ান নরডিকের মতো প্রসিদ্ধ ব্র্যান্ডগুলোর সাইকেল তৈরি করছে আরএফএল। বাইসাইকেলের পাশাপাশি ফ্রেম, ফর্ক, টায়ার, টিউবসহ সাইকেলের কিছু কম্পোনেন্টও হচ্ছে রপ্তানি।
চীনে এন্টিডাম্পিং শুল্ক থাকায় ইউরোপের দেশগুলোর ক্রেতারা বর্তমানে কম্বোডিয়া, বাংলাদেশ, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কা থেকে সাইকেল কিনতে আগ্রহী। তবে অবকাঠামোগত দিক থেকে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ এ খাতের রপ্তানি বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এজন্য প্রয়োজন সরকারের নীতিসহায়তা। রপ্তানিকারকদের জন্য বন্ড সুবিধার পাশাপাশি নগদ সহায়তা, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পুনরায় জিএসপি সুবিধা আদায় ও সম্ভাবনাময় দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে পরিকল্পনা নেওয়া। এছাড়া এ খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি গড়ে না ওঠায় এই শিল্প প্রসারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, রপ্তানিও বাড়ছে না। আমদানি করা কাঁচামাল সংকটের পাশাপাশি জাহাজ ভাড়াও অনেক বেশি। মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘দেশীয় চাহিদার ৬০ শতাংশ বাইসাইকেল এখনো আমদানি হয়। বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ পেলে দেশীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাইসাইকেল রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘আরএফএল ই-বাইকের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। নতুন কিছু ইলেকট্রিক বাইসাইকেল বাজারজাত করা হবে।
১০ দেশে বাইসাইকেল রপ্তানি
নিজস্ব প্রতিবেদক : এক দশক ধরে দেশে প্রতি বছরই বাড়ছে বাইসাইকেলের চাহিদা। আমদানিনির্ভর এ খাতটিতে বেড়েছে উৎপাদন। স্থানীয় বাজারে দেশের মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ উৎপাদন করছে দেশীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। যার অন্যতম হচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ আরএফএল। হবিগঞ্জে আছে প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিমুখী একটি কারখানা। সেখানে উৎপাদিত বাইসাইকেল রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের ১০ দেশে। আগামী পাঁচ বছরে দেশের ৮০ শতাংশ জোগান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাড়াতে চায় আরএফএল-এর বাইসাইকেল ব্র্যান্ড ‘দুরন্ত’।
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত কারখানায় কাজ করেন কয়েক হাজার শ্রমিক। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে দেশে বাইসাইকেলের আনুমানিক চাহিদা বছরে ২০ লাখ পিস। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে দেশের চাহিদার ৮ লাখ পিস বাইসাইকেল জোগান দেয় আরএফএল-এর দুরন্ত বাইসাইকেল। দেশে প্রায় ১৮শ কোটি টাকার এই বাজারে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৭-৮ শতাংশ। করোনায় স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও যানজটে নিরাপদ যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার বাড়ায় চাহিদা বেড়েছে আগের তুলনায় ২৫ শতাংশ।
বাংলাদেশে বেশি বাইসাইকেল উৎপাদন করে আরএফএল ও মেঘনা গ্রুপ। ২০১৪ সালে ‘দুরন্ত’ নামে বাইসাইকেল বাজারজাত শুরু করে আরএফএল। খুব অল্প সময়ে দেশের বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় বাইসাইকেল ব্র্যান্ড ‘দুরন্ত’। বর্তমানে ট্রাই, কিডস, জুনিয়র, অ্যাডাল্ট, এমটিবি, লেডিস, ট্র্যাডিশনাল ও ই-বাইক ক্যাটাগরিতে নানা ধরনের সাইকেল রয়েছে। সাধারণ দুরন্ত বাইসাইকেলের দাম ৮ থেকে ২০ হাজার টাকা হলেও ই-বাইসাইকেলের দাম ৩০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, আরএফএল-এর বাইসাইকেল উৎপাদন ও বিপণনে বর্তমানে আড়াই হাজারের বেশি জনবল কর্মরত। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি রয়েছেন নারী শ্রমিকও। কারখানাটিতে কাজ করা নারী শ্রমিক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ৯ বছর ধরে কাজ করি, যা বেতন পাই পরিবার নিয়ে ভালোই চলতে পারি। দুরন্ত বাইসাইকেলের প্রধান অপারেটিং অফিসার মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কারখানাগুলোতে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই এলাকায় কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে অনেক নারী-পুরুষ কাজ পেয়েছেন। গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব কিছুটা হলেও ঘুচেছে।’ তিনি বলেন, ‘কারখানাটি পরিবেশবান্ধব। আন্তর্জাতিক মানদ- মেনে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা দেশীয় সাইকেলের বাজারের ৮০ শতাংশ জোগান দিতে চাই। বর্তমানে হবিগঞ্জের এই কারখানাটিতে বছরে আট লাখ ও রংপুরের গঙ্গাচড়ার কারখানায় তিন লাখ সাইকেল উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।’
২০১৫ সালে আরএফএল বাইসাইকেলের রপ্তানি শুরু হয়। রপ্তানি শুরুর দুই বছর পরই জাতীয় রপ্তানি ট্রফি অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮৩ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক কোটি ২০ লাখ ডলার ও ২০২০-২১ অর্থবছরে এক কোটি ৮৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে আরএফএল। রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় পরপর দুবার (২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছর) পেয়েছে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি। বর্তমানে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও বেলজিয়ামসহ ১০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইংল্যান্ডের আরগোস, স্পোর্টসডিরেক্ট, টয়রাস্ ও ট্যানডেম, জার্মানির স্কুল এবং ডেনমার্কের এশিয়ান নরডিকের মতো প্রসিদ্ধ ব্র্যান্ডগুলোর সাইকেল তৈরি করছে আরএফএল। বাইসাইকেলের পাশাপাশি ফ্রেম, ফর্ক, টায়ার, টিউবসহ সাইকেলের কিছু কম্পোনেন্টও হচ্ছে রপ্তানি।
চীনে এন্টিডাম্পিং শুল্ক থাকায় ইউরোপের দেশগুলোর ক্রেতারা বর্তমানে কম্বোডিয়া, বাংলাদেশ, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কা থেকে সাইকেল কিনতে আগ্রহী। তবে অবকাঠামোগত দিক থেকে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ এ খাতের রপ্তানি বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এজন্য প্রয়োজন সরকারের নীতিসহায়তা। রপ্তানিকারকদের জন্য বন্ড সুবিধার পাশাপাশি নগদ সহায়তা, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পুনরায় জিএসপি সুবিধা আদায় ও সম্ভাবনাময় দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে পরিকল্পনা নেওয়া। এছাড়া এ খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি গড়ে না ওঠায় এই শিল্প প্রসারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, রপ্তানিও বাড়ছে না। আমদানি করা কাঁচামাল সংকটের পাশাপাশি জাহাজ ভাড়াও অনেক বেশি। মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘দেশীয় চাহিদার ৬০ শতাংশ বাইসাইকেল এখনো আমদানি হয়। বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ পেলে দেশীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাইসাইকেল রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘আরএফএল ই-বাইকের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। নতুন কিছু ইলেকট্রিক বাইসাইকেল বাজারজাত করা হবে।