লাইফস্টাইল ডেস্ক :হৃদস্পন্দনের মাত্রা সার্বিক স্বাস্থ্যের তাৎক্ষণিক ধারণা দিতে পারে। যদিও সারাদিনে নানান সময়ে নানান কারণে হৃদগতি বাড়ে বা কমে। ব্যায়াম করলে, আতঙ্কিত হলে বা ঘাবড়িয়ে গেলে হৃদস্পন্দন বাড়ে। আবার আরামে বা বিশ্রামে থাকলে হৃদগতি সাধারণত কম থাকে।
এই তথ্য জানিয়ে ওয়েবএমডি ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ডে অবস্থিত ‘সেন্ট ভিনসেন্ট মেডিকেল সেন্টার’য়ের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জেমস বেকারম্যান বলেন, হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চাইতে সবসময় বেশি থাকার অর্থ হল হৃদপিণ্ডকে অতিমাত্রায় কাজ করতে হচ্ছে। যা কোনো অসুখের পূর্ব লক্ষণও হতে পারে। তাই বেশ কয়েকদিন ধরে হৃদস্পন্দন বেশি মনে হলে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত হবে।
স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বা ‘রেস্টিং হার্ট রেট’ বলতে যা বোঝায়: এক মিনিটে নাড়ি কতবার স্পন্দিত হচ্ছে সেটা গুনে সাধারণত হৃদগতি পরিমাপ করা হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের সাধারণ হৃদস্পন্দন বা ‘রেস্টিং হার্ট রেট’ হয় প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার।
আর এই পরিমাপের ভিন্নতা নির্ভর করে নানান কারণে। যেমন- বয়স স্বাস্থ্যগত অবস্থা, ফিটনেস, কোনো ওষুধের প্রতিক্রিয়া, দেহের আকার ইত্যাদি।
এমনকি আবেগ অনুভূতি বা পরিবেশের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রাও হৃদগতিতে প্রভাব ফেলে।
যেসব কারণে হৃদগতি কম রাখা উচিত: হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থাকার মানে হল, হৃদপিণ্ড স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। যা সার্বিকভাবে ভালো স্বাস্থ্য নির্দেশ করে।
ডা. বেকারম্যান বলেন, “যখন হৃদগতি স্বাভাবিক বা কম থাকে তখন সহজেই হৃদপিণ্ড বেশি রক্ত ‘পাম্প’ করতে পারে। অন্যদিকে হৃদগতি বেশি মানে হৃদপিণ্ডকে অতিরিক্ত কাজ করতে হচ্ছে।”
যদি স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বা ‘রেস্টিং হার্ট রেট’ মিনিটে প্রতিনিয়ত ১শ’র ওপরে থাকে তবে অবশ্যেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আবার যারা স্বাস্থ্যবান ও শারীরিক পরিশ্রম করেন তাদের স্বাভাবিক থেকে একটু কম হৃদস্পন্দন হতে পারে। তাই কেউ যদি শারীরিক পরিশ্রমে না থাকেন আর প্রতিনিয়ত প্রতি মিনিটে হৃদস্পন্দন ৬০ বারের কম হয়, পাশাপাশি মাথা ঝিমঝিম করা ও শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা বা ‘শর্ট অফ ব্রেথ’ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
বয়স হিসেবে স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন: বয়স অনুসারে হৃদস্পন্দনের পার্থক্য থাকতে পারে। আর শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করলে নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে হৃদগতি থাকবে।
‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ের নির্দশিকা অনুসারে বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক হৃদগতির মাত্রা হল-
২০ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১৭০ হৃদস্পন্দন।
৩০ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৯৫ থেকে ১৬২ হৃদস্পন্দন।
৩৫ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৯৩ থেকে ১৫৭ হৃদস্পন্দন।
৪০ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৯০ থেকে ১৫৩ হৃদস্পন্দন।
৪৫ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৮৮ থেকে ১৫৯ হৃদস্পন্দন।
৫০ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৮৫ থেকে ১৪৫ হৃদস্পন্দন।
৫৫ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৮৩ থেকে ১৪০ হৃদস্পন্দন।
৬০ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৮০ থেকে ১৩৬ হৃদস্পন্দন।
৬৫ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৭৮ থেকে ১৩২ হৃদস্পন্দন।
৭০ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৭৫ থেকে ১২৮ হৃদস্পন্দন।
হৃদস্পন্দন মাপার পন্থা: কব্জির উল্টা দিকে বুড়া আঙ্গুলের নিচের অংশে দ্বিতীয় ও তৃতীয় আঙ্গুলের আগা দিয়ে হালকা চাপ দিলে হৃদস্পন্দ টের পাওয়া যাবে। ভালো মতো বোঝার জন্য আঙ্গুল এদিকে সেদিক করতে হতে পারে।
অন্যের হৃদস্পন্দন মাপার সময় অবশ্যই বুড়া আঙ্গুল ব্যবহার করা যাবে না, করলে নিজের হৃদস্পন্দন অনুভূত হবে।
বিশ্রামে থাকা অবস্থায় হৃদস্পন্দন মাপতে হবে। কোনো কাজ বা ব্যায়ামের পর, ক্যাফিন অর্থাৎ চা-কফি পান করলে কিংবা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর মাপা যাবে না। এই ধরনের কাজের অন্তত ঘণ্টা দুই অপেক্ষা করে বিশ্রাম নিয়ে হৃদস্পন্দন মাপলে স্বাভাবিক গতি বের করা যাবে।
একবার হৃদস্পন্দন মেপে সেটার ওপর নির্ভর করা যাবে না। সঠিক মাত্রা বুঝতে সপ্তাহ জুড়ে দিনের বিভিন্ন সময়ে হৃদস্পন্দন মাপতে হবে।
কব্জি ছাড়াও গলার পাশের অংশে চোয়ালের হাড়ের নিচের দিয়ে আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরলেও হৃদস্পন্দন টের পাওয়া যায়।
ঘড়ি ধরে ১৫ সেকেন্ট হৃদস্পন্দন গুনতে হবে। তারপর সেই সংখ্যা চার দিয়ে গুন করলেই পাওয়া যাবে মিনিটে হৃদস্পন্দনের গতির মাত্রা।
এছাড়া রক্তচাপ মাপার যন্ত্র, ‘পাল্স অক্সিমিটার্স’ আর বর্তমান সময়ে বিভিন্ন স্মার্ট ওয়াচ দিয়েও নাড়ির স্পন্দন গোনা যায়।
হৃদগতি স্বাভাবিক রাখার কৌশল: যদি ‘রেস্টিং হার্ট রেট’ বা স্বাভাবিক হৃদগতি বেশি হয় তবে কিছু পন্থা অবলম্বন করা উচিত হবে।
কর্মক্ষম থাকা: শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকা শুধু হৃদপিণ্ড নয় সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। শারীরিক কর্মকাণ্ড করলে হৃদগতি বাড়ে ঠিকেই তবে প্রধান উপকার হয় হল- হৃদপিণ্ডের শক্তি বাড়ে। ফলে বিশ্রামের সময় হৃদপিণ্ডকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয় না। যদি ব্যায়াম করার অভ্যাস না থাকে তবে ধীরে শুরু করা যেতে পারে নানান মাধ্যমে।
যেমন- হাঁটা, সাইকেল চালানো বা কোনো ইয়োগা ব্যায়ামের ক্লাসে ভর্তি হওয়া। এছাড়াও যা করা যেতে পারে-
যদি দিনের বেশিরভাগ সময় বসে কাজ করতে হয়, তবে কিছুক্ষণ সাময়িক বিরতি নিয়ে দাঁড়াতে হবে। তারপর কর্মক্ষেত্রেই কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
কম তলায় ওঠা নামা করতে লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহারের চেষ্টা করা।
বাস থেকে একটু আগে নেমে হেঁটে লক্ষ্য স্থলে যাওয়া।
গাড়ি থাকলে, একটু দূরে পার্ক করে নির্দিষ্ট জায়গায় হেঁটে যাওয়া।
নিজেকে ঠাণ্ডা রাখা: যদি পরিবেশ গরম থাকে তবে হৃদগতিও বৃদ্ধি পায়। কারণ দেহকে ঠাণ্ডা করতে বেশি কাজ করে হৃদপিণ্ড। তাই গরমের সময় নিজেকে ঠাণ্ডার রাখার নানান পদ্ধতি নিতে হবে।
যে কোনো ধরনের তামাক গ্রহণ বন্ধ করা: তামাকধর্মী যে কোনো পণ্য গ্রহণ ও ধূমপান করলে রক্তের শিরা-উপশিরা ও ধমনী ছোট হয়ে যায়। ফলে রক্তচলা করতে বাধা পায়। আর জোরে ‘পাম্প’ করতে গিয়ে হৃদপিণ্ডকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। তাই হৃদস্পন্দন স্বাস্থ্যকর মাত্রায় রাখতে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া: মানসিক চাপ, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা- এই ধরনের বিষয়গুলো হৃদগতি বাড়ায়। তাই কোনো মানসিক সমস্যায় থাকলে সেটার চিকিৎসা নিতে হবে। যেমন- ‘অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) এবং সিজোফ্রেনিয়া।
যদি কোনো মানসিক চাপে থাকা হয়, তবে সেটার সমাধানের পথ খুঁজতে হবে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখার জন্য। দরকার পড়লে মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নিতে হবে।
খাবারের দিকে নজর দেওয়া: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে- সবজি, ফল, ওটস ও বাদামি চালের মতো সম্পূর্ণ শষ্য, চর্বিহীন বা কম চর্বির খাবার, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার – যেমন মাছ ডিম, চর্বিহীন মাংস, বাদাম, বীজ, টফু, নানান ধরনের ডাল ও মটর।
এছাড়া বেছে নিতে হবে স্বাস্থ্যকর তেল। যেমন- ক্যানোলা, কর্ন, অলিভ অয়েল ও সরিষার তেল।
ক্যাফিন গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করা: চা কফি পানের অভ্যাস থেকে হৃদস্পন্দন বাড়তে পারে। ক্যাফিন অ্যাড্রেনালিন হরমোন নিঃসরণ বাড়ায় যা হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ দুটোই বাড়াতে ভূমিকা রাখে। তাই এসব পানীয় পানের অভ্যাস বেশি থাকলে কমাতে হবে।
বেশি বেশি পানি পান: পানিশূন্যতার কারণেও হৃদগতি বাড়ে। কারণ পানির অভাবে রক্ত ঘন হয়ে গেল, সারা দেহে রক্তসঞ্চালনে সমস্যা হয়। তাই তৃষ্ণা বোধ না হলেও পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। সারাদিনে সাধারণত আট গ্লাস পানি পানের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে বেশি পরিশ্রম করলে, ব্যায়াম বা গরম পরিবেশে এই পরিমাণে বেশি পানি পানের প্রয়োজন হবে।
স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখা: যাদের ওজন স্বাস্থ্যকর পর্যায় নেই তাদের হৃদগতি সাধারণ বেশি হয়। তাই স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম: অনেক সময় ঘুমের অভাবের কারণেও হৃদস্পন্দন বেশি হয়। তাই রাতে ভালো ঘুম হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা: যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা খেয়াল করতে পারেন, রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে হৃদগতিও বেশি হয়। রক্তের চিনি মাত্রা বেশি হলে হৃদপিণ্ডের গতিও বাড়ে। তাই ডায়াবেটিকদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
ঘরে তাৎক্ষণিকভাবে হৃদস্পন্দন কমানো পন্থা: কোনো শারীরিক কাজ, দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন বাড়ে তবে কয়েকটি পদক্ষেপে কমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।
কোনো আরামদায়ক চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া
শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে নজর দেওয়া, ধীর ও শান্ত করা
এক থেকে ১০ পর্যান্ত ধীরে ধীরে গোনা
সংগীত শোনা
প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছুক্ষণ থাকা
ধ্যান
কাপড় বোনা, ড্রইং বা সৃষ্টিশীল কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা।
হৃদস্পন্দন কমানোর পন্থা
লাইফস্টাইল ডেস্ক :হৃদস্পন্দনের মাত্রা সার্বিক স্বাস্থ্যের তাৎক্ষণিক ধারণা দিতে পারে। যদিও সারাদিনে নানান সময়ে নানান কারণে হৃদগতি বাড়ে বা কমে। ব্যায়াম করলে, আতঙ্কিত হলে বা ঘাবড়িয়ে গেলে হৃদস্পন্দন বাড়ে। আবার আরামে বা বিশ্রামে থাকলে হৃদগতি সাধারণত কম থাকে।
এই তথ্য জানিয়ে ওয়েবএমডি ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ডে অবস্থিত ‘সেন্ট ভিনসেন্ট মেডিকেল সেন্টার’য়ের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জেমস বেকারম্যান বলেন, হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চাইতে সবসময় বেশি থাকার অর্থ হল হৃদপিণ্ডকে অতিমাত্রায় কাজ করতে হচ্ছে। যা কোনো অসুখের পূর্ব লক্ষণও হতে পারে। তাই বেশ কয়েকদিন ধরে হৃদস্পন্দন বেশি মনে হলে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত হবে।
স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বা ‘রেস্টিং হার্ট রেট’ বলতে যা বোঝায়: এক মিনিটে নাড়ি কতবার স্পন্দিত হচ্ছে সেটা গুনে সাধারণত হৃদগতি পরিমাপ করা হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের সাধারণ হৃদস্পন্দন বা ‘রেস্টিং হার্ট রেট’ হয় প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার।
আর এই পরিমাপের ভিন্নতা নির্ভর করে নানান কারণে। যেমন- বয়স স্বাস্থ্যগত অবস্থা, ফিটনেস, কোনো ওষুধের প্রতিক্রিয়া, দেহের আকার ইত্যাদি।
এমনকি আবেগ অনুভূতি বা পরিবেশের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রাও হৃদগতিতে প্রভাব ফেলে।
যেসব কারণে হৃদগতি কম রাখা উচিত: হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থাকার মানে হল, হৃদপিণ্ড স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। যা সার্বিকভাবে ভালো স্বাস্থ্য নির্দেশ করে।
ডা. বেকারম্যান বলেন, “যখন হৃদগতি স্বাভাবিক বা কম থাকে তখন সহজেই হৃদপিণ্ড বেশি রক্ত ‘পাম্প’ করতে পারে। অন্যদিকে হৃদগতি বেশি মানে হৃদপিণ্ডকে অতিরিক্ত কাজ করতে হচ্ছে।”
যদি স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বা ‘রেস্টিং হার্ট রেট’ মিনিটে প্রতিনিয়ত ১শ’র ওপরে থাকে তবে অবশ্যেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আবার যারা স্বাস্থ্যবান ও শারীরিক পরিশ্রম করেন তাদের স্বাভাবিক থেকে একটু কম হৃদস্পন্দন হতে পারে। তাই কেউ যদি শারীরিক পরিশ্রমে না থাকেন আর প্রতিনিয়ত প্রতি মিনিটে হৃদস্পন্দন ৬০ বারের কম হয়, পাশাপাশি মাথা ঝিমঝিম করা ও শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা বা ‘শর্ট অফ ব্রেথ’ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
বয়স হিসেবে স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন: বয়স অনুসারে হৃদস্পন্দনের পার্থক্য থাকতে পারে। আর শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করলে নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে হৃদগতি থাকবে।
‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ের নির্দশিকা অনুসারে বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক হৃদগতির মাত্রা হল-
২০ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১৭০ হৃদস্পন্দন।
৩০ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৯৫ থেকে ১৬২ হৃদস্পন্দন।
৩৫ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৯৩ থেকে ১৫৭ হৃদস্পন্দন।
৪০ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৯০ থেকে ১৫৩ হৃদস্পন্দন।
৪৫ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৮৮ থেকে ১৫৯ হৃদস্পন্দন।
৫০ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৮৫ থেকে ১৪৫ হৃদস্পন্দন।
৫৫ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৮৩ থেকে ১৪০ হৃদস্পন্দন।
৬০ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৮০ থেকে ১৩৬ হৃদস্পন্দন।
৬৫ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৭৮ থেকে ১৩২ হৃদস্পন্দন।
৭০ বছর বয়সে: প্রতি মিনিটে ৭৫ থেকে ১২৮ হৃদস্পন্দন।
হৃদস্পন্দন মাপার পন্থা: কব্জির উল্টা দিকে বুড়া আঙ্গুলের নিচের অংশে দ্বিতীয় ও তৃতীয় আঙ্গুলের আগা দিয়ে হালকা চাপ দিলে হৃদস্পন্দ টের পাওয়া যাবে। ভালো মতো বোঝার জন্য আঙ্গুল এদিকে সেদিক করতে হতে পারে।
অন্যের হৃদস্পন্দন মাপার সময় অবশ্যই বুড়া আঙ্গুল ব্যবহার করা যাবে না, করলে নিজের হৃদস্পন্দন অনুভূত হবে।
বিশ্রামে থাকা অবস্থায় হৃদস্পন্দন মাপতে হবে। কোনো কাজ বা ব্যায়ামের পর, ক্যাফিন অর্থাৎ চা-কফি পান করলে কিংবা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর মাপা যাবে না। এই ধরনের কাজের অন্তত ঘণ্টা দুই অপেক্ষা করে বিশ্রাম নিয়ে হৃদস্পন্দন মাপলে স্বাভাবিক গতি বের করা যাবে।
একবার হৃদস্পন্দন মেপে সেটার ওপর নির্ভর করা যাবে না। সঠিক মাত্রা বুঝতে সপ্তাহ জুড়ে দিনের বিভিন্ন সময়ে হৃদস্পন্দন মাপতে হবে।
কব্জি ছাড়াও গলার পাশের অংশে চোয়ালের হাড়ের নিচের দিয়ে আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরলেও হৃদস্পন্দন টের পাওয়া যায়।
ঘড়ি ধরে ১৫ সেকেন্ট হৃদস্পন্দন গুনতে হবে। তারপর সেই সংখ্যা চার দিয়ে গুন করলেই পাওয়া যাবে মিনিটে হৃদস্পন্দনের গতির মাত্রা।
এছাড়া রক্তচাপ মাপার যন্ত্র, ‘পাল্স অক্সিমিটার্স’ আর বর্তমান সময়ে বিভিন্ন স্মার্ট ওয়াচ দিয়েও নাড়ির স্পন্দন গোনা যায়।
হৃদগতি স্বাভাবিক রাখার কৌশল: যদি ‘রেস্টিং হার্ট রেট’ বা স্বাভাবিক হৃদগতি বেশি হয় তবে কিছু পন্থা অবলম্বন করা উচিত হবে।
কর্মক্ষম থাকা: শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকা শুধু হৃদপিণ্ড নয় সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। শারীরিক কর্মকাণ্ড করলে হৃদগতি বাড়ে ঠিকেই তবে প্রধান উপকার হয় হল- হৃদপিণ্ডের শক্তি বাড়ে। ফলে বিশ্রামের সময় হৃদপিণ্ডকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয় না। যদি ব্যায়াম করার অভ্যাস না থাকে তবে ধীরে শুরু করা যেতে পারে নানান মাধ্যমে।
যেমন- হাঁটা, সাইকেল চালানো বা কোনো ইয়োগা ব্যায়ামের ক্লাসে ভর্তি হওয়া। এছাড়াও যা করা যেতে পারে-
যদি দিনের বেশিরভাগ সময় বসে কাজ করতে হয়, তবে কিছুক্ষণ সাময়িক বিরতি নিয়ে দাঁড়াতে হবে। তারপর কর্মক্ষেত্রেই কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
কম তলায় ওঠা নামা করতে লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহারের চেষ্টা করা।
বাস থেকে একটু আগে নেমে হেঁটে লক্ষ্য স্থলে যাওয়া।
গাড়ি থাকলে, একটু দূরে পার্ক করে নির্দিষ্ট জায়গায় হেঁটে যাওয়া।
নিজেকে ঠাণ্ডা রাখা: যদি পরিবেশ গরম থাকে তবে হৃদগতিও বৃদ্ধি পায়। কারণ দেহকে ঠাণ্ডা করতে বেশি কাজ করে হৃদপিণ্ড। তাই গরমের সময় নিজেকে ঠাণ্ডার রাখার নানান পদ্ধতি নিতে হবে।
যে কোনো ধরনের তামাক গ্রহণ বন্ধ করা: তামাকধর্মী যে কোনো পণ্য গ্রহণ ও ধূমপান করলে রক্তের শিরা-উপশিরা ও ধমনী ছোট হয়ে যায়। ফলে রক্তচলা করতে বাধা পায়। আর জোরে ‘পাম্প’ করতে গিয়ে হৃদপিণ্ডকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। তাই হৃদস্পন্দন স্বাস্থ্যকর মাত্রায় রাখতে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া: মানসিক চাপ, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা- এই ধরনের বিষয়গুলো হৃদগতি বাড়ায়। তাই কোনো মানসিক সমস্যায় থাকলে সেটার চিকিৎসা নিতে হবে। যেমন- ‘অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) এবং সিজোফ্রেনিয়া।
যদি কোনো মানসিক চাপে থাকা হয়, তবে সেটার সমাধানের পথ খুঁজতে হবে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখার জন্য। দরকার পড়লে মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নিতে হবে।
খাবারের দিকে নজর দেওয়া: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে- সবজি, ফল, ওটস ও বাদামি চালের মতো সম্পূর্ণ শষ্য, চর্বিহীন বা কম চর্বির খাবার, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার – যেমন মাছ ডিম, চর্বিহীন মাংস, বাদাম, বীজ, টফু, নানান ধরনের ডাল ও মটর।
এছাড়া বেছে নিতে হবে স্বাস্থ্যকর তেল। যেমন- ক্যানোলা, কর্ন, অলিভ অয়েল ও সরিষার তেল।
ক্যাফিন গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করা: চা কফি পানের অভ্যাস থেকে হৃদস্পন্দন বাড়তে পারে। ক্যাফিন অ্যাড্রেনালিন হরমোন নিঃসরণ বাড়ায় যা হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ দুটোই বাড়াতে ভূমিকা রাখে। তাই এসব পানীয় পানের অভ্যাস বেশি থাকলে কমাতে হবে।
বেশি বেশি পানি পান: পানিশূন্যতার কারণেও হৃদগতি বাড়ে। কারণ পানির অভাবে রক্ত ঘন হয়ে গেল, সারা দেহে রক্তসঞ্চালনে সমস্যা হয়। তাই তৃষ্ণা বোধ না হলেও পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। সারাদিনে সাধারণত আট গ্লাস পানি পানের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে বেশি পরিশ্রম করলে, ব্যায়াম বা গরম পরিবেশে এই পরিমাণে বেশি পানি পানের প্রয়োজন হবে।
স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখা: যাদের ওজন স্বাস্থ্যকর পর্যায় নেই তাদের হৃদগতি সাধারণ বেশি হয়। তাই স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম: অনেক সময় ঘুমের অভাবের কারণেও হৃদস্পন্দন বেশি হয়। তাই রাতে ভালো ঘুম হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা: যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা খেয়াল করতে পারেন, রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে হৃদগতিও বেশি হয়। রক্তের চিনি মাত্রা বেশি হলে হৃদপিণ্ডের গতিও বাড়ে। তাই ডায়াবেটিকদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
ঘরে তাৎক্ষণিকভাবে হৃদস্পন্দন কমানো পন্থা: কোনো শারীরিক কাজ, দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপের কারণে হৃদস্পন্দন বাড়ে তবে কয়েকটি পদক্ষেপে কমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।
কোনো আরামদায়ক চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া
শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে নজর দেওয়া, ধীর ও শান্ত করা
এক থেকে ১০ পর্যান্ত ধীরে ধীরে গোনা
সংগীত শোনা
প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছুক্ষণ থাকা
ধ্যান
কাপড় বোনা, ড্রইং বা সৃষ্টিশীল কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা।