প্রত্যাশা ডেস্ক :আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমি মার্তিনেসের ঢাকা সফর শেষ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে।
গতকাল সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মার্তিনেস। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে আর্জেন্টিনার একটি জার্সি উপহার দেন বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভসজয়ী এই খেলোয়াড়।
আর মার্তিনেসকে প্রধানমন্ত্রী একটি নৌকা উপহার দেন বলে সংবাদমাধ্যমকে জানান তার প্রেসসচিব ইহসানুর করিম। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে এই তারকা ফুটবলারের অবদানের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনি আর্জেন্টিনার জন্য গৌরব নিয়ে এসেছেন। আমি আপনার সফলতা কামনা করি।”
বাংলাদেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তার তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “ফুটবল সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। বাংলাদেশিরাও ফুটবল উন্মাদ।”
খেলাধুলার সঙ্গে পারিবারিক বন্ধনের কথাও মার্তিনেসকে বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আমার বাবা এবং দাদা ফুটবল প্রেমিক ছিলেন।”
ফুটবলসহ অন্যান্য খেলাধুলার প্রসারে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত মিনি স্টেডিয়াম করে দেওয়াসহ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। মার্তিনেস বলেন, “ফুটবলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা, বিশেষ করে বিপুল সংখ্যক আর্জেন্টাইন ফুটবল ভক্ত আছে জেনে আমি আনন্দিত।” প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের একটি ছবি নিজের ইন্সটাগ্রামেও পোস্ট করেছেন লিওনেল মেসির সতীর্থ। সেখানে তিনি লিখেছেন, এ দেশের মানুষের ভালোবাসা আর আতিথেয়তায় তিনি আপ্লুত। অদূর ভবিষ্যতে আবারও তিনি বাংলাদেশে আসতে চান। “পরের সাক্ষাতের আগ পর্যন্ত বিদায় নিচ্ছি, আমার হৃদয়ের একটি অংশ এখানে রেখে গেলাম।”
মার্তিনেসকে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশের মানুষ তাকে বাজপাখি নামে ডাকে। সে প্রসঙ্গ ধরে মার্তিনেস ইন্সটাগ্রামে লিখেছেন, ওই বাজপাখি নাম পেয়ে তিনি রোমাঞ্চিত।
বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয় এই আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক পূর্ব সূচি অনুযায়ী সোমবার ভোরে পা রাখেন ঢাকায়। প্রায় ১১ ঘণ্টার অতি সংক্ষিপ্ত এক সফরে তিনি বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন।
তার মূল সফর কলকাতায়, যেখানে তিনি কাটাবেন আড়াই দিনের মতো। সেখানে যাওয়ার পথেই ঢাকায় একটু ঢু মেরে গেলেন। কলকাতার ক্রীড়া উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তের উদ্যোগেই মার্তিনেসের এই সফর।
ঢাকায় খুব বেশি আনুষ্ঠানিকতা মার্তিনেসকে নিয়ে ছিল না। হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে সকাল ৯টার দিকে তিনি যান নেক্সট ভেঞ্চার্সের কার্যালয়ে। বাংলাদেশে মার্তিনেসের সফরের পৃষ্ঠপোষক এ প্রতিষ্ঠান। সেখানে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজার। বাংলাদেশের তরুণ সমাজের আইকন হিসেবে মাশরাফিকে আমন্ত্রণ জানানো হয় ওই আয়োজনে। আর্জেন্টিনার পাঁড় ভক্ত মাশরাফি অনুষ্ঠানে যান দুই সন্তানকে সঙ্গী করে। ওই অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে মার্তিনেসের হাতে একটি বাজপাখি, পাটের তৈরি একটি নৌকা এবং বঙ্গবন্ধুর বই তুলে দেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
আর মাশরাফি পরে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “যেটুকু কথা বললাম আর ২০ মিনিটের মতো কাছ থেকে দেখলাম, এমিকে একদমই সাদাসিধে মনে হল। তারকাসুলভ কোনো ব্যাপার বা বিশ্বকাপজয়ী গোলকিপারের মতো সেরকম কোনো আচরণ দেখিনি বা তার কথায় ও শরীরী ভাষায় বাড়তি কিছু চোখে পড়েনি। খুব সহজেই সবার সঙ্গে মিশছে, কথা বলছে, আব্দার মেটাচ্ছে।”
ইন্সটাগ্রাম স্টোরিতে দুটি ছবি শেয়ার করেছেন এমি মার্তিনেস। একটিতে ঢাকার রাস্তার ছবি, যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ।’ লেখার পাশে বাংলাদেশের পতাকা ও ভালোবাসার ইমোজি। নান্দনিক যে কেক দিয়ে ঢাকায় হোটেলে তাকে স্বাগত জানানো হয়েছে, সেটি শেয়ার করেছেন তিনি আরেকটি ছবিতে।
তবে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনাকে ঘিরে যে তুমুল উন্মাদনা, গত বিশ্বকাপের বাংলাদেশের যে আবেগের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল আর্জেন্টিনাতেও, সেসবের সঙ্গে সরাসরি পরিচয় হয়নি মার্তিনেসের। সমর্থকদের সঙ্গে, এমনকি সংবাদমাধ্যমের জন্যও কোনো আয়োজন ছিল না তাকে নিয়ে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সর্বত্র।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো গোলরক্ষক এমিলিয়েনো মার্টিনেজ।
গতকাল সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে তিনি সৌজন্য সাক্ষাতের মধ্য দিয়েই ১১ ঘণ্টার সফর শেষ করেন আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো গোলরক্ষক এমিলিয়েনো মার্তিনেস। এর আগে সোমবার ভোরে বাংলাদেশে পৌঁছান। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ভ্রমণ করে এসে হোটেলে মাত্র ঘণ্টা-তিনেক বিশ্রাম নেন তিনি। এরপর আবার বেরিয়ে পড়েন। সফর শেষে কলকাতায় রওনা হন এই ফুটবল তারকা।