প্রত্যাশা ডেস্ক : বিশ্বে জুড়ে হু হু করে বাড়ছে অমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা। যদিও করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে এখনো মৃত্যুর খবর মেলেনি। বিশ্বের ৩৮টি দেশে অমিক্রন করোনা উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও এখনও কোনও ব্যক্তি এই ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে ব্যাপক আশঙ্কা ছড়িয়েছে। করোনার এই রূপ সবচেয়ে বেশিবার মিউটেশন হয়েছে বলেও গবেষকরা জানিয়েছেন। ফলে ভ্যাকসিন এই নতুন ভ্যারিয়েন্টে কার্যকর হবে কিনা তা এখনও কিছুদিন না গেলে স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারতের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়াতেও এই নতুন করোনা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট কতটা মারাত্মক আগামী কয়েক সপ্তাহ না গেলে সঠিকভাবে আন্দাজ করা সম্ভব নয় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে। ফলে সঠিকভাবে এটি সম্পর্কে জানার পরেই তার চিকিৎসা এবং ভ্যাকসিন নিয়ে কথা বলা সম্ভব। তবে এখনও পর্যন্ত এটাই স্বস্তির খবর যে এই নতুন ভ্যারিয়েন্টে কারও প্রাণ যায়নি। তবে এটি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ইউরোপে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার অর্ধেক এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। করোনার ডেল্টা এবং ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট আসার পরে সার্বিকভাবে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অনেকটা থমকে গিয়েছে। যার ফলে একটা নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসার প্রগতি ফের থমবে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ করোনার এর আগে যে কয়টি স্ট্রেইন পাওয়া গেছে তার থেকেও অনেক বেশি দ্রুত হারে অমিক্রন সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে প্রাথমিক গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের নয়, একেবারে ছোট শিশুদের এই ভাইরাস সমানতালে সংক্রমিত করছে।
দরজায় কড়া নাড়ছে অমিক্রন : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর : এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড ১৯) সংক্রমণ কমলেও আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগ-নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, দরজায় কড়া নাড়ছে করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’।
গতকাল রোববার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে তিনি সবাইকে সর্তক থাকার আহ্বান জানান। ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশে এখন করোনা সংক্রমণের হার ২ শতাংশের নিচে। এরপরও আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নেই। কারণ ঘরের দরজায় বিপজ্জনক ধরন ‘অমিক্রন’ কড়া নাড়ছে। এই মুহূর্তে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। এগুলো নিশ্চিত করতে পারলে ‘অমিক্রন’ হোক বা অন্য কোনো ধরন হোক তা আমরা মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো। তিনি বলেন, ‘অমিক্রন’ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি। এক্ষেত্রে কমিউনিটিতে আমাদের সবার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অংশগ্রহণ জরুরি। একই সঙ্গে অন্যকে অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করা এবং সহায়তার মধ্য দিয়েই আমরা এ ভাইরাসটিকে শতভাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো বলে মনে করি।
ভারতে বাড়ছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা : করোনাভাইরাসের নতুন ধরন সংক্রমণপ্রবণ ওমিক্রন হানা দিয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারতে। প্রথমে কর্নাটকে দুজনের শরীরে ওমিক্রন ধরা পড়ে। এরপর গুজরাট ও মুম্বাইয়েও এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। জনসংখ্যাবহুল রাষ্ট্রটিতে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত শনিবার চতুর্থ ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায় মুম্বাইয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুবাই এবং দিল্লি হয়ে মুম্বাইয়ে পা রেখেছেন ওই ব্যক্তি। ৩৩ বছরের ওই ব্যক্তির কোভিড টিকার একটি ডোজও নেওয়া ছিল না। ২৪ নভেম্বর বিমানবন্দরে নামার পর তার গায়ে হালকা জ্বর ছিল। তার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসতেই কল্যাণ-ডোম্বিভালি কোভিড কেয়ার সেন্টারে তাকে ভর্তি করা হয়। জেনোম সিকোয়েন্সিং করার পর জানা যায়, তিনি ওমিক্রন আক্রান্ত। হালকা জ্বর ছাড়া ওই ব্যক্তির শরীরে অন্য কোনো কোভিড উপসর্গ দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ইতিমধ্যেই ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ৩৫ জনকে চিহ্নিত করে কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছে। তাছাড়া দিল্লি থেকে মুম্বাইয়ের বিমানে ওই ব্যক্তির ২৫ জন সহযাত্রীর করোনা টেস্ট করা হয়েছে। প্রত্যেকের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। মহারাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাম্বিয়া থেকে মুম্বাইতে আসা ৬০ বছর বয়সি ব্যক্তির শরীরে ওমিক্রন পাওয়া যায়নি। তার শরীরে পাওয়া গিয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। শনিবার বিকালেই ভারতের তৃতীয় ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে গুজরাতের জামনগরে। কয়েকদিন আগেই জিম্বাবোয়ে থেকে ফিরেছেন ওই ব্যবসায়ী। দিল্লিতে ইতিমধ্যেই ১১ জনের শরীরে এই নয়া প্রজাতির সংক্রমণ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তাদের রিপোর্ট পজিটিভ এলেও তারা ওমিক্রন আক্রান্ত কি না তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেঙ্গালুরুতে প্রথম দুজন ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায়। একজন ৪৬ বছরের স্বাস্থ্য কর্মী। অন্য একজন ৬৬ বছরের বিদেশি। ৬৬ বছরের ওই ব্যক্তি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বেঙ্গালুরু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন। তারপর তার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। করোনার দুটি টিকা তার নেওয়া ছিল।
সীমান্ত বন্ধ ও লকডাউনের পরিকল্পনা নেই: স্বাস্থ্যমন্ত্রী : মহামারি করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন মোকাবেলায় সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তবে আপাতত সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া এবং লডকাউনের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। গতকাল রোববার দুপুরে সাভারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যানেজমেন্টে (বিআইএইচএম) নবনির্মিত ভবন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এই কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যা যা প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব ইতিমধ্যে সব নিয়েছি। এই মুহূর্তে বর্ডার বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। দেশ ভালো আছে, নিরাপদে আছে। এখনো এমন পরিস্থিতি হয়নি বর্ডার বন্ধ করতে হবে, লকডাউন দিতে হবে। বর্ডারে স্ক্রিনিং ও পরীক্ষা জোরদার করা হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটা সভা করেছি আন্তঃমন্ত্রনালয়ের। সেই সভা থেকে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাউথ আফ্রিকা ও ওমিক্রন আক্রান্ত অন্যান্য দেশ থেকে যারা আসবে তাদের ৪৮ ঘণ্টা আগে টেস্ট করে আসতে হবে। তাদেরকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। বর্ডারে পরীক্ষা জোরদার করেছি। কোয়ারেন্টাইন জোরদার করেছি। বিশেষ করে ঢাকায় যেসব হাসপাতালে আগেও চিকিৎসা হয়েছে সেখানে নিজ খরচে কোয়ারেন্টাইন করা যাবে।’ জাহিদ মালেক বলেন, ‘এর বাইরেও আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। এয়ারপোর্টে স্ক্রিনিংব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ল্যাবের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। আগে দুই হাজার স্কয়ার ফিটের ল্যাব ছিল, সেটি ৩০ হাজার স্কয়ার ফিটের বেশি সম্প্রসারণ করা হয়েছে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশ থেকে যারা দেশে আসবেন তাদেরও দায়িত্ব আছে। তারা যেন সংক্রমিত হয়ে দেশে না আসেন। যারা বিদেশে আছেন, বিশেষ করে যারা আফ্রিকার দেশে আছেন এই মুহূর্তে দেশে না এলেই ভালো হয়। কারণ আপনারা আপনাদের পরিবার ও দেশকে নিরাপদে রাখতে চাইবেন। তাই যে যেখানে আছেন সেখানেই নিরাপদে থাকেন।’
প্রস্তুতির কথা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তত রেখেছি। আমরা ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় চিঠি দিয়েছি তারা যেন ওমিক্রন মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আপনারা জানেন, জনবল খুবই প্রয়োজন। এজন্য আট হাজার নতুন নার্স ও চার হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ টিকা কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের টিকা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে সাত কোটির বেশি প্রথম ডোজ ও চার কোটির কাছাকাছি দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিয়েছি। এটাও একটা বড় প্রস্তুতি। কারণ অমিক্রনকে যদি মোকাবেলা করতে হয়, তাহলে টিকা নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সামাজিকভাবে সচেতন হতে হব। আমাদের টিকার কোনো ঘাটতি হবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীও আমাদের অনুমতি দিয়েছেন। আমরা ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করবো।’
হু হু করে ছড়াচ্ছে অমিক্রন
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ