ঢাকা ১০:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫

হুমকি পেয়ে ৬ দিন গান বন্ধ রেখে আবার শুরু করলো সেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরিবারটি

  • আপডেট সময় : ০৬:৫৩:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হেলাল মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা আবার গান বাজনা শুরু করেছেন। গানবাজনা বন্ধের হুমকি পাওয়ায় ছয় দিন বন্ধ রাখার পর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের পৌর মুক্তমঞ্চ মাঠের এক কোনায় বসে তারা সংগীত পরিবেশন করেন। তবে এখনো ভয় কাটেনি জন্মান্ধ পরিবারটির। এ ছাড়া হুমকির ঘটনায় কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি পুলিশ।

সংগীত পরিবেশন করে জীবিকা নির্বাহ করা ওই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরিবারটিকে ২৬ নভেম্বর দুপুরে কয়েকজন যুবক এসে গানবাজনা বন্ধ করে ভিক্ষাবৃত্তি করার জন্য বলেন। এ সময় ওই যুবকরা তাকে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের কথাও উল্লেখ করেন।

হেলাল মিয়া বলেন, ‘তারা হুমকি দিয়ে বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে যে দল ক্ষমতায় আসুক, তোমরা আর গানবাজনা করতে পারবা না।’ যুবকদের হুমকির কারণে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গানবাজনা বন্ধ করে দেন হেলাল ও তার পরিবারের সদস্যরা। ফলে তাদের রোজগার বন্ধ হয়ে যায়।

হেলাল মিয়া জানান, প্রায় পাঁচ দশক ধরে পৌর মুক্তমঞ্চ মাঠে মানুষকে গান শুনিয়ে পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন তিনি। তার কণ্ঠে মারফতি, গজল, মুর্শিদী ও কাওয়ালির মতো আধ্যাত্মিক গান শোনেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। শুধু হেলালই নন, তার পরিবারের আরো ৯ জন সদস্য জন্ম থেকেই অন্ধ। গান গেয়েই সংসার চলে তাদের।

হেলাল মিয়া জানান, বিশিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তক, কবি, দার্শনিক, মানবাধিকার কর্মী ও পরিবেশবাদী ফরহাদ মজহারের পক্ষ থেকে গতকাল তিনি কিছু ত্রাণসামগ্রী পেয়েছেন। এ জন্য তিনি ফরহাদ মজহারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

সংগীত জীবনের প্রসঙ্গ টেনে হেলাল মিয়া জানান, তার বয়স ৬৫ পেরিয়েছে। তিনি সদর উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের সংগীতশিল্পী শাহনূর শাহের কাছ থেকে সংগীতের প্রশিক্ষণ নেন সেই কিশোর বয়স থেকে। মাত্র ১০-১২ বছর বয়স থেকেই গান করে বেড়াতেন। পরিবারের ভরণপোষণ এবং বেঁচে থাকার জন্য পরবর্তী সময়ে সন্তানদেরও গানের তালিম দেন। এরপর গত পাঁচ দশক ধরে তারা পৌর মুক্তমঞ্চে নিয়মিত গান করতেন। হানিফ সংকেত পরিচালিত জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতেও তিনি সংগীত পরিবেশন করেছেন।

হেলাল মিয়া জানান, তাকে হুমকির বিষয়ে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচিকে জানিয়েছেন। কেউ বাধা দিলে হাফিজুর রহমান মোল্লা কচিকে জানানোর জন্যেও বলেছেন। তাই আজ মঙ্গলবার পূর্বের জায়গায় বসে গানবাজনা শুরু করেছেন।

সকাল ১০টা থেকে গান শুরু করেন। জোহরের নামাজের আগে গান শেষ করে বাড়ি ফিরে চলে যান। তিনি এ ব্যাপারে সব মহলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এদিকে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হেলাল মিয়া তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে আমাকে জানিয়েছেন। আমি তাকে অভয় দিয়ে বলেছি তার আগের জায়গায় এসে গান-বাজনা করার জন্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি পৌরসভার মেয়র থাকাকালে তাকে গানবাজনা করার জন্যে পৌর মুক্তমঞ্চের এক কোনায় জায়গা করে দিয়েছিলাম। এরপর থেকে তিনি সেখানেই গানবাজনা করতেন। এর আগে তিনি পৌরসভার পুকুরের উত্তর পাড়ে গানবাজনা করতেন। এ ছাড়া আমি মেয়র থাকাকালে তাকে আমি বিভিন্ন জায়গায় আমন্ত্রণ নিয়ে পাঠিয়েছি। তিনি সেসব জায়গায় সফলতার সঙ্গে গানবাজনা পরিবেশন করে এসেছেন।’

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবাগত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান জানান, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এসি/আপ্র/০২/১২/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে তিন বাহিনী প্রধান

হুমকি পেয়ে ৬ দিন গান বন্ধ রেখে আবার শুরু করলো সেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরিবারটি

আপডেট সময় : ০৬:৫৩:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হেলাল মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা আবার গান বাজনা শুরু করেছেন। গানবাজনা বন্ধের হুমকি পাওয়ায় ছয় দিন বন্ধ রাখার পর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের পৌর মুক্তমঞ্চ মাঠের এক কোনায় বসে তারা সংগীত পরিবেশন করেন। তবে এখনো ভয় কাটেনি জন্মান্ধ পরিবারটির। এ ছাড়া হুমকির ঘটনায় কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি পুলিশ।

সংগীত পরিবেশন করে জীবিকা নির্বাহ করা ওই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরিবারটিকে ২৬ নভেম্বর দুপুরে কয়েকজন যুবক এসে গানবাজনা বন্ধ করে ভিক্ষাবৃত্তি করার জন্য বলেন। এ সময় ওই যুবকরা তাকে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের কথাও উল্লেখ করেন।

হেলাল মিয়া বলেন, ‘তারা হুমকি দিয়ে বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে যে দল ক্ষমতায় আসুক, তোমরা আর গানবাজনা করতে পারবা না।’ যুবকদের হুমকির কারণে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গানবাজনা বন্ধ করে দেন হেলাল ও তার পরিবারের সদস্যরা। ফলে তাদের রোজগার বন্ধ হয়ে যায়।

হেলাল মিয়া জানান, প্রায় পাঁচ দশক ধরে পৌর মুক্তমঞ্চ মাঠে মানুষকে গান শুনিয়ে পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন তিনি। তার কণ্ঠে মারফতি, গজল, মুর্শিদী ও কাওয়ালির মতো আধ্যাত্মিক গান শোনেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। শুধু হেলালই নন, তার পরিবারের আরো ৯ জন সদস্য জন্ম থেকেই অন্ধ। গান গেয়েই সংসার চলে তাদের।

হেলাল মিয়া জানান, বিশিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তক, কবি, দার্শনিক, মানবাধিকার কর্মী ও পরিবেশবাদী ফরহাদ মজহারের পক্ষ থেকে গতকাল তিনি কিছু ত্রাণসামগ্রী পেয়েছেন। এ জন্য তিনি ফরহাদ মজহারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

সংগীত জীবনের প্রসঙ্গ টেনে হেলাল মিয়া জানান, তার বয়স ৬৫ পেরিয়েছে। তিনি সদর উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের সংগীতশিল্পী শাহনূর শাহের কাছ থেকে সংগীতের প্রশিক্ষণ নেন সেই কিশোর বয়স থেকে। মাত্র ১০-১২ বছর বয়স থেকেই গান করে বেড়াতেন। পরিবারের ভরণপোষণ এবং বেঁচে থাকার জন্য পরবর্তী সময়ে সন্তানদেরও গানের তালিম দেন। এরপর গত পাঁচ দশক ধরে তারা পৌর মুক্তমঞ্চে নিয়মিত গান করতেন। হানিফ সংকেত পরিচালিত জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতেও তিনি সংগীত পরিবেশন করেছেন।

হেলাল মিয়া জানান, তাকে হুমকির বিষয়ে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচিকে জানিয়েছেন। কেউ বাধা দিলে হাফিজুর রহমান মোল্লা কচিকে জানানোর জন্যেও বলেছেন। তাই আজ মঙ্গলবার পূর্বের জায়গায় বসে গানবাজনা শুরু করেছেন।

সকাল ১০টা থেকে গান শুরু করেন। জোহরের নামাজের আগে গান শেষ করে বাড়ি ফিরে চলে যান। তিনি এ ব্যাপারে সব মহলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এদিকে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হেলাল মিয়া তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে আমাকে জানিয়েছেন। আমি তাকে অভয় দিয়ে বলেছি তার আগের জায়গায় এসে গান-বাজনা করার জন্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি পৌরসভার মেয়র থাকাকালে তাকে গানবাজনা করার জন্যে পৌর মুক্তমঞ্চের এক কোনায় জায়গা করে দিয়েছিলাম। এরপর থেকে তিনি সেখানেই গানবাজনা করতেন। এর আগে তিনি পৌরসভার পুকুরের উত্তর পাড়ে গানবাজনা করতেন। এ ছাড়া আমি মেয়র থাকাকালে তাকে আমি বিভিন্ন জায়গায় আমন্ত্রণ নিয়ে পাঠিয়েছি। তিনি সেসব জায়গায় সফলতার সঙ্গে গানবাজনা পরিবেশন করে এসেছেন।’

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবাগত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান জানান, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এসি/আপ্র/০২/১২/২০২৫