ঢাকা ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

হিলি স্থলবন্দরে ট্রাক সংকটে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

  • আপডেট সময় : ০১:১৮:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১০৬ বার পড়া হয়েছে

হিলি প্রতিনিধি : দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে আমদানিকৃত পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কিছু ট্রাক পাওয়া গেলেও গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। আর এতে করে বিপাকে পড়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বন্দরের পণ্যের তুলনায় কাঁচা পণ্য পরিবহনে বাড়তি ভাড়া পাওয়ায় ট্রাক চালকরা সেদিকে ছুটছেন। ফলে পণ্য বন্দরেই রেখে দিতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়, দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত চার্জ। আর বাড়তি ভাড়ায় ট্রাকের ব্যবস্থা করে কেউ কেউ দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন, এতে তাদের পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘আমরা হিলি স্থলবন্দর থেকে ক্রেতাদের চাহিদামতো পেঁয়াজ, ভুষিসহ বিভিন্ন পণ্য কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাই। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বন্দরে ট্রাকের সংকট দেখা দিয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) তিনটি ট্রাকে বহনযোগ্য ভুষি কিনেছেন এই ব্যবসায়ী। তার মধ্যে মাত্র এক ট্রাক লোড দিতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘বাকি দুই ট্রাক আজ লোড দেবো সেই আশায় ছিলাম। কিন্তু আজও বন্দরে ট্রাক সংকট। গতকাল ও আজকের মিলে পাঁচ ট্রাক পণ্য হয়েছে। কিন্তু ট্রাকের ব্যবস্থা হয়েছে তিনটি বাকি দুটি ট্রাকের এখনও কোনও ব্যবস্থা হয়নি। বন্দরে ট্রাকের সংকট দেখা দিয়েছে যার কারণে আগের তুলনায় ভাড়াও বাড়তি। তারপরও আমরা ট্রাক না পাওয়ায় পণ্য পাঠাতে পারছি না।’
অপর ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরা বন্দর থেকে পেঁয়াজ-ভুষিসহ বিভিন্ন আমদানিকৃত পণ্য বিক্রি করে থাকি। আমরা পণ্য বিক্রি করে দিয়েছি। কিন্তু ট্রাকের কারণে ক্রেতারাও পণ্য নিতে পারছেন না, আমরাও ডেলিভারি দিতে পারছি না। পণ্য নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে, বাড়তি হিসেবে দেড় হাজার টাকার মতো বন্দরের মাশুল গুণতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে।’
শুধু তাই নয়, বেশি দিন পণ্য বন্দরে আটকে থাকায় ঘেমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী। হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী স্বপন মুন্সিও জানালেন ট্রাক সংকটের কথা। তিনি বলেন, ‘আমরা বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের উদ্দেশ্যে পেঁয়াজ কিনেছি। কিন্তু ট্রাক পাচ্ছি না। আগের তুলনায় ট্রাকের ভাড়াও বেড়ে গেছে। আগে ২১ হাজার টাকা হলেই ঢাকায় যাওয়ার জন্য ট্রাক ভাড়া পাওয়া যেতো। সেই ভাড়া এখন ২৫ থেকে ২৬ হাজার হয়ে গেছে। তারপরও চাহিদা মতো ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না।’
হিলি স্থলবন্দরে পণ্য নিতে আসা ট্রাক চালক ইয়াসিন আলী বলেন, ‘বর্তমানে বন্দরে ট্রাকের সংখ্যা কমার কারণ হলো জয়পুরহাট ও বগুড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন আলু উঠতে শুরু করেছে। যা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত যাচ্ছে। একইভাবে এসব অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণে ধানও যাচ্ছে ওইসব এলাকায়। যার কারণে ট্রাকের চাহিদা বেড়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ওখান থেকেই ২২ হাজার টাকা ট্রাকের ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে। হিলি থেকেও পণ্য পরিবহনে একইভাড়া। কিন্তু হিলি পর্যন্ত আসতে বাড়তি ৫০ লিটার তেল পোড়ে। তাই ট্রাকগুলো হিলি স্থলবন্দরে আসছে না। সবাই এখন ওইসব এলাকা থেকে আলু ও ধানের ট্রিপ বেশি নিচ্ছে। বন্দরের পণ্য পরিবহনের চেয়ে কাঁচামালের ভাড়া বেশি হওয়ায় বন্দরে ট্রাক কম আসছে।’ ট্রাকে অতিরিক্ত ভাড়ার প্রসঙ্গে তেলের দাম বৃদ্ধিকেও কারণ হিসেবে বলছেন চালকরা। ইসমাইল হোসেন আরেক ট্রাক চালক বলেন, ‘ট্রাকের ভাড়া বেশি, এর মূল কারণ হলো তেলের দাম বেশি। সে কারণে এখন যেদিকে ট্রিপ নিয়ে পোষাচ্ছে, সেদিকেই যাচ্ছে। কেউ আলু নিয়ে যাচ্ছে, আবার কেউ ধান নিয়ে যাচ্ছে. ওদিকেই পোষাচ্ছে। কিন্তু বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে গিয়ে ভাড়াতে আমাদের পোষাচ্ছে না। প্রতিবার ঢাকা আপডাউন করতে ৫ হাজার টাকার বেশি তেলের জন্যই খরচ হচ্ছে।’
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মাঝে পণ্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আগের তুলনায় আমদানির পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। তবে বন্দরে পণ্য নেওয়ার জন্য ট্রাক কম ঢুকছে। বর্তমানে বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১১০ ট্রাক বাদাম পেঁয়াজ চাল ভুট্টা, ভুষি, খৈল ও পাথরসহ ভারতীয় বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হচ্ছে। এসব পণ্য পরিবহনের জন্য আগে যেখানে বন্দরে ৩০০ থেকে ৩৫০ ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করতো। বর্তমানে তা কমে ২০০-র নিচে নেমেছে। ট্রাক সংকটের কারণে বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন খানিকটা ব্যাহত হচ্ছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

হিলি স্থলবন্দরে ট্রাক সংকটে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

আপডেট সময় : ০১:১৮:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

হিলি প্রতিনিধি : দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে আমদানিকৃত পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কিছু ট্রাক পাওয়া গেলেও গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। আর এতে করে বিপাকে পড়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বন্দরের পণ্যের তুলনায় কাঁচা পণ্য পরিবহনে বাড়তি ভাড়া পাওয়ায় ট্রাক চালকরা সেদিকে ছুটছেন। ফলে পণ্য বন্দরেই রেখে দিতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়, দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত চার্জ। আর বাড়তি ভাড়ায় ট্রাকের ব্যবস্থা করে কেউ কেউ দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন, এতে তাদের পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘আমরা হিলি স্থলবন্দর থেকে ক্রেতাদের চাহিদামতো পেঁয়াজ, ভুষিসহ বিভিন্ন পণ্য কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাই। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বন্দরে ট্রাকের সংকট দেখা দিয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) তিনটি ট্রাকে বহনযোগ্য ভুষি কিনেছেন এই ব্যবসায়ী। তার মধ্যে মাত্র এক ট্রাক লোড দিতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘বাকি দুই ট্রাক আজ লোড দেবো সেই আশায় ছিলাম। কিন্তু আজও বন্দরে ট্রাক সংকট। গতকাল ও আজকের মিলে পাঁচ ট্রাক পণ্য হয়েছে। কিন্তু ট্রাকের ব্যবস্থা হয়েছে তিনটি বাকি দুটি ট্রাকের এখনও কোনও ব্যবস্থা হয়নি। বন্দরে ট্রাকের সংকট দেখা দিয়েছে যার কারণে আগের তুলনায় ভাড়াও বাড়তি। তারপরও আমরা ট্রাক না পাওয়ায় পণ্য পাঠাতে পারছি না।’
অপর ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরা বন্দর থেকে পেঁয়াজ-ভুষিসহ বিভিন্ন আমদানিকৃত পণ্য বিক্রি করে থাকি। আমরা পণ্য বিক্রি করে দিয়েছি। কিন্তু ট্রাকের কারণে ক্রেতারাও পণ্য নিতে পারছেন না, আমরাও ডেলিভারি দিতে পারছি না। পণ্য নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে, বাড়তি হিসেবে দেড় হাজার টাকার মতো বন্দরের মাশুল গুণতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে।’
শুধু তাই নয়, বেশি দিন পণ্য বন্দরে আটকে থাকায় ঘেমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী। হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী স্বপন মুন্সিও জানালেন ট্রাক সংকটের কথা। তিনি বলেন, ‘আমরা বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের উদ্দেশ্যে পেঁয়াজ কিনেছি। কিন্তু ট্রাক পাচ্ছি না। আগের তুলনায় ট্রাকের ভাড়াও বেড়ে গেছে। আগে ২১ হাজার টাকা হলেই ঢাকায় যাওয়ার জন্য ট্রাক ভাড়া পাওয়া যেতো। সেই ভাড়া এখন ২৫ থেকে ২৬ হাজার হয়ে গেছে। তারপরও চাহিদা মতো ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না।’
হিলি স্থলবন্দরে পণ্য নিতে আসা ট্রাক চালক ইয়াসিন আলী বলেন, ‘বর্তমানে বন্দরে ট্রাকের সংখ্যা কমার কারণ হলো জয়পুরহাট ও বগুড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন আলু উঠতে শুরু করেছে। যা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত যাচ্ছে। একইভাবে এসব অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণে ধানও যাচ্ছে ওইসব এলাকায়। যার কারণে ট্রাকের চাহিদা বেড়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ওখান থেকেই ২২ হাজার টাকা ট্রাকের ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে। হিলি থেকেও পণ্য পরিবহনে একইভাড়া। কিন্তু হিলি পর্যন্ত আসতে বাড়তি ৫০ লিটার তেল পোড়ে। তাই ট্রাকগুলো হিলি স্থলবন্দরে আসছে না। সবাই এখন ওইসব এলাকা থেকে আলু ও ধানের ট্রিপ বেশি নিচ্ছে। বন্দরের পণ্য পরিবহনের চেয়ে কাঁচামালের ভাড়া বেশি হওয়ায় বন্দরে ট্রাক কম আসছে।’ ট্রাকে অতিরিক্ত ভাড়ার প্রসঙ্গে তেলের দাম বৃদ্ধিকেও কারণ হিসেবে বলছেন চালকরা। ইসমাইল হোসেন আরেক ট্রাক চালক বলেন, ‘ট্রাকের ভাড়া বেশি, এর মূল কারণ হলো তেলের দাম বেশি। সে কারণে এখন যেদিকে ট্রিপ নিয়ে পোষাচ্ছে, সেদিকেই যাচ্ছে। কেউ আলু নিয়ে যাচ্ছে, আবার কেউ ধান নিয়ে যাচ্ছে. ওদিকেই পোষাচ্ছে। কিন্তু বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে গিয়ে ভাড়াতে আমাদের পোষাচ্ছে না। প্রতিবার ঢাকা আপডাউন করতে ৫ হাজার টাকার বেশি তেলের জন্যই খরচ হচ্ছে।’
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মাঝে পণ্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আগের তুলনায় আমদানির পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। তবে বন্দরে পণ্য নেওয়ার জন্য ট্রাক কম ঢুকছে। বর্তমানে বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১১০ ট্রাক বাদাম পেঁয়াজ চাল ভুট্টা, ভুষি, খৈল ও পাথরসহ ভারতীয় বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হচ্ছে। এসব পণ্য পরিবহনের জন্য আগে যেখানে বন্দরে ৩০০ থেকে ৩৫০ ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করতো। বর্তমানে তা কমে ২০০-র নিচে নেমেছে। ট্রাক সংকটের কারণে বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন খানিকটা ব্যাহত হচ্ছে।