ঢাকা ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫

হিরোশিমা দিবসের ৮০তম বছওে, পারমাণবিক অস্ত্রেও ঝুঁকিতে বিশ্ব

  • আপডেট সময় : ০৫:৪৩:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫
  • ৫৪ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট এক ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসে হিরোশিমার ওপর। পৃথিবীবাসী প্রথমবারের মতো দেখে পারমাণবিক বোমার ধ্বংসযজ্ঞ। ভয়াবহতা দেখে হতভম্ব ওপেনহাইমার আওড়ান ভগবত গীতার বাণী- আমি হয়ে উঠেছি সাক্ষাৎ মৃত্যু, বিশ্ব ধ্বংসকারী (আই অ্যাভ বিকাম ডেথ, সাক্ষাৎ অব ওয়ার্ল্ডস)।

আজ ৮০ বছর পর এসেও বিশ্ব আবারও একই আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুয়ি। বুধবার (৬ আগস্ট) জাপানের শহরটিতে পারমাণবিক বিস্ফোরণের ৮০তম বার্ষিকীতে সমবেত প্রার্থনার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন হাজারও মানুষ।

স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে, ৮০ বছর আগে ঠিক যে সময় হিরোশিমার মানুষের ওপর নেমে এসেছিল মৃত্যু পরোয়ানা, সে সময়কে স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সমবেত মানুষ। এরপর উপস্থিতদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন মেয়র মাতসুয়ি। তিনি বলেন, বিশ্বের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের ৯০ শতাংশই আছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। বিশ্বনেতাদের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা দিনে দিনে গড়ে উঠেছে যে, নিজেদের দেশ রক্ষার জন্য পারমাণবিক অস্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান পরিস্থিতি (হিরোশিমার) মর্মান্তিক অতীতের শিক্ষাকে অগ্রাহ্যই কেবল করে না, বরং শান্তি গঠনের কাঠামোকেও অবহেলা করে।
‘লিটল বয়’ নামের ইউরেনিয়াম বোমা ফেলে পুরো শহরকে গুড়িয়ে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ফলাফল ছিল ৭৮ হাজার মানুষের তাৎক্ষণিক মৃত্যু এবং ভয়াবহ তেজস্ক্রিয়তায় পরবর্তী কয়েকমাসে আরো কয়েক লাখ লোকের প্রাণহানি।
হিরোশিমা ধ্বংসের তিনদিন পরই নাগাসাকি নামের আরেক শহরে পারমাণবিক বোমা ফেলে মার্কিন প্রশাসন। এর এক সপ্তাহ পর ১৫ আগস্ট যুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করে জাপান।

পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ থেকে প্রাথমিকভাবে বেচে যাওয়া ব্যক্তিরা করতে থাকেন অভিশপ্ত জীবন। তাদেরকে নাম দেওয়া হয়েছিল হিবাকুশা। সমাজে প্রচলিত ধারণা ছিল, হিবাকুশারা দেহে হাজারও ব্যাধি নিয়ে ঘুরে বেড়ান আর তাদের বংশধররা হবে কলঙ্কিত। চলতি বছর দেশটিতে হিবাকুশাদের সংখ্যা এক লাখের নিচে নেমে এসেছে।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে মনে করছেন হিরোশিমা স্মরণসভায় উপস্থিত ৭১ বছর বয়সী ইয়োশিকাজু হোরিয়ে। তিনি বলেছেন, ইউরোপ, এশিয়া, এমনকি জাপানেও ভয়ানক সব ঘটনা ঘটছে। আবারও যেন সব একই দিকে যাচ্ছে। বিশ্বের সব নেতার প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা হিরোশিমায় এসে পারমাণবিক বোমার বাস্তবতা স্বচক্ষে দেখে যান। আমার নাতি-নাতনি আছে এবং আমি শান্তি চাই, যেন তারা সুখে থাকতে পারে। হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্কে পারমাণবিক বিস্ফোরণের ট্র্যাজেডির ৮০তম বছরের স্মরণানুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলসহ ১২০টি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল। পারমাণবিক অস্ত্র আবিষ্কারের পর জাপানই একমাত্র ভুক্তভোগী দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র ব্যবহারকারী শক্তি। সেই থেকে শান্তির সংবিধান প্রণয়নকারী জাপান পারমাণবিক অস্ত্র বিলোপের পক্ষে নিজেদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে, যদিও পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে জাতিসংঘের চুক্তিতে দেশটি স্বাক্ষরকারী নয়। তথ্যসূত্র: রয়টার্স

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

হিরোশিমা দিবসের ৮০তম বছওে, পারমাণবিক অস্ত্রেও ঝুঁকিতে বিশ্ব

আপডেট সময় : ০৫:৪৩:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট এক ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসে হিরোশিমার ওপর। পৃথিবীবাসী প্রথমবারের মতো দেখে পারমাণবিক বোমার ধ্বংসযজ্ঞ। ভয়াবহতা দেখে হতভম্ব ওপেনহাইমার আওড়ান ভগবত গীতার বাণী- আমি হয়ে উঠেছি সাক্ষাৎ মৃত্যু, বিশ্ব ধ্বংসকারী (আই অ্যাভ বিকাম ডেথ, সাক্ষাৎ অব ওয়ার্ল্ডস)।

আজ ৮০ বছর পর এসেও বিশ্ব আবারও একই আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুয়ি। বুধবার (৬ আগস্ট) জাপানের শহরটিতে পারমাণবিক বিস্ফোরণের ৮০তম বার্ষিকীতে সমবেত প্রার্থনার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন হাজারও মানুষ।

স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে, ৮০ বছর আগে ঠিক যে সময় হিরোশিমার মানুষের ওপর নেমে এসেছিল মৃত্যু পরোয়ানা, সে সময়কে স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সমবেত মানুষ। এরপর উপস্থিতদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন মেয়র মাতসুয়ি। তিনি বলেন, বিশ্বের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের ৯০ শতাংশই আছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। বিশ্বনেতাদের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা দিনে দিনে গড়ে উঠেছে যে, নিজেদের দেশ রক্ষার জন্য পারমাণবিক অস্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান পরিস্থিতি (হিরোশিমার) মর্মান্তিক অতীতের শিক্ষাকে অগ্রাহ্যই কেবল করে না, বরং শান্তি গঠনের কাঠামোকেও অবহেলা করে।
‘লিটল বয়’ নামের ইউরেনিয়াম বোমা ফেলে পুরো শহরকে গুড়িয়ে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ফলাফল ছিল ৭৮ হাজার মানুষের তাৎক্ষণিক মৃত্যু এবং ভয়াবহ তেজস্ক্রিয়তায় পরবর্তী কয়েকমাসে আরো কয়েক লাখ লোকের প্রাণহানি।
হিরোশিমা ধ্বংসের তিনদিন পরই নাগাসাকি নামের আরেক শহরে পারমাণবিক বোমা ফেলে মার্কিন প্রশাসন। এর এক সপ্তাহ পর ১৫ আগস্ট যুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করে জাপান।

পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ থেকে প্রাথমিকভাবে বেচে যাওয়া ব্যক্তিরা করতে থাকেন অভিশপ্ত জীবন। তাদেরকে নাম দেওয়া হয়েছিল হিবাকুশা। সমাজে প্রচলিত ধারণা ছিল, হিবাকুশারা দেহে হাজারও ব্যাধি নিয়ে ঘুরে বেড়ান আর তাদের বংশধররা হবে কলঙ্কিত। চলতি বছর দেশটিতে হিবাকুশাদের সংখ্যা এক লাখের নিচে নেমে এসেছে।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে মনে করছেন হিরোশিমা স্মরণসভায় উপস্থিত ৭১ বছর বয়সী ইয়োশিকাজু হোরিয়ে। তিনি বলেছেন, ইউরোপ, এশিয়া, এমনকি জাপানেও ভয়ানক সব ঘটনা ঘটছে। আবারও যেন সব একই দিকে যাচ্ছে। বিশ্বের সব নেতার প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা হিরোশিমায় এসে পারমাণবিক বোমার বাস্তবতা স্বচক্ষে দেখে যান। আমার নাতি-নাতনি আছে এবং আমি শান্তি চাই, যেন তারা সুখে থাকতে পারে। হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্কে পারমাণবিক বিস্ফোরণের ট্র্যাজেডির ৮০তম বছরের স্মরণানুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলসহ ১২০টি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল। পারমাণবিক অস্ত্র আবিষ্কারের পর জাপানই একমাত্র ভুক্তভোগী দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র ব্যবহারকারী শক্তি। সেই থেকে শান্তির সংবিধান প্রণয়নকারী জাপান পারমাণবিক অস্ত্র বিলোপের পক্ষে নিজেদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে, যদিও পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে জাতিসংঘের চুক্তিতে দেশটি স্বাক্ষরকারী নয়। তথ্যসূত্র: রয়টার্স