ঢাকা ০২:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
আলোচনা অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

হাসিনা যে অপরাধ করেছে তা হানাদার বাহিনীর চেয়েও জঘন্য

  • আপডেট সময় : ০৯:১৬:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

মঙ্গলবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘জুলাই গণহত্যার বিচার: আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেখ হাসিনা এবং তার দোসররা যে অপরাধ বাংলাদেশে করেছে, সেরকম জঘন্য অপরাধ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীও করেনি। এমন মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা, আহত মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলা, আনআর্মস (নিরস্ত্র) আহত মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলা– এগুলো যুদ্ধাপরাধ।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউটের মিলনায়তনে ‘জুলাই গণহত্যার বিচার, আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। আইন উপদেষ্টা বলেন, আপনারা বলতে পারেন, এরকম তো ২৫ মার্চ কালরাত্রে ঘটেছে। অবশ্যই, ২৫ মার্চের কালরাত্রে ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ওটা তো অন্য দেশের বাহিনী। আমরা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছি, তারপর। মানে আপনি যদি পারসপেক্টিভ দেখেন, পারসপেক্টিভ ওয়াজ ডিফারেন্ট। ৭১ সালে ডেডবডি পুড়িয়ে ফেলেছে, এরকম কোনো ফুটেজ আমি দেখিনি; একজন গুলি খেয়েছে, তাকে ধরে পিছু নিয়ে যাচ্ছে তার বন্ধু, সে অবস্থায় গুলি করেছে- এরকম কোনো ফুটেজ, কোনো বর্ণনা আমি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাইনি। অন্যরকম নৃশংসতা থাকতে পারে, কিন্তু এরকম নৃশংসতার গল্প পাইনি। আসিফ নজরুল বলেন, আপনারা বিভিন্ন প্রত্যাশার কথা, বেদনার কথা বলেন। মাঝে মাঝে একটু দুঃখ লাগে। আজকে তাজুল (চিফ প্রসিকিউটর) কিছু কথা বলল যে আমরা কীভাবে কাজ করি। আমি আপনাদের বলতে পারি, তাজুল কীভাবে কাজ করে। তাজুল রাত ২টা পর্যন্ত কাজ করে, একটা নতুন কিছু হলে চকচকে চেহারা করে আইন মন্ত্রণালয়ে দৌড়ে আসে, বলে স্যার ওরকম একটা এভিডেন্স পেয়েছি। এই যে ইমোশন, এই যে পরিশ্রম, এই যে কষ্ট এই পুরা টিম করছে- আমরা লেগে আছি। আসিফ নজরুল ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, তাজুলের সঙ্গে দেখা হলে প্রথম কথা, আমরা নিজের কাছে নিজে মুখ দেখাতে পারব না, আল্লাহর কাছে জবাব দিতে পারব না। বারবার একটা কথাই বলি, বিচার কত ভালোভাবে করা যায়, কতটুকু করা যায়। তারপরও অনেক অভিযোগ শুনি, অনেক কিছু শুনি, খুব দুঃখ লাগে মাঝে মাঝে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, এটার জন্যই তো আমাদের সন্তানরা প্রাণ দিয়েছিল। আপনারা আমাদের প্রশ্ন করবেন, সমালোচনা করবেন; কষ্ট লাগলেও শুনব, আবার রিফোকাস করব। কিন্তু আপনাদের একটা জিনিস বলতে চাই, আমি একজন রিলিজিয়াস মানুষ, আমি যখন নামাজ পড়ি বা যখন আমি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, সবসময় বলি আমি যেন আল্লাহর কাছে জবাব দিতে পারি। আমি যখন জায়নামাজে যাই, দোয়া পড়ি, তখন মনে হয় আল্লাহ তো আমাকে দেখছে। আমি কি আল্লাহর কাছে জবাব দিতে পারব?উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আপনাদের কনফিডেন্টলি বলে যাই, ওপরে আল্লাহ আছে, অবশ্যই পারব। আসিফ নজরুল বলেন, আমি একজন খুব ইমোশনাল মানুষ, আমি একজন লেখক। আমি যখন এই গণঅভ্যুত্থানকালে ছিলাম, আমি কল্পনা করতে পারিনি এরকম এইরকম বর্বরতা হয়েছে। শুনতাম, আবু সাঈদের মৃত্যুটা দেখেছি। তার চেয়ে ভয়াবহ দৃশ্য পরে দেখেছি; আপনারা দেখেছেন, লাশ জ্বালিয়ে দিচ্ছে। একটা ছেলেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তার বন্ধু, সে মরে যাচ্ছে মনে হচ্ছে, তারপরও তাকে গুলি করছে।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এসব দৃশ্য দেখলে, যতবার দেখি, যতবার দেখি মাথায় আগুন চেপে যায়, আর চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। আমি আন্তর্জাতিক আইন পড়েছি ল’য়ের স্টুডেন্ট হিসেবে। যুদ্ধক্ষেত্রে আপনার শত্রু যদি আনআর্মস থাকে, তার হাতে যদি কিছু না থাকে, যুদ্ধক্ষেত্রে আপনি তাকে গুলি করতে এলাউড না। গুলি করলে আপনি যুদ্ধাপরাধ করবেন। যুদ্ধক্ষেত্রে যদি একজন গুলি খেয়ে আহত হয়ে পড়ে থাকে, তারপর আপনি তাকে গুলি করতে এলাউড না। কারণ এটা যুদ্ধাপরাধ। যুদ্ধের ময়দানে আপনি আহত লোককে যদি চিকিৎসা না দেন, সেটা যুদ্ধাপরাধ। যুদ্ধের ময়দানে আপনি যদি ডেডবডি পুড়িয়ে ফেলেন, এটা যুদ্ধাপরাধ।
‘আমরা তো মানুষ। এই বিচারের সঙ্গে যারা ইনভলভ আছে, আমরা বেছে বেছে মানুষগুলোকে ঠিক করেছি। আমি তাজুলকে চিনতাম না। তাজুলকে যখন ঠিক করা হয়, চিফ প্রসিকিউটর করা হয়, অনেক মানুষ আমাকে বলেছে তাজুলকে কেন দিচ্ছেন, কন্ট্রোভার্সি হবে। কীসের কন্ট্রোভার্সি? আমার দরকার এরকম ল’য়ার, যাকে ১০০০ কোটি টাকায় কিনতে পারবে না। সরি, অনেক বড় বড় ল’য়ার আছে, আমার এ আস্থা নাই তাদের প্রতি। ১০০০ কোটি টাকা দিয়ে কিনতে পারবে নাকি বা পারবে না এটা শতভাগ আস্থা নাই। তাজুলের জন্য আছে। তাজুলের দক্ষতা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নাই। এই আইনে প্রসিকিউট করার ব্যাপারে তাজুলের সঙ্গে তুলনা হয়তো প্রয়াত ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বা দুই-একজন মানুষ হবে। আর কেউ পারবে না।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, আপনারা আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখেন। আমার দায়িত্বে, আমাদের দায়িত্বে বিন্দুমাত্র অবহেলা করি না। আপনাদের প্রতি দায় না, এটা আল্লাহর প্রতি দায়, আমরা এভাবে দেখছি জিনিসটা। এরকম হত্যাকাণ্ডের বিচারের দায়িত্ব যারা পায়, তারা যদি বিচার না করে আল্লাহ তাদের বিচার করবে, এটা আমরা জানি। জুলাই গণহত্যার বিচারের সময় নিয়ে তিনি বলেন, আপনারা অনেক টাইমফ্রেমের কথা বলেন। আজকে তাজুল বলেছে ডিসেম্বরের মধ্যে হবে। আমিও একবার বলেছি, ভেতরে যে অগ্রগতি জানি, এনালাইসিস করে বলেছিলাম, হয়তো অক্টোবরের মধ্যে পাব। এগুলো যদি আমরা বলি আপনারা খুশি হন। কিন্তু এগুলো বলা আমাদের ঠিক না। এগুলো বললে আমাদের এই কথাগুলো নিয়েই তো যারা এই বিচারের প্রতিপক্ষ আছে, আপনারা জানেন না তারা কীরকম। এত বড় গণহত্যা হয়েছে তাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নাই।
‘একটা দল ১৫টা বছর শুধু মিথ্যার নির্যাতন করে চালিয়েছে। এখনো তাদের মিথ্যাচার বিন্দুমাত্র থামে নাই, এখনো নির্যাতনের ইচ্ছা বিন্দুমাত্র থামে নাই। আপনারা যখন মহাখুনি শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনেন দেখবেন, এখনো তার নির্যাতন করার ইচ্ছা পুরো মাত্রায় আছে, প্রতিশোধ নেওয়ার।’ আসিফ নজরুল বলেন, ‘এমনভাবে বিচারের অকাট্য সাক্ষ্য প্রমাণ আমরা রেখে যাব, কোনো সরকার চাইলেও বিচার থেকে সরতে পারবে না, এটা আপনারা নিশ্চিত থাকেন। যদি আমি ফাউন্ডেশন অসাধারণ করে দিয়ে যাই, সে ফাউন্ডেশন অস্বীকার করা পরবর্তী সরকারের জন্য সম্ভব হবে না। আর আমি বিশ্বাস করি না, পরবর্তীকালে যেই ক্ষমতায় আসুক বিএনপি হোক জামায়াত হোক, এনসিপি হোক- আমি বিশ্বাস করি না, তারা বিচারে শৈথিল্য বা গাফিলতি দেখাবে। তারা সবাই এই ১৫ বছরের নির্যাতিত মানুষ। তারা শেখ হাসিনা সরকারের ফ্যাসিজম আপনার আমার চেয়ে কম দেখে নাই।’ তিনি বলেন, আমরা অনেক ভুগেছি, কিন্তু সবার ভোগান্তির চেয়ে শতগুণ বেশি কিন্তু খালেদা জিয়া ভুগেছেন। আপনি আমি বিচার করব, আর উনারা বিচার করবে না?

‘ড. ইউনূস কি শহীদ পরিবারের মুখোমুখি হতে ভয় পান’: বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের মুখোমুখি হতে ভয় পান কিনা এমন প্রশ্ন করেছেন শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন।
রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় উপস্থিত অতিথিদের সামনে তিনি এ প্রশ্ন রাখেন। জুলাই গণহত্যার বিচার আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মো. মহিউদ্দিন বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস কি শহীদ পরিবারের মুখোমুখি হতে ভয় পান? কারণ, উনার সঙ্গে আমরা কিছু কিছু পরিবার আলাদাভাবে বা জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্য হিসেবে দেখা করতে গিয়েছি। উনি বলেছেন, আপনাদের (শহীদ পরিবার) সঙ্গে আমার বসা হয়নি। আমি একদিন সারাদিন আপনাদের জন্য রাখবো, আপনাদের কথা শুনবো। কিন্তু এক বছর পার হয়ে গেছে, উনি আমাদের সময় দেননি, দিতে পারেননি। আগামী ৫ আগস্ট জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আমরা একটি প্রজেক্ট সাবমিট করলাম বাংলাদেশ ব্যাংকে, সেখানে ওনার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) সম্মতিতে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র সব শহীদ পরিবারকে আনা হবে এবং উনি সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ওনার দপ্তর এটা অস্বীকার করেছে। এখন বলা হচ্ছে, ৫ আগস্ট সমস্ত জুলাই যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবার স্ব স্ব ডিসি অফিসে উপস্থিত থাকবেন, আর উনি ওইদিন আমাদের ভিডিও বার্তা দিবেন। কেন? যাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে উনি আজকে প্রধান উপদেষ্টা এবং অপ্রিয় সত্যি হলেও বলবো, উনার হাজার কোটি টাকার ট্যাক্স মাপ করে নিয়েছেন, উনি ছয় মাসে দণ্ডিত আসামি ছিলেন, সেটিও মাপ করে নিয়েছেন, উনি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়েছেন আমাদের সন্তানদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে। এখন আমাদের মুখোমুখি হতে উনি ভয় পান, কেন?
তিনি আরো বলেন, আমার সন্তানরা শহীদ হয়েছে যে আবেগ নিয়ে, বৈষম্যহীন একটি দেশ গঠনের জন্য, কই, কোথাও তার কোনো প্রকাশ দেখছি না। দুঃখজনক হলেও সত্য, কাকে দিয়ে আমরা জুলাই হত্যার তদন্ত করবো? যে বাহিনী হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তাকে দিয়েই যদি তদন্ত করানো হয়। আপনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারক দোসরের থেকে সুবিধাভোগী। আপনারাই প্রমাণ করেছেন, ওনার নামে বরাদ্দ ফ্ল্যাট বাতিল করা হয়েছে। তার মানে তিনি একজন অপরাধী, উনি বিচারক থাকতে পারেন না। কিন্তু তিনি এখনো বহাল। তিনি কি বিচার করবে আমাদের সন্তানদের।
মো. মহিউদ্দিন বলেন বলেন, বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরাচারের দোসরদের বসিয়ে রেখে, আমাদের সংস্কারের কথা শোনানো হচ্ছে। প্রত্যেকটা জায়গায় স্বৈরাচারের দোসরদের ঢুকিয়ে রেখে আমাদের সান্ত্বনা দেওয়া হয়। এই কথাগুলো বলতে গেলে আমরা বলতে পারি না। আমাদের নাকি বিদেশ থেকে কারা বার্তা দেয়।
তিনি আরো বলেন, একটি মামলায় বাবর ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে খালাস করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই মামলায় যারা আলেম-ওলামা ছিল, তাদের এখনো আটকে রেখেছে কোন আইনের বলে? বিডিআরের একটি মামলায় অভিযুক্তদের খালাস করে দেওয়া হয়েছে, তাদের শাস্তি হয়েছে। কিন্তু তাদের আবার অস্ত্র আইন দেখিয়ে আবার তাদের আটকানো হয়েছে কোন আইনের বলে? এখনো যদি আমাদের এই আইনই দেখতে হয়, তাহলে আপনারা কি করলেন। একটি বছর চলে গেল। যদি ব্রিটিশ আইনই মানতে হয়, স্বৈরাচারের সেই সংবিধানই মানতে হয়, আমাদের সন্তানেরা তো সংবিধান মেনে আন্দোলন করেনি। আর আপনাদের কে বাধ্য করছে, সংবিধান মানতে হবে।
শহীদ ইয়ামিনের বাবা বলেন, আপনারা (সরকার) যে সিস্টেমের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, আপনারা বলছেন, পরবর্তী সরকার এসে আমাদের এই বিচার করে যাবে। কোনোভাবেই সম্ভব না। আপনারা কোনো ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেননি। পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা ভোটের বিনিময়ে ক্ষমতায় আসবে। তারা চোরের ভোট চায়, তারা ঘুষখোরের ভোট চায়, তারা চাঁদাবাজদের ভোট চায়, তারা আওয়ামী লীগ দোসরের ভোটও তারা চায়। ভোটের বিনিময়ে তারা ক্ষমতায় আসবে, তাদের এত ঠেকা পড়ে নাই শহীদদের বিচার করবে। কখনোই তারা করবে না। তিনি আরো বলেন, এস আলমের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার এদেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। আর এতে সহযোগিতা করেছে মুখোশধারী কিছু ইসলামী ব্যক্তিত্ব। কারণ তারা ইসলামী ব্যাংকগুলোকেই বেশি লক্ষ্য করেছিল। আর তারা লক্ষ্য কোটি টাকা পাচারে সহযোগিতা করেছিল।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহেরের স্বাগত বক্তব্যে দেন। পরে জুলাই আন্দোলনে নিহত ও সম্প্রতি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরাবতা পালন করা হয়। পরে হতাহতদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব (বাজেট ও উন্নয়ন) রুহুল আমীন। এরপর জুলাই আন্দোলন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি আরমান হোসন প্রমুখ।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আলোচনা অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

হাসিনা যে অপরাধ করেছে তা হানাদার বাহিনীর চেয়েও জঘন্য

আপডেট সময় : ০৯:১৬:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেখ হাসিনা এবং তার দোসররা যে অপরাধ বাংলাদেশে করেছে, সেরকম জঘন্য অপরাধ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীও করেনি। এমন মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা, আহত মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলা, আনআর্মস (নিরস্ত্র) আহত মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলা– এগুলো যুদ্ধাপরাধ।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউটের মিলনায়তনে ‘জুলাই গণহত্যার বিচার, আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। আইন উপদেষ্টা বলেন, আপনারা বলতে পারেন, এরকম তো ২৫ মার্চ কালরাত্রে ঘটেছে। অবশ্যই, ২৫ মার্চের কালরাত্রে ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ওটা তো অন্য দেশের বাহিনী। আমরা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছি, তারপর। মানে আপনি যদি পারসপেক্টিভ দেখেন, পারসপেক্টিভ ওয়াজ ডিফারেন্ট। ৭১ সালে ডেডবডি পুড়িয়ে ফেলেছে, এরকম কোনো ফুটেজ আমি দেখিনি; একজন গুলি খেয়েছে, তাকে ধরে পিছু নিয়ে যাচ্ছে তার বন্ধু, সে অবস্থায় গুলি করেছে- এরকম কোনো ফুটেজ, কোনো বর্ণনা আমি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাইনি। অন্যরকম নৃশংসতা থাকতে পারে, কিন্তু এরকম নৃশংসতার গল্প পাইনি। আসিফ নজরুল বলেন, আপনারা বিভিন্ন প্রত্যাশার কথা, বেদনার কথা বলেন। মাঝে মাঝে একটু দুঃখ লাগে। আজকে তাজুল (চিফ প্রসিকিউটর) কিছু কথা বলল যে আমরা কীভাবে কাজ করি। আমি আপনাদের বলতে পারি, তাজুল কীভাবে কাজ করে। তাজুল রাত ২টা পর্যন্ত কাজ করে, একটা নতুন কিছু হলে চকচকে চেহারা করে আইন মন্ত্রণালয়ে দৌড়ে আসে, বলে স্যার ওরকম একটা এভিডেন্স পেয়েছি। এই যে ইমোশন, এই যে পরিশ্রম, এই যে কষ্ট এই পুরা টিম করছে- আমরা লেগে আছি। আসিফ নজরুল ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, তাজুলের সঙ্গে দেখা হলে প্রথম কথা, আমরা নিজের কাছে নিজে মুখ দেখাতে পারব না, আল্লাহর কাছে জবাব দিতে পারব না। বারবার একটা কথাই বলি, বিচার কত ভালোভাবে করা যায়, কতটুকু করা যায়। তারপরও অনেক অভিযোগ শুনি, অনেক কিছু শুনি, খুব দুঃখ লাগে মাঝে মাঝে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, এটার জন্যই তো আমাদের সন্তানরা প্রাণ দিয়েছিল। আপনারা আমাদের প্রশ্ন করবেন, সমালোচনা করবেন; কষ্ট লাগলেও শুনব, আবার রিফোকাস করব। কিন্তু আপনাদের একটা জিনিস বলতে চাই, আমি একজন রিলিজিয়াস মানুষ, আমি যখন নামাজ পড়ি বা যখন আমি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, সবসময় বলি আমি যেন আল্লাহর কাছে জবাব দিতে পারি। আমি যখন জায়নামাজে যাই, দোয়া পড়ি, তখন মনে হয় আল্লাহ তো আমাকে দেখছে। আমি কি আল্লাহর কাছে জবাব দিতে পারব?উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আপনাদের কনফিডেন্টলি বলে যাই, ওপরে আল্লাহ আছে, অবশ্যই পারব। আসিফ নজরুল বলেন, আমি একজন খুব ইমোশনাল মানুষ, আমি একজন লেখক। আমি যখন এই গণঅভ্যুত্থানকালে ছিলাম, আমি কল্পনা করতে পারিনি এরকম এইরকম বর্বরতা হয়েছে। শুনতাম, আবু সাঈদের মৃত্যুটা দেখেছি। তার চেয়ে ভয়াবহ দৃশ্য পরে দেখেছি; আপনারা দেখেছেন, লাশ জ্বালিয়ে দিচ্ছে। একটা ছেলেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তার বন্ধু, সে মরে যাচ্ছে মনে হচ্ছে, তারপরও তাকে গুলি করছে।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এসব দৃশ্য দেখলে, যতবার দেখি, যতবার দেখি মাথায় আগুন চেপে যায়, আর চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। আমি আন্তর্জাতিক আইন পড়েছি ল’য়ের স্টুডেন্ট হিসেবে। যুদ্ধক্ষেত্রে আপনার শত্রু যদি আনআর্মস থাকে, তার হাতে যদি কিছু না থাকে, যুদ্ধক্ষেত্রে আপনি তাকে গুলি করতে এলাউড না। গুলি করলে আপনি যুদ্ধাপরাধ করবেন। যুদ্ধক্ষেত্রে যদি একজন গুলি খেয়ে আহত হয়ে পড়ে থাকে, তারপর আপনি তাকে গুলি করতে এলাউড না। কারণ এটা যুদ্ধাপরাধ। যুদ্ধের ময়দানে আপনি আহত লোককে যদি চিকিৎসা না দেন, সেটা যুদ্ধাপরাধ। যুদ্ধের ময়দানে আপনি যদি ডেডবডি পুড়িয়ে ফেলেন, এটা যুদ্ধাপরাধ।
‘আমরা তো মানুষ। এই বিচারের সঙ্গে যারা ইনভলভ আছে, আমরা বেছে বেছে মানুষগুলোকে ঠিক করেছি। আমি তাজুলকে চিনতাম না। তাজুলকে যখন ঠিক করা হয়, চিফ প্রসিকিউটর করা হয়, অনেক মানুষ আমাকে বলেছে তাজুলকে কেন দিচ্ছেন, কন্ট্রোভার্সি হবে। কীসের কন্ট্রোভার্সি? আমার দরকার এরকম ল’য়ার, যাকে ১০০০ কোটি টাকায় কিনতে পারবে না। সরি, অনেক বড় বড় ল’য়ার আছে, আমার এ আস্থা নাই তাদের প্রতি। ১০০০ কোটি টাকা দিয়ে কিনতে পারবে নাকি বা পারবে না এটা শতভাগ আস্থা নাই। তাজুলের জন্য আছে। তাজুলের দক্ষতা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নাই। এই আইনে প্রসিকিউট করার ব্যাপারে তাজুলের সঙ্গে তুলনা হয়তো প্রয়াত ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বা দুই-একজন মানুষ হবে। আর কেউ পারবে না।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, আপনারা আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখেন। আমার দায়িত্বে, আমাদের দায়িত্বে বিন্দুমাত্র অবহেলা করি না। আপনাদের প্রতি দায় না, এটা আল্লাহর প্রতি দায়, আমরা এভাবে দেখছি জিনিসটা। এরকম হত্যাকাণ্ডের বিচারের দায়িত্ব যারা পায়, তারা যদি বিচার না করে আল্লাহ তাদের বিচার করবে, এটা আমরা জানি। জুলাই গণহত্যার বিচারের সময় নিয়ে তিনি বলেন, আপনারা অনেক টাইমফ্রেমের কথা বলেন। আজকে তাজুল বলেছে ডিসেম্বরের মধ্যে হবে। আমিও একবার বলেছি, ভেতরে যে অগ্রগতি জানি, এনালাইসিস করে বলেছিলাম, হয়তো অক্টোবরের মধ্যে পাব। এগুলো যদি আমরা বলি আপনারা খুশি হন। কিন্তু এগুলো বলা আমাদের ঠিক না। এগুলো বললে আমাদের এই কথাগুলো নিয়েই তো যারা এই বিচারের প্রতিপক্ষ আছে, আপনারা জানেন না তারা কীরকম। এত বড় গণহত্যা হয়েছে তাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নাই।
‘একটা দল ১৫টা বছর শুধু মিথ্যার নির্যাতন করে চালিয়েছে। এখনো তাদের মিথ্যাচার বিন্দুমাত্র থামে নাই, এখনো নির্যাতনের ইচ্ছা বিন্দুমাত্র থামে নাই। আপনারা যখন মহাখুনি শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনেন দেখবেন, এখনো তার নির্যাতন করার ইচ্ছা পুরো মাত্রায় আছে, প্রতিশোধ নেওয়ার।’ আসিফ নজরুল বলেন, ‘এমনভাবে বিচারের অকাট্য সাক্ষ্য প্রমাণ আমরা রেখে যাব, কোনো সরকার চাইলেও বিচার থেকে সরতে পারবে না, এটা আপনারা নিশ্চিত থাকেন। যদি আমি ফাউন্ডেশন অসাধারণ করে দিয়ে যাই, সে ফাউন্ডেশন অস্বীকার করা পরবর্তী সরকারের জন্য সম্ভব হবে না। আর আমি বিশ্বাস করি না, পরবর্তীকালে যেই ক্ষমতায় আসুক বিএনপি হোক জামায়াত হোক, এনসিপি হোক- আমি বিশ্বাস করি না, তারা বিচারে শৈথিল্য বা গাফিলতি দেখাবে। তারা সবাই এই ১৫ বছরের নির্যাতিত মানুষ। তারা শেখ হাসিনা সরকারের ফ্যাসিজম আপনার আমার চেয়ে কম দেখে নাই।’ তিনি বলেন, আমরা অনেক ভুগেছি, কিন্তু সবার ভোগান্তির চেয়ে শতগুণ বেশি কিন্তু খালেদা জিয়া ভুগেছেন। আপনি আমি বিচার করব, আর উনারা বিচার করবে না?

‘ড. ইউনূস কি শহীদ পরিবারের মুখোমুখি হতে ভয় পান’: বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের মুখোমুখি হতে ভয় পান কিনা এমন প্রশ্ন করেছেন শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন।
রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় উপস্থিত অতিথিদের সামনে তিনি এ প্রশ্ন রাখেন। জুলাই গণহত্যার বিচার আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মো. মহিউদ্দিন বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস কি শহীদ পরিবারের মুখোমুখি হতে ভয় পান? কারণ, উনার সঙ্গে আমরা কিছু কিছু পরিবার আলাদাভাবে বা জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্য হিসেবে দেখা করতে গিয়েছি। উনি বলেছেন, আপনাদের (শহীদ পরিবার) সঙ্গে আমার বসা হয়নি। আমি একদিন সারাদিন আপনাদের জন্য রাখবো, আপনাদের কথা শুনবো। কিন্তু এক বছর পার হয়ে গেছে, উনি আমাদের সময় দেননি, দিতে পারেননি। আগামী ৫ আগস্ট জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আমরা একটি প্রজেক্ট সাবমিট করলাম বাংলাদেশ ব্যাংকে, সেখানে ওনার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) সম্মতিতে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র সব শহীদ পরিবারকে আনা হবে এবং উনি সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ওনার দপ্তর এটা অস্বীকার করেছে। এখন বলা হচ্ছে, ৫ আগস্ট সমস্ত জুলাই যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবার স্ব স্ব ডিসি অফিসে উপস্থিত থাকবেন, আর উনি ওইদিন আমাদের ভিডিও বার্তা দিবেন। কেন? যাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে উনি আজকে প্রধান উপদেষ্টা এবং অপ্রিয় সত্যি হলেও বলবো, উনার হাজার কোটি টাকার ট্যাক্স মাপ করে নিয়েছেন, উনি ছয় মাসে দণ্ডিত আসামি ছিলেন, সেটিও মাপ করে নিয়েছেন, উনি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়েছেন আমাদের সন্তানদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে। এখন আমাদের মুখোমুখি হতে উনি ভয় পান, কেন?
তিনি আরো বলেন, আমার সন্তানরা শহীদ হয়েছে যে আবেগ নিয়ে, বৈষম্যহীন একটি দেশ গঠনের জন্য, কই, কোথাও তার কোনো প্রকাশ দেখছি না। দুঃখজনক হলেও সত্য, কাকে দিয়ে আমরা জুলাই হত্যার তদন্ত করবো? যে বাহিনী হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তাকে দিয়েই যদি তদন্ত করানো হয়। আপনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারক দোসরের থেকে সুবিধাভোগী। আপনারাই প্রমাণ করেছেন, ওনার নামে বরাদ্দ ফ্ল্যাট বাতিল করা হয়েছে। তার মানে তিনি একজন অপরাধী, উনি বিচারক থাকতে পারেন না। কিন্তু তিনি এখনো বহাল। তিনি কি বিচার করবে আমাদের সন্তানদের।
মো. মহিউদ্দিন বলেন বলেন, বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরাচারের দোসরদের বসিয়ে রেখে, আমাদের সংস্কারের কথা শোনানো হচ্ছে। প্রত্যেকটা জায়গায় স্বৈরাচারের দোসরদের ঢুকিয়ে রেখে আমাদের সান্ত্বনা দেওয়া হয়। এই কথাগুলো বলতে গেলে আমরা বলতে পারি না। আমাদের নাকি বিদেশ থেকে কারা বার্তা দেয়।
তিনি আরো বলেন, একটি মামলায় বাবর ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে খালাস করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই মামলায় যারা আলেম-ওলামা ছিল, তাদের এখনো আটকে রেখেছে কোন আইনের বলে? বিডিআরের একটি মামলায় অভিযুক্তদের খালাস করে দেওয়া হয়েছে, তাদের শাস্তি হয়েছে। কিন্তু তাদের আবার অস্ত্র আইন দেখিয়ে আবার তাদের আটকানো হয়েছে কোন আইনের বলে? এখনো যদি আমাদের এই আইনই দেখতে হয়, তাহলে আপনারা কি করলেন। একটি বছর চলে গেল। যদি ব্রিটিশ আইনই মানতে হয়, স্বৈরাচারের সেই সংবিধানই মানতে হয়, আমাদের সন্তানেরা তো সংবিধান মেনে আন্দোলন করেনি। আর আপনাদের কে বাধ্য করছে, সংবিধান মানতে হবে।
শহীদ ইয়ামিনের বাবা বলেন, আপনারা (সরকার) যে সিস্টেমের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, আপনারা বলছেন, পরবর্তী সরকার এসে আমাদের এই বিচার করে যাবে। কোনোভাবেই সম্ভব না। আপনারা কোনো ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেননি। পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা ভোটের বিনিময়ে ক্ষমতায় আসবে। তারা চোরের ভোট চায়, তারা ঘুষখোরের ভোট চায়, তারা চাঁদাবাজদের ভোট চায়, তারা আওয়ামী লীগ দোসরের ভোটও তারা চায়। ভোটের বিনিময়ে তারা ক্ষমতায় আসবে, তাদের এত ঠেকা পড়ে নাই শহীদদের বিচার করবে। কখনোই তারা করবে না। তিনি আরো বলেন, এস আলমের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার এদেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। আর এতে সহযোগিতা করেছে মুখোশধারী কিছু ইসলামী ব্যক্তিত্ব। কারণ তারা ইসলামী ব্যাংকগুলোকেই বেশি লক্ষ্য করেছিল। আর তারা লক্ষ্য কোটি টাকা পাচারে সহযোগিতা করেছিল।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহেরের স্বাগত বক্তব্যে দেন। পরে জুলাই আন্দোলনে নিহত ও সম্প্রতি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরাবতা পালন করা হয়। পরে হতাহতদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব (বাজেট ও উন্নয়ন) রুহুল আমীন। এরপর জুলাই আন্দোলন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি আরমান হোসন প্রমুখ।