ঢাকা ০৬:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫

হাসিনা-মোদী শীর্ষ বৈঠক :অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতায় জোর

  • আপডেট সময় : ০৩:১৫:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৮৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : ভারত ও বাংলাদেশের পাশাপাশি পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গতকাল মঙ্গলবার দিল্লীর হায়দরাবাদ হাউজে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই নেতাই সহযোগিতা আর সমঝোতার ভিত্তিতে সুখি ও সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল দেশ গড়ার কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, গত ৫০ বছরের গড়ে ওঠা শক্তিশালী অংশীদারিত্বের উপর ভর করে উভয় দেশ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিস্তৃত সব বিষয় নিয়ে কাজ করছে।
”আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখা এবং দুদেশ ও এ অঞ্চলের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমি ও প্রধানমন্ত্রী মোদী একমত হয়েছি।” নরেন্দ্র মোদী তার বক্তৃতায় বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার বিষয়ে তারা জোর দিয়েছেন আলোচনায়।
”১৯৭১ সালের আদর্শকে জীবন্ত রেখে এই ধরনের শক্তিকে সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করা জরুরি, যারা আমাদের পারস্পরিক বিশ্বাসকে আঘাত করতে চায়।” শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গতি সঞ্চার করার ক্ষেত্রে মোদী জির দূরদর্শী নেতৃত্বকে সাধুবাদ জানাই। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে নিকট প্রতিবেশী ভারত। প্রতিবেশীদের মধ্যে কূটনীতির ক্ষেত্রে দুদেশের সম্পর্ক রোল মডেল।” তিনি বলেন, “আজ প্রধানমন্ত্রী মোদী ও আমি আরেক দফায় ফলপ্রসূ আলোচনা শেষ করেছি, যার ফল আমাদের দুদেশের জনগণের উপকার বয়ে আনবে। নিবিড় বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার উদ্দীপনা নিয়ে আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী বলেন, এশিয়ার মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার বাংলাদেশ। এই অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে দ্বিপক্ষীয় সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সেপা) করার আলোচনা দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করতে চান তারা। দুদেশের সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে মোদী বলেন, “আজ বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী এবং এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। মানুষে মানুষে সংযোগের ক্ষেত্রে অব্যাহত উন্নতি হচ্ছে।
“গত কয়েক বছরে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমি বহু দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি।” মোদী বলেন, ”কোভিড মহামারী ও সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া এবং আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা দরকার।” দুদেশের সহযোগিতা নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিস্তৃত করার প্রসঙ্গ ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বন্যা মোকাবেলায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা বিস্তৃত করেছি। আমরা বাংলাদেশের সাথে বন্যার তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময় করছি। ”এবং আমরা আলোচনা করে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যে শক্তি আমাদের শত্রু, তাদের যেন আমরা একসাথে মোকাবেলা করতে পারি।” মোদী বলেন, “ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ ও পারমাণবিক খাতে সহযোগিতা বিস্তৃত করার আলোচনা আমরা করেছি। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন করার বিষয়েও আলোচনা চলমান আছে।”
গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং প্রথমবারের মতো মৈত্রী দিবস উদযাপনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মোদী বলেন, আগামী দিনগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। দুই দেশের বহু সমস্যা আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানের ধারাবাহিকতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করার আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে অনেক অনিষ্পন্ন সমস্যার সমাধান ইতোমধ্যে করেছি। আমি আশা করি তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তিসহ অন্যান্য অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো শিগগির সম্পন্ন করতে পারব। ”আমি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ জানাই, আজকে আমরা কুশিয়ারা ইস্যু সমাধান করেছি এবং আমি আশাবাদী, মোট যে ৫৪টি নদী আছে, সেগুলো আমি জানি, যতক্ষণ পর্যন্ত মোদী আছেন, বাংলাদেশ-ভারত আমরা সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব।” কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন চুক্তিকে স্বাগত জানালেও তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ সংবাদ সম্মেলনে আনেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “ভারত-বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়েছে ৫৪টি নদী এবং এগুলো শত শত বছর ধরে দুদেশের মানুষের জীবিকার সাথে সংযুক্ত থেকেছে। এসব নদী, এগুলোকে জড়িয়ে থাকা লোকগাঁথা ও লোক সংগীত আমাদের একীভূত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করছে। “আজকে আমরা কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এটা ভারতের দক্ষিণ আসাম ও বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলকে উপকৃত করবে।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

হাসিনা-মোদী শীর্ষ বৈঠক :অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতায় জোর

আপডেট সময় : ০৩:১৫:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : ভারত ও বাংলাদেশের পাশাপাশি পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গতকাল মঙ্গলবার দিল্লীর হায়দরাবাদ হাউজে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই নেতাই সহযোগিতা আর সমঝোতার ভিত্তিতে সুখি ও সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল দেশ গড়ার কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, গত ৫০ বছরের গড়ে ওঠা শক্তিশালী অংশীদারিত্বের উপর ভর করে উভয় দেশ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিস্তৃত সব বিষয় নিয়ে কাজ করছে।
”আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখা এবং দুদেশ ও এ অঞ্চলের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমি ও প্রধানমন্ত্রী মোদী একমত হয়েছি।” নরেন্দ্র মোদী তার বক্তৃতায় বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার বিষয়ে তারা জোর দিয়েছেন আলোচনায়।
”১৯৭১ সালের আদর্শকে জীবন্ত রেখে এই ধরনের শক্তিকে সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করা জরুরি, যারা আমাদের পারস্পরিক বিশ্বাসকে আঘাত করতে চায়।” শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গতি সঞ্চার করার ক্ষেত্রে মোদী জির দূরদর্শী নেতৃত্বকে সাধুবাদ জানাই। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে নিকট প্রতিবেশী ভারত। প্রতিবেশীদের মধ্যে কূটনীতির ক্ষেত্রে দুদেশের সম্পর্ক রোল মডেল।” তিনি বলেন, “আজ প্রধানমন্ত্রী মোদী ও আমি আরেক দফায় ফলপ্রসূ আলোচনা শেষ করেছি, যার ফল আমাদের দুদেশের জনগণের উপকার বয়ে আনবে। নিবিড় বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার উদ্দীপনা নিয়ে আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী বলেন, এশিয়ার মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার বাংলাদেশ। এই অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে দ্বিপক্ষীয় সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সেপা) করার আলোচনা দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করতে চান তারা। দুদেশের সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে মোদী বলেন, “আজ বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী এবং এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। মানুষে মানুষে সংযোগের ক্ষেত্রে অব্যাহত উন্নতি হচ্ছে।
“গত কয়েক বছরে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমি বহু দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি।” মোদী বলেন, ”কোভিড মহামারী ও সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া এবং আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা দরকার।” দুদেশের সহযোগিতা নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিস্তৃত করার প্রসঙ্গ ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বন্যা মোকাবেলায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা বিস্তৃত করেছি। আমরা বাংলাদেশের সাথে বন্যার তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময় করছি। ”এবং আমরা আলোচনা করে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যে শক্তি আমাদের শত্রু, তাদের যেন আমরা একসাথে মোকাবেলা করতে পারি।” মোদী বলেন, “ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ ও পারমাণবিক খাতে সহযোগিতা বিস্তৃত করার আলোচনা আমরা করেছি। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন করার বিষয়েও আলোচনা চলমান আছে।”
গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং প্রথমবারের মতো মৈত্রী দিবস উদযাপনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মোদী বলেন, আগামী দিনগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। দুই দেশের বহু সমস্যা আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানের ধারাবাহিকতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করার আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে অনেক অনিষ্পন্ন সমস্যার সমাধান ইতোমধ্যে করেছি। আমি আশা করি তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তিসহ অন্যান্য অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো শিগগির সম্পন্ন করতে পারব। ”আমি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ জানাই, আজকে আমরা কুশিয়ারা ইস্যু সমাধান করেছি এবং আমি আশাবাদী, মোট যে ৫৪টি নদী আছে, সেগুলো আমি জানি, যতক্ষণ পর্যন্ত মোদী আছেন, বাংলাদেশ-ভারত আমরা সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব।” কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন চুক্তিকে স্বাগত জানালেও তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ সংবাদ সম্মেলনে আনেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “ভারত-বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়েছে ৫৪টি নদী এবং এগুলো শত শত বছর ধরে দুদেশের মানুষের জীবিকার সাথে সংযুক্ত থেকেছে। এসব নদী, এগুলোকে জড়িয়ে থাকা লোকগাঁথা ও লোক সংগীত আমাদের একীভূত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করছে। “আজকে আমরা কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এটা ভারতের দক্ষিণ আসাম ও বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলকে উপকৃত করবে।”