প্রত্যাশা ডেস্ক: ৩১ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছে ঘটনাবহুল ২০২৪ সাল। শুরু হলো নতুন বছর ২০২৫। ২০২৪ ছিল বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল একটি বছর। এই বছর দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হয়েছে এই বছরে। এই অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনতন্ত্রের অবসান ঘটে। ক্ষুব্ধ জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট দুপুরের আগে একটি বিমানে করে ভারতে পালানোর মধ্যদিয়ে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন হাসিনা সরকারের।
২০২৪ সালে রাজনৈতিক ঘটনাবলিই বেশি। রাজনীতির বাইরে এ বছর দুর্ঘটনা ও অপরাধের বড় কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। বড় বন্যা হয়েছে। বাংলাদেশি জাহাজ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। আদালতে বড় কিছু রায় হয়েছে। ক্রীড়াক্ষেত্রে কিছু অর্জনও আছে।
বছরের শেষ মাসে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, তাদের চোখে ২০২৪ সালের সেরা দেশ বাংলাদেশ।
সরকার পতন ছিল সবচেয়ে বড় ঘটনা। এ ছাড়াও ২০২৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে বড় ঘটনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মাস অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে।
১ জানুয়ারি ড. ইউনূসের কারাদণ্ড: ২০২৪-এর প্রথম দিনটিই শুরু হয় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত শিরোনাম হওয়ার মাধ্যমে। ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের অন্য তিনজনের প্রত্যেককে ঢাকার শ্রম আদালত ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন এবং পরবর্তীতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে ১ মাসের জামিন দেন।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ জানুয়ারি ২০২৪। বিরোধী দলগুলোর বয়কটের মুখে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থবার নির্বাচনে জয়লাভ করে। ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন পেয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পায়। জাতীয় পার্টি ও আরও কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে। ৯ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করা হয় এবং অবশেষে ১০ জানুয়ারি জয়ী সাংসদরা শপথ গ্রহণ করেন।
২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডে রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ড: ঢাকার বেইলি রোডের একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া আরও ৭৫ জন বিভিন্নভাবে আহত অবস্থায় উদ্ধার হন। গ্রিন কোজি নামক বহুতল ভবনে ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে এই অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। ভবনটিতে একাধিক রেস্তোরাঁ ও দোকান ছিল, যার মধ্যে কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁ, স্যামসাংয়ের শো-রুম, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার, ইল্লিয়িন, খানা’স ও পিৎজা ইন উল্লেখযোগ্য।
১০ মার্চ মেয়েদের ফুটবলে শিরোপা জয়: ভারতকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৭ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ শিরোপা জিতলেও এবারই প্রথম আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টের ট্রফি নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। কাঠমান্ডুর অদূরে ললিতপুরের আনফা একাডেমি মাঠ জায়গা পেয়ে যায় বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে।
১২ মার্চ এমভি আব্দুল্লাহ ছিনতাই: ২০২৪ সালের ১২ মার্চ এমভি আব্দুল্লাহ নামের একটি জাহাজ ছিনতাই করে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। জাহাজে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ছিলেন যাদের জিম্মি করেছিল সোমলিয়ান জলদস্যুরা। ১৫ এপ্রিল, ২০২৪ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে ছাড়া পায় এমভি আব্দুল্লাহ।
২২ মে এমপি আনোয়ারুল আজিম নিখোঁজ: ২০২৪-এর ২২ মে ভারতের কলকাতায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ভারতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গিয়ে তিনি ১৩ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এই ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০ মে পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২২ মে সকালে কলকাতার নিউটাউনে অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেন থেকে তার শরীরের কিছু অংশ উদ্ধার হয়।তদন্তকারী কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ১৩ মে নিউটাউনের সেই বাড়িটিতেই তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রেমাল: ঘূর্ণিঝড় রেমাল ২০২৪ সালের ২৬ মে সন্ধ্যা থেকে ২৭ মে সকাল নাগাদ বাংলাদেশে আঘাত হানে। এ ঘূর্ণিঝড়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০২৪ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের প্রথম নিম্নচাপ এবং প্রথম ঘূর্ণিঝড় ছিল।
১২ জুন সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীরের পুকুরচুরি: সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের ২৪তম মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন । ২০২৪ সালের এপ্রিলে দুটি গণমাধ্যমে ‘বেনজিরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ এবং ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর আলোচনায় আসেন বেনজীর আহমেদ। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন আহমেদের সম্পদের তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, বেনজীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই সূত্র ধরে বেনজির আহমেদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ১২ জুন আদালত বেনজির আহমেদ ও তার পরিবারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন।
মতিউর রহমানের ছাগল কাণ্ড: কোরবানির ঈদের সময় ১২ লাখ টাকায় ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ইফাত নামের এক তরুণের ছাগল কেনার ফেসবুক পোস্ট ঘিরে আলোচনায় আসেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমান। সরকারি এক কর্মকর্তার ছেলে কোরবানির জন্য ১২ লাখ টাকায় ছাগল কিনবেন–এই খবরে শোরগোল পড়ে গেছে চারদিকে। নেটিজেনরা মতিউর রহমানের সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এবং এই ঘটনার জের ধরেই মতিউর রহমানকে পদচ্যুত করা হয়।
৫ জুন কোটা সংস্কার আন্দোলন: কোটা সংস্কার আন্দোলন বা জুলাই আগস্ট আন্দোলন অথবা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সব থেকে বেশি আলোচিত বিষয়। ২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলন আবার নতুনভাবে আলোচনায় আসে। শুরুতে আন্দোলন সভা-সমাবেশের মধ্যে স্থির থাকলেও ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদের পরোক্ষভাবে ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ হিসেবে অভিহিত করেন। এর পর থেকেই কোটা আন্দোলন আরও জোরদার হয়। এ আন্দোলনে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারী (প্রায় ২১ হাজার) আহত হওয়ার পাশাপাশি আবু সাঈদ ও মীর মুগ্ধ সহ ৬৭৩ জনের অধিক নিহত হন। পরিশেষে ২১ জুলাই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করে এবং সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ প্রদান করে। ২২ জুলাই এই বিষয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে।
১৬ জুলাই আবু সাঈদকে হত্যা: ৫ জুন শুরু হওয়া সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৫ জুলাই হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পরদিন দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। ওই দিন নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ছয়জনে। এরপর থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
১ আগস্ট জামায়াত ও শিবির নিষিদ্ধ, পরে প্রজ্ঞাপন বাতিল: জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে ২৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, সন্ত্রাস-সহিংসতার সঙ্গে জামায়াত ও শিবিরের সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন: ৫ আগস্ট তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বাসভবনে প্রবেশ করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেন।
৬ আগস্ট খালেদা জিয়া মুক্ত: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয় বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানেরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন: তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর দেশের অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্থণে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নাম ঘোষণার ৩দিন পর ৮ই আগস্ট শপথ গ্রহণের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়।
১০ আগস্ট বিচারপতিদের পদত্যাগ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভের মধ্যে পদত্যাগ করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। পরে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতি পদত্যাগ করেন। নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয় সৈয়দ রেফাত আহমেদকে।
১৯ আগস্ট ভয়াবহ বন্যা শুরু: ভারত থেকে আসা ঢল ও ভারী বর্ষণে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যা শুরু হয়। দীর্ঘস্থায়ী ওই বন্যায় অন্তত ৫৯ জন নিহত হন। ক্ষয়ক্ষতি হয় বিপুল।
৩ অক্টোবর সংস্কার কমিশন গঠন শুরু: অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি হলো সংস্কার। এ লক্ষ্যে ৩ অক্টোবর পাঁচটি ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এখন পর্যন্ত মোট ১১টি কমিশন গঠন করা হয়েছে।
১৫ অক্টোবর ডিমের ডজন ১৯০ টাকা: সারা বছর মূল্যস্ফীতি ভুগিয়েছে মানুষকে। অক্টোবরে ঢাকায় ডিমের ডজন ১৯০ টাকায় উঠে যাওয়া বাজারে অস্থিরতার একটি উদাহরণ মাত্র।
১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা: নতুন সরকার জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উদ্যোগ নেওয়ার পর ১৭ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন এই আদালত।
২৩ অক্টোবর ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ: আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে একই দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে পরদিন ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল।
১৩ নভেম্বর আহতদের বিক্ষোভ: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করেন। তাঁদের দাবি ছিল তিনটি–বিদেশে উন্নত চিকিৎসা, আর্থিক সহায়তা এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের সাক্ষাৎ। পরদিন সচিবালয়ে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় উপদেষ্টা ও একজন বিশেষ সহকারী। বৈঠক শেষে সরকারের পক্ষ থেকে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
২৬ নভেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ও ইসকন প্রসঙ্গ: ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বরে চিন্ময়কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে। জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়, যেখানে ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলাম তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ-এর রিমান্ড শুনানিকে কেন্দ্র করে তার সমর্থকেরা আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করে।
১ ডিসেম্বর গ্রেনেড হামলা মামলার রায় বাতিল: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন। এই মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া সাজার রায় ২ ডিসেম্বর বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিরা খালাস পান।
২ ডিসেম্বর ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। ২ ডিসেম্বর ভারতের আগরতলায় দেশটির উগ্রপন্থিরা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা করে। এ ঘটনার পর বাংলাদেশ তলব করে ভারতের হাইকমিশনারকে।
৪ ডিসেম্বর দেশের প্রশ্নে ঐক্য: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দেয় রাজনৈতিক দলগুলো। দলের সঙ্গে বৈঠকের আগে ও পরে একই সংলাপ হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে।
৮ ডিসেম্বর এশিয়া কাপ শিরোপা জয়: ভারতকে ফাইনালে হারিয়ে গত ৮ ডিসেম্বর এসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ শিরোপা জেতে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল।
১৯ ডিসেম্বর বর্ষসেরা বাংলাদেশ: বাংলাদেশকে ২০২৪ সালের সেরা দেশ নির্বাচিত করে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং বাংলাদেশের নতুন যাত্রা শুরুর বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছে তারা।
১৯ ডিসেম্বর ব্যাংকে ডাকাতদের হানা: ঢাকার কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের একটি শাখায় ফিল্মি কায়দায় ১৯ ডিসেম্বর ডাকাতির চেষ্টা করা হয়।যদিও পুলিশ কোনো রক্তপাত ছাড়াই শেষপর্যন্ত অপরাধীদের আটক করতে সক্ষম হয়।
২৩ ডিসেম্বর মেঘনায় জাহাজে সাত খুন: মেঘনা নদীতে নোঙর করা সারবাহী একটি জাহাজ থেকে সাতজনের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। এর মধ্যে পাঁচজনকে পাওয়া যায় মৃত অবস্থায়। দুজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। র্যাবের দাবি, এক কর্মীই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
২৫ ডিসেম্বর সচিবালয়ে আগুন: বছরের শেষের দিকে এসে ২৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের অনেক নথি পুড়ে যায় বলে ধারণা করা হয়।
৩১ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে কেন্দ্রীয় মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি পালিত। আগেরদিন সোমবার রাতে বৈঠক শেষে মধ্যরাত পৌনে দুইটার দিকে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েত হওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের এই সমাবেশ থেকে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। এ সমাবেশ থেকেই ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভোর থেকেই শহীদ মিনারে জড়ো হয় সারা দেশের শত শত শিক্ষার্থী।

























