নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কথা না বলতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
তার ভাষায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং আইন উপদেষ্টা যদি খুনি হাসিনার দৃশ্যমান বিচার এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে করে না যেতে পারেন, তাহলে এই সরকারের সবচেয়ে বড় দায়বদ্ধতা এবং সবচেয়ে বড় লেজিটিমেসি তারা হারাবেন এবং সারাজীবন এটা তাদেরকেই দায় বহন করে যেতে হবে। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে একটা কথা বলি, দায় বহন করে যাওয়ার মধ্যে সব শেষ না।
এই বিচার এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় করতে হবে এবং যে সময়টুকু এই সরকারের আছে- নির্বাচনের আগেই খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে ফাঁসির মঞ্চে নিতে হবে। যতদিন না আমরা খুনি হাসিনাকে ওই ফাঁসির মঞ্চে না দেখছি, এই বাংলাদেশে কেউ যেন ভুলক্রমেও ওই নির্বাচনের কথা না বলে।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের কবর জিয়ারতের পর তিনি এ মন্তব্য করেন।
শেখ হাসিনার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন সারজিস। জাতীয় নাগরিক কমিটি হয়ে তিনি এখন নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির নেতৃত্বে এসেছেন।
এক শহীদের মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সারজিস বলেন, আমাদের একজন শহীদ ভাইয়ের মায়ের এই আহাজারিকে সামনে রেখে আপনাদেরকে শুধু একটা কথাই বলি, এই খুনি হাসিনা যখন শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য- আমার এমন হাজার ভাইকে খুন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি, আমার এমন অনেক ভাই রয়েছে- যাদের লাশ এখন পর্যন্ত খুনি হাসিনা হত্যার পরে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, এটা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সেই ঘটনা আমরা ওই শাপলাতে (হেফাজতের সমাবেশ) দেখেছিলাম, যে শত শত লাশ খুনি হাসিনা ফেলেছে; কিন্তু লাশগুলো পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, আজকে আমার মা তার সন্তানের লাশের জন্য শেষবার একবার দেখার জন্য এখন সেই আহাজারি করছে; এই মাকে আমরা বায়তুল মোকাররমের সামনে সেদিন দেখেছি- প্রত্যেকটা জায়গায় এই মা এভাবে আহাজারি করে ছুটে বেড়িয়েছেন; তো সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে-আমরা হয়তো আমাদের জায়গায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারি- আমাদের ভাইয়ের লাশটা খোঁজার জন্য।
কিন্তু এটা বলতে পারি না যে কখনো পাব কি পাব না। কিন্তু যেই ভাইয়ের লাশের জন্য আমার একজন মা এভাবে আহাজারি করে, যেই খুনির নির্দেশে আমার এই ভাইগুলোকে হত্যা করা হলো, সেই খুনির বিচার না দেখা পর্যন্ত কীভাবে এই বাংলাদেশে আমরা অন্য কিছুর চিন্তা করি?
দ্রুত আওয়ামী লীগ সভাপতির বিচার চেয়ে সারজিস বলেন, এই খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে হবে একটা কারণেই-খুনি হাসিনা আসবে, বিচারের মঞ্চে দাঁড়াবে, এরপরে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াবে।
আমরা যারা এই জুলাই অভ্যুত্থানে রাজপথে ছিলাম, আমাদের যে ভাইয়েরা জীবন দিয়েছে আমাদের যে মায়েদের চোখ দিয়ে এখনো এই কান্না আসছে, এই চোখের পানি পড়ছে, আমরা যেন মরার আগে অন্তত ওই খুনি হাসিনার বিচারটা দেখে মরতে পারি।
এনসিপি নেতা সারজিস বলেন, যেই খুনি হাসিনা তার দোসর ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের ক্যাডারদেরকে ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথাকথিত যে সদস্যদের ব্যবহার করে এই নৃশংসতা ঘটিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটিয়েছে, সেই খুনি হাসিনা এবং তাদের দোসরদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো মানুষ, কোনো রাজনৈতিক দল যেন অন্য কোনো বিষয় নিয়ে বাংলাদেশে কথা না বলে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। পরদিন ২১৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন হয়।
দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, যে আকাঙক্ষা থেকে এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমরা সকলেই অংশগ্রহণ করেছিলাম, সেই আকাঙক্ষাকে যাতে আমরা সঠিকভাবে ধারণ করতে পারি- সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের এনসিপির কার্যক্রম শুরু করছি।
গণঅভ্যুত্থানে সংগঠিত গণহত্যা- যেটা পুরা পৃথিবী এখন সাক্ষী যে- শেখ হাসিনা সরকারের যে ফ্যাসিবাদী দমনপীড়নে জুলাই মাসে ছাত্রজনতার উপর নেমে এসেছিল; আমরা অবিলম্বে দ্রুত সময়ের মধ্যে তার বিচার কার্যক্রম দেখতে চাই।
দলের প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কর্মসূচি হিসেবে এর আগে সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এনসিপি নেতৃবৃন্দ। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ।