ঢাকা ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসিনার ‘নিশি রাতের নির্বাচন’ অনুসন্ধান করবে দুদক

  • আপডেট সময় : ০৮:১৩:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেখ হাসিনার আমলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, অপরাধমূলক অসদাচরণ, জাল-জালিয়াতি, দিনের ভোট রাতে করা এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে’ সংসদ সদস্য নির্বাচনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বুধবার (২২ জানুয়ারি) কমিশনের এ সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ওই নির্বাচনে জিতে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ একাই পায় ২৫৭টি আসন। সেবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি ও সমমনা দলগুলো পায় মাত্র সাতটি আসন। অধিকাংশ ভোট আগের রাতে হয়ে যাওয়ার অভিযোগের মধ্যে বিরোধীদের ভাষায় সে নির্বাচনের নাম হয় ‘নিশি রাতের নির্বাচন’।
দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, ওই নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম, যেমন ‘দিনের ভোট আগের রাতে’ করা, ব্যালট জালিয়াতি, কিছু কিছু কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের বেশি কাউন্ট দেখানো, ব্যাপক আর্থিক লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রার্থীকে জেতানো ইত্যাদি নানা অভিযোগ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং দুদকেও কিছু অভিযোগ জমা হয়েছে। এসব ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি মহানগর, জেলা, বিভাগীয়, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, যেমন পুলিশের আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারী, ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, র্যাবের প্রধান বেনজীর আহমেদ, পুলিশের সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক, তৎকালীন জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, জেলা প্রশাসক, জেলা রিটানিং কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিইজি, পুলিশ সুপার, থানার ওসি, জেলা/উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তার ‘যোগসাজশের’ কথা বলা হয়েছে দুদকের হাতে আসা অভিযোগে।
এ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য ৫ সদস্যের একটি দল গঠন করেছে দুদক। অভিযোগ বিষয়ে বিভিন্ন ভিডিও, দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ এবং নির্বাচনের ফলাফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে অনুসন্ধান টিম প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে আক্তার হোসেন জানান।
একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল কেএম নুরুল হুদার কমিশনের অধীন। ওই কমিশনের সদস্য মাহবুব তালুকদার বিদায় বেলায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমাদের ব্যর্থতার গ্লানি ছাড়া আর কিছু দিতে পারেনি। জাতীয় নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অস্তিত্ব ছিল না। তবে সিইসি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে বলে দাবি করেন। জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সিটিং এমপিদের বিষয়ে তাদের নিরপেক্ষতা অবলম্বন করা সম্ভব ছিল বলে মনে করি না। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, এতেই বোঝা যায় নির্বাচন কেমন হয়েছে? এভাবে না-অবাধ, না-সুষ্ঠু, না-নিরপেক্ষ, না-আইনানুগ, না-গ্রহণযোগ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। সে অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই পরের তিনটি নির্বাচন হয়। প্রশ্নবিদ্ধ ওই তিন নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ জয়ী হয় এবং ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করে যায়। শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।
গত বছর ডিসেম্বরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করে রায় দেয় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর পথ তৈরি হয়। অবাধ ও নিরপেক্ষতা ‘নিশ্চিত করতে না পারায়’ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত তিন জাতীয় নির্বাচনে ‘জনগণের আস্থা ধ্বংস করা হয়েছে’ বলে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয় ওই রায়ে।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দাভোসে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

হাসিনার ‘নিশি রাতের নির্বাচন’ অনুসন্ধান করবে দুদক

আপডেট সময় : ০৮:১৩:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেখ হাসিনার আমলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, অপরাধমূলক অসদাচরণ, জাল-জালিয়াতি, দিনের ভোট রাতে করা এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে’ সংসদ সদস্য নির্বাচনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বুধবার (২২ জানুয়ারি) কমিশনের এ সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ওই নির্বাচনে জিতে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ একাই পায় ২৫৭টি আসন। সেবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি ও সমমনা দলগুলো পায় মাত্র সাতটি আসন। অধিকাংশ ভোট আগের রাতে হয়ে যাওয়ার অভিযোগের মধ্যে বিরোধীদের ভাষায় সে নির্বাচনের নাম হয় ‘নিশি রাতের নির্বাচন’।
দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, ওই নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম, যেমন ‘দিনের ভোট আগের রাতে’ করা, ব্যালট জালিয়াতি, কিছু কিছু কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের বেশি কাউন্ট দেখানো, ব্যাপক আর্থিক লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রার্থীকে জেতানো ইত্যাদি নানা অভিযোগ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং দুদকেও কিছু অভিযোগ জমা হয়েছে। এসব ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি মহানগর, জেলা, বিভাগীয়, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, যেমন পুলিশের আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারী, ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, র্যাবের প্রধান বেনজীর আহমেদ, পুলিশের সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক, তৎকালীন জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, জেলা প্রশাসক, জেলা রিটানিং কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিইজি, পুলিশ সুপার, থানার ওসি, জেলা/উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তার ‘যোগসাজশের’ কথা বলা হয়েছে দুদকের হাতে আসা অভিযোগে।
এ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য ৫ সদস্যের একটি দল গঠন করেছে দুদক। অভিযোগ বিষয়ে বিভিন্ন ভিডিও, দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ এবং নির্বাচনের ফলাফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে অনুসন্ধান টিম প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে আক্তার হোসেন জানান।
একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল কেএম নুরুল হুদার কমিশনের অধীন। ওই কমিশনের সদস্য মাহবুব তালুকদার বিদায় বেলায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমাদের ব্যর্থতার গ্লানি ছাড়া আর কিছু দিতে পারেনি। জাতীয় নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অস্তিত্ব ছিল না। তবে সিইসি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে বলে দাবি করেন। জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সিটিং এমপিদের বিষয়ে তাদের নিরপেক্ষতা অবলম্বন করা সম্ভব ছিল বলে মনে করি না। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, এতেই বোঝা যায় নির্বাচন কেমন হয়েছে? এভাবে না-অবাধ, না-সুষ্ঠু, না-নিরপেক্ষ, না-আইনানুগ, না-গ্রহণযোগ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। সে অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই পরের তিনটি নির্বাচন হয়। প্রশ্নবিদ্ধ ওই তিন নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ জয়ী হয় এবং ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করে যায়। শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।
গত বছর ডিসেম্বরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করে রায় দেয় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর পথ তৈরি হয়। অবাধ ও নিরপেক্ষতা ‘নিশ্চিত করতে না পারায়’ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত তিন জাতীয় নির্বাচনে ‘জনগণের আস্থা ধ্বংস করা হয়েছে’ বলে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয় ওই রায়ে।