বিদেশের খবর ডেস্ক : ফিলিস্তিনে অবরুদ্ধ দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে হামাস নেতা ইসমাইল বারহুমসহ কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। ইসমাইল বারহুম গাজায় হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ছিলেন। তিনি ছিলেন গাজার হামাস সরকারের নতুন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইসাম দা’আলিসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন, যাকে কয়েকদিন আগে হত্যা করা হয়। তহবিলের আঞ্চলিক বণ্টনের দায়িত্বেও ছিলেন বারহুম। হামাসের একটি সূত্র ইসমাইল বারহুম নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি জানায়, রোববার (২৩ মার্চ) ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান নাসের হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায়, যেখানে বারহুম চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত মঙ্গলবার ভোরে খান ইউনিসে নিজের বাড়িতে ইসরাইলি হামলায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন।
’ আল জাজিরা জানিয়েছে, গাজার আল-মাওয়াসিতে ইসরায়েলি বাহিনী একটি তাঁবুতে বোমা হামলা চালিয়ে হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা সালাহ আল-বারদাউইলকে হত্যার কয়েক ঘণ্টা পরই বারহুম হত্যাকাণ্ড ঘটল। গত মঙ্গলবার থেকে এ পর্যন্ত হামলায় বারহুমসহ চতুর্থ হামাস রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য নিহত হলেন। আইডিএফ জানিয়েছে, নাসের হাসপাতালের ভেতরে লুকিয়ে থাকা হামাস সদস্যকে লক্ষ্য করে তারা হামলা চালিয়েছে। হাসপাতালের ক্ষতি যতটা সম্ভব কমাতে নিশ্চিত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট অস্ত্র ব্যবহার করে এই হামলা চালানো হয়েছিল। তারা ব্যাপক গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণের পর ‘সুনির্দিষ্ট অস্ত্র’ ব্যবহার করে হামলাটি চালিয়েছে। তাদের দাবি, ‘বারহুম হাসপাতালের ভেতর থেকে হামাসের হয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন।
পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল এমনই অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এছাড়া গাজায় সমস্ত মৌলিক পরিষেবা বন্ধ করে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কনভেনশন লঙ্ঘন করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। রোববার (২৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। বার্তাসংস্থাটি বলছে, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস রোববার ইসরায়েলকে গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার জন্য “যুদ্ধের অস্ত্র” হিসেবে পানিকে ব্যবহার করার অভিযোগ করেছেন। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেন, “দখলদার (ইসরায়েল) আমাদের জনগণের দুর্ভোগ, বাস্তুচ্যুতি এবং প্রকৃতপক্ষে ধীরে ধীরে মৃত্যু আরও বৃদ্ধির জন্য আরেকটি অস্ত্র ব্যবহার করেছে। সমস্ত মৌলিক পরিষেবা বন্ধ করে এই কাজ করছে তারা। বিশেষ করে পানি বন্ধ করে এবং মানবিক সাহায্যের প্রবেশ বন্ধ করে ইসরায়েল এই কাজ করছে যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক রেজোলিউশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন
।” ফিলিস্তিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, গাজার ক্রমবর্ধমান পানি সংকটের ন্যায্য সমাধান খুঁজে বের করার জন্য “বাস্তবসম্মত এবং মৌলিক পদক্ষেপ” নেওয়ার জন্য আব্বাস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিশ্বকে বুঝতে হবে, গাজার ফিলিস্তিনি শিশুদের নিরাপত্তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কোনও কিছু নেই। এসব শিশুরা এক লিটার পানি পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে, দূষিত পানি পান করে, খাদ্য ও ওষুধ থেকে বঞ্চিত হয়, পানিশূন্যতা ও তৃষ্ণায় মারা যায় এবং বিশ্বের অন্যান্য শিশুদের মতো নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।” ফিলিস্তিনি এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ইসরায়েল পানিকে ব্যবহার করছে এবং এটি “ফিলিস্তিনিদের জীবন নিয়ন্ত্রণ, তাদের ভূমি থেকে উৎখাত এবং অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে ক্ষুণ্ন করার জন্য ভূপৃষ্ঠ এবং ভূগর্ভস্থ পানি সমস্ত সম্পদ লুণ্ঠন ও নিয়ন্ত্রণের দশকব্যাপী দীর্ঘ নিয়মতান্ত্রিক নীতির একটি সম্প্রসারণ।”