ঢাকা ০১:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

হাসপাতালের লিফট চালু না হওয়ায় দুর্ভোগে রোগী ও স্বজনেরা

  • আপডেট সময় : ১০:০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪
  • ১৩৬ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: আট মাসেও চালু হয়নি মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের লিফট। এতে বিপাকে পড়েছেন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সেবাপ্রার্থী অসুস্থ রোগীরা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার গর্ভবতী নারী, শিশু ও বয়স্করা। সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চে পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের সচল লিফট। নতুন বিল্ডিংয়ের পাঁচ তলার ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণসহ নানা সংস্কার কাজ চলছে। এজন্য সংযোগ সচল লিফটের পাশেই নতুন করে আরেকটি লিফট বসানোর কাজ শুরু হয়। গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কাজ শুরু করে। কথা ছিল ওই বছরের নভেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার। কিন্তু বছর পেরিয়ে চলতি বছরের তিন মাস চলে যাচ্ছে কিন্তু কাজের অগ্রগতি নেই। অনেকটা ধীরগতিতে চলছে লিফট স্থাপনের কাজ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করতে পারছেন না কবে চালু হবে লিফট।
হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের প্রবেশমুখে সাঁটানো বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায় ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর পৃথক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে লেখা রয়েছে ৩০ আগস্ট থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচতলার ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য রোগীর সেবায় নিয়োজিত লিফটটি বন্ধ থাকবে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের লিফট বন্ধ থাকায় ঝুঁকি নিয়ে স্ট্রেচারে বহন করে গর্ভবতী নারীদের স্বজনরা সিঁড়ি দিয়ে তিন তলার গাইনি ও চার তলার মেডিসিন ওয়ার্ডে নিয়ে যাচ্ছেন। লিফটের বদলে এভাবে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে গর্ভবতী নারী ও গর্ভে নবজাতকের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রোগীর স্বজনরা। এছাড়াও শ্বাসকষ্টকসহ নানা বয়স্কজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে স্ট্রেচারে করে উঠতে দেখা গেছে। অনেক রোগী স্ট্রেচার থেকে পড়ে উল্টো আহতও হচ্ছে। আরও জানা যায়, জেলার সবচেয়ে বড় সরকারি এ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুসহ শত শত রোগী বিভিন্ন দুর্ঘটনাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুযায়ী হাসপাতালটিতে প্রতিদিন নরমাল ও সিজারিয়ান মিলে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন গর্ভবতী নারী নবজাতক জন্ম দিচ্ছেন। নবজাতক জন্মের পর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করার সময় লিফটের বদলে সিঁড়ি বেয়ে ভয় আর শঙ্কা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন এসব নারীরা। আর দোতলার গাইনি অপারেশন থিয়েটারে গর্ভবতী নারীদের সিজার সম্পন্ন শেষে স্ট্রেচারে করে ৪ থেকে ৬ জন মানুষের সহায়তায় সিঁড়ি বেয়ে তিন তলার গাইনি ওয়ার্ড ও কেবিন নিয়ে যেতে হয়। যদিও এসব রোগীর ক্ষেত্রে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে চার তলার মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন সদর উপজেলার উলুয়াইল গ্রামের বৃদ্ধ সানুর মিয়া। ক্ষোভ প্রকাশ করে সানুর মিয়া বলেন, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারি না, লিফট থাকায় আগে নামতে অসুবিধা হতো না। এখন লিফট না থাকায় ভয়ে নিচে নামি না। আসার পর থেকে বেডেই আছি। হাসপাতালে আসা রোগীকে তার স্বজনরা নামিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন না, অনেক কষ্ট হয়। লিফটের কারণে আমার মতো অনেক রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কেউ মারা গেলে তার মরদেহটি কীভাবে নামাবেন, এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, লিফট দেওয়া হলো রোগীদের কল্যাণের জন্য, তাহলে কী উপকারে আসছে? কয়দিন আগে হাসপাতালে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। তার মরদেহ সিঁড়ি বেয়ে নিতে হয়েছে। তার হার্টের রোগী ছিল, সিঁড়ি বেয়ে ওঠার আগেই তার মৃত্যু হয়।
রক্ত স্বল্পতার কারণে ভর্তি হওয়া এক গৃহবধূর স্বামী আল-মামুন বলেন, লিফট বন্ধ থাকায় রোগীদের অসুবিধা হয়। আমার চোখে দেখা ১২ বছরের শিশু সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় পড়ে যায়। লিফটটি যদি চালু থাকতো তাহলে শিশুটি এভাবে পড়তো না। তিনি বলেন, অনেক রোগী তার শারীরিক ওজন বেশি থাকায় উঠানামা করতে কষ্ট হয়। আমি সেদিন দুই-তিনজন রোগী নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে তোলার সময় সাহায্য করেছি। আমি মনে করি এই লিফট দ্রুত সংষ্কারের কাজ করা হোক। মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক) ডা. প্রণয় কান্তি দাস বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নিজেরাও এ ব্যাপারটি নিয়ে বিব্রত। রোগীদের দুরবস্থা আমাদেরও হতাশ করে। আসলে এই কাজটির দায়িত্বে রয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। আমরা একাধিকবার যোগাযোগ করেছি এবং তাদের তাগাদা দিয়েছি। মূলত টেকনিক্যাল কারণে কাজটি সম্পন্ন হতে দেরি হচ্ছে। আশা করছি, দুই সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হবে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

হাসপাতালের লিফট চালু না হওয়ায় দুর্ভোগে রোগী ও স্বজনেরা

আপডেট সময় : ১০:০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: আট মাসেও চালু হয়নি মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের লিফট। এতে বিপাকে পড়েছেন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সেবাপ্রার্থী অসুস্থ রোগীরা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার গর্ভবতী নারী, শিশু ও বয়স্করা। সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চে পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের সচল লিফট। নতুন বিল্ডিংয়ের পাঁচ তলার ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণসহ নানা সংস্কার কাজ চলছে। এজন্য সংযোগ সচল লিফটের পাশেই নতুন করে আরেকটি লিফট বসানোর কাজ শুরু হয়। গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কাজ শুরু করে। কথা ছিল ওই বছরের নভেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার। কিন্তু বছর পেরিয়ে চলতি বছরের তিন মাস চলে যাচ্ছে কিন্তু কাজের অগ্রগতি নেই। অনেকটা ধীরগতিতে চলছে লিফট স্থাপনের কাজ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করতে পারছেন না কবে চালু হবে লিফট।
হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের প্রবেশমুখে সাঁটানো বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায় ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর পৃথক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে লেখা রয়েছে ৩০ আগস্ট থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচতলার ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য রোগীর সেবায় নিয়োজিত লিফটটি বন্ধ থাকবে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের লিফট বন্ধ থাকায় ঝুঁকি নিয়ে স্ট্রেচারে বহন করে গর্ভবতী নারীদের স্বজনরা সিঁড়ি দিয়ে তিন তলার গাইনি ও চার তলার মেডিসিন ওয়ার্ডে নিয়ে যাচ্ছেন। লিফটের বদলে এভাবে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে গর্ভবতী নারী ও গর্ভে নবজাতকের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রোগীর স্বজনরা। এছাড়াও শ্বাসকষ্টকসহ নানা বয়স্কজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে স্ট্রেচারে করে উঠতে দেখা গেছে। অনেক রোগী স্ট্রেচার থেকে পড়ে উল্টো আহতও হচ্ছে। আরও জানা যায়, জেলার সবচেয়ে বড় সরকারি এ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুসহ শত শত রোগী বিভিন্ন দুর্ঘটনাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুযায়ী হাসপাতালটিতে প্রতিদিন নরমাল ও সিজারিয়ান মিলে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন গর্ভবতী নারী নবজাতক জন্ম দিচ্ছেন। নবজাতক জন্মের পর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করার সময় লিফটের বদলে সিঁড়ি বেয়ে ভয় আর শঙ্কা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন এসব নারীরা। আর দোতলার গাইনি অপারেশন থিয়েটারে গর্ভবতী নারীদের সিজার সম্পন্ন শেষে স্ট্রেচারে করে ৪ থেকে ৬ জন মানুষের সহায়তায় সিঁড়ি বেয়ে তিন তলার গাইনি ওয়ার্ড ও কেবিন নিয়ে যেতে হয়। যদিও এসব রোগীর ক্ষেত্রে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে চার তলার মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন সদর উপজেলার উলুয়াইল গ্রামের বৃদ্ধ সানুর মিয়া। ক্ষোভ প্রকাশ করে সানুর মিয়া বলেন, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারি না, লিফট থাকায় আগে নামতে অসুবিধা হতো না। এখন লিফট না থাকায় ভয়ে নিচে নামি না। আসার পর থেকে বেডেই আছি। হাসপাতালে আসা রোগীকে তার স্বজনরা নামিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন না, অনেক কষ্ট হয়। লিফটের কারণে আমার মতো অনেক রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কেউ মারা গেলে তার মরদেহটি কীভাবে নামাবেন, এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, লিফট দেওয়া হলো রোগীদের কল্যাণের জন্য, তাহলে কী উপকারে আসছে? কয়দিন আগে হাসপাতালে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। তার মরদেহ সিঁড়ি বেয়ে নিতে হয়েছে। তার হার্টের রোগী ছিল, সিঁড়ি বেয়ে ওঠার আগেই তার মৃত্যু হয়।
রক্ত স্বল্পতার কারণে ভর্তি হওয়া এক গৃহবধূর স্বামী আল-মামুন বলেন, লিফট বন্ধ থাকায় রোগীদের অসুবিধা হয়। আমার চোখে দেখা ১২ বছরের শিশু সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় পড়ে যায়। লিফটটি যদি চালু থাকতো তাহলে শিশুটি এভাবে পড়তো না। তিনি বলেন, অনেক রোগী তার শারীরিক ওজন বেশি থাকায় উঠানামা করতে কষ্ট হয়। আমি সেদিন দুই-তিনজন রোগী নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে তোলার সময় সাহায্য করেছি। আমি মনে করি এই লিফট দ্রুত সংষ্কারের কাজ করা হোক। মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক) ডা. প্রণয় কান্তি দাস বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নিজেরাও এ ব্যাপারটি নিয়ে বিব্রত। রোগীদের দুরবস্থা আমাদেরও হতাশ করে। আসলে এই কাজটির দায়িত্বে রয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। আমরা একাধিকবার যোগাযোগ করেছি এবং তাদের তাগাদা দিয়েছি। মূলত টেকনিক্যাল কারণে কাজটি সম্পন্ন হতে দেরি হচ্ছে। আশা করছি, দুই সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হবে।