নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘বকেয়া বিলের’ কারণে হাসপাতাল থেকে স্ত্রীর লাশ নিতে পারছেন না জানিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একটি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
ইমাম কিংবা মুয়াজ্জিন পরিচয়ে নামের সঙ্গে মুফতি ও হাফেজ টাইটেল যোগ করে এই চক্রের সদস্যরা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের কাছে অর্থ সহায়তা চাইতেন বলে জানায় সিআইডি।
গ্রেপ্তাররা হলেন- আব্দুল মান্নান শেখ (৪২), মো. কামরুল ওরফে কামরুজ্জামান (৩৪), আসাদুল্লাহ আল গালিব (২৬), মো. আমিনুর রহমান (৩৯) এবং মো. শওকত আলী খান সাগর (৪৩)। মিরপুর পল্লবী থানা ও তুরাগ এলাকা থেকে সোমবার তাদের গ্রপ্তার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে সংস্থাটির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ইমাম হোসেন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “নিজেকে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন পরিচয়ে তারা বলত, তাদের স্ত্রী ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
“হাসপাতালে বিল বকেয়া রয়েছে। তাই হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে দাফন-কাফন করতে পারছেন না। টাকার প্রয়োজন। এভাবে মোটা অংকের টাকা সাহায্য নিত তারা।”
এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে সিআইডি অনুসন্ধানে নামে জানিয়ে ইমাম হোসেন বলেন, “চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের ঢাকা শহরের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম পরিচয় দিয়ে নামের সঙ্গে মুফতি ও হাফেজ টাইটেল ব্যবহার করে আসছিল।
“তারা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের কাছে এসব পরিচয়ে ফোন দিতেন।”
সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, “রাজধানীর বিভিন্ন টার্গেট ব্যক্তির নাম ঠিকানা ও পদবী জেনে বড় মসজিদের ইমাম পরিচয় দিয়ে ফোন দিতেন। এভাবে চক্রটি জনপ্রতি ২০/২৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিতেন।”
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “গ্রেপ্তারদের মোবাইলের বিকাশ নম্বরের স্টেটমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতি মাসে প্রত্যেকে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।”
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ক্লাব ও অ্যাসোসিয়েশন সদস্যদের নাম-ঠিকানা ও ব্যক্তিগত তথ্যসহ মোবাইল নম্বর সম্বলিত ডাইরেক্টরি উদ্ধার করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
ঢাকা গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, ঢাকা গলফ ক্লাব, চিটাগাং বোট ক্লাব, বারিধারা কসমোপলিটন ক্লাব, মহাখালী ডিওএইচএস কাউন্সিল ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনসহ ৩৫টি ডাইরেক্টরি উদ্ধার করা হয়েছে। অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ইমাম হোসেন বলেন, “ডাইরেক্টরি বইতে থাকা ব্যক্তিদের কে টাকা দিয়েছে, কে কখন দিবে, কে কেমন ব্যবহার করেছে এইসব লিখে রাখত তারা।” করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে দুই বছরের বেশি সময় ধরে এই চক্রের সদস্যরা এভাবে প্রতারণা করে আসছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানা হয়।
হাসপাতালের বিল বকেয়া জানিয়ে প্রতারণার দায়ে গ্রেপ্তার ৫
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ