ঢাকা ০৩:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনের টার্গেট

হাসপাতালভিত্তিক জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ

  • আপডেট সময় : ০৫:১৮:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
  • ৮ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রকে আইনগতভাবে দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেছেন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কেবল নাগরিক অধিকার নয়, এটি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি। রাজধানীতে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী সাংবাদিক কর্মশালায় তারা এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

রোববার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন : অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতা ও করণীয় শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

জাতিসংঘের আঞ্চলিক সংস্থা ইউএনএসকাপ ঘোষিত সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস (সিআরভিএস) দশকের আওতায় বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছে। সেই লক্ষ্যে দেশের বিদ্যমান জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের দাবি বলে অভিমত দিয়েছেন বক্তারা।

তারা বলেন, দেশের প্রায় ৬৭ শতাংশ শিশু এখন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় হাসপাতালে জন্ম নিচ্ছে। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আইনগতভাবে নিবন্ধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে পরিবারকে নিবন্ধকের নিকট তথ্য দিতে হচ্ছে, যা অনেক সময় বিলম্বিত হয় বা বাদ পড়ে যায়। বক্তারা আরো বলেন, ব্যক্তির পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করলে নিবন্ধনের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, আমাদের দেশে এখনো পরিবারকে গিয়ে জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন করতে হয়। বাস্তবে দেখা যায়, অনেকেই সচেতনতার অভাবে বা প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে নিবন্ধন করে না। ফলে জাতীয় পর্যায়ে পরিসংখ্যান বিকৃত হয়। আইন সংশোধন করে যদি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হবে। এতে নাগরিকরা যেমন অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না, তেমনি সরকারও নির্ভুল তথ্য পাবে।

ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস-এর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের হার মাত্র ৫০ শতাংশ এবং মৃত্যু নিবন্ধনের হার ৪৭ শতাংশ। অথচ বৈশ্বিক গড়ে জন্ম নিবন্ধন ৭৭ শতাংশ এবং মৃত্যু নিবন্ধন ৭৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায়ও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। এ অবস্থায় আইনকে যুগোপযোগী করে দ্রুত হাসপাতালভিত্তিক নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র কনভেনর লিটন হায়দার বলেন, জনগণকে সচেতন করা জরুরি হলেও কেবল জনসচেতনতার ওপর নির্ভর করে শতভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সম্ভব নয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতকে যদি সরাসরি দায়িত্ব দেওয়া হয়, তবে নিবন্ধন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে।

কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ বলেন, বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতা বলছে, ব্যক্তির পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের ওপর দায়িত্ব দিলে নিবন্ধন সফল হয়। অনেক দেশ ইতোমধ্যে হাসপাতালে সংঘটিত জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্ব হাসপাতালকে দিয়ে শতভাগ বা কাছাকাছি সফলতা পেয়েছে। বাংলাদেশকেও এ পথে এগোতে হবে।

প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, বিদ্যমান আইন সংশোধন না করলে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে পিছিয়ে পড়ব। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনকে ঐচ্ছিক না রেখে আইনগত বাধ্যবাধকতা তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।

কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস-এর মো. মঈন উদ্দিন ও আত্মা’র মিজান চৌধুরী। সাংবাদিকদের উদ্দেশে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা করেন প্রজ্ঞা’র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার ও কো-অর্ডিনেটর মাশিয়াত আবেদিন।

এসি/

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পেশা বদলাচ্ছেন শিক্ষকরা

২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনের টার্গেট

হাসপাতালভিত্তিক জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ

আপডেট সময় : ০৫:১৮:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রকে আইনগতভাবে দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেছেন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কেবল নাগরিক অধিকার নয়, এটি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি। রাজধানীতে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী সাংবাদিক কর্মশালায় তারা এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

রোববার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন : অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতা ও করণীয় শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

জাতিসংঘের আঞ্চলিক সংস্থা ইউএনএসকাপ ঘোষিত সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস (সিআরভিএস) দশকের আওতায় বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছে। সেই লক্ষ্যে দেশের বিদ্যমান জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের দাবি বলে অভিমত দিয়েছেন বক্তারা।

তারা বলেন, দেশের প্রায় ৬৭ শতাংশ শিশু এখন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় হাসপাতালে জন্ম নিচ্ছে। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আইনগতভাবে নিবন্ধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে পরিবারকে নিবন্ধকের নিকট তথ্য দিতে হচ্ছে, যা অনেক সময় বিলম্বিত হয় বা বাদ পড়ে যায়। বক্তারা আরো বলেন, ব্যক্তির পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করলে নিবন্ধনের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, আমাদের দেশে এখনো পরিবারকে গিয়ে জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন করতে হয়। বাস্তবে দেখা যায়, অনেকেই সচেতনতার অভাবে বা প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে নিবন্ধন করে না। ফলে জাতীয় পর্যায়ে পরিসংখ্যান বিকৃত হয়। আইন সংশোধন করে যদি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হবে। এতে নাগরিকরা যেমন অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না, তেমনি সরকারও নির্ভুল তথ্য পাবে।

ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস-এর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের হার মাত্র ৫০ শতাংশ এবং মৃত্যু নিবন্ধনের হার ৪৭ শতাংশ। অথচ বৈশ্বিক গড়ে জন্ম নিবন্ধন ৭৭ শতাংশ এবং মৃত্যু নিবন্ধন ৭৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায়ও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। এ অবস্থায় আইনকে যুগোপযোগী করে দ্রুত হাসপাতালভিত্তিক নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র কনভেনর লিটন হায়দার বলেন, জনগণকে সচেতন করা জরুরি হলেও কেবল জনসচেতনতার ওপর নির্ভর করে শতভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সম্ভব নয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতকে যদি সরাসরি দায়িত্ব দেওয়া হয়, তবে নিবন্ধন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে।

কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ বলেন, বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতা বলছে, ব্যক্তির পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের ওপর দায়িত্ব দিলে নিবন্ধন সফল হয়। অনেক দেশ ইতোমধ্যে হাসপাতালে সংঘটিত জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্ব হাসপাতালকে দিয়ে শতভাগ বা কাছাকাছি সফলতা পেয়েছে। বাংলাদেশকেও এ পথে এগোতে হবে।

প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, বিদ্যমান আইন সংশোধন না করলে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে পিছিয়ে পড়ব। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনকে ঐচ্ছিক না রেখে আইনগত বাধ্যবাধকতা তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।

কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস-এর মো. মঈন উদ্দিন ও আত্মা’র মিজান চৌধুরী। সাংবাদিকদের উদ্দেশে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা করেন প্রজ্ঞা’র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার ও কো-অর্ডিনেটর মাশিয়াত আবেদিন।

এসি/