ঢাকা ০৯:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

হায়রে তালাকনামা কার দোষে তুই এলি?

  • আপডেট সময় : ০৭:৪১:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

মো. আব্দুল বাকী চৌধুরী নবাব

কয়েকদিন আগে ইউটিউবে দেখলাম ষাট-সত্তরের দশকের সিনেমার অন্যতম কোনো এক জনপ্রিয় নায়িকা অকালেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। মৃত্যুর অব্যবহিত পর তার বাক্সে একটি তালাকনামা পাওয়া যায়; যা তিনি সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন। এতে কি প্রতীয়মান হয় না যে, কতখানি হৃদয়ভাঙা কষ্ট করে রেখে দিয়েছিলেন এই অনাকাক্সিক্ষত কাগজটি? একদিকে তার কাছে ঘৃণিত; আবার অন্যদিকে মহামূল্যবান। কেননা শুধু এর কারণে তার জীবনের মোড় সম্পূর্ণরূপে ঘুরে গিয়েছে। বস্তুত বাংলার পারিবারিক সংস্কৃতির আওতায় স্বামী কি স্ত্রী, যেই হোক না কেন, সহজে কেউ তালাক দিতে চায় না। একান্ত অবস্থার শিকার হয়ে এই ঘৃণিত কাজ করে থাকে। যেভাবেই বলি না কেন, মানব জীবনে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এক্ষেত্রে আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেছেন যে, তোমাদের আমি সৃষ্টি করেছি (স্বামী-স্ত্রী রূপে) জোড়ায় জোড়ায় (সুরা নাবা, আয়াত-৮)। বাল্যকালে এই রকম আরেকটি দুঃখজনক ঘটনা দেখেছিলাম। তা না হয় পরে তুলে ধরা হবে। যাহোক, প্রথমে তালাকের কিছু মৌলিক বিষয়কে ঘিরে সঙ্গতকারণেই নিম্নে আলোকপাত করার প্রয়াসী হয়েছি।

আজকের আধুনিক সমাজে বিয়ে বিচ্ছেদ বৈধ এবং আইন দ্বারা সমর্থিত হলেও সমাজে তার স্বীকৃতি পায় সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই। তাই তালাক তথা বিয়েবিচ্ছেদের প্রথা এখনকার নয়। এটি যিশুখৃষ্টের জন্মের অনেক আগ থেকেই চলে আসছে। এ সূত্র ধরে উল্লেখ্য যে, ১৯৭০ খৃষ্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলনের রাজা হামুরাবির রাজত্বকালে এই প্রথা প্রচলিত ছিল। এর নজির হিসেবে উল্লেখ্য যে, তখনকার পাথরের গায়ে ২৮২টি আইন খোদাই করা ছিল; যার মধ্যে বিয়েবিচ্ছেদের আইনটি বলা তবিয়তে অন্তর্ভুক্ত ছিল। যতদূর জানা গেছে- তাতে প্রতীয়মান হয় যে, আদিতে বিয়ে প্রথা প্রচলিত ছিল না। তখন স্বেচ্ছাচারিতা প্রকট ছিল। যে বেশি শিকার করতে পারতো বা ফসল ফলাতে পারতো তার সঙ্গী বা সঙ্গীনির অভাব হতো না। যাহোক, আদিম যুগে যখন মানুষ টোটেম গ্রুপের আওতায় সমাজবদ্ধ হতে থাকে, তখনই বিয়ে শুরু। আবার এইভাবে ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্য সম্বলিত দুটি পৃথক সত্ত্বা এক সূত্রে গাঁথা হলে ছন্দপতন হওয়া স্বাভাবিক বলে বিচ্ছেদও শুরু হয়। এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য যে, তালাকের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ডিভোর্স। এই ‘ডিভোর্স’ এসেছে ল্যাটিন শব্দ থেকে; যার অর্থ বিচ্ছেদ। আর এটি ‘ডিভোর্টের’ শব্দের সমতুল্য। এক্ষেত্রে ‘উর’ এর মানে আলাদা এবং এর অর্থ বিভিন্ন পন্থায় ঘুরে আসা।

মজার ব্যাপার হলো যে, এই ডিভোর্স শব্দটি ১৪ শতকের পরবর্তী সময়ে ফরাসি শব্দভান্ডারে অর্ন্তুভুক্ত থাকলেও ১৩৫০-১৪০০ সালের দিকে ইংরেজিতে জায়গা করে নেয়। বর্তমানে যদিও বিয়েবিচ্ছেদ বিভিন্ন উপায়ে প্রকাশ বা সংজ্ঞায়িত করা হয়, তবুও তালাক বা বিয়েবিচ্ছেদের সর্বাধিক জনপ্রিয় সংজ্ঞাগুলোর মধ্যে তিনটি উল্লেখ করা হলো। প্রথমত, বিয়ের আওতায় সম্পূর্ণভাবে স্বামী এবং স্ত্রীকে একসাথে বসবাসের বৈবাহিক বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দেওয়ার একটি বিচারিক ঘোষণা। দ্বিতীয়ত, প্রতিষ্ঠিত প্রথা অনুযায়ী স্বামী ও স্ত্রীর যে কোনো একজনের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ এবং শেষত সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ বা বিচ্ছিন্নতা; যা বৈবাহিক মিলনকে বিচ্ছিন্ন করা বোঝায়।

মূলত তালাক শব্দটির উৎস আরবি ভাষা থেকে; যার অর্থ হলো কোনো কিছু ভেঙে ফেলা বা ছিন্ন করা। মুসলিম আইনের বিধান মতে, তালাক স্বামী-স্ত্রীর একটি বৈধ ও স্বীকৃত অধিকার। যখন স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এমন এক চরম নেতিবাচক পর্যায়ে পৌঁছায় যে, দুইজনের পক্ষে একত্রে বসবাস করা সম্ভব হয় না; তখনই যে কোনো একপক্ষ থেকে বা উভয়েই কিছু নির্দিষ্ট উপায়ে তালাকের মাধ্যমে তাদের এই সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারেন।

উল্লেখ্য যে, মুসলিম আইনের বিধান মতে, তালাক দেওয়ার ক্ষমতা বা অধিকার স্বামী ও স্ত্রীর সমান নয়। স্বামীর এক্ষেত্রে প্রায় একচ্ছত্র ক্ষমতা রয়েছে। তবুও স্বামী বা স্ত্রী যে কোনো একজনের ইচ্ছায় (কিছু আইনগত শর্ত পূরণের মাধ্যমে) তালাক হতে পারে। মুসলিম আইন অনুযায়ী নিম্নলিখিতভাবে তালাক দেওয়া যায়-

স্বামীর পক্ষ থেকে তালাকের ব্যাপারে উল্লেখ্য যে আমাদের দেশে প্রচলিত মুসলিম আইন অনুযায়ী একজন পূর্ণ বয়স্ক ও সুস্থ মস্তিস্কের মুসলিম ব্যক্তি যে কোনো সময় কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। এতে আইনের কাছে তাকে কোন জবাবদিহি করতে হয়না। আশ্চর্যর বিষয় হলো যে তাকে কেন তালাক দেওয়া হলো স্ত্রী তা জানতে চাইতে পারে না। তবে এক্ষেত্রে এখনও অনেকে মনে করেন ‘এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক’ বা বায়েন তালাক উচ্চারণ করা মাত্র তালাক হয়ে যায়। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। স্বামী যে কোনো সময় তালাক দিতে পারলেও তাকে আইনগতভাবে সব নিয়ম মেনেই তালাক দিতে হয়।

এদিকে স্ত্রী তিন উপায়ে তালাক দিতে পারেন যেমন (ক) তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে (নিকাহনামার ১৮ নং ঘর বা অনুচ্ছেদ স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাকা প্রদানের ক্ষমতা অর্পন করে থাকে, সে ক্ষমতার বলে স্ত্রী যদি স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ চায়, তাহলে সে বিচ্ছেদ, তালাক-ই তৌফিজ বলে) (খ) খুলার মাধ্যমে (স্বামী এবং স্ত্রীর আলোচনার সাপেক্ষে নিজেদের সমঝোতার মাধ্যমে যে বিচ্ছেদ হয়, তাকে খুলা বলে। তবে স্বামীকে খুলা বিচ্ছেদে রাজি করানোর দায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রীর। অবশ্য এক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীকে ইদ্দতকালীন সময়ে ও গর্ভস্থ সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য)। (গ) এখন আদালতের মাধ্যমে তালাক অহরহ দেখা যায়। এ সূত্র ধরে স্বামী-স্ত্রী দুই জনই নিজেদের ইচ্ছাতে নিজেদের সম্মতিক্রমে সমঝতার মাধ্যমে তালাকের ব্যবস্থা করতে পারেন। যদিও বর্তমানে তালাক রেজিস্ট্রেশন করা এখন আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। তালাক প্রাপ্ত স্বামী-স্ত্রী কি পুনরায় বিয়ে করতে পারবে? হাঁ পারে। সেক্ষেত্রে নতুন করে বিয়ে করতে হবে। আর তালাকের পর সন্তান কার কাছে থাকবে? এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে তালাকের পর সন্তান মায়ের কাছে থাকবে। ছেলে সন্তান ৭ বছর পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তান বয়ঃসদ্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে। তবে তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবা বহন করবে। যদি বাবা দায়িত্ব পালন না করে সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সালিসীর মাধ্যমে আলাপ আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করতে পারেন। আর তালাক কখন প্রত্যাহার করা যায়? সেক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, ৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগেই তালাক প্রত্যাহার করা যায়। মূলত কোন ব্যক্তি স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে তাকে যে কোনো পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর যথা শিগগিরই সম্ভব স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌর/সিটি চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে এবং স্ত্রীকে উক্ত নোটিসের নকল প্রদান করতে হবে। এ ব্যাপারে বিশদ আইন ও বিধিমালা রয়েছে; যা প্রবন্ধের কলেবরের সংক্ষিপ্ততার স্বার্থে বর্ণনা করা সম্ভব হলো না। তবে কিছুটা উল্লেখ না করা হলে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাই যৎকিঞ্চিত তুলে ধরা হলো।

শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বেই তালাক জ্যামিতিক গতিতে বেড়ে চলেছে। আর তালাকের দিক দিয়ে আমেরিকা রেকর্ড করে ফেলেছে। তালাক এখন স্বাভাবিক ব্যাপার, যেন ভাত-মাছ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাহোক দেশে তালাক বাড়ছে। গ্রামে যেমন, তেমনই শহরে। শহরের চেয়ে গ্রামে তালাকের সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক ২০২৩-এর ফলাফলে দেখা যায় যে, গ্রামে প্রতি ১০ হাজারে তালাকের সংখ্যা ১১, আর শহরে ৯। তালাক বৃদ্ধি বিশেষত গ্রামে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে এটি অধিক পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। গ্রামে বাল্যবিয়ের সংখ্যাও বেশি। যখন কম বয়সি একটি মেয়ের দুয়েকটি সন্তান নিয়ে তালাক হয়ে যায়, তখন তার দুর্ভোগ, বিড়ম্বনা ও অনিশ্চয়তার শেষ থাকে না। দ্বিতীয় বিয়ে যেমন তার জন্য কঠিন হয়ে ওঠে, তেমনি বাবা-মার কাছেও অনেক সময় আশ্রয় জোটে না কিংবা তাদের আশ্রয় দেয়ার মতো অবস্থা থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে তালাকপ্রাপ্তা ও তার সন্তান-সন্ততির কী দুঃসহ অবস্থা দাঁড়ায়, সেটি সহজেই আন্দাজ করা যায়। আসলে তালাকের কারণ প্রধানত দারিদ্র্য বা পারিবারিক ব্যয়বহনের অক্ষমতা। তাছাড়া পারিবারিক চাপ, শারীরিক নির্যাতন, যৌন অক্ষমতা ইত্যাদিও তালাকের জন্য দায়ী। মূলত অভাব-দারিদ্র্য পারিবারিক অশান্তির প্রধান কারণ। আর পারিবারিক অশান্তি তালাকের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। পারিবারিক অশান্তি বা কলহ-বিবাদ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর শারীরিক নির্যাতনের মূলে। দেখা গেছে যে, দেশের যে সব এলাকায় অভাব-দারিদ্র্য বেশি, সে সব এলাকায় তালাকের হার বেশি। এছাড়া বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের কারণেও তালাক হতে দেখা যায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নৈতিক অবক্ষয় বেড়ে যাওয়ায় বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপনের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক সময় বেশি বয়সি বর ও বিপত্মীকের কাছেও বিয়ে দিতে বাধ্য হয়। কেননা মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। মেয়েদের জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া, জবরদস্তি ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা মারাত্মকভাবে বেড়েছে। ইজ্জত-সম্মান রক্ষার স্বার্থে তারা কিছুমাত্র সুযোগ পেলেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে স্বস্তি লাভ করে। বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর গত জুন মাসে প্রকাশ করা জরিপের ফল অনুযায়ী দেখা যায় যে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে তালাকের সংখ্যা বেড়েছে ১.৪ শতাংশ, যা আগে ছিল ০.৭ শতাংশ। আশ্চার্যর বিষয় হলো যে ঢাকায় গড়ে ৪০ মিনিটের ব্যবধানে একটি করে তালাকের ঘটনা ঘটছে। আর তালাকের দিক দিয়ে পুরুষকে পেছনে ফেলে মেয়েরা ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলছে। দুঃখের বিষয় হলো যে, এখন কোনো ঠুনকো বিষয় নিয়েও তালাক হয়। যাহোক বর্তমানে তালাক হওয়ার পেছনে উল্লেখ্যযোগ্য পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ কারণ হলো পরকীয়া; মাদকাশক্ত; মোবাইল (ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক) প্রতিবেশি দেশের নেতিবাচক টিভি সিরিয়াল; বিদেশে অধিক সময় স্বামীর প্রবাসী জীবন; একে অন্যের সময় না দেয়া; চাকরি বা অন্য কাজে জড়িত; নির্যাতন; যৌতুক; মানসিক পীড়ন; বেপরোয়া জীবন; বদমেজাজ; সংসারের প্রতি উদাসিনতা; পুরুষত্বহীনতা; অবাধ্য হওয়া; শারীরিক চাহিদায় অপূর্ণতা; সন্তান না হওয়া ইত্যাদি। তাছাড়া আধুনিকতার নামে ইদানীং পাশ্চাত্ত সংস্কৃতির আওতায় ডেটিং ও লিভ টুগেদার অনুপ্রবেশ করে পারিবারিক জীবন কাঁপিয়ে তুলছে।

পরিশেষে এই বলে শেষ করছি যে, তালাকের পক্ষে যতই যুক্তিতর্ক দেখাই না কেন। তালাক কোনো সময় গ্রহণযোগ্য ও শুভ নয়; যা ফরিদা জীবন দিয়ে দেখিয়ে চিরবিদায় নিয়েছে।

লেখক: মো. আব্দুল বাকী চৌধুরী নবাব: বিশিষ্ট গবেষক, অর্থনীতিবিদ এবং লেখক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

হায়রে তালাকনামা কার দোষে তুই এলি?

আপডেট সময় : ০৭:৪১:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

মো. আব্দুল বাকী চৌধুরী নবাব

কয়েকদিন আগে ইউটিউবে দেখলাম ষাট-সত্তরের দশকের সিনেমার অন্যতম কোনো এক জনপ্রিয় নায়িকা অকালেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। মৃত্যুর অব্যবহিত পর তার বাক্সে একটি তালাকনামা পাওয়া যায়; যা তিনি সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন। এতে কি প্রতীয়মান হয় না যে, কতখানি হৃদয়ভাঙা কষ্ট করে রেখে দিয়েছিলেন এই অনাকাক্সিক্ষত কাগজটি? একদিকে তার কাছে ঘৃণিত; আবার অন্যদিকে মহামূল্যবান। কেননা শুধু এর কারণে তার জীবনের মোড় সম্পূর্ণরূপে ঘুরে গিয়েছে। বস্তুত বাংলার পারিবারিক সংস্কৃতির আওতায় স্বামী কি স্ত্রী, যেই হোক না কেন, সহজে কেউ তালাক দিতে চায় না। একান্ত অবস্থার শিকার হয়ে এই ঘৃণিত কাজ করে থাকে। যেভাবেই বলি না কেন, মানব জীবনে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এক্ষেত্রে আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেছেন যে, তোমাদের আমি সৃষ্টি করেছি (স্বামী-স্ত্রী রূপে) জোড়ায় জোড়ায় (সুরা নাবা, আয়াত-৮)। বাল্যকালে এই রকম আরেকটি দুঃখজনক ঘটনা দেখেছিলাম। তা না হয় পরে তুলে ধরা হবে। যাহোক, প্রথমে তালাকের কিছু মৌলিক বিষয়কে ঘিরে সঙ্গতকারণেই নিম্নে আলোকপাত করার প্রয়াসী হয়েছি।

আজকের আধুনিক সমাজে বিয়ে বিচ্ছেদ বৈধ এবং আইন দ্বারা সমর্থিত হলেও সমাজে তার স্বীকৃতি পায় সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই। তাই তালাক তথা বিয়েবিচ্ছেদের প্রথা এখনকার নয়। এটি যিশুখৃষ্টের জন্মের অনেক আগ থেকেই চলে আসছে। এ সূত্র ধরে উল্লেখ্য যে, ১৯৭০ খৃষ্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলনের রাজা হামুরাবির রাজত্বকালে এই প্রথা প্রচলিত ছিল। এর নজির হিসেবে উল্লেখ্য যে, তখনকার পাথরের গায়ে ২৮২টি আইন খোদাই করা ছিল; যার মধ্যে বিয়েবিচ্ছেদের আইনটি বলা তবিয়তে অন্তর্ভুক্ত ছিল। যতদূর জানা গেছে- তাতে প্রতীয়মান হয় যে, আদিতে বিয়ে প্রথা প্রচলিত ছিল না। তখন স্বেচ্ছাচারিতা প্রকট ছিল। যে বেশি শিকার করতে পারতো বা ফসল ফলাতে পারতো তার সঙ্গী বা সঙ্গীনির অভাব হতো না। যাহোক, আদিম যুগে যখন মানুষ টোটেম গ্রুপের আওতায় সমাজবদ্ধ হতে থাকে, তখনই বিয়ে শুরু। আবার এইভাবে ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্য সম্বলিত দুটি পৃথক সত্ত্বা এক সূত্রে গাঁথা হলে ছন্দপতন হওয়া স্বাভাবিক বলে বিচ্ছেদও শুরু হয়। এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য যে, তালাকের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ডিভোর্স। এই ‘ডিভোর্স’ এসেছে ল্যাটিন শব্দ থেকে; যার অর্থ বিচ্ছেদ। আর এটি ‘ডিভোর্টের’ শব্দের সমতুল্য। এক্ষেত্রে ‘উর’ এর মানে আলাদা এবং এর অর্থ বিভিন্ন পন্থায় ঘুরে আসা।

মজার ব্যাপার হলো যে, এই ডিভোর্স শব্দটি ১৪ শতকের পরবর্তী সময়ে ফরাসি শব্দভান্ডারে অর্ন্তুভুক্ত থাকলেও ১৩৫০-১৪০০ সালের দিকে ইংরেজিতে জায়গা করে নেয়। বর্তমানে যদিও বিয়েবিচ্ছেদ বিভিন্ন উপায়ে প্রকাশ বা সংজ্ঞায়িত করা হয়, তবুও তালাক বা বিয়েবিচ্ছেদের সর্বাধিক জনপ্রিয় সংজ্ঞাগুলোর মধ্যে তিনটি উল্লেখ করা হলো। প্রথমত, বিয়ের আওতায় সম্পূর্ণভাবে স্বামী এবং স্ত্রীকে একসাথে বসবাসের বৈবাহিক বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দেওয়ার একটি বিচারিক ঘোষণা। দ্বিতীয়ত, প্রতিষ্ঠিত প্রথা অনুযায়ী স্বামী ও স্ত্রীর যে কোনো একজনের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ এবং শেষত সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ বা বিচ্ছিন্নতা; যা বৈবাহিক মিলনকে বিচ্ছিন্ন করা বোঝায়।

মূলত তালাক শব্দটির উৎস আরবি ভাষা থেকে; যার অর্থ হলো কোনো কিছু ভেঙে ফেলা বা ছিন্ন করা। মুসলিম আইনের বিধান মতে, তালাক স্বামী-স্ত্রীর একটি বৈধ ও স্বীকৃত অধিকার। যখন স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এমন এক চরম নেতিবাচক পর্যায়ে পৌঁছায় যে, দুইজনের পক্ষে একত্রে বসবাস করা সম্ভব হয় না; তখনই যে কোনো একপক্ষ থেকে বা উভয়েই কিছু নির্দিষ্ট উপায়ে তালাকের মাধ্যমে তাদের এই সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারেন।

উল্লেখ্য যে, মুসলিম আইনের বিধান মতে, তালাক দেওয়ার ক্ষমতা বা অধিকার স্বামী ও স্ত্রীর সমান নয়। স্বামীর এক্ষেত্রে প্রায় একচ্ছত্র ক্ষমতা রয়েছে। তবুও স্বামী বা স্ত্রী যে কোনো একজনের ইচ্ছায় (কিছু আইনগত শর্ত পূরণের মাধ্যমে) তালাক হতে পারে। মুসলিম আইন অনুযায়ী নিম্নলিখিতভাবে তালাক দেওয়া যায়-

স্বামীর পক্ষ থেকে তালাকের ব্যাপারে উল্লেখ্য যে আমাদের দেশে প্রচলিত মুসলিম আইন অনুযায়ী একজন পূর্ণ বয়স্ক ও সুস্থ মস্তিস্কের মুসলিম ব্যক্তি যে কোনো সময় কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। এতে আইনের কাছে তাকে কোন জবাবদিহি করতে হয়না। আশ্চর্যর বিষয় হলো যে তাকে কেন তালাক দেওয়া হলো স্ত্রী তা জানতে চাইতে পারে না। তবে এক্ষেত্রে এখনও অনেকে মনে করেন ‘এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক’ বা বায়েন তালাক উচ্চারণ করা মাত্র তালাক হয়ে যায়। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। স্বামী যে কোনো সময় তালাক দিতে পারলেও তাকে আইনগতভাবে সব নিয়ম মেনেই তালাক দিতে হয়।

এদিকে স্ত্রী তিন উপায়ে তালাক দিতে পারেন যেমন (ক) তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে (নিকাহনামার ১৮ নং ঘর বা অনুচ্ছেদ স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাকা প্রদানের ক্ষমতা অর্পন করে থাকে, সে ক্ষমতার বলে স্ত্রী যদি স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ চায়, তাহলে সে বিচ্ছেদ, তালাক-ই তৌফিজ বলে) (খ) খুলার মাধ্যমে (স্বামী এবং স্ত্রীর আলোচনার সাপেক্ষে নিজেদের সমঝোতার মাধ্যমে যে বিচ্ছেদ হয়, তাকে খুলা বলে। তবে স্বামীকে খুলা বিচ্ছেদে রাজি করানোর দায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রীর। অবশ্য এক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীকে ইদ্দতকালীন সময়ে ও গর্ভস্থ সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য)। (গ) এখন আদালতের মাধ্যমে তালাক অহরহ দেখা যায়। এ সূত্র ধরে স্বামী-স্ত্রী দুই জনই নিজেদের ইচ্ছাতে নিজেদের সম্মতিক্রমে সমঝতার মাধ্যমে তালাকের ব্যবস্থা করতে পারেন। যদিও বর্তমানে তালাক রেজিস্ট্রেশন করা এখন আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। তালাক প্রাপ্ত স্বামী-স্ত্রী কি পুনরায় বিয়ে করতে পারবে? হাঁ পারে। সেক্ষেত্রে নতুন করে বিয়ে করতে হবে। আর তালাকের পর সন্তান কার কাছে থাকবে? এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে তালাকের পর সন্তান মায়ের কাছে থাকবে। ছেলে সন্তান ৭ বছর পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তান বয়ঃসদ্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে। তবে তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবা বহন করবে। যদি বাবা দায়িত্ব পালন না করে সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সালিসীর মাধ্যমে আলাপ আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করতে পারেন। আর তালাক কখন প্রত্যাহার করা যায়? সেক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, ৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগেই তালাক প্রত্যাহার করা যায়। মূলত কোন ব্যক্তি স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে তাকে যে কোনো পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর যথা শিগগিরই সম্ভব স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌর/সিটি চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে এবং স্ত্রীকে উক্ত নোটিসের নকল প্রদান করতে হবে। এ ব্যাপারে বিশদ আইন ও বিধিমালা রয়েছে; যা প্রবন্ধের কলেবরের সংক্ষিপ্ততার স্বার্থে বর্ণনা করা সম্ভব হলো না। তবে কিছুটা উল্লেখ না করা হলে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাই যৎকিঞ্চিত তুলে ধরা হলো।

শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বেই তালাক জ্যামিতিক গতিতে বেড়ে চলেছে। আর তালাকের দিক দিয়ে আমেরিকা রেকর্ড করে ফেলেছে। তালাক এখন স্বাভাবিক ব্যাপার, যেন ভাত-মাছ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাহোক দেশে তালাক বাড়ছে। গ্রামে যেমন, তেমনই শহরে। শহরের চেয়ে গ্রামে তালাকের সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক ২০২৩-এর ফলাফলে দেখা যায় যে, গ্রামে প্রতি ১০ হাজারে তালাকের সংখ্যা ১১, আর শহরে ৯। তালাক বৃদ্ধি বিশেষত গ্রামে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে এটি অধিক পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। গ্রামে বাল্যবিয়ের সংখ্যাও বেশি। যখন কম বয়সি একটি মেয়ের দুয়েকটি সন্তান নিয়ে তালাক হয়ে যায়, তখন তার দুর্ভোগ, বিড়ম্বনা ও অনিশ্চয়তার শেষ থাকে না। দ্বিতীয় বিয়ে যেমন তার জন্য কঠিন হয়ে ওঠে, তেমনি বাবা-মার কাছেও অনেক সময় আশ্রয় জোটে না কিংবা তাদের আশ্রয় দেয়ার মতো অবস্থা থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে তালাকপ্রাপ্তা ও তার সন্তান-সন্ততির কী দুঃসহ অবস্থা দাঁড়ায়, সেটি সহজেই আন্দাজ করা যায়। আসলে তালাকের কারণ প্রধানত দারিদ্র্য বা পারিবারিক ব্যয়বহনের অক্ষমতা। তাছাড়া পারিবারিক চাপ, শারীরিক নির্যাতন, যৌন অক্ষমতা ইত্যাদিও তালাকের জন্য দায়ী। মূলত অভাব-দারিদ্র্য পারিবারিক অশান্তির প্রধান কারণ। আর পারিবারিক অশান্তি তালাকের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। পারিবারিক অশান্তি বা কলহ-বিবাদ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর শারীরিক নির্যাতনের মূলে। দেখা গেছে যে, দেশের যে সব এলাকায় অভাব-দারিদ্র্য বেশি, সে সব এলাকায় তালাকের হার বেশি। এছাড়া বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের কারণেও তালাক হতে দেখা যায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নৈতিক অবক্ষয় বেড়ে যাওয়ায় বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপনের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক সময় বেশি বয়সি বর ও বিপত্মীকের কাছেও বিয়ে দিতে বাধ্য হয়। কেননা মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। মেয়েদের জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া, জবরদস্তি ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা মারাত্মকভাবে বেড়েছে। ইজ্জত-সম্মান রক্ষার স্বার্থে তারা কিছুমাত্র সুযোগ পেলেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে স্বস্তি লাভ করে। বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর গত জুন মাসে প্রকাশ করা জরিপের ফল অনুযায়ী দেখা যায় যে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে তালাকের সংখ্যা বেড়েছে ১.৪ শতাংশ, যা আগে ছিল ০.৭ শতাংশ। আশ্চার্যর বিষয় হলো যে ঢাকায় গড়ে ৪০ মিনিটের ব্যবধানে একটি করে তালাকের ঘটনা ঘটছে। আর তালাকের দিক দিয়ে পুরুষকে পেছনে ফেলে মেয়েরা ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলছে। দুঃখের বিষয় হলো যে, এখন কোনো ঠুনকো বিষয় নিয়েও তালাক হয়। যাহোক বর্তমানে তালাক হওয়ার পেছনে উল্লেখ্যযোগ্য পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ কারণ হলো পরকীয়া; মাদকাশক্ত; মোবাইল (ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক) প্রতিবেশি দেশের নেতিবাচক টিভি সিরিয়াল; বিদেশে অধিক সময় স্বামীর প্রবাসী জীবন; একে অন্যের সময় না দেয়া; চাকরি বা অন্য কাজে জড়িত; নির্যাতন; যৌতুক; মানসিক পীড়ন; বেপরোয়া জীবন; বদমেজাজ; সংসারের প্রতি উদাসিনতা; পুরুষত্বহীনতা; অবাধ্য হওয়া; শারীরিক চাহিদায় অপূর্ণতা; সন্তান না হওয়া ইত্যাদি। তাছাড়া আধুনিকতার নামে ইদানীং পাশ্চাত্ত সংস্কৃতির আওতায় ডেটিং ও লিভ টুগেদার অনুপ্রবেশ করে পারিবারিক জীবন কাঁপিয়ে তুলছে।

পরিশেষে এই বলে শেষ করছি যে, তালাকের পক্ষে যতই যুক্তিতর্ক দেখাই না কেন। তালাক কোনো সময় গ্রহণযোগ্য ও শুভ নয়; যা ফরিদা জীবন দিয়ে দেখিয়ে চিরবিদায় নিয়েছে।

লেখক: মো. আব্দুল বাকী চৌধুরী নবাব: বিশিষ্ট গবেষক, অর্থনীতিবিদ এবং লেখক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ