ঢাকা ০১:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

হামলাকারীদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

  • আপডেট সময় : ১২:৫১:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

ববি সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাচের কেউ হামলা করলে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীকে ব্যাচ থেকে বহিষ্কার করার দাবি তুলবেন তারা।
সোমবার (১৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পর এ সিদ্ধান্ত নেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫টি বিভাগের কমপক্ষে ৫০টি ব্যাচ এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা যায়। বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্যবস্থাপনা, লোকপ্রশাসন, ইংরেজি, গণিত, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, বাংলা, মার্কেটিং, রসায়ন, আইন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, পরিসংখ্যান বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লেখেন, ‘আমাদের ব্যাচের কেউ যদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে বা হয়, তাহলে উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে বা তাদেরকে ব্যাচের সামগ্রিক যেকোনো প্রকার কাজ হতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে।’ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে লোকপ্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা কোনো সন্ত্রাসীর সঙ্গে একই শ্রেণীকক্ষে বসতে রাজি নই।’ সমাজকর্ম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমাদের সহপাঠী কেউ যদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে তাহলে তাদের আমরা ব্যাচ থেকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের কোনো সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ক্লাস করার রুচি নেই।’ এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে সাড়ে তিন ঘণ্টা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক অবরোধ কলেজ শিক্ষার্থীদের
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক অবরোধ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বারঘরিয়ায় সকাল ১০টায় থেকে দুপুর সাড়ে ১টা পর্যন্ত দুই দফায় সড়ক অবরোধ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্ররা। পরে কলেজের অধ্যক্ষ ও পুলিশ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে তাদের ক্লাসে পাঠান। সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা কলেজের পোশাক গায়ে আইডি কার্ড নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। তারা বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর সড়ক অবরোধ করেন। এসময় সেতুর দুপাশে শতশত গাড়ি আটকে যায়। তবে জরুরি গাড়িগুলো পার করে দেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাার্থীদের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে তারা সড়ক অবরোধ করেছেন। হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, ছাত্ররা সড়ক অবরোধ করেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ সমন্বয় করে ক্লাসে পাঠিয়েছে।
স্লোগানে উত্তাল রংপুর নগরী
রংপুর সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও শিক্ষার্থীদের অবমাননা করার প্রতিবাদে রংপুরে রাজপথে নেমে এসেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের স্লোগানে উত্তাল রংপুর নগরী। এতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহস্রাধিকের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল চত্বরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। তারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, নির্যাতন ও গুলিবর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। একই সঙ্গে কোটার যৌক্তিক সংস্কারসহ মেধার মূল্যায়নে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর জিলা স্কুল মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। রংপুর জিলা স্কুলের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মিছিলটি বের হলেও এতে রংপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। শুরুতে পুলিশ তাদের মিছিলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে পুলিশি নিরাপত্তায় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের দিকে এগিয়ে যান। এসময় রংপুর মেডিকেল কলেজ, রংপুর সরকারি কলেজ, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ, রংপুর সরকারি সিটি কলেজ, রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে যুক্ত হলে মিছিল বড় আকার ধারণ করে। তাদের বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে নগরী। মিছিলটি প্রেসক্লাব চত্বরে পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা আবারও পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। প্রায় বিশ মিনিট সেখানে সড়কে অবস্থান করার পর মিছিল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অভিমুখে রওনা দেন তারা। নগরীর লালবাগ এলাকায় পৌঁছলে এই মিছিলে কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিছিলে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোটাবিরোধী স্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে রাজপথ। আন্দোলনকারীরা মিছিল থেকে অভিযোগ করে বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের শরীর থেকে রক্ত ঝড়িয়েছে। হামলার শিকার আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালেও নিরাপদ নন, সেখানেও ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে ভিন্নভাবে প্রভাবিহ করতে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে তারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। যে স্লোগান নিয়ে আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেই স্লোগানের পুরোটা তাদের কানে পৌঁছেনি। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অংশ নেওয়া কি অপরাধ? এদিকে বিক্ষোভ থেকে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মিছিলের সামনে-পেছনে বিপুল সংখ্যাক পুলিশ দেখা গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিলে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, পোস্টার, ব্যানার প্রদর্শন করেন। এর পাশাপাশি তাদের অনেকের হাতে থাকা লাঠিতে জাতীয় পতাকা বেধে রাখতে দেখা যায়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (দুপুর ২টা) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড় এলাকায় অবস্থান করছিলেন। বেলা ১১টার দিকে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। সমাবেশ থেকে তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ-পুলিশের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্য সংস্কারের দাবি করেন।
অন্যদিকে কোটা বাতিল আন্দোলনের নামে জাতীয় পতাকার অবমাননা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলেন করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রংপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে কোটা আন্দোলনের নামে অরাজকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টি ও প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তি করার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

হামলাকারীদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

আপডেট সময় : ১২:৫১:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪

ববি সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাচের কেউ হামলা করলে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীকে ব্যাচ থেকে বহিষ্কার করার দাবি তুলবেন তারা।
সোমবার (১৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পর এ সিদ্ধান্ত নেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫টি বিভাগের কমপক্ষে ৫০টি ব্যাচ এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা যায়। বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্যবস্থাপনা, লোকপ্রশাসন, ইংরেজি, গণিত, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, বাংলা, মার্কেটিং, রসায়ন, আইন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, পরিসংখ্যান বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লেখেন, ‘আমাদের ব্যাচের কেউ যদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে বা হয়, তাহলে উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে বা তাদেরকে ব্যাচের সামগ্রিক যেকোনো প্রকার কাজ হতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে।’ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে লোকপ্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা কোনো সন্ত্রাসীর সঙ্গে একই শ্রেণীকক্ষে বসতে রাজি নই।’ সমাজকর্ম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমাদের সহপাঠী কেউ যদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে তাহলে তাদের আমরা ব্যাচ থেকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের কোনো সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ক্লাস করার রুচি নেই।’ এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে সাড়ে তিন ঘণ্টা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক অবরোধ কলেজ শিক্ষার্থীদের
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক অবরোধ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বারঘরিয়ায় সকাল ১০টায় থেকে দুপুর সাড়ে ১টা পর্যন্ত দুই দফায় সড়ক অবরোধ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্ররা। পরে কলেজের অধ্যক্ষ ও পুলিশ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে তাদের ক্লাসে পাঠান। সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা কলেজের পোশাক গায়ে আইডি কার্ড নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। তারা বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর সড়ক অবরোধ করেন। এসময় সেতুর দুপাশে শতশত গাড়ি আটকে যায়। তবে জরুরি গাড়িগুলো পার করে দেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাার্থীদের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে তারা সড়ক অবরোধ করেছেন। হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, ছাত্ররা সড়ক অবরোধ করেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ সমন্বয় করে ক্লাসে পাঠিয়েছে।
স্লোগানে উত্তাল রংপুর নগরী
রংপুর সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও শিক্ষার্থীদের অবমাননা করার প্রতিবাদে রংপুরে রাজপথে নেমে এসেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের স্লোগানে উত্তাল রংপুর নগরী। এতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহস্রাধিকের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল চত্বরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। তারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, নির্যাতন ও গুলিবর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। একই সঙ্গে কোটার যৌক্তিক সংস্কারসহ মেধার মূল্যায়নে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর জিলা স্কুল মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। রংপুর জিলা স্কুলের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মিছিলটি বের হলেও এতে রংপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। শুরুতে পুলিশ তাদের মিছিলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে পুলিশি নিরাপত্তায় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের দিকে এগিয়ে যান। এসময় রংপুর মেডিকেল কলেজ, রংপুর সরকারি কলেজ, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ, রংপুর সরকারি সিটি কলেজ, রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে যুক্ত হলে মিছিল বড় আকার ধারণ করে। তাদের বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে নগরী। মিছিলটি প্রেসক্লাব চত্বরে পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা আবারও পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। প্রায় বিশ মিনিট সেখানে সড়কে অবস্থান করার পর মিছিল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অভিমুখে রওনা দেন তারা। নগরীর লালবাগ এলাকায় পৌঁছলে এই মিছিলে কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিছিলে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোটাবিরোধী স্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে রাজপথ। আন্দোলনকারীরা মিছিল থেকে অভিযোগ করে বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের শরীর থেকে রক্ত ঝড়িয়েছে। হামলার শিকার আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালেও নিরাপদ নন, সেখানেও ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে ভিন্নভাবে প্রভাবিহ করতে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে তারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। যে স্লোগান নিয়ে আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেই স্লোগানের পুরোটা তাদের কানে পৌঁছেনি। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অংশ নেওয়া কি অপরাধ? এদিকে বিক্ষোভ থেকে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মিছিলের সামনে-পেছনে বিপুল সংখ্যাক পুলিশ দেখা গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিলে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, পোস্টার, ব্যানার প্রদর্শন করেন। এর পাশাপাশি তাদের অনেকের হাতে থাকা লাঠিতে জাতীয় পতাকা বেধে রাখতে দেখা যায়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (দুপুর ২টা) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড় এলাকায় অবস্থান করছিলেন। বেলা ১১টার দিকে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। সমাবেশ থেকে তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ-পুলিশের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্য সংস্কারের দাবি করেন।
অন্যদিকে কোটা বাতিল আন্দোলনের নামে জাতীয় পতাকার অবমাননা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলেন করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রংপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে কোটা আন্দোলনের নামে অরাজকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টি ও প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তি করার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।