স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: সবাই চায় স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে। তবে অনেক বেশি বা বড় লক্ষ্য নিয়ে ডায়েট শুরু করার ফলাফল খুব একটা ফলপ্রসু হয় না। এমন ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষই দ্রুত হাল ছেড়ে দেয়। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে ধীরে ধীরে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে। বয়স কমাতে প্রতিদিন কলা খাওয়া চমৎকার কৌশল হিসেবে কাজ করে। ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক ভিত্তিক পুষ্টিবিদ এবং খাদ্য প্রশিক্ষক বিয়াঙ্কা টাম্বারেলো বয়স কমাতে নিয়মিত কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন।
ফ্লাভানয়েডস: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ চাপ কমায়। অক্সিডেটিভ চাপ কেবল বার্ধক্য দ্রুত করে না বরং রোগ ও মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়ায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল ও সবজি বেশি করে গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে। টাম্বারেলো ব্যাখ্যা করেন, “কলা ফ্লাভানয়েডস সমৃদ্ধ যা এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটা প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে ও বয়সের গতি স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।” দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। কারণ এর সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু অসুখ যেমন- রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস, স্মৃতিভ্রংশ, হৃদরোগ ও টাইপ টু ডায়াবেটিস জড়িত, জানান তিনি।
দ্রবণীয় আঁশ: একটি বড় আকারের কলায় সাড়ে তিন গ্রাম খাদ্য-আঁশ থাকে যা দৈনিক চাহিদার ২১ থেকে ৩৮ গ্রাম পূরণ করে। টাম্বারেলো জানান, “দ্রবণীয় আঁশ রয়েছে কলাতে যা হৃদ স্বাস্থ্য ভালো রাখে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। আর হজম শক্তি উন্নত করতেও সহায়তা করে ফলে অন্ত্র সুস্থ থাকে।”
প্রতিরোধী শ্বেতসার: অন্ত্র সুস্থ রাখতে কাঁচা কলা খাওয়া উপকারী। কারণ এতে রয়েছে বিশেষ রকমের আঁশ যা প্রতিরোধী শ্বেতসার নামে পরিচিত। টাম্বারেলো বলেন, “প্রতিরোধী শ্বেতসার প্রোবায়োটিকের মতো কাজ করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যকর ব্যাক্টেরিয়ার খাবার হিসেবে ভূমিকা রেখে মাইক্রোবায়োম’য়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।” দ্রবণীয় আশেঁর মতো প্রতিরোধী শ্বেতসারও রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
পটাসিয়াম: এমন একটি খনিজ উপাদান যা বয়স বাড়ার পরে শরীর ভালো রাখতে সহায়তা করে। বেশি পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হাড়ের খনিজের ঘনত্ব বাড়ানোর সাথে সম্পর্কিত, যা মূলত বয়সের সাথে হ্রাস পায়। কলা পটাসিয়ামের উৎকৃষ্ঠ উৎস। হাড়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা ছাড়াও পটাসিয়াম বৃক্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আর দ্রুত পেশি পুনর্গঠনে সহায়তা করে। পাশাপাশি রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা রাখে।
ভিটামিন সি: টাম্বারেলো বলেন, “কমলালেবু ছাড়াও কলাতে রয়েছে ভিটামিন সি। এটা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ক্ষত সুস্থ করতে সহায়তা করে।” দৈনিক চাহিদার ১২ শতাংশ ভিটামিন সি রয়েছে কলাতে। এছাড়াও এতে আছে কিছু মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যা বয়সের গতি ধীর করে এবং অবক্ষয় কমায়। যদিও এই তথ্য প্রমাণের জন্য এখনও বিভিন্ন ধরনের গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে।
উপকারিতা
“প্রতিদিন কলা খাওয়া ডাক্তার থেকে দূরে রাখে” বিশেষ করে বার্ধক্যজনিত লক্ষণ দেখা দিলে এই কথা বেশি কার্যকর। হাতের নাগালেই পাওয়া যায় কলা। প্রতিদিন ঝটপট একটি কলা খাওয়া সার্বিকভাবে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। টাম্বারেলো বলেন, “অধিকাংশ মানুষই দৈনিক এক পরিবেশন কলা খেয়ে উপকৃত হন। তবে কেউ চাইলে কিছুটা ভিন্ন উপায়েও কলা খেতে পারেন।”
যেমন-
* সকালে ওটসের সাথে ছোট টুকরা করে কলা খাওয়া যায়।
* প্যান কেক বা কম মিষ্টির পেস্ট্রি তৈরির ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
* পিনাট বাটারের সাথে স্লাইস করে খাওয়া যায়।
* হিমায়িত কলা ব্লেন্ড করে এর সাথে ভ্যানিলা বা দারুচিনি যোগ করে আইসক্রিম পরিবেশন করা যায়।
* টাম্বারেলা পরামর্শ দেন, “মনে রাখবেন, কোনো একটা খাবার জাদুর বুলেটের মতো কাজ করে না, যা বয়সের ছাপ ধীর করতে পারে। তাই খাবারে ভিন্ন ভিন্ন উপাদান রাখা জরুরি।”