প্রত্যাশা ডেস্ক: জিআই পণ্যখ্যাত রংপুরের হাঁড়িভাঙা আমে বাজারে সয়লাব হয়েছে। তবে দাবদাহের কারণে এবার সময়ের আগেই গাছ থেকে আম পাড়া শুরু করেছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। চলতি মৌসুমে আমের ভালো ফলন হওয়ায় এবার বেচাকেনা ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের। আঁশবিহীন সুমিষ্ট এই আমের চাহিদা দেশজুড়ে।
সময়ের আগে থেকে হাঁড়িভাঙা আম পাড়া শুরু হলেও রোববার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই আমের বাজারজাত শুরু হয়েছে বলে জানান মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাইফুল আবেদীন।
মৌসুমে আমের সবচেয়ে বড় হাট বসে মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ ও জেলা শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ ছাড়া শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে সবখানেই এই আম পাওয়া যাচ্ছে।
গত রোববার (১৫ জুন) সকাল থেকে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে উঠেছে আমের বাজার। নগরের সিটি বাজার, লালবাগ, মডার্ন মোড়, ধাপ বাজার, শাপলা চত্বরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে এই আম। গত বছরের তুলনায় এবার আমের দাম কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। আর চাষিরা জানান, ভালো ফলন হওয়ায় অল্প লাভেই বেশি বিক্রির আশা করছেন তারা। তবে এ বছর ফলন ভালো হলেও অনাবৃষ্টি ও অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে আমের আকার কিছুটা ছোট হয়েছে। চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোট আকারের হাঁড়িভাঙা আম মণপ্রতি এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা, মাঝারি আকারের এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ এবং বড় আকারের আম এক হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আম সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছুদিন গেলে আমের বাজার আরো ভালো হবে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের।
পদাগঞ্জ এলাকার আম ব্যবসায়ী ওমোর ফারুক বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আমের আকার কিছুটা ছোট। তবে ফলন আশানুরূপ। আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় দশ দিন আগেই আম পাড়া শুরু হয়েছে। আকার ভেদে প্রতিমণ আম সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দুই হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে তাপমাত্রা কমলে আমের বাজার কিছুটা বেশি হবে।
বাস টার্মিনাল এলাকায় আম কিনতে আসা আজাহারুল ইসলাম বলেন, অপেক্ষায় ছিলাম কবে হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসবে। আমের দাম স্বাভাবিক আছে। তবে আর একটু কম হবে বলে মনে করেছিলাম। এই আমের স্বাদ ভালো লাগে, তাই পরিবারের সবাই বেশি করে খাওয়ার চেষ্টা করি।
অনলাইনে আম সরবরাহকারী তরুণ উদ্যোক্তা কোহিনুর ইসলামা কেয়া বলেন, কয়েক বছর ধরে অনলাইনে আমের অর্ডার নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তা সরবরাহ করছি। এবার শুরুতেই পাঁচ মণ আমের অর্ডার পেয়েছি। আকার ভেদে সর্বনিম্ন এক হাজার ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা করে ক্রেতার কাছে অর্ডার নেওয়া হয়েছে। এসব আম ঢাকায় পাঠাতে ক্যারেট, প্যাকিং ও কুরিয়ার মিলে এক হাজার টাকা এবং ঢাকার বাইরে খরচ হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা।
রংপুরের বাইরেও নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ব্যক্তি ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই আমের বাগান গড়ে উঠেছে। তবে রংপুরের হাঁড়িভাঙা আমের যেমন খ্যাতি রয়েছে, তেমনি চাহিদাও তুঙ্গে। বিদেশেও রফতানি হয় এই আম। এই আম চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। তবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় তড়িঘড়ি করে আম বিক্রি করায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষি। টেকসই অর্থনীতির জন্য হিমাগার স্থাপন, আধুনিক আমচাষ পদ্ধতি গ্রহণ এবং গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাঁড়িভাঙা আম চাষের মাধ্যমে রংপুরের কৃষি অর্থনীতি আরো চাঙা হয়েছে। এ বছর গাছে মুকুল কম এলেও আমের আকার ও ফলন ভালো হয়েছে। তবে অতিরিক্ত গরমের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই এবার আম বাজারে আসলেও প্রকৃত সময় ছিল ১৫ জুন। মৌসুমের শুরুতে দাম কম রয়েছে। তবে কয়েকদিনের মধ্যে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, এবারে জেলায় এক হাজার ৯১৫ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ হয়েছে; এর মধ্যে মিঠাপুকুরেই এক হাজার ২৬৮ হেক্টর। সম মিলিয়ে আমের উৎপাদন ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৮৫১ টন; এর মধ্যে মিঠাপুকুরেই ২৬ হাজার টন। উৎপাদিত আমের বেচাকেনা এবার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা এই কৃষি কর্মকর্তার। রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, আম বাজারজাত করতে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, সেজন্য জেলা প্রশাসন থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে আম পরিবহনে ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাছ করছে বলে জানান তিনি।