ঢাকা ০৮:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হঠাৎ জাতীয়তাবাদী রোবায়েত ফেরদৌস

  • আপডেট সময় : ০৬:১৩:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৮ বার পড়া হয়েছে

CREATOR: gd-jpeg v1.0 (using IJG JPEG v80), quality = 85

মুজতবা খন্দকার : দুপুরে ফেসবুকের নিউজ ফিড স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ একটা রিল সামনে এলো। রোবায়েত ফেরদৌস বক্তৃতা করছেন। রোবায়েত ফেরদৌস মুক্তি। আমরা মুক্তি নামেই তাকে চিনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত (সুশীলরা সাধারণত যেটা করেন)।
বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে কথা বলেন সোচ্চার হন। তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শ কখনো ধারন করেন না, বিশ্বাস করেন সেটিও ভাবার কোনো কারণ দেখি না; বরং তার অ্যাক্টিভিজমের পুরোটা জমা হয়, আওয়ামী লীগের খাতায়।

এতদিন সেটিই দেখে আসছি।
হাসিনা রেজিমের গত ১৬ বছরে তিনি নদী দখল, খাল দখল সড়ক দুর্ঘটনা, উপজাতিদের অধিকারসহ ইত্যাকার সামাজিক সমস্যা নিয়ে সোচ্চার থাকলেও হাসিনার একের পর এক ভোটবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আকড়ে থাকা কিংবা বিরোধী দলের নেতাকর্মী; বিশেষ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হাসিনা সরকারের জেল জুলুম, গুম খুন নিয়ে কখনো বড় ধরনের কোনো প্রতিবাদ করতে দেখিনি।

বিভিন্ন চ্যানেলে টক শোতেও তাকে হাসিনার সমালোচনা করতে আমি শুনিনি। তিনি ১৫ বছর সুশীলের ভূমিকায় ছিলেন। ছিলেন শাহবাগের প্রবল সমর্থক রোবায়েত ফেরদৌস। মনে পড়ে, ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাকে ‘শাহবাগ এক মহাকাব্যিক গণ অভ্যুত্থান’ শিরোনামে বিশাল এক কলাম লিখেছিলেন। সেই কলামে জামায়াতের প্রতি বিষোদগার তে ছিলই, ছেড়ে কথা বলেননি সেদিন বিএনপিকেও।
নিজেকে বাম ঘরানার সেক্যুলার সুশীল ভাবতে পছন্দ করেন এবং সযত্নে গত ১৫ বছরে সেটাই চরিতার্থ করেছেন। আমাদের দেশে সেক্যুলার বাম মানেই, আওয়ামী লীগ সহানুভূতিশীল। আর সে কারণে বেগম জিয়াকে হাসিনার প্রতিহিংসা চরিতার্থ, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং তার প্রহসনের

বিচার নিয়ে কোনোদিন টু শব্দটি করেননি মুক্তি।
মানবাধিকারের কথা বলেন, অথচ খালেদা জিয়াকে নাজিমউদ্দীন রোডের একটি নির্জন প্রকোস্টে দিনের পর দিন বন্দি রেখে হাসিনা চরম মানবতাবিরোধী কাজ করলেও রোবায়েত ফেরদৌসদের কেউ কখনো তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। চুপ থেকেছেন বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে হাসিনা সরকারের চরম নিষ্ঠুর আচরণের বিরুদ্ধেও।

গত ১৫ বছর বাদ দেন। জুলাই ছাত্রদের আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা যখন মাঠে, তখনও রোবায়েতকে সেইভাবে প্রতিবাদী ভূমিকায় রাজপথে দেখা যায়নি। সরকারের কুসুম কুসুম বিরোধিতা করলেও মোটা দাগে, হাসিনা গোসসা করুক, তার প্রতি বিরাগভাজন হোক এমন কোনো কর্মসূচিতে তিনি কখনো যাননি। এমন কোনো কথাও তিনি বলেননি।
হ্যাঁ, ৫ আগস্ট হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তাকে দেখেছি পতিত হাসিনা সরকারের নানা সমালোচনা করতে। বলেছেন, সংবিধানের স্ট্রাকচার সরকারকে স্বৈরচারী করেছে। কিন্ত ব্যক্তি হাসিনাকে নিয়ে তিনি আজও মুখ খোলেননি। ভাবটা সেই আগের মত, সবাই খারাপ হাসিনা ভালো। তাকে ভুল বুঝিয়েছে গোছের।

সেই রোবায়েত ফেরদৌসকে দেখি গত শনিবার জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন আয়োজিত জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে হাসিনার চরম সমালোচনা, আর জিয়াউর রহমান আর তারেক রহমানের প্রশংসা করছেন।
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের এমন একজন রাষ্ট্রপতি; যার সততা, দেশপ্রেম কিংবদন্তিতূল্য। তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার। কিন্তু এত বছরেও জিয়ার কোনো প্রশংসা মুক্তিকে করতে শুনলাম না।

আর তারেক রহমান, বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি র‌্যাডিক্যাল চেঞ্জ এনেছেন। গত ১৫ বছরে হাসিনার ঔদ্ধত, প্রতিহিংসার রাজনীতির বিপরীতে বিনয়ী, সংযমী, পরিশীলিত রাজনীতি করেছেন, তারেক রহমান। ১৫ বছরে হাসিনার হাজার জুলুম, নির্যাতন, অবিচার মুখ বুঝে সহ্য করেছেন, কখেেনা আউটবাস্ট করেননি। তারেক রহমানের এই ম্যাচুরিটির প্রশংসা সারাদেশের মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। অথচ মুক্তিদের মতো কথিত সুশীলরা কখনোই এগুলোকে বিন্দুমাত্র অ্যাপ্রিশিয়েট করেননি; বরং তার উল্টোটাই করেছেন, বিএনপিকে এবং দলের শীর্ষ নেতাদের বিভিন্ন সময় নানা নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করেছেন।

আজ মুক্তির এমন স্তুতি, আমার কাছে বেশ অবাকই লাগল। হঠাৎ করে কী হলো! রোবায়েতের মতিভ্রম, না আসলে তার উপলব্ধি এসেছে। যদি সত্যিই উপলব্ধি ফেরে, তাহলে ওই উপলব্ধি ফিরতে ১৫ বছর লাগল। সত্যিই সেলুকাস! তবে কেউ কেউ অবশ্য মুক্তিদের হঠাৎ এ পরিবর্তনে অবাকই হয়েছেন। তারা মুক্তিদের সন্দেহের বাইরে রাখতে কুণ্ঠিত। বলছেন, ওরা দুধের মাছি নয়তো! বিএনপির সামনে সুসময়। ফেয়ার ইলেকশন হলে বিএনপি সরকার গঠন করবে। সেটি মুক্তিরা জানে। আর জানে বলেই এখন জিয়া ও তারেক রহমানের প্রশংসা!
একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমাকে বললেন, দুবছর আগে হাসিনা রেজিমে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীর কোনো আলোচনায় মুক্তিকে যদি ডাকা হতো, তবে মুক্তিরা কি আসতো? আমি কোনো জবাব দিতে পারিনি এটা আমার কাছেও মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। বৈ কি!
লেখক: বার্তা সম্পাদক, এনটিভি

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দাভোসে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

হঠাৎ জাতীয়তাবাদী রোবায়েত ফেরদৌস

আপডেট সময় : ০৬:১৩:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

মুজতবা খন্দকার : দুপুরে ফেসবুকের নিউজ ফিড স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ একটা রিল সামনে এলো। রোবায়েত ফেরদৌস বক্তৃতা করছেন। রোবায়েত ফেরদৌস মুক্তি। আমরা মুক্তি নামেই তাকে চিনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত (সুশীলরা সাধারণত যেটা করেন)।
বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে কথা বলেন সোচ্চার হন। তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শ কখনো ধারন করেন না, বিশ্বাস করেন সেটিও ভাবার কোনো কারণ দেখি না; বরং তার অ্যাক্টিভিজমের পুরোটা জমা হয়, আওয়ামী লীগের খাতায়।

এতদিন সেটিই দেখে আসছি।
হাসিনা রেজিমের গত ১৬ বছরে তিনি নদী দখল, খাল দখল সড়ক দুর্ঘটনা, উপজাতিদের অধিকারসহ ইত্যাকার সামাজিক সমস্যা নিয়ে সোচ্চার থাকলেও হাসিনার একের পর এক ভোটবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আকড়ে থাকা কিংবা বিরোধী দলের নেতাকর্মী; বিশেষ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হাসিনা সরকারের জেল জুলুম, গুম খুন নিয়ে কখনো বড় ধরনের কোনো প্রতিবাদ করতে দেখিনি।

বিভিন্ন চ্যানেলে টক শোতেও তাকে হাসিনার সমালোচনা করতে আমি শুনিনি। তিনি ১৫ বছর সুশীলের ভূমিকায় ছিলেন। ছিলেন শাহবাগের প্রবল সমর্থক রোবায়েত ফেরদৌস। মনে পড়ে, ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাকে ‘শাহবাগ এক মহাকাব্যিক গণ অভ্যুত্থান’ শিরোনামে বিশাল এক কলাম লিখেছিলেন। সেই কলামে জামায়াতের প্রতি বিষোদগার তে ছিলই, ছেড়ে কথা বলেননি সেদিন বিএনপিকেও।
নিজেকে বাম ঘরানার সেক্যুলার সুশীল ভাবতে পছন্দ করেন এবং সযত্নে গত ১৫ বছরে সেটাই চরিতার্থ করেছেন। আমাদের দেশে সেক্যুলার বাম মানেই, আওয়ামী লীগ সহানুভূতিশীল। আর সে কারণে বেগম জিয়াকে হাসিনার প্রতিহিংসা চরিতার্থ, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং তার প্রহসনের

বিচার নিয়ে কোনোদিন টু শব্দটি করেননি মুক্তি।
মানবাধিকারের কথা বলেন, অথচ খালেদা জিয়াকে নাজিমউদ্দীন রোডের একটি নির্জন প্রকোস্টে দিনের পর দিন বন্দি রেখে হাসিনা চরম মানবতাবিরোধী কাজ করলেও রোবায়েত ফেরদৌসদের কেউ কখনো তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। চুপ থেকেছেন বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে হাসিনা সরকারের চরম নিষ্ঠুর আচরণের বিরুদ্ধেও।

গত ১৫ বছর বাদ দেন। জুলাই ছাত্রদের আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা যখন মাঠে, তখনও রোবায়েতকে সেইভাবে প্রতিবাদী ভূমিকায় রাজপথে দেখা যায়নি। সরকারের কুসুম কুসুম বিরোধিতা করলেও মোটা দাগে, হাসিনা গোসসা করুক, তার প্রতি বিরাগভাজন হোক এমন কোনো কর্মসূচিতে তিনি কখনো যাননি। এমন কোনো কথাও তিনি বলেননি।
হ্যাঁ, ৫ আগস্ট হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তাকে দেখেছি পতিত হাসিনা সরকারের নানা সমালোচনা করতে। বলেছেন, সংবিধানের স্ট্রাকচার সরকারকে স্বৈরচারী করেছে। কিন্ত ব্যক্তি হাসিনাকে নিয়ে তিনি আজও মুখ খোলেননি। ভাবটা সেই আগের মত, সবাই খারাপ হাসিনা ভালো। তাকে ভুল বুঝিয়েছে গোছের।

সেই রোবায়েত ফেরদৌসকে দেখি গত শনিবার জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন আয়োজিত জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে হাসিনার চরম সমালোচনা, আর জিয়াউর রহমান আর তারেক রহমানের প্রশংসা করছেন।
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের এমন একজন রাষ্ট্রপতি; যার সততা, দেশপ্রেম কিংবদন্তিতূল্য। তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার। কিন্তু এত বছরেও জিয়ার কোনো প্রশংসা মুক্তিকে করতে শুনলাম না।

আর তারেক রহমান, বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি র‌্যাডিক্যাল চেঞ্জ এনেছেন। গত ১৫ বছরে হাসিনার ঔদ্ধত, প্রতিহিংসার রাজনীতির বিপরীতে বিনয়ী, সংযমী, পরিশীলিত রাজনীতি করেছেন, তারেক রহমান। ১৫ বছরে হাসিনার হাজার জুলুম, নির্যাতন, অবিচার মুখ বুঝে সহ্য করেছেন, কখেেনা আউটবাস্ট করেননি। তারেক রহমানের এই ম্যাচুরিটির প্রশংসা সারাদেশের মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। অথচ মুক্তিদের মতো কথিত সুশীলরা কখনোই এগুলোকে বিন্দুমাত্র অ্যাপ্রিশিয়েট করেননি; বরং তার উল্টোটাই করেছেন, বিএনপিকে এবং দলের শীর্ষ নেতাদের বিভিন্ন সময় নানা নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করেছেন।

আজ মুক্তির এমন স্তুতি, আমার কাছে বেশ অবাকই লাগল। হঠাৎ করে কী হলো! রোবায়েতের মতিভ্রম, না আসলে তার উপলব্ধি এসেছে। যদি সত্যিই উপলব্ধি ফেরে, তাহলে ওই উপলব্ধি ফিরতে ১৫ বছর লাগল। সত্যিই সেলুকাস! তবে কেউ কেউ অবশ্য মুক্তিদের হঠাৎ এ পরিবর্তনে অবাকই হয়েছেন। তারা মুক্তিদের সন্দেহের বাইরে রাখতে কুণ্ঠিত। বলছেন, ওরা দুধের মাছি নয়তো! বিএনপির সামনে সুসময়। ফেয়ার ইলেকশন হলে বিএনপি সরকার গঠন করবে। সেটি মুক্তিরা জানে। আর জানে বলেই এখন জিয়া ও তারেক রহমানের প্রশংসা!
একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমাকে বললেন, দুবছর আগে হাসিনা রেজিমে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীর কোনো আলোচনায় মুক্তিকে যদি ডাকা হতো, তবে মুক্তিরা কি আসতো? আমি কোনো জবাব দিতে পারিনি এটা আমার কাছেও মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। বৈ কি!
লেখক: বার্তা সম্পাদক, এনটিভি