সিলেট সংবাদদাতা : সিলেটের বাজারে সয়াবিন তেলের হাহাকার দেখা দিয়েছে। রোজার শুরুতেই সয়াবিনের মারাত্মক সংকটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে নগরের খুচরা বাজারে কোথাও সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বড় বড় সুপার শপে চড়া দামে সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে কোম্পানিগুলোর শর্ত মেনে। ৮৫০ টাকার পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের সঙ্গে কিনতে হবে চিনিগুড়া চাল। গুনতে হবে ১০১০ টাকা। গত কয়েকদিন থেকেই সিলেটের বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। গত দুই দিন থেকে অধিকাংশ দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই বলে ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন দোকানিরা। সয়াবিন নিয়ে এক ধরনের সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা মজুত করে রেখেছেন সয়াবিন আর শর্ত দিয়ে বেচাকেনার পথ সুগম করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। সিলেটের বাজারে সয়াবিন তেল নিয়ে এমন তেলেসমাতি ঘটনায় রোববার (২ মার্চ) দুপুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের বৈঠক হয়েছে। সে সময় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে বলে দাবি করেছেন। তারা জানিয়েছেন, তবে কোম্পানির নানা শর্তে সয়াবিন তেল কেনাবেচায় সংকট তৈরি হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, রোজার মাসে ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছেন। সবাই যাতে সহজে কিনতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ব্যবসায়ীরা তাকে জানিয়েছেন। দামও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে রোববার নগরীর বন্দরবাজার, কালীঘাট, ব্রহ্মময়ী বাজার, আম্বরখানা, সুবিদবাজারসহ অনেক দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে সয়াবিন তেল নেই। পাড়া-মহল্লার দোকানে অনেকদিন থেকেই সয়াবিন তেলের হাহাকার চলছে। বন্দরবাজারের মনির এন্ড সন্সসহ কয়েকটি দোকান শর্ত দিয়ে বিক্রি করছে সয়াবিন তেল। পাঁচ লিটার বোতলের ৮৫০ টাকার সয়াবিন তেল এক কেজি চিনিগুড়া চালসহ কিনতে হচ্ছে ১০১০ টাকায়। এ ছাড়া কয়েক হাজার টাকার বাজার করলে পাওয়া যাচ্ছে পাঁচ লিটারের তেলের বোতল। তেল নেই বলে অনেক বড় বড় দোকান থেকে ক্রেতাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্যাকেটজাত তেল শুক্রবার ১৭০ টাকা করে বিক্রি করা হলেও শনিবার, রোববার তা বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা করে। সুপার শপগুলোতেও তেল নেই বলে বিক্রেতারা জানান।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, সয়াবিন তেলের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন শর্ত আরোপের কারণে দোকানে সরবরাহ কম। আমরাও শুনেছি বিভিন্ন শর্ত দিয়ে তেল বিক্রি করা হচ্ছে। যে কারণে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, দুই-তিন দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালী মুরগী কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা দাম বেড়েছে। মুরগীর পাশাপাশি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ ও খাসির মাংস ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ছোলা, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন এবং বিভিন্ন সবজিপণ্য কাঁচামরিচ, টমেটো, শসা, আলু, বেগুন, ধনিয়াপাতাসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। তবে এবার তুলনামূলকভাবে খেজুরের দাম কম। প্রতিকেজি ২০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সিলেট নগরের বাজারে রমজানকে সামনে রেখে বেড়েছে ফলমূলের দামও। আঙুর ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, কমলা (কেনু) ৩০০ টাকা এবং মালটা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পেয়ারা ১২০-১৫০ টাকা দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা। রমজানের সামনের দিনে এই পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলে ক্রেতারা আশঙ্কা করছেন।