ঢাকা ০৪:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

‘স্যার দেরি করে এসেছে’ বলায় ক্লাসের সবাইকে পেটালেন শিক্ষক

  • আপডেট সময় : ০১:৪১:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

জয়পুরহাট সংবাদদাতা: জয়পুরহাটের কালাই সরকারি ময়েন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ৩৩ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করার অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদারের বিরুদ্ধে। ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ৩০ জন শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বকুল মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। এর আগে এদিন সকাল পৌনে ১১টার দিকে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করার ঘটনা ঘটে।

প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে কালাই সরকারি ময়েন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হয়। মঙ্গলবারও যথারীতি সময়ে শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষে গেলেও সপ্তম শ্রেণির ‘ক’ শাখায় কোনো শিক্ষক যাননি। শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদার বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরুর প্রায় আধা ঘণ্টা পর ১০টা ৪০ মিনিটে সপ্তম শ্রেণির ‘ক’ শাখায় পাঠদান করাতে যান। এ সময় নবম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী শিক্ষক নাফসি তালুকদারকে দেরিতে যাওয়া দেখে বলে, এই স্যার কখনো সময়মতো ক্লাসে যান না। আজকেও স্যার আধা ঘণ্টা দেরি করে আসছেন। এ কথা শোনার পর শিক্ষক নাফসি তালুকদার চরম ক্ষুব্ধ হন। তিনি নবম শ্রেণির কক্ষে ঢুকে এ কথা কে বলেছে তা জানতে চান। শিক্ষার্থীরা চুপ থাকায় শিক্ষক নবম শ্রেণির উপস্থিত ৩৩ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করেন।

এ ঘটনায় নাফসি তালুকদারকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে উল্লেখ করা করা হয়, কেন নির্ধারিত সময়ের পর বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছেন এবং বিধি বহির্ভূতভাবে ছাত্রদেরকে মারধর করেছেন। যাহা সরকারি চাকরিবিধি পরিপন্থি। মারধরের ঘটনায় কয়েকজন ছাত্রের পিঠ ও হাত ফুলে যাওয়ায় তারা কালাই হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এমন ঘটনায় কেন আপনার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রদান করতে বলা হয়েছে।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকিব হোসেনের বাবা কালাম বলেন, বিদ্যালয়ে দেরি করে আসবে আবার শিক্ষার্থীদের মারধর করবে এমনটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।

অভিযুক্ত শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদার বলেন, আমার হার্টের সমস্যাসহ শারীরিক কিছু রোগ রয়েছে। প্রতিমাসে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। আজ সকালে শরীর একটু খারাপ লাগছিল, তখন প্রেশার মেপে স্কুলে যেতে কয়েক মিনিট দেরি হয়েছে। পরে হাজিরা স্বাক্ষর করে ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলাম। তখন নবম শ্রেণি থেকে কেউ টোন করে বলে স্যার দেরি করে এসেছে। পরে আমি তাদের ক্লাস রুমে গিয়ে জানতে চাই, কে এটি বলেছে। কিন্তু কেউ কথা বলে না। পরে বেত দিয়ে প্রত্যেক ছাত্রকে দুটি করে মেরেছি। তাদের এলোপাথারি মারধর করিনি। পরে প্রধান শিক্ষক আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।

কালাই ময়েন উদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক নাফসি তালুকদার ৯ম শ্রেণির ছাত্রদের মারধর করেন। এতে কিছু ছাত্র আহত হলে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়। পরে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করলে শিক্ষকদের নিয়ে প্রাথমিকভাবে আলোচনা করি এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলি। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) স্যারকেও জানানো হয়। পরে ইউএনও স্যারের মৌখিক নির্দেশনায় নাফসি তালুকদারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। আগামী তিনদিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, আমি তাৎক্ষণিক ওই শিক্ষককে শোকজ করার নির্দেশ দেই। এর জবাব পাওয়ার পরে আমরা ব্যবস্থা নেব। এছাড়া ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পূর্বে এ ধরনের আরো কিছু অভিযোগ রয়েছে, আমরা চেষ্টা করব দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার- যেটি তার এবং অন্যান্য সবার জন্য একটি নজির স্থাপন হবে।

এসি/

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

‘স্যার দেরি করে এসেছে’ বলায় ক্লাসের সবাইকে পেটালেন শিক্ষক

আপডেট সময় : ০১:৪১:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

জয়পুরহাট সংবাদদাতা: জয়পুরহাটের কালাই সরকারি ময়েন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ৩৩ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করার অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদারের বিরুদ্ধে। ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ৩০ জন শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বকুল মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। এর আগে এদিন সকাল পৌনে ১১টার দিকে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করার ঘটনা ঘটে।

প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে কালাই সরকারি ময়েন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হয়। মঙ্গলবারও যথারীতি সময়ে শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষে গেলেও সপ্তম শ্রেণির ‘ক’ শাখায় কোনো শিক্ষক যাননি। শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদার বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরুর প্রায় আধা ঘণ্টা পর ১০টা ৪০ মিনিটে সপ্তম শ্রেণির ‘ক’ শাখায় পাঠদান করাতে যান। এ সময় নবম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী শিক্ষক নাফসি তালুকদারকে দেরিতে যাওয়া দেখে বলে, এই স্যার কখনো সময়মতো ক্লাসে যান না। আজকেও স্যার আধা ঘণ্টা দেরি করে আসছেন। এ কথা শোনার পর শিক্ষক নাফসি তালুকদার চরম ক্ষুব্ধ হন। তিনি নবম শ্রেণির কক্ষে ঢুকে এ কথা কে বলেছে তা জানতে চান। শিক্ষার্থীরা চুপ থাকায় শিক্ষক নবম শ্রেণির উপস্থিত ৩৩ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করেন।

এ ঘটনায় নাফসি তালুকদারকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে উল্লেখ করা করা হয়, কেন নির্ধারিত সময়ের পর বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছেন এবং বিধি বহির্ভূতভাবে ছাত্রদেরকে মারধর করেছেন। যাহা সরকারি চাকরিবিধি পরিপন্থি। মারধরের ঘটনায় কয়েকজন ছাত্রের পিঠ ও হাত ফুলে যাওয়ায় তারা কালাই হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এমন ঘটনায় কেন আপনার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রদান করতে বলা হয়েছে।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকিব হোসেনের বাবা কালাম বলেন, বিদ্যালয়ে দেরি করে আসবে আবার শিক্ষার্থীদের মারধর করবে এমনটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।

অভিযুক্ত শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদার বলেন, আমার হার্টের সমস্যাসহ শারীরিক কিছু রোগ রয়েছে। প্রতিমাসে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। আজ সকালে শরীর একটু খারাপ লাগছিল, তখন প্রেশার মেপে স্কুলে যেতে কয়েক মিনিট দেরি হয়েছে। পরে হাজিরা স্বাক্ষর করে ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলাম। তখন নবম শ্রেণি থেকে কেউ টোন করে বলে স্যার দেরি করে এসেছে। পরে আমি তাদের ক্লাস রুমে গিয়ে জানতে চাই, কে এটি বলেছে। কিন্তু কেউ কথা বলে না। পরে বেত দিয়ে প্রত্যেক ছাত্রকে দুটি করে মেরেছি। তাদের এলোপাথারি মারধর করিনি। পরে প্রধান শিক্ষক আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।

কালাই ময়েন উদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক নাফসি তালুকদার ৯ম শ্রেণির ছাত্রদের মারধর করেন। এতে কিছু ছাত্র আহত হলে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়। পরে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করলে শিক্ষকদের নিয়ে প্রাথমিকভাবে আলোচনা করি এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলি। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) স্যারকেও জানানো হয়। পরে ইউএনও স্যারের মৌখিক নির্দেশনায় নাফসি তালুকদারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। আগামী তিনদিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, আমি তাৎক্ষণিক ওই শিক্ষককে শোকজ করার নির্দেশ দেই। এর জবাব পাওয়ার পরে আমরা ব্যবস্থা নেব। এছাড়া ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পূর্বে এ ধরনের আরো কিছু অভিযোগ রয়েছে, আমরা চেষ্টা করব দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার- যেটি তার এবং অন্যান্য সবার জন্য একটি নজির স্থাপন হবে।

এসি/