অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদ : ১৯৭১ সালে একটি গান আমি প্রায় গাইতাম- সালাম সালাম হাজার সালাম সকল শহীদ স্মরণে- আজ আমি সেই গানটি গাইতে চাই- সালাম সালাম হাজার সালাম শেখ হাসিনার চরণে। আর সেই সালাম আমি দিয়ে যাব সর্বনাশী পদ্মাকে সেতুর বন্ধনে বাঁধার জন্য। পদ্মা সেতু এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব। আর এই সেতুর অর্থ জোগাড় করে দিয়ে স্মরণীয় হয়ে আছেন রাখাল বালক অধ্যাপক ডক্টর আতিউর রহমান। আমার সালাম পৌঁছে দিও সেই রাখাল বালকের চরণে।
রাখাল বালককে যেভাবে এক দৈত্য ভর্ৎসনা করছিল তখন আমি চিৎকার করে বলছিলাম ওকে মেরো না। সে সময় সেই দৈত্যের হাত থেকে রক্ষা করেছিল পদ্মা সেতুর রূপকার শেখ হাসিনা। তিনি বলেছিলেন- আতিউরই তো আমার পদ্মা সেতুর অর্থ জোগাড় করে দিয়েছে বাঙালির স্বপ্ন পূরণে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র মোকাবেলায়। পদ্মার ইলিশ, পদ্মার ভাঙন, পদ্মার ঢেউরে- ফেরদৌসী রহমানের গান উতাল করতো কোটি কোটি বাঙালির বুক, সেই পদ্মার বুকে শোভা পাচ্ছে পদ্মা সেতু।
এই তো সেদিনের কথা – ৩০০ যাত্রী নিয়ে ঈদ আনন্দ করে বাড়ি ফেরা মানুষের বাঁচার আকুতি – যেন আজও বাজে আমার কানে। সেই কান্নার রোল শুনেছেন অনেকেই হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের ওপার থেকে। মনে পড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই নিহত ছাত্রদেরকে যারা পদ্মা সেতুর টাকা নিজেরাই জোগাড় করবে বলে পণ করেছিল।
আমার মনে পড়ে ওই জারিগান ‘তারিখ ১০ কার্তিক ঘরের মাঝে অন্ধকার রাতি, মাঝ রাতে লঞ্চ ডুবিল কেউ ছিল না সাথী।’
আজ মনে পড়ে বঙ্গবন্ধুর কথা-‘তোমরা দাবায় রাখতে পারবা না।’ মোশতাক-ডালিম-ফারুক তোমরা দাবায় রাখতে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলে ৩২ নম্বর বাড়িটিতে। সেই রক্ত ছুঁইয়ে বাঙালি নিয়েছিল শপথ-‘মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।’ সেই মুক্তির প্রতীক অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রতীক পদ্মা সেতু আমায় ডাকছে-আয় খোকা ঘরে ফিরে আয়। সেই পদ্মা সেতু মনে করিয়ে দিচ্ছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা, যার গল্পটি আমার আব্বা বলতেন আমাকে বাড়ি ফেরার কথা বলতে, যে নাকি মায়ের ডাকে ঝড়ের রাতে নদী সাঁতরিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। আমিও আমার সন্তানকে বলি মাকে ভুলো না- মাকে দূরে রেখো না। মা-ই আসল। আগামী প্রজন্ম তোমাদের বলি শেখ হাসিনাই আসল, সেই তোমাদের মা, তোমরা তাঁকে ভুলো না।
আমি ঢাকায় কোনো বাড়ি করতে পারিনি বলে অনেক কথা শুনতে হতো। আমি তাদের বলতাম আমার ঢাকায় বাড়ি দরকার নেই বরং আমাকে এমন ব্যবস্থা করে দাও যেন বাড়ি থেকে ঢাকায় এসে ক্লাস নিতে পারি। কিভাবে জানতেন জাতির পিতার কন্যা আমার সেই মনের কথা। তিনি আজ আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করে দিলেন। তাই সালাম সালাম হাজার সালাম জাতির পিতার কন্যার চরণে। আজ আমার আরেকটি স্বপ্ন- যে বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুর বুক ঝাঁজরা করে দিয়ে টুঙ্গিপাড়া রেখে এসেছিল মাটি চাপা দিয়ে যাতে আর পদ্মা সাঁতরে কেউ না আসতে পারে। আজ তাই জাতির পিতার কন্যার কাছে চাই বুলেট ট্রেন যেন হয় টুঙ্গিপাড়া। আর চাই একটি অক্সফোর্ড কিংবা ক্যামব্রিজ পদ্মার ওপারে, যেন আসতে না হয় ঢাকা। আমরা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতাকে দেখতে যাব সেই বুলেট ট্রেনে চড়ে পদ্মা পেরিয়ে। আমরা পারি, আমরা পারব, আমার করবো জয়। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পারবে। আলো আসবেই সকল অন্ধকার পেরিয়ে।
লেখক: শিক্ষক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
স্মৃতিময় পদ্মা সেতুর রূপকার শেখ হাসিনার চরণে হাজার সালাম
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ























