ঢাকা ০৭:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সরকার

  • আপডেট সময় : ০৫:৫৪:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

খন্দকার হাসনাত করিম পিন্টু

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিলম্বে হলেও দৃঢ়তার সঙ্গে অপশক্তি স্বৈরাচারের দোসরদের দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির যে কোনো চেষ্টা সহ্য না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ জন্য দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তাকে মোবারকবাদ জানাই। এতদিনে তিনি কান্ডারি, রাহবারের মতো জনগণের মনের কথাটি প্রকাশ করেছেন। তিনি দেশের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে ন্যস্ত বাহিনী প্রধানগণের সঙ্গে এক জরুরি সভায় গত ৩ ফেব্রুয়ারি দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং এ জন্য একটি কমান্ড সেন্টার গঠনের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে সর্বোচ্চ আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে; যাতে তারা উদ্ভূত পরিস্থিতি দ্রুত ও কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারে। বাহিনীগুলোর নিয়ন্ত্রণ এবং ভূমিকার মধ্যে নিবিড় সমন্বয় সাধন করতে হবে। নিরাপত্তা বাহিনী প্রধানগণকে স্বৈরাচারের যে কোনো অপতৎপরতা বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো তিনি সতর্ক ও অবিচল থাকার নির্দেশ দিয়ে চাঁদাবাজ ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর জন্য সদা প্রস্তুত থাকতে বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে গণহত্যা-নিপীড়নসহ স্বৈরাচারের যাবতীয় অপরাধের মামলাগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে গিয়ে কোনো নিরাপরাধী ব্যক্তিকে যেন হয়রানির শিকার না হতে হয়, তা’ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তব্যরত বাহিনীকে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার তাগিদ দেন।

এই কঠোর ব্যবস্থা ও নির্দেশনাবলি সময়ের দাবি। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষকে জনগণ কোমল ও স্পর্শকাতর বলে বা দুর্বল শাসক হিসেবে গণ্য করতে থাকার মতো দীর্ঘ কয়েক মাসের কিছতা নির্লিপ্ততা এবং মধ্যপন্থার আশ্রয় নেওয়ার মতো মূল্যায়ন করতে থাকার প্রেক্ষাপটে সম্মানিত প্রধান উপদেষ্টার এই কঠোর অবস্থান দেশবাসীকে নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং ব্যতিক্রমধর্মী বার্তা গিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টাকে বলব আপনি উদার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং শ্রদ্ধাশীলদের প্রতি একই সঙ্গে এমনই কঠোর হোন গণতন্ত্র হত্যাকারী, গুম খুন নিপীড়ন ও নির্যাতনে বিশ্বাসীদের প্রতি। এদেশে গণতন্ত্র এবং জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাস করে না ভারতীয় আগ্রাসনবাদের বাংলাদেশ শাখা আওয়ামী লীগ, তাদের চ্যালন্ডা চামুন্ডা, ভারতপন্থি প্রকাশ্য ও গোপন দল বা লেজুড় সংগঠন, নাস্তিক বুদ্ধিজীবী চক্র, উগ্র হিন্দু দল ও ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের বাংলাদেশি স্থানীয় প্রতিনিধি, স্বৈরাচার কর্তৃক প্রতিপালিত গৃহভৃত্য ঠগ ব্যবসায়ী, সামরিক-বেসামরিক কাঠামোতে থেকে যাওয়া ও সদ্য ভোল পাল্টানো কর্মকর্তা, ট্রেড ইউনিয়নিষ্ট চক্র, সুবিধাভোগী বাটপার সংঘ, দুর্নীতিবাজ এবং অর্থ লুটেরা এবং অর্থ পাচারকারী চক্র, অসৎ ব্যবসায়ী, অসাধু পেশাজীবী, দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার এবং স্বৈরাচারের সরবরাহকারী ভোগ-লিপ্সা-নারীর দালাল শ্রেণি এবং যোগানদাতা চক্র।

এরা বহাল তবিয়তে থাকলে উপদেষ্টা কেন, ফেরেশতাদের ডেকে আনলেও যে সর্বনাশ খুনি স্বৈরাচার করে গেছে এবং এখনো হুমকি দিচ্ছে পুনর্বাসন ও পুনর্জন্মের এবং যারা চোরে চোরে মাসতুতো ভাই হয়ে তাদের ফিরে আসার ও ফিরিয়ে আনার আবদার করছে, তাদের হাত থেকে দেশ, জনগণ এবং জনস্বার্থকে রক্ষা করা অসম্ভব বলেই মনে হয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপনি বিপ্লবের ফসল। এক বর্ষণসিক্ত সকালে আপনি বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে দৃঢ় পদবিস্তারে গণহত্যার শহীদদের সোপানে ফুল দিয়ে শপথবাক্য পাঠ করেছিলেন। জনগণের আনুগত্য ও ভালোবাসা জুলাইয়ের বর্ষণ হিসেবে রহমতের প্রতীক হয়ে সিক্ত করেছিল আপনাকে। কাজেই নির্লিপ্ততা, উদাসীনতা, আপোসকামিতা ও গণশত্রুদের প্রতি আপনার মমতা ও দরদ একসঙ্গে অবস্থান করতে পারে না। অনেক সময় পা-িত্য রাজনৈতিক দৃঢ়তাকে ভিতর থেকে কুরে কুরে খায়।

নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব অর্কমণ্যতায় সৎ ও যোগ্য শাসককেও পথভ্রান্ত করে। অবিমিশ্রকারিতায় ভোগায়। এতে সাধারণ মানুষ তাদের আস্থাটা প্রত্যাহার করে নেয়। নিতে বাধ্য হয়। তাদের আস্থা ও আনুগত্যে চিড় ধরে। আপনি এমনিতেই স্বজন এবং সুজনদের একটা ভুল বার্তা দিয়েছেন। নির্বাচনের আশু ব্যবস্থা না করে ‘সংস্কার’ নামক একটা দীর্ঘসূত্রি, সময় সাপেক্ষ এবং বহুমাত্রিক, বহুপাক্ষিক ও বহু বচনিক প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে চলেছেন। অথচ নিজ বিদ্যা অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা থেকে আপনার এটি আরো ভালো এবং আরো বেশি জানার কথা যে, সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া ও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসা একটি জনপ্রিয় দল, মোর্চা কিংবা ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিতে বিশ্বাসী হয়ে দেশ শাসনের বিধিবিধান, প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বৈরাচারমুক্ত করে খাতভিত্তিক সংস্কার আনলেই সেই সংস্কার টেকসই হবে এবং তার বৈধতা প্রশ্নাতীত হবে বা নিষ্কণ্টক থেকে যাবে।

ঘোড়ার আগে নিশ্চয়ই গাড়ি জুড়ে দেওয়া যায় না। কাজেই দেশ ও জাতির সামনে এখন অগ্রাধিকার গন্তব্য হচ্ছে সর্বজনীন ভোটাধিকারের প্রয়োগ সাপেক্ষে একটি আইনসভা (সংসদ) প্রতিষ্ঠা করা। বহু দেশে আগে আইন প্রণয়নকারী এ্যাসেম্বলী নির্বাচন করা হয় এবং সেই অ্যাসেম্বলীর গরিষ্ঠসংখ্যক আইন প্রণেতার ভোটে বা সমর্থনে আইনসভায় বসেই সংস্কার আনা হয়।

ঠিক যেমনটির বিধান দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার আইন কাঠামো অধ্যাদেশের মাধ্যমে খবমধষ ঋৎধসবড়িৎশ ঙৎফবৎ বা খঋঙ বিধানে। এই বিধান প্রণয়নের জন্য সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া শরণাপন্ন হয়েছিলেন বাংলাদেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. জি. ডব্লিউ চৌধুরী এবং পশ্চিম পাকিস্তানে সংবিধান বিশেষজ্ঞ সর্দার মেহমুদের মতো পণ্ডিতদের।

তারা সামরিক শাসকের সুদূরপ্রসারী রাষ্ট্রনৈতিক দূরদর্শিতার প্রতীক এই এল. এফ. ও. অধ্যাদেশ প্রণয়নে সহায়তা করেছিলেন। পৃথিবীর শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে বিনা রক্তপাতে একটি সামরিক একনায়কত্ব থেকে ফেডারেল রাষ্ট্রকাঠামোয় উত্তরণ তথা পাকিস্তান গণতন্ত্রে শুভসূচনার একটি আইনগত ভিত্তি হতে পারতো এই আইনগত কাঠামো অধ্যাদেশটি। পরিতাপের বিষয় কেন পাকিস্তান হয়েছিল, কেন আমাদের পূর্ব পুরুষরা ভারতে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র চেয়েছিলেন, সেই ধারণা বা দর্শন হৃদয়ে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন পাকিস্তানের ১৯৭০ দশকের কোনো পক্ষই।

না পাকিস্তানি ভূস্বামীরা আর না ক্ষমতালোভী পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষ করে পদস্থ সেনা কর্মকর্তারা। মাঝখান থেকে স্বাধীনতা চেয়ে আমরাই ভারতের নীলনকশার শিকার হয়েছি। অনুরূপভাবে বলতেই হচ্ছে, জুলাই ২০২৪-এর ঐতিহাসিক গণবিপ্লব তথা ছাত্র জনতার গণআন্দোলনের মূল চেতনা, ধারকপরম্পরা এবং এ বিপ্লবের ‘স্পিরিট’ হৃদয় ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বিপ্লবের সুফলভোগী ও উত্তরসূরিরা। তা পারলে এই জগৎ কাঁপানো গণজাগরণের রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং চেতনাকে আমরা এত দ্রুত নিষ্প্রভ হয়ে যেতে দেখতাম না। আধিপত্যবাদী ভারত তার দাস বা গৃহভৃত্য বাকশালী স্বৈরাচারীদের বিরুদ্ধে শক্ত রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্য রচনার এমন সুবর্ণ সুযোগ প্রায় হাতছাড়া করতাম না।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নীরব বিপ্লব আসলেই দেশে-বিদেশে সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। তবে সংস্কারের দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে যত দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হবে ততই তা হবে দেশ ও রাষ্ট্রের নতুন বিন্যাস সোপান রচনার জন্য মঙ্গলজনক। এই নতুন বন্দোবস্তের মাধ্যমেই কেবল সম্ভব জুলাই-আগস্টের মহাজাগরণে তরুণ প্রজন্মের আত্ম উৎসর্গের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান ও স্বীকৃতি জ্ঞাপন। এখনো হাজার হাজার প্রতিবাদী তরুণ-যুবক পঙ্গুত্বে অসহায়ত্ব নিয়ে জীবন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে হাসপাতালের বেডে কিংবা ক্র্যাচে ভর করে।
তাদের যথাযোগ্য চিকিৎসার রাষ্ট্রীয় সংস্থান এবং সহযোগিতা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। যেভাবে আমরা ভুলে গেছি ’৭১-এর রণাঙ্গনে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী বীর শ্রেষ্ঠদের, ভুলে গেছি স্বাধীনতার মহানায়ক বীর বিক্রম ও বীর প্রতীকদেরসহ হাজার হাজার বাঙালি সেনা ও কর্মকর্তাদের যুদ্ধযজ্ঞ, লাখ লাখ গেরিলা যোদ্ধা, ঠিক একইভাবে কি আমরা ভুলে যেতে বসেছি জুলাই-আগস্টের বীর শহীদ ও সংগ্রামী ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, রিকশাবাহক, সাধারণ ছাত্র-জনতার অবদান এবং সংগ্রামকে? স্বৈরাচার পুনর্বাসনের জন্যই কি তাদের প্রাণ দিতে এবং পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছিল? সাধারণ মানুষ যে বলছে, এটা ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা! এর গভীর তাৎপর্য ও নিগূঢ় রাজনৈতিক তাৎপর্য কি আমাদের উদাসীনতার ধুলায় আবারও ঢেকে যাবে?

তাই প্রধান উপদেষ্টা ও তার সহযাত্রী সকল উপদেষ্টা এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বিত ও সম্পৃক্ত সকলের প্রতি আকুল আবেদন- জুলাই বিপ্লবের মূল রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি এবং মর্মবাণী, এর রাজনৈতিক তাৎপর্য ও আর্থ-সামাজিক গুরুত্বকে অন্তরের অন্তঃস্থলে ধারণ করুন। যত বেশি গভীর হবে এই অন্তর্দৃষ্টি ও অনুভব ততো বেশি উপদ্রবমুক্ত হবে আমাদের রাষ্ট্র সত্তা এবং সংহত হবে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় ঐক্য। তারা প্রাণ দিয়ে রক্তের অক্ষরে ডাক দিয়ে গেছে আমাদের নির্লিপ্ত ও উদাসীন চৈতন্যকে।
আমাদের অবশ্যই নির্মোহ হতে হবে এবং ভারতীয় জুজু বুড়ির ভয়কে জয় করতে হবে। যে বর্ণবাদী অগণতান্ত্রিক ভারত কাশ্মিরে পারে না, কাঠমুন্ডুতে পারে না, থিমপু (ভতানে) পারে না, দ্বীপদেশ মালদ্বীপে গলা ধাক্কা খায়, নেপালে পারে না, শ্রীলংকায় পারে না, সে পারবে বেঙ্গল ব্যাঘ্র বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে? কোনো তুলনা চলে কি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভুবনজয়ী জনপ্রিয় ড. ইউনূসের? ড. ইউনূস একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব। তার বৈশ্বিক জনপ্রিয়তায় গাত্রদাহ ভারত-হাসিনা কুচক্রীদের। কী অপমান, কত অসম্মান অপদস্থই না স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করেছে।

ড. ইউনূস অবগত আছেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং স্বার্থের শত্রুরাষ্ট্র হলো ভারত এবং তাদের কেনা গোলাম আওয়ামী-বাকশাল-কমিউনিস্ট চক্র। এদের বিরুদ্ধে যত শক্ত অবস্থানে যাবেন বাংলাদেশের কোনো নেতা, তিনিই হবেন বাংলাদেশের পরমাত্মীয়, গণমানুষের আস্থা ও ভালোবাসার প্রতীক, যেমনটা ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান ঘোষক ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের রাষ্ট্রীয় দর্শনের প্রবক্তা সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জেনারেল জিয়াউর রহমান।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সরকার

আপডেট সময় : ০৫:৫৪:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

খন্দকার হাসনাত করিম পিন্টু

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিলম্বে হলেও দৃঢ়তার সঙ্গে অপশক্তি স্বৈরাচারের দোসরদের দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির যে কোনো চেষ্টা সহ্য না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ জন্য দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তাকে মোবারকবাদ জানাই। এতদিনে তিনি কান্ডারি, রাহবারের মতো জনগণের মনের কথাটি প্রকাশ করেছেন। তিনি দেশের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে ন্যস্ত বাহিনী প্রধানগণের সঙ্গে এক জরুরি সভায় গত ৩ ফেব্রুয়ারি দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং এ জন্য একটি কমান্ড সেন্টার গঠনের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে সর্বোচ্চ আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে; যাতে তারা উদ্ভূত পরিস্থিতি দ্রুত ও কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারে। বাহিনীগুলোর নিয়ন্ত্রণ এবং ভূমিকার মধ্যে নিবিড় সমন্বয় সাধন করতে হবে। নিরাপত্তা বাহিনী প্রধানগণকে স্বৈরাচারের যে কোনো অপতৎপরতা বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো তিনি সতর্ক ও অবিচল থাকার নির্দেশ দিয়ে চাঁদাবাজ ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর জন্য সদা প্রস্তুত থাকতে বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে গণহত্যা-নিপীড়নসহ স্বৈরাচারের যাবতীয় অপরাধের মামলাগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে গিয়ে কোনো নিরাপরাধী ব্যক্তিকে যেন হয়রানির শিকার না হতে হয়, তা’ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তব্যরত বাহিনীকে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার তাগিদ দেন।

এই কঠোর ব্যবস্থা ও নির্দেশনাবলি সময়ের দাবি। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষকে জনগণ কোমল ও স্পর্শকাতর বলে বা দুর্বল শাসক হিসেবে গণ্য করতে থাকার মতো দীর্ঘ কয়েক মাসের কিছতা নির্লিপ্ততা এবং মধ্যপন্থার আশ্রয় নেওয়ার মতো মূল্যায়ন করতে থাকার প্রেক্ষাপটে সম্মানিত প্রধান উপদেষ্টার এই কঠোর অবস্থান দেশবাসীকে নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং ব্যতিক্রমধর্মী বার্তা গিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টাকে বলব আপনি উদার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং শ্রদ্ধাশীলদের প্রতি একই সঙ্গে এমনই কঠোর হোন গণতন্ত্র হত্যাকারী, গুম খুন নিপীড়ন ও নির্যাতনে বিশ্বাসীদের প্রতি। এদেশে গণতন্ত্র এবং জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাস করে না ভারতীয় আগ্রাসনবাদের বাংলাদেশ শাখা আওয়ামী লীগ, তাদের চ্যালন্ডা চামুন্ডা, ভারতপন্থি প্রকাশ্য ও গোপন দল বা লেজুড় সংগঠন, নাস্তিক বুদ্ধিজীবী চক্র, উগ্র হিন্দু দল ও ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের বাংলাদেশি স্থানীয় প্রতিনিধি, স্বৈরাচার কর্তৃক প্রতিপালিত গৃহভৃত্য ঠগ ব্যবসায়ী, সামরিক-বেসামরিক কাঠামোতে থেকে যাওয়া ও সদ্য ভোল পাল্টানো কর্মকর্তা, ট্রেড ইউনিয়নিষ্ট চক্র, সুবিধাভোগী বাটপার সংঘ, দুর্নীতিবাজ এবং অর্থ লুটেরা এবং অর্থ পাচারকারী চক্র, অসৎ ব্যবসায়ী, অসাধু পেশাজীবী, দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার এবং স্বৈরাচারের সরবরাহকারী ভোগ-লিপ্সা-নারীর দালাল শ্রেণি এবং যোগানদাতা চক্র।

এরা বহাল তবিয়তে থাকলে উপদেষ্টা কেন, ফেরেশতাদের ডেকে আনলেও যে সর্বনাশ খুনি স্বৈরাচার করে গেছে এবং এখনো হুমকি দিচ্ছে পুনর্বাসন ও পুনর্জন্মের এবং যারা চোরে চোরে মাসতুতো ভাই হয়ে তাদের ফিরে আসার ও ফিরিয়ে আনার আবদার করছে, তাদের হাত থেকে দেশ, জনগণ এবং জনস্বার্থকে রক্ষা করা অসম্ভব বলেই মনে হয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপনি বিপ্লবের ফসল। এক বর্ষণসিক্ত সকালে আপনি বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে দৃঢ় পদবিস্তারে গণহত্যার শহীদদের সোপানে ফুল দিয়ে শপথবাক্য পাঠ করেছিলেন। জনগণের আনুগত্য ও ভালোবাসা জুলাইয়ের বর্ষণ হিসেবে রহমতের প্রতীক হয়ে সিক্ত করেছিল আপনাকে। কাজেই নির্লিপ্ততা, উদাসীনতা, আপোসকামিতা ও গণশত্রুদের প্রতি আপনার মমতা ও দরদ একসঙ্গে অবস্থান করতে পারে না। অনেক সময় পা-িত্য রাজনৈতিক দৃঢ়তাকে ভিতর থেকে কুরে কুরে খায়।

নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব অর্কমণ্যতায় সৎ ও যোগ্য শাসককেও পথভ্রান্ত করে। অবিমিশ্রকারিতায় ভোগায়। এতে সাধারণ মানুষ তাদের আস্থাটা প্রত্যাহার করে নেয়। নিতে বাধ্য হয়। তাদের আস্থা ও আনুগত্যে চিড় ধরে। আপনি এমনিতেই স্বজন এবং সুজনদের একটা ভুল বার্তা দিয়েছেন। নির্বাচনের আশু ব্যবস্থা না করে ‘সংস্কার’ নামক একটা দীর্ঘসূত্রি, সময় সাপেক্ষ এবং বহুমাত্রিক, বহুপাক্ষিক ও বহু বচনিক প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে চলেছেন। অথচ নিজ বিদ্যা অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা থেকে আপনার এটি আরো ভালো এবং আরো বেশি জানার কথা যে, সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া ও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসা একটি জনপ্রিয় দল, মোর্চা কিংবা ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিতে বিশ্বাসী হয়ে দেশ শাসনের বিধিবিধান, প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বৈরাচারমুক্ত করে খাতভিত্তিক সংস্কার আনলেই সেই সংস্কার টেকসই হবে এবং তার বৈধতা প্রশ্নাতীত হবে বা নিষ্কণ্টক থেকে যাবে।

ঘোড়ার আগে নিশ্চয়ই গাড়ি জুড়ে দেওয়া যায় না। কাজেই দেশ ও জাতির সামনে এখন অগ্রাধিকার গন্তব্য হচ্ছে সর্বজনীন ভোটাধিকারের প্রয়োগ সাপেক্ষে একটি আইনসভা (সংসদ) প্রতিষ্ঠা করা। বহু দেশে আগে আইন প্রণয়নকারী এ্যাসেম্বলী নির্বাচন করা হয় এবং সেই অ্যাসেম্বলীর গরিষ্ঠসংখ্যক আইন প্রণেতার ভোটে বা সমর্থনে আইনসভায় বসেই সংস্কার আনা হয়।

ঠিক যেমনটির বিধান দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার আইন কাঠামো অধ্যাদেশের মাধ্যমে খবমধষ ঋৎধসবড়িৎশ ঙৎফবৎ বা খঋঙ বিধানে। এই বিধান প্রণয়নের জন্য সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া শরণাপন্ন হয়েছিলেন বাংলাদেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. জি. ডব্লিউ চৌধুরী এবং পশ্চিম পাকিস্তানে সংবিধান বিশেষজ্ঞ সর্দার মেহমুদের মতো পণ্ডিতদের।

তারা সামরিক শাসকের সুদূরপ্রসারী রাষ্ট্রনৈতিক দূরদর্শিতার প্রতীক এই এল. এফ. ও. অধ্যাদেশ প্রণয়নে সহায়তা করেছিলেন। পৃথিবীর শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে বিনা রক্তপাতে একটি সামরিক একনায়কত্ব থেকে ফেডারেল রাষ্ট্রকাঠামোয় উত্তরণ তথা পাকিস্তান গণতন্ত্রে শুভসূচনার একটি আইনগত ভিত্তি হতে পারতো এই আইনগত কাঠামো অধ্যাদেশটি। পরিতাপের বিষয় কেন পাকিস্তান হয়েছিল, কেন আমাদের পূর্ব পুরুষরা ভারতে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র চেয়েছিলেন, সেই ধারণা বা দর্শন হৃদয়ে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন পাকিস্তানের ১৯৭০ দশকের কোনো পক্ষই।

না পাকিস্তানি ভূস্বামীরা আর না ক্ষমতালোভী পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষ করে পদস্থ সেনা কর্মকর্তারা। মাঝখান থেকে স্বাধীনতা চেয়ে আমরাই ভারতের নীলনকশার শিকার হয়েছি। অনুরূপভাবে বলতেই হচ্ছে, জুলাই ২০২৪-এর ঐতিহাসিক গণবিপ্লব তথা ছাত্র জনতার গণআন্দোলনের মূল চেতনা, ধারকপরম্পরা এবং এ বিপ্লবের ‘স্পিরিট’ হৃদয় ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বিপ্লবের সুফলভোগী ও উত্তরসূরিরা। তা পারলে এই জগৎ কাঁপানো গণজাগরণের রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং চেতনাকে আমরা এত দ্রুত নিষ্প্রভ হয়ে যেতে দেখতাম না। আধিপত্যবাদী ভারত তার দাস বা গৃহভৃত্য বাকশালী স্বৈরাচারীদের বিরুদ্ধে শক্ত রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্য রচনার এমন সুবর্ণ সুযোগ প্রায় হাতছাড়া করতাম না।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নীরব বিপ্লব আসলেই দেশে-বিদেশে সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। তবে সংস্কারের দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে যত দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হবে ততই তা হবে দেশ ও রাষ্ট্রের নতুন বিন্যাস সোপান রচনার জন্য মঙ্গলজনক। এই নতুন বন্দোবস্তের মাধ্যমেই কেবল সম্ভব জুলাই-আগস্টের মহাজাগরণে তরুণ প্রজন্মের আত্ম উৎসর্গের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান ও স্বীকৃতি জ্ঞাপন। এখনো হাজার হাজার প্রতিবাদী তরুণ-যুবক পঙ্গুত্বে অসহায়ত্ব নিয়ে জীবন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে হাসপাতালের বেডে কিংবা ক্র্যাচে ভর করে।
তাদের যথাযোগ্য চিকিৎসার রাষ্ট্রীয় সংস্থান এবং সহযোগিতা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। যেভাবে আমরা ভুলে গেছি ’৭১-এর রণাঙ্গনে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী বীর শ্রেষ্ঠদের, ভুলে গেছি স্বাধীনতার মহানায়ক বীর বিক্রম ও বীর প্রতীকদেরসহ হাজার হাজার বাঙালি সেনা ও কর্মকর্তাদের যুদ্ধযজ্ঞ, লাখ লাখ গেরিলা যোদ্ধা, ঠিক একইভাবে কি আমরা ভুলে যেতে বসেছি জুলাই-আগস্টের বীর শহীদ ও সংগ্রামী ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, রিকশাবাহক, সাধারণ ছাত্র-জনতার অবদান এবং সংগ্রামকে? স্বৈরাচার পুনর্বাসনের জন্যই কি তাদের প্রাণ দিতে এবং পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছিল? সাধারণ মানুষ যে বলছে, এটা ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা! এর গভীর তাৎপর্য ও নিগূঢ় রাজনৈতিক তাৎপর্য কি আমাদের উদাসীনতার ধুলায় আবারও ঢেকে যাবে?

তাই প্রধান উপদেষ্টা ও তার সহযাত্রী সকল উপদেষ্টা এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বিত ও সম্পৃক্ত সকলের প্রতি আকুল আবেদন- জুলাই বিপ্লবের মূল রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি এবং মর্মবাণী, এর রাজনৈতিক তাৎপর্য ও আর্থ-সামাজিক গুরুত্বকে অন্তরের অন্তঃস্থলে ধারণ করুন। যত বেশি গভীর হবে এই অন্তর্দৃষ্টি ও অনুভব ততো বেশি উপদ্রবমুক্ত হবে আমাদের রাষ্ট্র সত্তা এবং সংহত হবে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় ঐক্য। তারা প্রাণ দিয়ে রক্তের অক্ষরে ডাক দিয়ে গেছে আমাদের নির্লিপ্ত ও উদাসীন চৈতন্যকে।
আমাদের অবশ্যই নির্মোহ হতে হবে এবং ভারতীয় জুজু বুড়ির ভয়কে জয় করতে হবে। যে বর্ণবাদী অগণতান্ত্রিক ভারত কাশ্মিরে পারে না, কাঠমুন্ডুতে পারে না, থিমপু (ভতানে) পারে না, দ্বীপদেশ মালদ্বীপে গলা ধাক্কা খায়, নেপালে পারে না, শ্রীলংকায় পারে না, সে পারবে বেঙ্গল ব্যাঘ্র বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে? কোনো তুলনা চলে কি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভুবনজয়ী জনপ্রিয় ড. ইউনূসের? ড. ইউনূস একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব। তার বৈশ্বিক জনপ্রিয়তায় গাত্রদাহ ভারত-হাসিনা কুচক্রীদের। কী অপমান, কত অসম্মান অপদস্থই না স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করেছে।

ড. ইউনূস অবগত আছেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং স্বার্থের শত্রুরাষ্ট্র হলো ভারত এবং তাদের কেনা গোলাম আওয়ামী-বাকশাল-কমিউনিস্ট চক্র। এদের বিরুদ্ধে যত শক্ত অবস্থানে যাবেন বাংলাদেশের কোনো নেতা, তিনিই হবেন বাংলাদেশের পরমাত্মীয়, গণমানুষের আস্থা ও ভালোবাসার প্রতীক, যেমনটা ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান ঘোষক ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের রাষ্ট্রীয় দর্শনের প্রবক্তা সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জেনারেল জিয়াউর রহমান।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ