ঢাকা ১২:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

‘স্বীয় জিহ্বা শাসনে রাখিবে’

  • আপডেট সময় : ১০:১৬:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ অগাস্ট ২০২১
  • ১৪২ বার পড়া হয়েছে

অজয় দাশগুপ্ত : একসময় নৈতিকতা ছিল সমাজের ভূষণ। সেসময় আমাদের ছিল প্লেইন লিভিং আর হাই থিংকিংয়ের আদর্শে এক সরল জীবন। আমরা এখন ব্যাকডেটেড মানুষ, পুরনো যুগের অচল মাল। সেটা যেমন জীবন-যাপন, পোশাক, খাদ্য কিংবা কথায় টের পাই তেমনি মনে করিয়ে দেয় নানা ঘটনার আকস্মিক ধাক্কা। এ এক আজব যুগ। এখন কোনটা নৈতিক কোনটা অনৈতিক বোঝা দায়। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীকে দোষারোপ করি আমরা। ভাবি তারা যুগের প্রবাহে নানা ধরনের আজগুবি কা- ঘটায়। তাদের ভাষা, তাদের পোশাক আমাদের চোখ পীড়ার কারণ হয়। কিন্তু আসলে কি তা সত্য? আমরা যখন যৌবনের শুরুতে বেলবটম প্যান্ট পরতাম তখনো আমাদের আমাদের অভিভাবকেরা বিস্ময়ের চোখে তাকাতেন। ভাবতেন এ আবার কী রে বাবা! হঠাৎ নীচের দিকে এসে ঢোলাঢালা এ এক আজব পাতলুন। এটাও ঠিক হিল দেওয়া জুতা না পরলে সে পাতলুনের নীচের দিকটা ময়লা আবজর্না কুড়িয়ে নিত মহানন্দে। এমন সব ঘটনা যেকোনো সমাজে ঘটে। পরিবর্তন মানুষকে মানতে হয়। আর পরিবর্তনের ভেতর দিয়েই মানুষ পৌঁছে যায় আধুনিকতায় নতুন কোনো গন্তব্যে। সম্প্রতি আমাদের দেশে যতগুলো অঘটন আর মুখরোচক কাহিনী তার পেছনে কজন তরুণ তরুণী আছে আসলে?

সবগুলো ঘটনার নেপথ্যে মধ্যবয়সী পুরুষ কিংবা নারী। এসব ঘটনার সাথে জড়িত পুরুষ মানেই এখন যৌনতার ইন্ধন কিংবা অপকর্মের নায়ক। কেউ কাউকে ভোগ করে, কেউ কাউকে প্ররোচনা দিয়ে বা কেউ অর্থ আত্মসাৎ কিংবা লুটপাট করে সংবাদ শিরোনামে। আর নারীরা কি পিছিয়ে? নৈতিকতার কথাই যদি বলেন দেখবেন তার দেয়াল এরাও ভেঙ্গে ফেলেছে অনেক আগে। কেউ লুটপাট কেউ মধুচক্রের হোতা আর কেউ কেউ রাজনীতির নামে সমাজে মাফিয়া হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এদের একেকজন যখন ধরা পড়ে আমরা অবাক হই। ভাবি ওহ এমনও ঘটে? কিন্তু এমন সরল ভাবনার কি আসলে কোন মানে হয়?

প্রতিটি ঘটনা মিডিয়ায় চলে আসার পর দেখা যায় এসব নারী-পরুষের বাড়িতে পাওয়া মালামাল প্রায় একই ধরনের। বিয়ারের বোতল, মদের খালি বা আধাভর্তি কয়েকটা বোতল, হরিণের চামড়া বা এমন জাতীয় কিছু হয়তো পাওয়া যায়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় এসব কোথায় ছিল এতদিন? কেনইবা কর্তারা এসব জানতেন না? আর জানলেও কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল? আইন তার নিজস্ব গতিতে চলুক, বিচার হোক। আমরা চাই সব ধরনের দুর্নীতি ও অপরাধমুক্ত দেশ ও সমাজ, এটাই আসল কথা। ভাবনাটা এদের নিয়ে যতটা তারচেয়ে অধিক ভিন্ন আরেকটি এক ঘটনায়। আমি একটু পেছন ফিরে তাকাতে চাই।

প্রাইমারি ও হাইস্কুলের পর কলেজ জীবন এটুকু আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। আজ মনে হয় এই শ্রেষ্ঠতার কারণ বুঝি। প্রাইমারি স্কুলে আমাদের শিক্ষকরা ছিলেন অভিভাবকের চাইতেও বড় কেউ। তারা আমাদের কাছে দেবতুল্য। বুঝতে না পারলেও এটা জানতাম এরাই মানুষের বীজতলা তৈরি করেন। ভয় পেতাম তাদের, ভয় পেতাম তারা মার লাগাবেন বলে। কিন্তু মাঝে মাঝে তাদের স্নেহ আর ভালোবাসা বয়ে যেতো নদীর ধারার মতো। এরপর হাইস্কুলের জীবন। সে মাস্টার মশাইরা ছিলেন আমাদের অভিভাবক। আমাদের ইংরেজি স্যার ছিলেন কড়া একজন মানুষ। তার অনেকগুলো শুচিবায়ুর ভেতর একটি ছিল জামার হাত গুটানো যাবে না। লম্বাহাতের যেকোনো জামার আস্তিন কোনোভাবে গুটানো থাকলে হয় প্রহার নয়তো বকা খাওয়াই ছিল নিয়তি। তিনি আমাদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করতেন। যেকোনো অভিযোগ বা পড়াশোনার ঘাটতি সব খুলে বলতেন। মাঝেমধ্যে তার ভাষা পথ হারাতো বটে কিন্তু সেগুলো এখন হাসির খোরাক মাত্র। বড়জোর এই কুলাঙ্গার ছেলেকে নিয়ে কি করবেন আপনারা? বা এই ছাগল তো মানুষ হবে না। এমন কঠিন কঠোর মানুষটি আমাদের স্কুল শেষ হবার দিন ক্লাসে এসেছিলেন একটা লম্বা ছিপছিপে বেত নিয়ে। আমরা সবাই অবাক। শেষদিনও তিনি আমাদের কাউকে কাউকে মারবেন? সে দিনটি আমি কখনো ভুলব না। ক্লাস শেষ হয়েছিল কান্না আর ভালোবাসা দিয়ে। সে বেতটি তিনি টুকরো করে ভেঙ্গে কেঁদে দিয়ে বলেছিলেন, এটা দিয়ে তোদের অনেক মেরেছি। শুধু একটা কারণে, তোরা মানুষের মতো মানুষ হবি বলে। তার কান্না আমাদের এই কথা বলেছিল, কঠিন হলেও এরাই তোমাদের আলোর দিশারী।

দিনকাল পাল্টেছে। এখন এমন সব কথাবার্তা ফাঁস হয় যা শুনে আমরা লজ্জায় মুখ লুকাই। দেশের নামকরা স্কুল কলেজের স্বনামধন্যদের মানুষ এখনো অভিভাবক মানে। জানে এদের কাছে তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত গচ্ছিত। ছেলেমেয়েরা এদের কাছেই শিখবে নৈতিকতা। কিন্তু সম্প্রতি কি দেখছি, কি শুনছি আমরা? আমি কারো ব্যক্তিগত নিন্দা বা বিদ্বেষ ছড়ানোকে লেখার উপজীব্য মনে করি না। আমার একটাই প্রশ্ন যতবড় আঘাত আর রাগ এসে ভীড় করুক না কেন আমাদের ভাষা তার সীমা ছাড়াবে? বিষয়গুলো যদিও দুদিক থেকে ভাবা দরকার। একদিকে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ফাঁস আর বেঈমানি। অন্যদিকে কঠিন এক নিদারুণ বাস্তবতা। এ ভাষায় তো যাদের আমরা ছোটলোক বলে তুচ্ছ করি তারাও কথা বলে না। বরং আজ দেখা যাচ্ছে তারাই ভদ্রলোক। আর আমাদের শেষ আশ্রয় অভিভাবকের চাইতে বড় মাস্টারদের আচরণ কথা অসংযত।

জিহ্বা এমন একটা অঙ্গ যা বত্রিশ পাটি কঠিন শক্ত দাঁতের ভেতর নিরাপদে থাকতে পারে। যে দাঁতগুলো মাংস চিবিয়ে হাড্ডি টুকরো করে তাদের ফাঁকে এর নিরাপদ থাকার কারণ তার নমনীয় শীতল অবস্থান। সেই জিহ্বা নিয়ে চমৎকার লিখেছেন সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্যোপাধ্যায়। আর আমরা সবাই জানি এই একফালি জিনিসটা সময়মতো তলোয়ারের চাইতেও বেশি শক্তিশালী। এ যেমন মায়া ভালোবাসা প্রেম বাড়াতে পারে, কাউকে দুশমন থেকে বন্ধু করে তুলতে পারে তেমনি পারে বন্ধুকে দুশমন করে ছাড়তে। সেজন্য খুব বেশি সময়ের দরকার হয় না। আমাদের সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রে বহু খ্যাতিমান মানুষের সবর্নাশ হয়েছে শুধু জিহ্বার কারণে। তবু আমরা একে বাগে রাখতে ভুলে যাই।

অহংকার, রাজনৈতিক দম্ভ আর জিহ্বার অসংযতায় আজ যখন সবাই কমবেশি আক্রান্ত তখন বাল্যপাঠের সেই বাণী মনে পড়ে। যেখানে বলা হয়েছিল- স্বীয় জিহ্বা শাসনে রাখিবে। এ কথা না মানলে যে কি হয় তাও আমাদের অজানা না। নৈতিকতার এই স্খলন বিপজ্জনক। দেশ ও জাতির জন্য এর সুরক্ষা আজ জরুরি।
লেখক : কলামিস্ট।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান ও পরিবারের ৫৭৬ কোটি টাকা ফ্রিজ

‘স্বীয় জিহ্বা শাসনে রাখিবে’

আপডেট সময় : ১০:১৬:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ অগাস্ট ২০২১

অজয় দাশগুপ্ত : একসময় নৈতিকতা ছিল সমাজের ভূষণ। সেসময় আমাদের ছিল প্লেইন লিভিং আর হাই থিংকিংয়ের আদর্শে এক সরল জীবন। আমরা এখন ব্যাকডেটেড মানুষ, পুরনো যুগের অচল মাল। সেটা যেমন জীবন-যাপন, পোশাক, খাদ্য কিংবা কথায় টের পাই তেমনি মনে করিয়ে দেয় নানা ঘটনার আকস্মিক ধাক্কা। এ এক আজব যুগ। এখন কোনটা নৈতিক কোনটা অনৈতিক বোঝা দায়। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীকে দোষারোপ করি আমরা। ভাবি তারা যুগের প্রবাহে নানা ধরনের আজগুবি কা- ঘটায়। তাদের ভাষা, তাদের পোশাক আমাদের চোখ পীড়ার কারণ হয়। কিন্তু আসলে কি তা সত্য? আমরা যখন যৌবনের শুরুতে বেলবটম প্যান্ট পরতাম তখনো আমাদের আমাদের অভিভাবকেরা বিস্ময়ের চোখে তাকাতেন। ভাবতেন এ আবার কী রে বাবা! হঠাৎ নীচের দিকে এসে ঢোলাঢালা এ এক আজব পাতলুন। এটাও ঠিক হিল দেওয়া জুতা না পরলে সে পাতলুনের নীচের দিকটা ময়লা আবজর্না কুড়িয়ে নিত মহানন্দে। এমন সব ঘটনা যেকোনো সমাজে ঘটে। পরিবর্তন মানুষকে মানতে হয়। আর পরিবর্তনের ভেতর দিয়েই মানুষ পৌঁছে যায় আধুনিকতায় নতুন কোনো গন্তব্যে। সম্প্রতি আমাদের দেশে যতগুলো অঘটন আর মুখরোচক কাহিনী তার পেছনে কজন তরুণ তরুণী আছে আসলে?

সবগুলো ঘটনার নেপথ্যে মধ্যবয়সী পুরুষ কিংবা নারী। এসব ঘটনার সাথে জড়িত পুরুষ মানেই এখন যৌনতার ইন্ধন কিংবা অপকর্মের নায়ক। কেউ কাউকে ভোগ করে, কেউ কাউকে প্ররোচনা দিয়ে বা কেউ অর্থ আত্মসাৎ কিংবা লুটপাট করে সংবাদ শিরোনামে। আর নারীরা কি পিছিয়ে? নৈতিকতার কথাই যদি বলেন দেখবেন তার দেয়াল এরাও ভেঙ্গে ফেলেছে অনেক আগে। কেউ লুটপাট কেউ মধুচক্রের হোতা আর কেউ কেউ রাজনীতির নামে সমাজে মাফিয়া হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এদের একেকজন যখন ধরা পড়ে আমরা অবাক হই। ভাবি ওহ এমনও ঘটে? কিন্তু এমন সরল ভাবনার কি আসলে কোন মানে হয়?

প্রতিটি ঘটনা মিডিয়ায় চলে আসার পর দেখা যায় এসব নারী-পরুষের বাড়িতে পাওয়া মালামাল প্রায় একই ধরনের। বিয়ারের বোতল, মদের খালি বা আধাভর্তি কয়েকটা বোতল, হরিণের চামড়া বা এমন জাতীয় কিছু হয়তো পাওয়া যায়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় এসব কোথায় ছিল এতদিন? কেনইবা কর্তারা এসব জানতেন না? আর জানলেও কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল? আইন তার নিজস্ব গতিতে চলুক, বিচার হোক। আমরা চাই সব ধরনের দুর্নীতি ও অপরাধমুক্ত দেশ ও সমাজ, এটাই আসল কথা। ভাবনাটা এদের নিয়ে যতটা তারচেয়ে অধিক ভিন্ন আরেকটি এক ঘটনায়। আমি একটু পেছন ফিরে তাকাতে চাই।

প্রাইমারি ও হাইস্কুলের পর কলেজ জীবন এটুকু আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। আজ মনে হয় এই শ্রেষ্ঠতার কারণ বুঝি। প্রাইমারি স্কুলে আমাদের শিক্ষকরা ছিলেন অভিভাবকের চাইতেও বড় কেউ। তারা আমাদের কাছে দেবতুল্য। বুঝতে না পারলেও এটা জানতাম এরাই মানুষের বীজতলা তৈরি করেন। ভয় পেতাম তাদের, ভয় পেতাম তারা মার লাগাবেন বলে। কিন্তু মাঝে মাঝে তাদের স্নেহ আর ভালোবাসা বয়ে যেতো নদীর ধারার মতো। এরপর হাইস্কুলের জীবন। সে মাস্টার মশাইরা ছিলেন আমাদের অভিভাবক। আমাদের ইংরেজি স্যার ছিলেন কড়া একজন মানুষ। তার অনেকগুলো শুচিবায়ুর ভেতর একটি ছিল জামার হাত গুটানো যাবে না। লম্বাহাতের যেকোনো জামার আস্তিন কোনোভাবে গুটানো থাকলে হয় প্রহার নয়তো বকা খাওয়াই ছিল নিয়তি। তিনি আমাদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করতেন। যেকোনো অভিযোগ বা পড়াশোনার ঘাটতি সব খুলে বলতেন। মাঝেমধ্যে তার ভাষা পথ হারাতো বটে কিন্তু সেগুলো এখন হাসির খোরাক মাত্র। বড়জোর এই কুলাঙ্গার ছেলেকে নিয়ে কি করবেন আপনারা? বা এই ছাগল তো মানুষ হবে না। এমন কঠিন কঠোর মানুষটি আমাদের স্কুল শেষ হবার দিন ক্লাসে এসেছিলেন একটা লম্বা ছিপছিপে বেত নিয়ে। আমরা সবাই অবাক। শেষদিনও তিনি আমাদের কাউকে কাউকে মারবেন? সে দিনটি আমি কখনো ভুলব না। ক্লাস শেষ হয়েছিল কান্না আর ভালোবাসা দিয়ে। সে বেতটি তিনি টুকরো করে ভেঙ্গে কেঁদে দিয়ে বলেছিলেন, এটা দিয়ে তোদের অনেক মেরেছি। শুধু একটা কারণে, তোরা মানুষের মতো মানুষ হবি বলে। তার কান্না আমাদের এই কথা বলেছিল, কঠিন হলেও এরাই তোমাদের আলোর দিশারী।

দিনকাল পাল্টেছে। এখন এমন সব কথাবার্তা ফাঁস হয় যা শুনে আমরা লজ্জায় মুখ লুকাই। দেশের নামকরা স্কুল কলেজের স্বনামধন্যদের মানুষ এখনো অভিভাবক মানে। জানে এদের কাছে তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত গচ্ছিত। ছেলেমেয়েরা এদের কাছেই শিখবে নৈতিকতা। কিন্তু সম্প্রতি কি দেখছি, কি শুনছি আমরা? আমি কারো ব্যক্তিগত নিন্দা বা বিদ্বেষ ছড়ানোকে লেখার উপজীব্য মনে করি না। আমার একটাই প্রশ্ন যতবড় আঘাত আর রাগ এসে ভীড় করুক না কেন আমাদের ভাষা তার সীমা ছাড়াবে? বিষয়গুলো যদিও দুদিক থেকে ভাবা দরকার। একদিকে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ফাঁস আর বেঈমানি। অন্যদিকে কঠিন এক নিদারুণ বাস্তবতা। এ ভাষায় তো যাদের আমরা ছোটলোক বলে তুচ্ছ করি তারাও কথা বলে না। বরং আজ দেখা যাচ্ছে তারাই ভদ্রলোক। আর আমাদের শেষ আশ্রয় অভিভাবকের চাইতে বড় মাস্টারদের আচরণ কথা অসংযত।

জিহ্বা এমন একটা অঙ্গ যা বত্রিশ পাটি কঠিন শক্ত দাঁতের ভেতর নিরাপদে থাকতে পারে। যে দাঁতগুলো মাংস চিবিয়ে হাড্ডি টুকরো করে তাদের ফাঁকে এর নিরাপদ থাকার কারণ তার নমনীয় শীতল অবস্থান। সেই জিহ্বা নিয়ে চমৎকার লিখেছেন সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্যোপাধ্যায়। আর আমরা সবাই জানি এই একফালি জিনিসটা সময়মতো তলোয়ারের চাইতেও বেশি শক্তিশালী। এ যেমন মায়া ভালোবাসা প্রেম বাড়াতে পারে, কাউকে দুশমন থেকে বন্ধু করে তুলতে পারে তেমনি পারে বন্ধুকে দুশমন করে ছাড়তে। সেজন্য খুব বেশি সময়ের দরকার হয় না। আমাদের সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রে বহু খ্যাতিমান মানুষের সবর্নাশ হয়েছে শুধু জিহ্বার কারণে। তবু আমরা একে বাগে রাখতে ভুলে যাই।

অহংকার, রাজনৈতিক দম্ভ আর জিহ্বার অসংযতায় আজ যখন সবাই কমবেশি আক্রান্ত তখন বাল্যপাঠের সেই বাণী মনে পড়ে। যেখানে বলা হয়েছিল- স্বীয় জিহ্বা শাসনে রাখিবে। এ কথা না মানলে যে কি হয় তাও আমাদের অজানা না। নৈতিকতার এই স্খলন বিপজ্জনক। দেশ ও জাতির জন্য এর সুরক্ষা আজ জরুরি।
লেখক : কলামিস্ট।