ঢাকা ১০:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রচলিত কিছু তথ্য একেবারেই ভিত্তিহীন

  • আপডেট সময় : ০৪:৫৮:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৩৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: এই সময়ে বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, অসুস্থ হলেই আমরা ডা. গুগল, ডা. টিকটক কিংবা ডা. ইন্সটাগ্রামের বা ইউটিউব’য়ের শরণাপন্ন হই। এসব মাধ্যমে শরীরের বিষ বের করে দেওয়া, রক্তচাপ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি নিয়ে নানান তথ্য পাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগই ভিত্তিহীন, প্রচলিত এবং শ্রুতকথন বা ‘মিথ’।
এই বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মার্কিন চিকিৎসক জেসিকা স্টায়র রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, অনেকেই বলেন, মোজার ভেতর কাঁচা আলু দিয়ে পরলে শরীরের বিষ বের হয়ে যায়। আচ্ছা বলেন তো এটা কি কখনও সম্ভব। বর্জ্য বের করে দেওয়ার জন্য শরীরের নিজস্ব পদ্ধতি আছে। এজন্য আলু ব্যবহার করাটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন তথ্য। তিনি পরামর্শ দেন, যদি অনলাইন থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ নিতেই হবে, তবে যারা আসলেই ডাক্তার তাদের দেওয়া তথ্য অনুসরণ করতে হবে। অবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকা কোনো তথ্যই বিশ্বাস করা উচিত হবে না। স্বাস্থ্য-বিষয়ক এই ধরনের আরও কিছু প্রচলিত বিষয় রয়েছে যা প্রচলিত। তবে এগুলো সঠিক নয়।
কিছু খাবার আসলে অস্বাস্থ্যকর: ওটস বা ওটমিল স্বাস্থ্যকর। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই দাবী করেন, সকালের নাস্তায় ওটস খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ নিকোল রডরিগাজ বলেন, ওটস খেলে রক্তে শর্করা বৃদ্ধি পাওয়াটা দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আসল বিষয় হল- যে কোনো কার্বোহাইড্রেইটস সমৃদ্ধ খাবার খেলে এরকম হবেই।
এক কাপ রান্না করা ওটস থেকে দৈনিক চাহিদার ১৫ শতাংশ আঁশ পাওয়া সম্ভব। যদি রক্তে চিনি বেড়ে যাওয়াটা চিন্তার মনে হয় তবে প্রোটিনের সাথে খাওয়া যেতে পারে। যেমন- ডিম বা উদ্ভিজ্জ প্রোটিন ছোলা কিংবা অ্যাভাকাডো। এগুলো হজম প্রক্রিয়া আরও ধীর করে। ফলে রক্তে দ্রুত শর্করার মাত্রা বাড়ে না।
অনেকে বলেন, বীজ থেকে তৈরি তেল যেমনÑ ক্যানোল, কর্ন, সানফ্লাওয়ার বা বাদাম- এই ধরনের খাবার তেলগুলোর কারণে হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। রডরিগাজ বলেন, অতিরিক্ত তেল দিয়ে রান্না করা যে কোনো খাবার থেকেই এই সমস্যা হতে পারে। আর তেল দিয়ে অতি প্রক্রিয়াজাত করা খাবার আরও বেশি ক্ষতিকর। কারণ এসব খাবারে স্যাচুরেইটেড ফ্যাট, লবণ বা সোডিয়াম এবং ক্যালোরি বেশি থাকে। তিনি বলেন, একভাবে এসব তেল ক্ষতিকর নয়। বরং এগুলোতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ওমেগা-সিক্স’স, আনস্যাটুরেইটেড ফ্যাটি অ্যাসিডস- যা দেহ সুস্থভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন।
‘স্মুদি’: চিনির কথা চিন্তা করে আরেকটি অস্বাস্থ্যাকর খাবার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সঠিকভাবে তৈরি করলে এই খাবারই হতে পারে পুষ্টিকর, আঁশে ভরপুর।
রডরিগাজ বলেন, ফল সবজি যারা খেতে চায় না, তাদের খাওয়ানোর জন্য স্মুদি হতে পারে সেরা মাধ্যম। আসল ফল ও সবজির সমন্বয়ে তৈরি এই পানীয় স্বাস্থ্যকর। আর উপকারিতা বাড়াতে ব্যবহার করা যায় প্রোটিন, যেমন- দুধ, দই। সাথে স্বাস্থ্যকর চর্বি যোগ করতে দেওয়া যায় বাদামের মাখন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে না: বিষয়টা আসলে সত্যি না। এই সময়ের সবগুলো ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে রোগ প্রতিরোধ শক্তি দৃঢ় রাখা সম্ভব। এই তথ্য জানিয়ে মার্কিন অনুজীব-বিজ্ঞানী ও রোগ-প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্ড্রিয়া লাভ বলেন, মসলা হলুদ দিয়ে তৈরি পানীয় পান করলেই যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে সেটিও ঠিক নয়।রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া একটি জটিল বিষয়। এটা একটা জটিল ‘নেটওয়ার্ক’Ñ মন্তব্য করেন তিনি।
শ্বেত রক্তকণিকা সারাক্ষণ পুরো দেহ পাহাড়া দিচ্ছে যাতে বাইরের আক্রমণ ঠেকানো যায়। এই কণিকা কয়েকটি অঙ্গের মাধ্যমে কাজ করে। যেমনÑ ‘স্প্লিন’ বা প্লীহা থেকে তৈরি হয় অ্যান্টিবডিস, অস্থিমজ্জা থেকে তৈরি হয় রক্ত-কণিকা এবং ‘লিমপ্যাটিক সিসটেম’ ধ্বংস প্রাপ্ত ব্যাক্টেরিয়া ও অন্যান্য বর্জ্য দেহ থেকে বের করে দেয়।
নির্দিষ্ট ব্যায়াম করে যেমন পেশি বাড়ানো যায়, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দৃঢ় করতে কোনো একটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করলে হবে না। আবার রোগ প্রতিরোধ শক্তি অতিমাত্রায় থাকলে ‘অটোইমিউন’ রোগ দেখা দিতে পারে। এটা হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেহের সুস্থ কোষগুলোকেই শক্রু মনে করে আক্রমণ করে বসে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সামঞ্জস্যময় দৃঢ় রাখতে প্রয়োজনÑ পর্যাপ্ত ঘুম, দৈনিক ব্যায়াম, সুষম খাবার খাওয়া, মদ্যপান ও ধূমপান না করা।
খাবারের প্রভাবে হজম, ত্বক ও মন-মেজাজ খারাপ হয়: খাবার থেকে অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগা নতুন কিছু নয়। তবে নির্দিষ্ট কোনো খাবার বাদ দিয়ে উপকার পেয়েছেন- এমন বক্তব্য অনলাইনে পেয়ে সেটা অনুসরণ করে সবাই উপকৃত হবেন এমন কোনো কথা নেই। এই মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও’তে অবস্থিত ‘নেশনওয়াইড চিলড্রেন’স হসপিটাল’য়ের চিকিৎসক ও অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ ডেভিড স্টাকাস বলেন, “সবার দেহ একই রকমভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় না। তাই কেউ একজন কোনো একটি খাবার খাওয়া বন্ধ করে উপকার পেয়েছে বলে আপনিও সেটার সুফল পাবেন এমন কোনো কথা নেই।”
খাবার থেকে হজমে সমস্যা বা ত্বকে অ্যালার্জি হলে একমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমেই নির্ণয় করা সম্ভব সমস্যাটা কোথায়। এজন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন ড. স্টাকাস।
সবাই এডিএইচডিতে আক্রান্ত: অ্যাটেনশন ডিফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি) বা ‘মনোযোগের চেয়ে চঞ্চলতায় ভোগার মানসিক সমস্যা’ সবার মধ্যে থাকেÑ এই ধরনের কথা অনলাইন মাধ্যমে প্রায় শোনা যায়। তবে ব্যাপারটি ঠিক নয়। নিউ ইয়র্ক সিটির স্নায়ু ও মনোবিজ্ঞানী সানাম হাফিজ বলেন, সব সময় দেরিতে পৌঁছানো, কিছু ভুলে যাওয়া বা ভুল করে আলমারির দরজা খোলা রাখাÑ এ ধরনের বিষয়গুলো যে কেউ করতে পারে। তাই বলে আপানি ‘এডিএইচডি’তে ভুগছেন সেটি ঠিক নয়।
আর কোনো একজনের ভিডিও দেখে তার লক্ষণগুলো নিজের সঙ্গে মিলিয়ে নিজেকে মানসিক রোগী ভাবাও দরকার নেই। যদি সমস্যা মনেই হয় তাহলে সেটিকে পর্যবেক্ষণের জন্য পেশাদার মনোবিজ্ঞানী, স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে যাওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
হরমোনের ভারসাম্য থাকা দরকার, বিশেষ করে ‘প্রিমেনোপজ’-এর অবস্থায়: হরমোনের কারণে দেহের আকার আকৃতি, মন-মেজাজের ওঠা-নামা ইত্যাদিতে প্রভাব ফেলতেই পারে। তবে শুধু হরমোনের জন্যই এসব হচ্ছে তাও ঠিক না। এই বিষয়ে মার্কিন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আসিমা আহমেদ বলেন, মানুষের পুরো জীবনে হরমোনের ওঠা-নামা চলে। তাই হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এক কথায় বলা সম্ভব নয়। এটা একটা বিশাল ব্যাপার। তাই হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কথা বলে, সেটার সমাধান হিসেবে কোনো কিছু কেনার জন্য কেউ প্রস্তাব দিলে সেটি এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া এই বিষয়ে নিশ্চিত করে কেউ পরামর্শ দিতে পারবে না। তাই কোনো সমস্যা বোধ করলে বা ‘মেনোপজ’ সংক্রান্ত কোনো লক্ষণ দেখা দিলে হরমোন বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হবে উচিত কাজ।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রচলিত কিছু তথ্য একেবারেই ভিত্তিহীন

আপডেট সময় : ০৪:৫৮:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক: এই সময়ে বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, অসুস্থ হলেই আমরা ডা. গুগল, ডা. টিকটক কিংবা ডা. ইন্সটাগ্রামের বা ইউটিউব’য়ের শরণাপন্ন হই। এসব মাধ্যমে শরীরের বিষ বের করে দেওয়া, রক্তচাপ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি নিয়ে নানান তথ্য পাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগই ভিত্তিহীন, প্রচলিত এবং শ্রুতকথন বা ‘মিথ’।
এই বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মার্কিন চিকিৎসক জেসিকা স্টায়র রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, অনেকেই বলেন, মোজার ভেতর কাঁচা আলু দিয়ে পরলে শরীরের বিষ বের হয়ে যায়। আচ্ছা বলেন তো এটা কি কখনও সম্ভব। বর্জ্য বের করে দেওয়ার জন্য শরীরের নিজস্ব পদ্ধতি আছে। এজন্য আলু ব্যবহার করাটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন তথ্য। তিনি পরামর্শ দেন, যদি অনলাইন থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ নিতেই হবে, তবে যারা আসলেই ডাক্তার তাদের দেওয়া তথ্য অনুসরণ করতে হবে। অবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকা কোনো তথ্যই বিশ্বাস করা উচিত হবে না। স্বাস্থ্য-বিষয়ক এই ধরনের আরও কিছু প্রচলিত বিষয় রয়েছে যা প্রচলিত। তবে এগুলো সঠিক নয়।
কিছু খাবার আসলে অস্বাস্থ্যকর: ওটস বা ওটমিল স্বাস্থ্যকর। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই দাবী করেন, সকালের নাস্তায় ওটস খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ নিকোল রডরিগাজ বলেন, ওটস খেলে রক্তে শর্করা বৃদ্ধি পাওয়াটা দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আসল বিষয় হল- যে কোনো কার্বোহাইড্রেইটস সমৃদ্ধ খাবার খেলে এরকম হবেই।
এক কাপ রান্না করা ওটস থেকে দৈনিক চাহিদার ১৫ শতাংশ আঁশ পাওয়া সম্ভব। যদি রক্তে চিনি বেড়ে যাওয়াটা চিন্তার মনে হয় তবে প্রোটিনের সাথে খাওয়া যেতে পারে। যেমন- ডিম বা উদ্ভিজ্জ প্রোটিন ছোলা কিংবা অ্যাভাকাডো। এগুলো হজম প্রক্রিয়া আরও ধীর করে। ফলে রক্তে দ্রুত শর্করার মাত্রা বাড়ে না।
অনেকে বলেন, বীজ থেকে তৈরি তেল যেমনÑ ক্যানোল, কর্ন, সানফ্লাওয়ার বা বাদাম- এই ধরনের খাবার তেলগুলোর কারণে হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। রডরিগাজ বলেন, অতিরিক্ত তেল দিয়ে রান্না করা যে কোনো খাবার থেকেই এই সমস্যা হতে পারে। আর তেল দিয়ে অতি প্রক্রিয়াজাত করা খাবার আরও বেশি ক্ষতিকর। কারণ এসব খাবারে স্যাচুরেইটেড ফ্যাট, লবণ বা সোডিয়াম এবং ক্যালোরি বেশি থাকে। তিনি বলেন, একভাবে এসব তেল ক্ষতিকর নয়। বরং এগুলোতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ওমেগা-সিক্স’স, আনস্যাটুরেইটেড ফ্যাটি অ্যাসিডস- যা দেহ সুস্থভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন।
‘স্মুদি’: চিনির কথা চিন্তা করে আরেকটি অস্বাস্থ্যাকর খাবার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সঠিকভাবে তৈরি করলে এই খাবারই হতে পারে পুষ্টিকর, আঁশে ভরপুর।
রডরিগাজ বলেন, ফল সবজি যারা খেতে চায় না, তাদের খাওয়ানোর জন্য স্মুদি হতে পারে সেরা মাধ্যম। আসল ফল ও সবজির সমন্বয়ে তৈরি এই পানীয় স্বাস্থ্যকর। আর উপকারিতা বাড়াতে ব্যবহার করা যায় প্রোটিন, যেমন- দুধ, দই। সাথে স্বাস্থ্যকর চর্বি যোগ করতে দেওয়া যায় বাদামের মাখন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে না: বিষয়টা আসলে সত্যি না। এই সময়ের সবগুলো ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে রোগ প্রতিরোধ শক্তি দৃঢ় রাখা সম্ভব। এই তথ্য জানিয়ে মার্কিন অনুজীব-বিজ্ঞানী ও রোগ-প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্ড্রিয়া লাভ বলেন, মসলা হলুদ দিয়ে তৈরি পানীয় পান করলেই যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে সেটিও ঠিক নয়।রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া একটি জটিল বিষয়। এটা একটা জটিল ‘নেটওয়ার্ক’Ñ মন্তব্য করেন তিনি।
শ্বেত রক্তকণিকা সারাক্ষণ পুরো দেহ পাহাড়া দিচ্ছে যাতে বাইরের আক্রমণ ঠেকানো যায়। এই কণিকা কয়েকটি অঙ্গের মাধ্যমে কাজ করে। যেমনÑ ‘স্প্লিন’ বা প্লীহা থেকে তৈরি হয় অ্যান্টিবডিস, অস্থিমজ্জা থেকে তৈরি হয় রক্ত-কণিকা এবং ‘লিমপ্যাটিক সিসটেম’ ধ্বংস প্রাপ্ত ব্যাক্টেরিয়া ও অন্যান্য বর্জ্য দেহ থেকে বের করে দেয়।
নির্দিষ্ট ব্যায়াম করে যেমন পেশি বাড়ানো যায়, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দৃঢ় করতে কোনো একটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করলে হবে না। আবার রোগ প্রতিরোধ শক্তি অতিমাত্রায় থাকলে ‘অটোইমিউন’ রোগ দেখা দিতে পারে। এটা হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেহের সুস্থ কোষগুলোকেই শক্রু মনে করে আক্রমণ করে বসে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সামঞ্জস্যময় দৃঢ় রাখতে প্রয়োজনÑ পর্যাপ্ত ঘুম, দৈনিক ব্যায়াম, সুষম খাবার খাওয়া, মদ্যপান ও ধূমপান না করা।
খাবারের প্রভাবে হজম, ত্বক ও মন-মেজাজ খারাপ হয়: খাবার থেকে অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগা নতুন কিছু নয়। তবে নির্দিষ্ট কোনো খাবার বাদ দিয়ে উপকার পেয়েছেন- এমন বক্তব্য অনলাইনে পেয়ে সেটা অনুসরণ করে সবাই উপকৃত হবেন এমন কোনো কথা নেই। এই মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও’তে অবস্থিত ‘নেশনওয়াইড চিলড্রেন’স হসপিটাল’য়ের চিকিৎসক ও অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ ডেভিড স্টাকাস বলেন, “সবার দেহ একই রকমভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় না। তাই কেউ একজন কোনো একটি খাবার খাওয়া বন্ধ করে উপকার পেয়েছে বলে আপনিও সেটার সুফল পাবেন এমন কোনো কথা নেই।”
খাবার থেকে হজমে সমস্যা বা ত্বকে অ্যালার্জি হলে একমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমেই নির্ণয় করা সম্ভব সমস্যাটা কোথায়। এজন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন ড. স্টাকাস।
সবাই এডিএইচডিতে আক্রান্ত: অ্যাটেনশন ডিফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি) বা ‘মনোযোগের চেয়ে চঞ্চলতায় ভোগার মানসিক সমস্যা’ সবার মধ্যে থাকেÑ এই ধরনের কথা অনলাইন মাধ্যমে প্রায় শোনা যায়। তবে ব্যাপারটি ঠিক নয়। নিউ ইয়র্ক সিটির স্নায়ু ও মনোবিজ্ঞানী সানাম হাফিজ বলেন, সব সময় দেরিতে পৌঁছানো, কিছু ভুলে যাওয়া বা ভুল করে আলমারির দরজা খোলা রাখাÑ এ ধরনের বিষয়গুলো যে কেউ করতে পারে। তাই বলে আপানি ‘এডিএইচডি’তে ভুগছেন সেটি ঠিক নয়।
আর কোনো একজনের ভিডিও দেখে তার লক্ষণগুলো নিজের সঙ্গে মিলিয়ে নিজেকে মানসিক রোগী ভাবাও দরকার নেই। যদি সমস্যা মনেই হয় তাহলে সেটিকে পর্যবেক্ষণের জন্য পেশাদার মনোবিজ্ঞানী, স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে যাওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
হরমোনের ভারসাম্য থাকা দরকার, বিশেষ করে ‘প্রিমেনোপজ’-এর অবস্থায়: হরমোনের কারণে দেহের আকার আকৃতি, মন-মেজাজের ওঠা-নামা ইত্যাদিতে প্রভাব ফেলতেই পারে। তবে শুধু হরমোনের জন্যই এসব হচ্ছে তাও ঠিক না। এই বিষয়ে মার্কিন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আসিমা আহমেদ বলেন, মানুষের পুরো জীবনে হরমোনের ওঠা-নামা চলে। তাই হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এক কথায় বলা সম্ভব নয়। এটা একটা বিশাল ব্যাপার। তাই হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কথা বলে, সেটার সমাধান হিসেবে কোনো কিছু কেনার জন্য কেউ প্রস্তাব দিলে সেটি এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া এই বিষয়ে নিশ্চিত করে কেউ পরামর্শ দিতে পারবে না। তাই কোনো সমস্যা বোধ করলে বা ‘মেনোপজ’ সংক্রান্ত কোনো লক্ষণ দেখা দিলে হরমোন বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হবে উচিত কাজ।