ঢাকা ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
ঢামেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা

স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে হল পরিদর্শনের আল্টিমেটাম ঢামেক শিক্ষার্থীদের

  • আপডেট সময় : ০৮:১১:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিরাপদ আবাসনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হল পরিদর্শনে আসার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছেন। অন্যথায়, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেন তারা। এছাড়া কলেজ প্রশাসনের একতরফা হল ত্যাগের নির্দেশনা মানবেন না বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২২ জুন) বেলা সাড়ে ১২টায় কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা দেন। বৈঠকের পর মিলন চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষার্থীরা জানান, দিনের পর দিন তারা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে জীবন বিপন্ন করে থাকছেন। কিন্তু প্রশাসন কার্যকর সমাধানের বদলে কেবল তাদের হল ছেড়ে দিতে বলছে। ঢামেকের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ডা. ফজলে রাব্বী হলের আবাসিক ছাত্র আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, অনেক দিন ধরে নিরাপদ আবাসনের জন্য আন্দোলন করছি। হলের ভগ্নদশা দেশবাসী দেখেছে। আজ কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম, কিন্তু সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস পাইনি। বরং আমাদের বারবার বলা হয়েছে হল ছেড়ে দিতে। তিনি বলেন, আমরা এখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে বলছি— আগামীকাল সোমবার (২৩ জুন) দুপুর ১২টার মধ্যে তিনি যেন তার প্রতিনিধি দলসহ ঢামেকে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেন এবং সমস্যার বাস্তব সমাধান দেন। অন্যথায়, আমরা কঠোর আন্দোলনের দিকে যাবো।

এক প্রশ্নের জবাবে নোমান বলেন, শনিবারের (২১ জুন) বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে— হল ছাড়তে হবে, কিন্তু সেখানে কোথাও লেখা নেই, ভবনের সংস্কারের জন্য এটি করা হচ্ছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে— আমাদের আন্দোলন দমন করতেই এই নির্দেশনা। আমরা এটা মানছি না। যেহেতু সংস্কার হচ্ছে না, আমরাও হল ছাড়ছি না। তিনি আরো যোগ করেন, এই হলে থাকতে গেলে আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হবে। যেকোনও সময় ভবন ভেঙে পড়তে পারে। এর দায়ভার তখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকেই নিতে হবে। কারণ এখনও ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সেটা দায়িত্ব এড়ানোর নামান্তর হবে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী তৌহিদুল আবেদীন তানভীর বলেন, আমাদের দাবি কতটুকু অগ্রসর হয়েছে জানতে চেয়েছি। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। শুধু মিটিং ডেকে, নির্দেশনা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি— আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা যদি নিজে বা তার প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালে না আসেন, তাহলে আমরা আমাদের আন্দোলন আরো কঠোর করতে বাধ্য হবো।

এদিকে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের নির্দেশনার বিপরীতে শিক্ষার্থীরা আগেই ঘোষণা দিয়েছেন— তারা হল ত্যাগ করবেন না। আজকের ঘোষণায় সেই সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, যেহেতু ভবনের সংস্কার বা বিকল্প আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেহেতু আমরা আমাদের হল ছাড়ছি না। আন্দোলন থামছে না।

প্রসঙ্গত, ঢামেকের অ্যাকাডেমিক ভবন এবং আবাসিক হল ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায়, তা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিকল্প আবাসন এবং ছাত্রাবাস ও অ্যাকাডেমিক ভবন সংস্কারের দাবিতে গত ২৮ মে থেকে সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আসা নবীন ব্যাচ ‘কে-৮২’ তাদের সিনিয়র ব্যাচদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানও বর্জন করে। শিক্ষার্থীরা জানান, ফজলে রাব্বী হলের মূল ভবনের তৃতীয় তলায় ওয়াশরুম ও টয়লেটের সিলিং থেকে পলেস্তারা খসে পড়ায় বিপজ্জনক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগ জানালার কাচ ভেঙে গেছে এবং এর আগের একটি ঘটনা— ঝড়ের সময় পুরো জানালার গ্রিল ভেঙে পড়লে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন। তৃতীয় তলার বেশ কয়েকটি কক্ষ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গত ৬ জুন ঢামেক শিক্ষার্থীরা তাদের আবাসিক হলগুলোতে জীবনের ঝুঁকির কথা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসসহ গার্লস হোস্টেল ও অ্যাকাডেমিক ভবনসহ আরো কয়েকটি ভবন এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ সাত মাস আগে ফজলে রাব্বি হলকে বসবাসের অনুপযোগী এবং পরিত্যক্ত ঘোষণা করা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে বসবাস করছেন। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, রানা প্লাজা বা জগন্নাথ হলের ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না— যা হবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য একটি লজ্জাজনক ঘটনা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ঢামেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা

স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে হল পরিদর্শনের আল্টিমেটাম ঢামেক শিক্ষার্থীদের

আপডেট সময় : ০৮:১১:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিরাপদ আবাসনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হল পরিদর্শনে আসার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছেন। অন্যথায়, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেন তারা। এছাড়া কলেজ প্রশাসনের একতরফা হল ত্যাগের নির্দেশনা মানবেন না বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২২ জুন) বেলা সাড়ে ১২টায় কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা দেন। বৈঠকের পর মিলন চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষার্থীরা জানান, দিনের পর দিন তারা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে জীবন বিপন্ন করে থাকছেন। কিন্তু প্রশাসন কার্যকর সমাধানের বদলে কেবল তাদের হল ছেড়ে দিতে বলছে। ঢামেকের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ডা. ফজলে রাব্বী হলের আবাসিক ছাত্র আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, অনেক দিন ধরে নিরাপদ আবাসনের জন্য আন্দোলন করছি। হলের ভগ্নদশা দেশবাসী দেখেছে। আজ কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম, কিন্তু সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস পাইনি। বরং আমাদের বারবার বলা হয়েছে হল ছেড়ে দিতে। তিনি বলেন, আমরা এখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে বলছি— আগামীকাল সোমবার (২৩ জুন) দুপুর ১২টার মধ্যে তিনি যেন তার প্রতিনিধি দলসহ ঢামেকে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেন এবং সমস্যার বাস্তব সমাধান দেন। অন্যথায়, আমরা কঠোর আন্দোলনের দিকে যাবো।

এক প্রশ্নের জবাবে নোমান বলেন, শনিবারের (২১ জুন) বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে— হল ছাড়তে হবে, কিন্তু সেখানে কোথাও লেখা নেই, ভবনের সংস্কারের জন্য এটি করা হচ্ছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে— আমাদের আন্দোলন দমন করতেই এই নির্দেশনা। আমরা এটা মানছি না। যেহেতু সংস্কার হচ্ছে না, আমরাও হল ছাড়ছি না। তিনি আরো যোগ করেন, এই হলে থাকতে গেলে আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হবে। যেকোনও সময় ভবন ভেঙে পড়তে পারে। এর দায়ভার তখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকেই নিতে হবে। কারণ এখনও ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সেটা দায়িত্ব এড়ানোর নামান্তর হবে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী তৌহিদুল আবেদীন তানভীর বলেন, আমাদের দাবি কতটুকু অগ্রসর হয়েছে জানতে চেয়েছি। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। শুধু মিটিং ডেকে, নির্দেশনা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি— আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা যদি নিজে বা তার প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালে না আসেন, তাহলে আমরা আমাদের আন্দোলন আরো কঠোর করতে বাধ্য হবো।

এদিকে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের নির্দেশনার বিপরীতে শিক্ষার্থীরা আগেই ঘোষণা দিয়েছেন— তারা হল ত্যাগ করবেন না। আজকের ঘোষণায় সেই সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, যেহেতু ভবনের সংস্কার বা বিকল্প আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেহেতু আমরা আমাদের হল ছাড়ছি না। আন্দোলন থামছে না।

প্রসঙ্গত, ঢামেকের অ্যাকাডেমিক ভবন এবং আবাসিক হল ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায়, তা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিকল্প আবাসন এবং ছাত্রাবাস ও অ্যাকাডেমিক ভবন সংস্কারের দাবিতে গত ২৮ মে থেকে সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আসা নবীন ব্যাচ ‘কে-৮২’ তাদের সিনিয়র ব্যাচদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানও বর্জন করে। শিক্ষার্থীরা জানান, ফজলে রাব্বী হলের মূল ভবনের তৃতীয় তলায় ওয়াশরুম ও টয়লেটের সিলিং থেকে পলেস্তারা খসে পড়ায় বিপজ্জনক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগ জানালার কাচ ভেঙে গেছে এবং এর আগের একটি ঘটনা— ঝড়ের সময় পুরো জানালার গ্রিল ভেঙে পড়লে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন। তৃতীয় তলার বেশ কয়েকটি কক্ষ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গত ৬ জুন ঢামেক শিক্ষার্থীরা তাদের আবাসিক হলগুলোতে জীবনের ঝুঁকির কথা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসসহ গার্লস হোস্টেল ও অ্যাকাডেমিক ভবনসহ আরো কয়েকটি ভবন এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ সাত মাস আগে ফজলে রাব্বি হলকে বসবাসের অনুপযোগী এবং পরিত্যক্ত ঘোষণা করা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে বসবাস করছেন। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, রানা প্লাজা বা জগন্নাথ হলের ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না— যা হবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য একটি লজ্জাজনক ঘটনা।