নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্ভাব্য সব কিছু করলেও স্বাস্থ্যবিধি পালনে মানুষের উদাসীনতা দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল শনিবার সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি আবারও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তাহলেই মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে স্বাস্থ্যবিধি পালন দেখা গেলেও ধীরে ধীরে তাতে শৈথিল্য দেখা যায়। এরপর এই বছরের মার্চে সংক্রমণেল দ্বিতীয় ঢেউয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত এবং এতে মৃত্যুর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন শতাধিক রোগী মারা যাচ্ছে, শনাক্তও হচ্ছে ৮ হাজারের বেশি রোগী। কোরবানির ঈদের আগে রোজার ঈদের কথা স্মরণ করিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা সমস্যা হচ্ছে যে জনগণকে গত ইদুল ফিতরে বারবার অনুরোধ করলাম যে আপনারা আপনাদের জায়গা ছেড়ে যাবেন না। কিন্তু অনেকেই তো সেই কথা শোনেনি। সকলেই ছুটে চলে গেছে।
“আর তার ফলাফলটা কী হল? যারা বাইরে ছিল, পুরো বর্ডার এলাকায়, বিভিন্ন জেলায় এই করোনাটা ছড়িয়ে পড়ল। সবাই তখন যদি আমার কথাটা শুনত, তাহলে আজকে এমনভাবে করোনাটা ছড়িয়ে পড়ত না।”
মানুষের বাড়ি যেতে চাওয়ার প্রবণতাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সংক্রমণ এড়াতে মহামারীকালে সবাইকে এক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, মাস্ক পরার উপর জোর দিয়ে আসছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারী প্রতিরোধে সরকার যেসব নির্দেশনাগুলো দিয়েছে, সেগুলো মেনে চললে মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। “আমরা এখন লকডাউন ঘোষণা করেছি। আমি দেশবাসীকে বলব, আপনারা অন্ততপক্ষে নির্দেশনাগুলো মেনে নিজেকে সুরক্ষিত রাখেন, অন্যকে সুরক্ষিত রাখেন। অন্তত এটা ছাড়াতে দিয়েন না। মাস্ক পরা, হাত পরিষ্কার করা আর যেন কোনোমতেই যেন সংক্রমিত না হয়, তার জন্য দূরত্ব বজায় রাখা। এটা করতে পারলেই কিন্তু আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।” সবাইকে কোভিড টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, টিকা নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। দেশের মানুষ যেন সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা সরকার করবে।
কোরআনে আছে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পবিত্র কোরআনে অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা রয়েছে। আমাদের নবী করিম (সা.) বলেছেন, অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল হতে। তিনি এই শিক্ষা দিয়েছেন।
শনিবার একাদশ জাতীয় সংসদের ১৩তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম সব ধর্মের মর্যাদা দেয়। কোরআন শরিফে আছে, ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন’ অর্থাৎ যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। যার যার মতামত সে সে প্রকাশ করবেন।” এর আগে সংসদের এই অধিবেশনেই বিএনপির হারুনুর রশিদ কোরআনে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা নেই বলে দাবি করেছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকার সমালোচনাও করেন তিনি। হারুন বলেন, ‘সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা রাখা সাংঘর্ষিক।’ বিএনপি নেতা হারুনের বক্তব্যের প্রসঙ্গটি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য বলেছেন, কোরআনে না-কি ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা নেই। আমি বলব অবশ্যই আছে। আমাদের নবী করিম (সা.) বলেছেন, অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল হতে। তিনি এই শিক্ষা দিয়েছেন।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী কোরআনের আয়াত ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন’ পড়েন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যার যার মতামত সে সে প্রকাশ করবেন। এটা প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতাই আসে। যতই তিনি (এমপি হারুনুর রশিদ) অস্বীকার করুন, যেভাবে তিনি ব্যাখ্যা দেন। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। যুগ যুগ ধরে এটা চলছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই নিজের ধর্ম পালনে সব সময় গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল থাকতে হবে। এটা আমাদের শিক্ষা। এটা নবী করিম (সা.) সব সময় বলে গেছেন। কাজেই এ ধরনের কথা সংসদে না বলাটাই ভালো।’
স্বাস্থ্যবিধি পালনে উপেক্ষা দেখে হতাশা প্রধানমন্ত্রীর
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ