ঢাকা ০৩:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পথকিশোরীরা

  • আপডেট সময় : ১১:৩০:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪
  • ৬২ বার পড়া হয়েছে

গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া ফ্লাইওভারের নিচে পড়ে থাকা একগাদা নোংরা কাপড় থেকে টুকরো টুকরো কাপড় সংগ্রহ করছিল তানিয়া (ছদ্মনাম)। ১৫ বছর বয়সী এই কিশোরীর ঋতুস্রাব শুরু হয় আরো তিন বছর আগে। পিরিয়ড বা মাসিক সামাল দিতে তখন থেকেই সে এসব কাপড় ব্যবহার করছে।
তানিয়া বলেছে, মাসের বিশেষ দিনগুলোতে তাকে প্রায়ই এভাবে কাপড় সংগ্রহে রাস্তায় বের হতে হয়। কখনো পছন্দসই কাপড় মেলে, কখনো মেলে না। হাতে থাকা এক টুকরা কাপড় দেখিয়ে তানিয়া বলে, “এইটা নিচ্ছি ব্যবহার করার জন্য। পরে রাতে ধুইয়া ফ্লাইওভারের নিচে টানানোর জায়গা খুঁইজা শুকাব। তারপর আবার কাজে লাগবে। প্রতি মাসেই শুকাইয়া পলিথিনে ভরে মাটির নিচে লুকাইয়া রাখি। নতুন কাপড় না পাইলে সেগুলানই আবার ব্যবহার করি। “এ সময় অস্থির অস্থির লাগে, কাপড় কম; তাই একটা কাপড় সারাদিন ব্যবহার করা লাগে, পায়জামাও ভিজ্জা যায়।”
জননাঙ্গের ভেতর ফোঁড়া নিয়ে মাস দুয়েক আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল পথ কিশোরী মিম আক্তারকে (ছদ্মনাম)। তবে টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ১৬ বছর বয়সী এ কিশোরী বলেছে, গত বছরের মাঝামাঝিতে তার জননাঙ্গের ভেতরে প্রথমে চুলকানি হয়, তারপর ছোটছোট গুটি উঠতে থাকে, যা পরে ফোঁড়ার রূপ নেয়। “অনেক ব্যথা হইত। হাঁটতে পারতাম না ঠিক করে, পরে হাসপাতালে গেছি। সব শুইনা ডাক্তার বলছে মাসিকের সময় অনেকদিন ধইরা ময়লা কাপড় ব্যবহার করার কারণে নাকি এমন হইছে।”
ঋতুস্রাবের সময়টায় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের কথা যে মিম জানে না, তা নয়। কিন্তু প্যাড কেনার পয়সা যোগাড় করা সম্ভব হয় না। বাসাবাড়ির কাছে রাস্তায় পড়ে থাকা কাপড় সংগ্রহ করে স্রাব সামাল দেয় মেয়েটি। “মাসিকে প্যাড ব্যবহার করতে আর বড় ডাক্তার দেখাইতে কইছিল। কিন্তু আমাদের ট্যাকা পয়সা নাই, তাই এভাবেই আছি।”
গার্মেন্টস কর্মী বাবা মায়ের বিচ্ছেদের পর পাঁচ বছর আগে মিম গাজীপুর থেকে ঢাকায় চলে আসে। তারপর নানা জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে তার ঠাঁই হয়েছে হাই কোর্ট এলাকায়। দিনভর টোকাইয়ের কাজ করে মিম, দুপুর বেলায় মাজারের খিচুড়ি খেতে চলে আসে। “যখন শুরু হয় (ঋতুস্রাব) তখন রাস্তা থেকে যেসব ন্যাকড়া টুকাইয়া আসি, সেইগুলান ধুয়ার মত অত পানিও নাই। আবার শুকাইতেও টাইম লাগে। ব্যবহারের পর রাতে একবার ধুইয়া যেইখানে ঘুমাই সেইখানে হালকা কইরা নাইড়া দেই।”
গত মার্চে ইউনিসেফ প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে পথশিশুদের পরিস্থিতি-২০২৪’ গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, দেশের ৩৪ লাখের বেশি শিশু বাবা-মায়ের যত্নের বাইরে একা রাস্তায় বসবাস করে। এর আগে ২০২২ সালে ইউনিসেফের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ‘সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২’ শীর্ষক জরিপ চালায়। সেখানে দেশের আট বিভাগের কেন্দ্রস্থল থেকে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৭ হাজার ২০০ জন পথশিশুর তথ্য নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৮২ শতাংশ ছেলে এবং ১৮ শতাংশ মেয়ে রয়েছে বলে জানানো হয় ওই জরিপে। অন্তত ২০ জন পথবাসী কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেছে, যারা ঋতুস্রাবের সময় ময়লা কাপড় ব্যবহার করে এবং নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছে। ১৯৭৬ সালে যাত্রা শুরু করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’ পথশিশুদের নিয়েও কাজ করেছে। ‘বাংলাদেশ মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে ২০২২ সালের জুনে প্রকাশিত তাদের ‘আ সাইকেল অব নেগলেক্ট: আ স্টাডি অন মেন্সট্রুয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক গবেষণা বলছে, পিরিয়ডের সময় ব্যবহার করার জন্য ভাসমান কিশোরীদের কাপড় সংগ্রহের উৎস হচ্ছে আবর্জনা। জনস্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এএসএম আমানুল্লাহ বলেন, “আমার ধারণা, তাদের শতভাগেরই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের সক্ষমতা নাই। তাদের সচেতনতাও নাই এটা ব্যবহার করলে ভালো হবে।”
বাংলাদেশ পথশিশুদের নিয়ে কর্মরত ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক-স্ক্যান এর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল বলেন, “পথকিশোরীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার সক্ষমতা নেই; টিকে থাকা নিয়েই তাদের হিমশিম খেতে হয়।”
ভোগান্তি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি: ফুলবাড়িয়া ফ্লাইওভারের নিচে দেখা হয় তানিয়ার সঙ্গে, তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। তবে বাবা-মা এখন কোথায়, তা জানা নেই মেয়েটির। কীভাবে সে ঢাকায় এসেছে, তাও ভালো করে মনে নেই। অন্য পথশিশুদের সঙ্গে সে রাতের বেলায় ফ্লাইওভারের নিচেই ঘুমায়। আর দিনের বেলা দল বেঁধে ভিক্ষা করে। ঋতুস্রাব শুরুর পর পেট ব্যথা শুরু হওয়ায় বাকিদের সঙ্গে ভিক্ষায় বের হয়নি সে। ফ্লাইওভারের ঘুমানোর জায়গা থেকে কিছুটা দূরে কাপড় সংগ্রহ করছিল এই কিশোরী। পিরিয়ডের সময় নানা রকমের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাশাপাশি জননাঙ্গের পাশে ঘা হওয়ার কথাও বলেছে সে। “কাপড় যখন ব্যবহার করি তখন অনেক চুলকায়। অনেক পেট ব্যথা করে, দিনদিন আরো বাড়তেছে। ওখানে কেন ঘা হইছে সেটাও জানি না। ডাক্তার দেখাইয়া যে ওষুধ কিনব সে টাকাও নাই, আর কোথায় যাব সেটাও জানি না।”
কমলাপুর রেললাইনের পাশে পড়ে থাকা বোতল আর পলিথিন টোকাতে দেখা গেল শারমিন আক্তারকে (ছদ্মনাম)। মেয়েটি বলেছে, বাবা-মায়ের খোঁজ জানা নেই তার। জানা নেই সে কীভাবে রাজধানীতে এসেছে।
এই রেললাইনেই শারমিনের দিন ও রাত কাটে। জীবনের প্রথম পিরিয়ডের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে শারমিন বলে, “একদিন দেখলাম অনেক রক্ত বের হচ্ছে। ভয় পেয়ে গেছিলাম, কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছিল না। কাপড়ের দাগ দেইখা এক মহিলা কইছে কাপড় আইন্যা ব্যবহার করতে।”
সে কাপড়ও শারমিন সংগ্রহ করেছিল কমলাপুর রেললাইনের পাশ থেকে। কিছুদিন আগেই তার পঞ্চমবারের মত ঋতুস্রাব হয, তখনও সে সেসব ময়লা কাপড় এনে ব্যবহার করেছে।
“আর কি করতাম? আমাগো পরার কাপড়ই টুকাইতে হয়।” কাপড়গুলো পরিষ্কার করা হয় কীভাবে? শারমিন বললো, “ব্যবহারের পর শুধু পানি দিয়ে ধুই এক-দুই বার। সেটাই পরে আবার ব্যবহার করি।
“একটু খারাপ লাগে, চুলকায়, অনেক সময় ব্যথা করে। টাকা-পয়সা নাই, ভালো কাপড়ও ব্যবহার করতে পারি না; ডাক্তার আমরা দেখাব কেমনে!”
কমলাপুর রেললাইনের পাশে মায়ের সঙ্গে থাকে সানিয়া (ছদ্মনাম)। জীবিকার জন্য সে টোকাইয়ের কাজ করে। মাসিকের সময়েও টোকানো কাপড়ই তার ভরসা। সানিয়া বলে, “কী করব কন! খাইয়া পইরা বাঁইচ্যা থাকার উপায় নাই, তাই এসব নিয়ে ভাবি না আমরা। এমনে চলতে পারলেই হয়।
“বোতলে বোতলে পানি আনি আমরা, অল্প অল্প পানি দিয়া ধুইতে হয়। মাঝেমধ্যে সাবান দিই। রাতে যখন আশপাশে মানুষ কম থাকে, তখন কাপড়গুলা ধুই। সবসময় কাপড়ও পাওয়া যায় না, তাই পুরানগুলাই ব্যবহার করতে হয়।”
গবেষণা যা বলছে: ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’র গবেষণায় ৮৮৩ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী, ৩৪২ জন বস্তিবাসী এবং ৪১১ জন পথকিশোরীর মাসিককালীন পরিস্থিতি উঠে এসেছি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋতুস্রাব নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকার ফলে তারা ক্যান্সার ও প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। গবেষণাটি বলছে, ৮৬ শতাংশ কিশোরী মাসিকের সময় কাপড় ব্যবহার করে, আর মাত্র ৩ শতাংশ কিশোরী এসময় প্যাড ব্যবহার করে। বাকি কিশোরীরা তুলা, টিস্যু, ট্যাম্পন ব্যবহার করছে। তাদের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ কিশোরী ৪ থেকে ৮ ঘণ্টা পরপর শোষণকারী উপকরণ বদলায়। অর্ধেকের কাছাকাছি দিনে মাত্র একবার সেটা বদলায়।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকলিজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, “ঋতুস্রাবের সময় কাপড় ব্যবহার করাটাই নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করে, আর সেটা যদি নোংরা হয় তাহলে মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। “বাইরে থেকে ইনফেকশন শুরু হয়। ভেতরেও ইনফেকশন হয়, জরায়ুর মুখে ইনফেকশন হয়। তলপেটে সারাক্ষণ ব্যথা হয়। মাসিকের সময়ে পেটের ব্যথাটা আরো বেড়ে যায়। সবসময় জ্বর জ্বর ভাব থাকে। পরবর্তীকালে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।” চিকিৎসা নিতে আসা পথকিশোরীদের মধ্যে এসব উপসর্গ দেখতে পাওয়ার কথা বলেছেন এই চিকিৎসক। রওশন আরা বলেন, “তারা তো জামাকাপড় ঠিক করে পরিষ্কার করতে পারে না, পথেঘাটে থাকে। পরিষ্কার করার উপকরণও নাই। এ কারণে এসব সমস্যা দেখা দেয়।”
করণীয় কী: পথকিশোরীরা জননাঙ্গের যেসব সমস্যায় ভুগছে তার থেকে পরিত্রাণের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিকল্প দেখছেন না ডা. রওশন আরা বেগম। তিনি বলেন, পথকিশোরীদের জন্য সমাজের অবস্থাসম্পন্ন ও সচেতন ব্যক্তিরা বিনামূল্যে কিছু স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের ব্যবস্থা করতে পারেন। “পরিষ্কার থাকতে হবে সবসময়, কিন্তু তাকে শুধু বললেই হবে না। তাকে তো সাবান দিতে হবে, পানি দিতে হবে, থাকার জায়গা দিতে হবে। এগুলোর ব্যবস্থা করা দরকার। তারপরও বলা, কিছু না পারুক অন্তত গরম পানিতে একটু লবণ দিয়ে জননাঙ্গটা পরিষ্কার রাখা যেতে পারে।” অধ্যাপক এএসএম আমানুল্লাহর পরামর্শ, পথকিশোরীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের জন্য ঢাকার সব ওয়ার্ডে সরকার এক বা দুটি করে ড্রপ-ইন-সেন্টার গড়ে তুলতে পারে। “সুবিধা দিলে তারা সেটা গ্রহণ করবে। সচেতনতামূলক কর্মসূচি করেও তাদেরকে এখানে আনা যায়, তাহলে সেখান থেকে তারা প্যাড পেতে পারে।” অধ্যাপক আমানুল্লাহ বলছেন, সরকার বড় বড় সংস্থাকে তাদের কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি বা সিএসআর-এর আওতায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করার জন্য আহ্বান করতে পারে। তার কথায়, “সরকার সংস্থাগুলোকে বলতে পারে পথকিশোরীদের এ সহায়তার জন্য অর্থায়ন করতে। একটা কৌশলপত্রও তৈরি করা জরুরি। উদ্যোগের অংশ হিসেবে পথকিশোরীদের সচেতনতার জন্য পথনাটক বা গানের আয়োজন করা যায়।”
স্ক্যানের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল বলেন, সরকারের আরবান হেলথ কেয়ার প্রোগ্রামের আওতায় এই পথকিশোরীদের সেবার মধ্যে নিয়ে আসার পাশাপাশি সরকার সচেতনতামূলক কাজ করতে পারে।
“লো কস্ট স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করতে পারে, তারা যেন সেটা কিনতে পারে।”
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক বলেন, “দ্রুতই তাদের জন্য মেশিন দিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন ফ্রিতে বিতরণের জন্য পরিকল্পনা আছে আমাদের। বিভিন্ন প্রাইভেট সেক্টরও আগ্রহী, তাদের পার্টনারশিপেও আমরা কাজটা করতে পারি।”
চাইল্ড সেনসিটিভ সোস্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ (সিএসপিবি) এবং সার্ভিসেস ফর দ্যা চিলড্রেন অ্যাট রিস্ক– এ দুটি শিশু সুরক্ষা প্রকল্পের অধীনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বেশ কিছু পথশিশুকে সামাজিক সুরক্ষা ও পরিবারে পুনঃএকত্রীকরণ করেছে। তবে পথ কিশোরীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে তাদের কোন প্রকল্প নেই। এ বিষয়ে কোন পরিকল্পনা নেওয়া হবে কী না জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, “এগুলো নিয়ে বেশকিছু সংস্থা কাজ করছে।”
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘এক রঙা এক ঘুড়ি’ ২০০৮ সাল থেকে ঢাকায় পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছে। তারা ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পথকিশোরীদের স্বল্প পরিসরে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ ও সচেতনতা বাড়াতে কাজ করেছে। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক নীল সাধু বলেন, “তারা এ ব্যাপারে একদমই সচেতন না। সচেতনতা বাড়াতে হবে, আর এ প্রোডাক্টগুলা যেন হাতের নাগালে থাকে, দাম যেন কম থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।”সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পথকিশোরীরা

আপডেট সময় : ১১:৩০:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪

গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া ফ্লাইওভারের নিচে পড়ে থাকা একগাদা নোংরা কাপড় থেকে টুকরো টুকরো কাপড় সংগ্রহ করছিল তানিয়া (ছদ্মনাম)। ১৫ বছর বয়সী এই কিশোরীর ঋতুস্রাব শুরু হয় আরো তিন বছর আগে। পিরিয়ড বা মাসিক সামাল দিতে তখন থেকেই সে এসব কাপড় ব্যবহার করছে।
তানিয়া বলেছে, মাসের বিশেষ দিনগুলোতে তাকে প্রায়ই এভাবে কাপড় সংগ্রহে রাস্তায় বের হতে হয়। কখনো পছন্দসই কাপড় মেলে, কখনো মেলে না। হাতে থাকা এক টুকরা কাপড় দেখিয়ে তানিয়া বলে, “এইটা নিচ্ছি ব্যবহার করার জন্য। পরে রাতে ধুইয়া ফ্লাইওভারের নিচে টানানোর জায়গা খুঁইজা শুকাব। তারপর আবার কাজে লাগবে। প্রতি মাসেই শুকাইয়া পলিথিনে ভরে মাটির নিচে লুকাইয়া রাখি। নতুন কাপড় না পাইলে সেগুলানই আবার ব্যবহার করি। “এ সময় অস্থির অস্থির লাগে, কাপড় কম; তাই একটা কাপড় সারাদিন ব্যবহার করা লাগে, পায়জামাও ভিজ্জা যায়।”
জননাঙ্গের ভেতর ফোঁড়া নিয়ে মাস দুয়েক আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল পথ কিশোরী মিম আক্তারকে (ছদ্মনাম)। তবে টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ১৬ বছর বয়সী এ কিশোরী বলেছে, গত বছরের মাঝামাঝিতে তার জননাঙ্গের ভেতরে প্রথমে চুলকানি হয়, তারপর ছোটছোট গুটি উঠতে থাকে, যা পরে ফোঁড়ার রূপ নেয়। “অনেক ব্যথা হইত। হাঁটতে পারতাম না ঠিক করে, পরে হাসপাতালে গেছি। সব শুইনা ডাক্তার বলছে মাসিকের সময় অনেকদিন ধইরা ময়লা কাপড় ব্যবহার করার কারণে নাকি এমন হইছে।”
ঋতুস্রাবের সময়টায় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের কথা যে মিম জানে না, তা নয়। কিন্তু প্যাড কেনার পয়সা যোগাড় করা সম্ভব হয় না। বাসাবাড়ির কাছে রাস্তায় পড়ে থাকা কাপড় সংগ্রহ করে স্রাব সামাল দেয় মেয়েটি। “মাসিকে প্যাড ব্যবহার করতে আর বড় ডাক্তার দেখাইতে কইছিল। কিন্তু আমাদের ট্যাকা পয়সা নাই, তাই এভাবেই আছি।”
গার্মেন্টস কর্মী বাবা মায়ের বিচ্ছেদের পর পাঁচ বছর আগে মিম গাজীপুর থেকে ঢাকায় চলে আসে। তারপর নানা জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে তার ঠাঁই হয়েছে হাই কোর্ট এলাকায়। দিনভর টোকাইয়ের কাজ করে মিম, দুপুর বেলায় মাজারের খিচুড়ি খেতে চলে আসে। “যখন শুরু হয় (ঋতুস্রাব) তখন রাস্তা থেকে যেসব ন্যাকড়া টুকাইয়া আসি, সেইগুলান ধুয়ার মত অত পানিও নাই। আবার শুকাইতেও টাইম লাগে। ব্যবহারের পর রাতে একবার ধুইয়া যেইখানে ঘুমাই সেইখানে হালকা কইরা নাইড়া দেই।”
গত মার্চে ইউনিসেফ প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে পথশিশুদের পরিস্থিতি-২০২৪’ গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, দেশের ৩৪ লাখের বেশি শিশু বাবা-মায়ের যত্নের বাইরে একা রাস্তায় বসবাস করে। এর আগে ২০২২ সালে ইউনিসেফের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ‘সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২’ শীর্ষক জরিপ চালায়। সেখানে দেশের আট বিভাগের কেন্দ্রস্থল থেকে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৭ হাজার ২০০ জন পথশিশুর তথ্য নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৮২ শতাংশ ছেলে এবং ১৮ শতাংশ মেয়ে রয়েছে বলে জানানো হয় ওই জরিপে। অন্তত ২০ জন পথবাসী কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেছে, যারা ঋতুস্রাবের সময় ময়লা কাপড় ব্যবহার করে এবং নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছে। ১৯৭৬ সালে যাত্রা শুরু করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’ পথশিশুদের নিয়েও কাজ করেছে। ‘বাংলাদেশ মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে ২০২২ সালের জুনে প্রকাশিত তাদের ‘আ সাইকেল অব নেগলেক্ট: আ স্টাডি অন মেন্সট্রুয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক গবেষণা বলছে, পিরিয়ডের সময় ব্যবহার করার জন্য ভাসমান কিশোরীদের কাপড় সংগ্রহের উৎস হচ্ছে আবর্জনা। জনস্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এএসএম আমানুল্লাহ বলেন, “আমার ধারণা, তাদের শতভাগেরই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের সক্ষমতা নাই। তাদের সচেতনতাও নাই এটা ব্যবহার করলে ভালো হবে।”
বাংলাদেশ পথশিশুদের নিয়ে কর্মরত ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক-স্ক্যান এর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল বলেন, “পথকিশোরীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার সক্ষমতা নেই; টিকে থাকা নিয়েই তাদের হিমশিম খেতে হয়।”
ভোগান্তি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি: ফুলবাড়িয়া ফ্লাইওভারের নিচে দেখা হয় তানিয়ার সঙ্গে, তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। তবে বাবা-মা এখন কোথায়, তা জানা নেই মেয়েটির। কীভাবে সে ঢাকায় এসেছে, তাও ভালো করে মনে নেই। অন্য পথশিশুদের সঙ্গে সে রাতের বেলায় ফ্লাইওভারের নিচেই ঘুমায়। আর দিনের বেলা দল বেঁধে ভিক্ষা করে। ঋতুস্রাব শুরুর পর পেট ব্যথা শুরু হওয়ায় বাকিদের সঙ্গে ভিক্ষায় বের হয়নি সে। ফ্লাইওভারের ঘুমানোর জায়গা থেকে কিছুটা দূরে কাপড় সংগ্রহ করছিল এই কিশোরী। পিরিয়ডের সময় নানা রকমের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাশাপাশি জননাঙ্গের পাশে ঘা হওয়ার কথাও বলেছে সে। “কাপড় যখন ব্যবহার করি তখন অনেক চুলকায়। অনেক পেট ব্যথা করে, দিনদিন আরো বাড়তেছে। ওখানে কেন ঘা হইছে সেটাও জানি না। ডাক্তার দেখাইয়া যে ওষুধ কিনব সে টাকাও নাই, আর কোথায় যাব সেটাও জানি না।”
কমলাপুর রেললাইনের পাশে পড়ে থাকা বোতল আর পলিথিন টোকাতে দেখা গেল শারমিন আক্তারকে (ছদ্মনাম)। মেয়েটি বলেছে, বাবা-মায়ের খোঁজ জানা নেই তার। জানা নেই সে কীভাবে রাজধানীতে এসেছে।
এই রেললাইনেই শারমিনের দিন ও রাত কাটে। জীবনের প্রথম পিরিয়ডের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে শারমিন বলে, “একদিন দেখলাম অনেক রক্ত বের হচ্ছে। ভয় পেয়ে গেছিলাম, কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছিল না। কাপড়ের দাগ দেইখা এক মহিলা কইছে কাপড় আইন্যা ব্যবহার করতে।”
সে কাপড়ও শারমিন সংগ্রহ করেছিল কমলাপুর রেললাইনের পাশ থেকে। কিছুদিন আগেই তার পঞ্চমবারের মত ঋতুস্রাব হয, তখনও সে সেসব ময়লা কাপড় এনে ব্যবহার করেছে।
“আর কি করতাম? আমাগো পরার কাপড়ই টুকাইতে হয়।” কাপড়গুলো পরিষ্কার করা হয় কীভাবে? শারমিন বললো, “ব্যবহারের পর শুধু পানি দিয়ে ধুই এক-দুই বার। সেটাই পরে আবার ব্যবহার করি।
“একটু খারাপ লাগে, চুলকায়, অনেক সময় ব্যথা করে। টাকা-পয়সা নাই, ভালো কাপড়ও ব্যবহার করতে পারি না; ডাক্তার আমরা দেখাব কেমনে!”
কমলাপুর রেললাইনের পাশে মায়ের সঙ্গে থাকে সানিয়া (ছদ্মনাম)। জীবিকার জন্য সে টোকাইয়ের কাজ করে। মাসিকের সময়েও টোকানো কাপড়ই তার ভরসা। সানিয়া বলে, “কী করব কন! খাইয়া পইরা বাঁইচ্যা থাকার উপায় নাই, তাই এসব নিয়ে ভাবি না আমরা। এমনে চলতে পারলেই হয়।
“বোতলে বোতলে পানি আনি আমরা, অল্প অল্প পানি দিয়া ধুইতে হয়। মাঝেমধ্যে সাবান দিই। রাতে যখন আশপাশে মানুষ কম থাকে, তখন কাপড়গুলা ধুই। সবসময় কাপড়ও পাওয়া যায় না, তাই পুরানগুলাই ব্যবহার করতে হয়।”
গবেষণা যা বলছে: ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’র গবেষণায় ৮৮৩ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী, ৩৪২ জন বস্তিবাসী এবং ৪১১ জন পথকিশোরীর মাসিককালীন পরিস্থিতি উঠে এসেছি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋতুস্রাব নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকার ফলে তারা ক্যান্সার ও প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। গবেষণাটি বলছে, ৮৬ শতাংশ কিশোরী মাসিকের সময় কাপড় ব্যবহার করে, আর মাত্র ৩ শতাংশ কিশোরী এসময় প্যাড ব্যবহার করে। বাকি কিশোরীরা তুলা, টিস্যু, ট্যাম্পন ব্যবহার করছে। তাদের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ কিশোরী ৪ থেকে ৮ ঘণ্টা পরপর শোষণকারী উপকরণ বদলায়। অর্ধেকের কাছাকাছি দিনে মাত্র একবার সেটা বদলায়।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকলিজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, “ঋতুস্রাবের সময় কাপড় ব্যবহার করাটাই নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করে, আর সেটা যদি নোংরা হয় তাহলে মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। “বাইরে থেকে ইনফেকশন শুরু হয়। ভেতরেও ইনফেকশন হয়, জরায়ুর মুখে ইনফেকশন হয়। তলপেটে সারাক্ষণ ব্যথা হয়। মাসিকের সময়ে পেটের ব্যথাটা আরো বেড়ে যায়। সবসময় জ্বর জ্বর ভাব থাকে। পরবর্তীকালে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।” চিকিৎসা নিতে আসা পথকিশোরীদের মধ্যে এসব উপসর্গ দেখতে পাওয়ার কথা বলেছেন এই চিকিৎসক। রওশন আরা বলেন, “তারা তো জামাকাপড় ঠিক করে পরিষ্কার করতে পারে না, পথেঘাটে থাকে। পরিষ্কার করার উপকরণও নাই। এ কারণে এসব সমস্যা দেখা দেয়।”
করণীয় কী: পথকিশোরীরা জননাঙ্গের যেসব সমস্যায় ভুগছে তার থেকে পরিত্রাণের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিকল্প দেখছেন না ডা. রওশন আরা বেগম। তিনি বলেন, পথকিশোরীদের জন্য সমাজের অবস্থাসম্পন্ন ও সচেতন ব্যক্তিরা বিনামূল্যে কিছু স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের ব্যবস্থা করতে পারেন। “পরিষ্কার থাকতে হবে সবসময়, কিন্তু তাকে শুধু বললেই হবে না। তাকে তো সাবান দিতে হবে, পানি দিতে হবে, থাকার জায়গা দিতে হবে। এগুলোর ব্যবস্থা করা দরকার। তারপরও বলা, কিছু না পারুক অন্তত গরম পানিতে একটু লবণ দিয়ে জননাঙ্গটা পরিষ্কার রাখা যেতে পারে।” অধ্যাপক এএসএম আমানুল্লাহর পরামর্শ, পথকিশোরীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের জন্য ঢাকার সব ওয়ার্ডে সরকার এক বা দুটি করে ড্রপ-ইন-সেন্টার গড়ে তুলতে পারে। “সুবিধা দিলে তারা সেটা গ্রহণ করবে। সচেতনতামূলক কর্মসূচি করেও তাদেরকে এখানে আনা যায়, তাহলে সেখান থেকে তারা প্যাড পেতে পারে।” অধ্যাপক আমানুল্লাহ বলছেন, সরকার বড় বড় সংস্থাকে তাদের কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি বা সিএসআর-এর আওতায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করার জন্য আহ্বান করতে পারে। তার কথায়, “সরকার সংস্থাগুলোকে বলতে পারে পথকিশোরীদের এ সহায়তার জন্য অর্থায়ন করতে। একটা কৌশলপত্রও তৈরি করা জরুরি। উদ্যোগের অংশ হিসেবে পথকিশোরীদের সচেতনতার জন্য পথনাটক বা গানের আয়োজন করা যায়।”
স্ক্যানের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল বলেন, সরকারের আরবান হেলথ কেয়ার প্রোগ্রামের আওতায় এই পথকিশোরীদের সেবার মধ্যে নিয়ে আসার পাশাপাশি সরকার সচেতনতামূলক কাজ করতে পারে।
“লো কস্ট স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করতে পারে, তারা যেন সেটা কিনতে পারে।”
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক বলেন, “দ্রুতই তাদের জন্য মেশিন দিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন ফ্রিতে বিতরণের জন্য পরিকল্পনা আছে আমাদের। বিভিন্ন প্রাইভেট সেক্টরও আগ্রহী, তাদের পার্টনারশিপেও আমরা কাজটা করতে পারি।”
চাইল্ড সেনসিটিভ সোস্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ (সিএসপিবি) এবং সার্ভিসেস ফর দ্যা চিলড্রেন অ্যাট রিস্ক– এ দুটি শিশু সুরক্ষা প্রকল্পের অধীনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বেশ কিছু পথশিশুকে সামাজিক সুরক্ষা ও পরিবারে পুনঃএকত্রীকরণ করেছে। তবে পথ কিশোরীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে তাদের কোন প্রকল্প নেই। এ বিষয়ে কোন পরিকল্পনা নেওয়া হবে কী না জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, “এগুলো নিয়ে বেশকিছু সংস্থা কাজ করছে।”
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘এক রঙা এক ঘুড়ি’ ২০০৮ সাল থেকে ঢাকায় পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছে। তারা ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পথকিশোরীদের স্বল্প পরিসরে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ ও সচেতনতা বাড়াতে কাজ করেছে। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক নীল সাধু বলেন, “তারা এ ব্যাপারে একদমই সচেতন না। সচেতনতা বাড়াতে হবে, আর এ প্রোডাক্টগুলা যেন হাতের নাগালে থাকে, দাম যেন কম থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।”সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।