নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের মর্মন্তুত ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি। গত ২১ জুলাইয়ের ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৫ জন, আহত হয়েছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ দেড় শতাধিক মানুষ। এদের বেশির শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনার সময় ক্যাম্পাসটিতে যেসব শিক্ষাক- শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন, তারা এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মানসিক পুনর্বাসনে কাউন্সিলিং সেন্টার চালু করেছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। গত ২৩ জুলাই থেকে ক্যাম্পাসের তিনটি কক্ষে চালু করা হয়েছে পৃথক কাউন্সেলিং সেন্টার। এখানে প্রতিদিনই অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট, ব্র্যাকের প্রতিনিধি ও বিমানবাহিনীর মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা সেবা দিচ্ছেন। এই টিমে যুক্ত হয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি বিশেষজ্ঞ দলও।
শিশুদের মানসিক পুনর্বাসনে নিবিড় পর্যবেক্ষণ: ইংলিশ ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিনহাজুল ইসলামও এই কাউন্সেলিংয়ে অংশ নিয়েছে। তার চোখেমুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ। কাউন্সেলিং চলাকালে কক্ষে হঠাৎ কাউকে ঢুকতে দেখলে সে চমকে ওঠে। তার মা পারভীন আক্তার শিখা বলেন, ‘রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চমকে ওঠে মিনহাজ। বন্ধুবান্ধবের নাম ধরে ডাকে। চিকিৎসক বলেছেন ওকে টিভি, মোবাইল, কম্পিউটার থেকে দূরে রাখতে হবে। প্রতিদিন স্কুলের আশপাশে একবার হলেও ঘোরাতে হবে তাহলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে।’
আরেক অভিভাবক মিতালি আক্তার জানান, ‘এখানে এসে আমাদের উপকার হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকে যে আতঙ্ক কাজ করছিল, সেটা কিছুটা কেটেছে। এখন ছেলেমেয়েদেরও সাহস জোগাবো— যাতে তারা ভয় না পায়।’
ধাপে ধাপে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি: প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক খাদিজা আক্তার জানান, ‘আমরা কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শারীরিক পরীক্ষাও করছি। বিশেষ করে যেসব শিক্ষার্থী এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রথম ধাপে আগামী ৩ আগস্ট কলেজ শাখার ক্লাস চালু করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে স্কুল শাখাও চালু করা হবে। তবে স্কুলের শিক্ষার্থীরা যেন দুর্ঘটনার দৃশ্য দেখতে না হয়, সেজন্য ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো দ্রুত সংস্কারের কাজ চলছে। আমরা চাচ্ছি— শিশুরা ফিরে আসুক একটি নতুন পরিবেশে।’
শিক্ষকদের ভূমিকাও প্রশংসনীয়: প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীরা দিনরাত কাজ করে ক্যাম্পাসকে আবারও শিক্ষার পরিবেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে সেখানে সংস্কার কাজ চলছে। কাউন্সেলিং কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. শাহপরানেওয়াজ ইশা বলেন, ‘অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে আমরা তাদের ভয় কাটাতে ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি।’
মানসিক পুনর্বাসনই এখন মূল অগ্রাধিকার: দুর্ঘটনার ভয়াবহতা কেবল শারীরিক নয়, মানসিক প্রতিক্রিয়াও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সেই বিষয়টি উপলব্ধি করে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের মন থেকে ভয় দূর করে শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনা এখন সবার অগ্রাধিকার। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার ক্ষত কখনোই পুরোপুরি মুছে যাবে না, তবে মানবিক সহানুভূতি, চিকিৎসা ও সহযোগিতার মাধ্যমে নতুন করে উঠে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।