ঢাকা ০৫:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর আক্রমণ বিরাটভাবে বেড়েছে: মাহ্ফুজ আনাম

  • আপডেট সময় : ০৫:২৮:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

মঙ্গলবার দৈনিক প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাংবাদিকতা ক্রমেই চরম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর আক্রমণ বিরাটভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে দৈনিক প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানাতে এসে মাহ্ফুজ আনাম এসব কথা বলেন।

মাহ্ফুজ আনাম বলেন, আমার সবচেয়ে বড় অনুভূতি হচ্ছে সত্যিকার অর্থে সাংবাদিকতা একটা চরম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। পৃথিবীময় প্রযুক্তি, আদর্শ, বর্ণবাদ ও পপুলিজম-এ সবকিছুর ভেতরে সাংবাদিকেরা এখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। এ সবকিছুর মধ্যে আমরা বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা এবং সাংবাদিকতা ও প্রথম আলোর মতন একটা সুপ্রসিদ্ধ-সুপ্রতিষ্ঠিত কাগজের জন্যে একটা মহাচ্যালেঞ্জ সামনে আসছে।

সাংবাদিকেরা সাধারণত সরকারে নিপীড়নের শিকার হন উল্লেখ করে মাহ্ফুজ আলম আনাম বলেন, আমরা সাংবাদিকেরা সাধারণত সরকারের নিপীড়নের শিকার হই। কারণ, আমাদের মানসিকতা থাকে জনগণের কথা বলা, নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ও মানবাধিকারের পক্ষে থাকা। কিন্তু সরকার সমালোচনা পছন্দ করে না, তারা প্রশংসা চায়। তাই স্বাধীন সাংবাদিকতা সব সময়ই সরকারের চাপের মুখে পড়ে।

পৃথিবীময় সাংবাদিকতা বিভিন্ন দেশের সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধেই সংগ্রাম করে প্রস্তুত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মাহ্ফুজ আনাম। তিনি বলেন, বর্তমানে স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপরে আক্রমণটা বিরাট আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাংবাদিকতার ওপর নতুন ধরনের নিপীড়ন আসছে। আমি মনে করি সংবাদপ্রবাহের মাধ্যমেই সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় হুমকি আসছে।

মাহ্ফুজ আনাম ব্যাখ্যা করে বলেন, আগে সংবাদ মানুষের কাছে পৌঁছাতো সংবাদপত্র, রেডিও বা টেলিভিশনের মতো প্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যমে। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সংবাদপ্রবাহে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এতে ইতিবাচক দিক যেমন আছে, তেমনি নেতিবাচক দিকও আছে। সোশ্যাল মিডিয়া সংবাদপ্রবাহকে গণতান্ত্রিক করেছে-এখন সবাই নিজে নিজে তথ্য প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু এর ফলে অসংখ্য মিথ্যা ও ঘৃণামূলক খবরও ছড়িয়ে পড়ছে, যা সত্যিকারের সাংবাদিকতার জন্য ভয়াবহ হুমকি।

মাহফুজ আনাম আরো বলেন, বাংলাদেশে এখন অনেক সময় দেখা যায়-কোনো ভিত্তিহীন, তথ্যহীন, সম্পূর্ণ মনগড়া খবর ভাইরাল হচ্ছে, আর মানুষ তা বিশ্বাস করছে। এটা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বব্যাপী এক বড় সংকট। তিনি সতর্ক করে বলেন, আগে সাংবাদিকতার ওপর হুমকি আসত সরকারের দিক থেকে, এখন আসছে সংবাদপ্রবাহের দিক থেকে-বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার থেকে।

ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্যের বন্যা বইছে। অথচ পাঠকেরা এখনো সত্য জানতে প্রথম আলো কিংবা অন্যান্য দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের কাছেই ফিরে আসে। তাই সাংবাদিকদের অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠতা, সততা ও জনসেবার নীতিতে অটল থাকতে হবে।

সম্পাদক পরিষদের এই সভাপতি আরো বলেন, বর্তমানে প্রিন্ট মিডিয়ার আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিজ্ঞাপনের প্রায় ৮০ শতাংশ রাজস্ব চলে যাচ্ছে ফেসবুক ও গুগলের হাতে। এই বাস্তবতায় সাংবাদিকদের এখন মাল্টিপ্ল্যাটফর্ম সাংবাদিকতায় দক্ষ হতে হবে-অর্থাৎ টেক্সট, ভিডিও ও ডিজিটাল কনটেন্ট-সব মাধ্যমেই কাজ করতে জানতে হবে।

শেষে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, সাংবাদিকতার এই রূপান্তরের সময় আমাদের সত্যভিত্তিক, মূল্যবোধনির্ভর সাংবাদিকতার অবস্থান আরো শক্ত করতে হবে। মিথ্যা ও ঘৃণামূলক খবর জনপ্রিয় হতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে সত্য ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতাই। সূত্র: প্রআ অনলাইন।

সানা/আপ্র/০৪/১১/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪ জনের মৃত্যু, নতুন ভর্তি ১১০১

স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর আক্রমণ বিরাটভাবে বেড়েছে: মাহ্ফুজ আনাম

আপডেট সময় : ০৫:২৮:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাংবাদিকতা ক্রমেই চরম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর আক্রমণ বিরাটভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে দৈনিক প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানাতে এসে মাহ্ফুজ আনাম এসব কথা বলেন।

মাহ্ফুজ আনাম বলেন, আমার সবচেয়ে বড় অনুভূতি হচ্ছে সত্যিকার অর্থে সাংবাদিকতা একটা চরম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। পৃথিবীময় প্রযুক্তি, আদর্শ, বর্ণবাদ ও পপুলিজম-এ সবকিছুর ভেতরে সাংবাদিকেরা এখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। এ সবকিছুর মধ্যে আমরা বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা এবং সাংবাদিকতা ও প্রথম আলোর মতন একটা সুপ্রসিদ্ধ-সুপ্রতিষ্ঠিত কাগজের জন্যে একটা মহাচ্যালেঞ্জ সামনে আসছে।

সাংবাদিকেরা সাধারণত সরকারে নিপীড়নের শিকার হন উল্লেখ করে মাহ্ফুজ আলম আনাম বলেন, আমরা সাংবাদিকেরা সাধারণত সরকারের নিপীড়নের শিকার হই। কারণ, আমাদের মানসিকতা থাকে জনগণের কথা বলা, নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ও মানবাধিকারের পক্ষে থাকা। কিন্তু সরকার সমালোচনা পছন্দ করে না, তারা প্রশংসা চায়। তাই স্বাধীন সাংবাদিকতা সব সময়ই সরকারের চাপের মুখে পড়ে।

পৃথিবীময় সাংবাদিকতা বিভিন্ন দেশের সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধেই সংগ্রাম করে প্রস্তুত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মাহ্ফুজ আনাম। তিনি বলেন, বর্তমানে স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপরে আক্রমণটা বিরাট আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাংবাদিকতার ওপর নতুন ধরনের নিপীড়ন আসছে। আমি মনে করি সংবাদপ্রবাহের মাধ্যমেই সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় হুমকি আসছে।

মাহ্ফুজ আনাম ব্যাখ্যা করে বলেন, আগে সংবাদ মানুষের কাছে পৌঁছাতো সংবাদপত্র, রেডিও বা টেলিভিশনের মতো প্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যমে। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সংবাদপ্রবাহে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এতে ইতিবাচক দিক যেমন আছে, তেমনি নেতিবাচক দিকও আছে। সোশ্যাল মিডিয়া সংবাদপ্রবাহকে গণতান্ত্রিক করেছে-এখন সবাই নিজে নিজে তথ্য প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু এর ফলে অসংখ্য মিথ্যা ও ঘৃণামূলক খবরও ছড়িয়ে পড়ছে, যা সত্যিকারের সাংবাদিকতার জন্য ভয়াবহ হুমকি।

মাহফুজ আনাম আরো বলেন, বাংলাদেশে এখন অনেক সময় দেখা যায়-কোনো ভিত্তিহীন, তথ্যহীন, সম্পূর্ণ মনগড়া খবর ভাইরাল হচ্ছে, আর মানুষ তা বিশ্বাস করছে। এটা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বব্যাপী এক বড় সংকট। তিনি সতর্ক করে বলেন, আগে সাংবাদিকতার ওপর হুমকি আসত সরকারের দিক থেকে, এখন আসছে সংবাদপ্রবাহের দিক থেকে-বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার থেকে।

ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্যের বন্যা বইছে। অথচ পাঠকেরা এখনো সত্য জানতে প্রথম আলো কিংবা অন্যান্য দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের কাছেই ফিরে আসে। তাই সাংবাদিকদের অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠতা, সততা ও জনসেবার নীতিতে অটল থাকতে হবে।

সম্পাদক পরিষদের এই সভাপতি আরো বলেন, বর্তমানে প্রিন্ট মিডিয়ার আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিজ্ঞাপনের প্রায় ৮০ শতাংশ রাজস্ব চলে যাচ্ছে ফেসবুক ও গুগলের হাতে। এই বাস্তবতায় সাংবাদিকদের এখন মাল্টিপ্ল্যাটফর্ম সাংবাদিকতায় দক্ষ হতে হবে-অর্থাৎ টেক্সট, ভিডিও ও ডিজিটাল কনটেন্ট-সব মাধ্যমেই কাজ করতে জানতে হবে।

শেষে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, সাংবাদিকতার এই রূপান্তরের সময় আমাদের সত্যভিত্তিক, মূল্যবোধনির্ভর সাংবাদিকতার অবস্থান আরো শক্ত করতে হবে। মিথ্যা ও ঘৃণামূলক খবর জনপ্রিয় হতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে সত্য ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতাই। সূত্র: প্রআ অনলাইন।

সানা/আপ্র/০৪/১১/২০২৫