নিজস্ব প্রতিবেদক: সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার জন্য বর্তমানে সচল ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল’ এবং সম্প্রচারমাধ্যম ও অনলাইনের জন্য বিগত সরকারের প্রস্তাবিত ‘সম্প্রচার কমিশন’-এর সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন’ গঠন করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।
শনিবার (২২ মার্চ) বেলা ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই কমিশনের রিপোর্ট হস্তান্তর করা হয়।
প্রতিবেদনে গণমাধ্যমের জন্য ২০টি মূল সুপারিশ করা হয়েছে। তারমধ্যে ‘বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন’ গঠনের সুপারিশ একটি। এই প্রস্তাবনায় বলা হয়, এই প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণমাধ্যমের স্বনিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠান কার্যকর ভূমিকা রাখছে, তার অভিজ্ঞতার আলোকেই এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার।
প্রস্তাবনায় প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি যাতে করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেজন্য আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে হবে। সরকারি অর্থের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার অর্থই হচ্ছে কোনো না কোনোভাবে সরকার কর্তৃক প্রভাবিত হওয়া। সেজন্যে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তাদের আয় থেকে নির্ধারিত হারে চাঁদা নির্ধারণের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ের সংস্থান করা যেতে পারে।
উদাহরণ তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের প্রেস কাউন্সিল প্রতিটি সংবাদপত্রের ওপর আনুপাতিক হারে লেভি আদায় করে থাকে। তারা সরকারের অনুদানও গ্রহণ করে। ইন্দোনেশিয়ায়ও মিডিয়া কাউন্সিল সরকারের সহায়তা গ্রহণ করে, তবে তা নিঃশর্ত হতে হয়। বাংলাদেশেও প্রস্তাবিত গণমাধ্যম কমিশনে সরকারি সহায়তা নেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত, তবে তা হতে হবে নিঃশর্ত অনুদান।
‘বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন’ যেসব দায়িত্ব প্রস্তাব করা হয়েছে-
১. প্রকাশক ও সম্পাদকের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা নির্ধারণ যাতে ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত এবং ঋণখেলাপিরা গণমাধ্যমে মালিক বা সম্পাদক না হতে পারে।
২. সাংবাদিকতার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ
৩. সারা দেশে কর্মরত সাংবাদিকরা গণমাধ্যম কমিশনে নিবন্ধিত হবেন এবং কমিশন তাদের একটি তালিকা সংরক্ষণ করবে।
৪. সাংবাদিকদের জন্য একটি আচরণবিধি (কোড অব কন্ডাক্ট) প্রণয়ন করবে ও তার প্রতিপালন নিশ্চিত করবে।
৫. সম্প্রচার মাধ্যম (টিভি ও রেডিও) এবং অনলাইন পোর্টালের লাইসেন্স প্রদানের সুপারিশ ও তার শর্ত প্রতিপালন নিশ্চিত করবে।
৬. ভুল বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠীর অভিযোগের প্রতিকার। এটি সম্ভব হলে সংবাদমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হবে এবং গণমাধ্যম মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হবে।
‘সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইন’-এর খসড়া প্রস্তাব: গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন বিশ্বের উত্তম চর্চার কয়েকটি দৃষ্টান্তের আলোকে ‘সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইন’-এর একটি খসড়া অধ্যাদেশ আকারে এই প্রতিবেদনে সংযুক্ত করেছে। এই খসড়া দ্রুতই এটি জারি করার ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করেছে সংস্কার কমিশন।
এ ছাড়াও গত ১৫ বছরে বিভিন্ন আইনের অপপ্রয়োগের ঘটনাগুলো সম্পর্কে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ সমীচীন বলে মনে করছে। এর মধ্যে আছে-
ক. দণ্ডবিধি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইন এবং আদালত অবমাননা আইনসহ প্রযোজ্য বিভিন্ন আইনের অধীনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো চিহ্নিত ও পর্যালোচনা করতে হবে। পর্যালোচনার পর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কৌঁসুলি কর্তৃক মামলা প্রত্যাহার অথবা পুলিশ কর্তৃক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
খ. পর্যালোচনা সাপেক্ষে মিথ্যা মামলার প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ও ন্যায়সংগত পদক্ষেপ নিতে হবে।
গ. ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
ঘ. ক্ষতিগ্রস্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
ঙ. সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও জীবনে বেআইনি অনুপ্রবেশ, নজরদারি ও আড়িপাতার ঘটনাগুলো তদন্ত করে দোষীদের শান্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য আইন সংস্কার: সুপারিশে বলা হয়, স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য আইনের সংস্কারের প্রয়োজন আছে। কমিশন মনে করে, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের সংশোধন প্রয়োজন যাতে, বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় জাতীয় নিরাপত্তা ও বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে যুক্তিসংগত বিধিনিষেধের বিষয়টি শুধু যুদ্ধাবস্থায় প্রযোজ্য হবে। সাংবাদিকতার স্বাধীনতার বিষয়ে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সংবিধানে আলাদা ও সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। যেমন- সুইজারল্যান্ডের সংবিধানে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ও সূত্রের গোপনীয়তা রক্ষা এবং সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন না করার অধিকার নিশ্চিত করেছে। সুইডেনের সংবিধানেও ফ্রিডম অব প্রেসের অনুরূপ গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। আমাদের সংবিধানেও সুইজারল্যান্ডের সংবিধানের মতো সাংবাদিকতার স্বাধীনতার গ্যারান্টির প্রশ্নটি সুনির্দিষ্টভাবে ও বিশদে লিপিবদ্ধ করা সমীচীন।
ফৌজদারি মানহানির আইন সংশোধন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ফৌজদারি মানহানির সব আইন, যেমন- ১৮৬০ সালের বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৯৯, ৫০০, ৫০১ এবং ৫০২ ধারা এবং ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারা বাতিল করা উচিত। সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের মানহানি সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রস্তাবিত গণমাধ্যম কমিশনের ওপর প্রদান করার ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ সালের ৯৯ (ক) এবং ৯৯ (খ) ধারায় সরকারকে সংবাদপত্র বাজেয়াপ্ত করার যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদের (আইসিসিপিআর) পরিপন্থি। সুতরাং তা বাতিল করা উচিত বলে মনে করে কমিশন।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের যেসব বিধান নিয়ে সাংবাদিক, অধিকারকর্মী ও আইন বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের উদ্বেগ রয়েছে, তা নিরসন করতে হবে বলা হয়েছে।
অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ -এর ৫ ধারা সংশোধন করে কেবল জাতীয় নিরাপত্তার ওপর জোর দেওয়া উচিত এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য জনস্বার্থের প্রশ্নে আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা সংযোজন করা উচিত বলে মনে করে কমিশন।
আদালত অবমাননা আইনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এর ১৪ অনুচ্ছেদের অধীনে ন্যায়বিচারের অধিকার এবং নির্দোষিতার স্বীকৃতি রক্ষার জন্য ১৯২৬ সালের আদালত অবমাননা আইন পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
২০১৩ সালের আদালত অবমাননা আইন (যা ১৯২৬ সালের আদালত অবমাননা আইন বাতিল করেছিল এবং ‘আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা’ অপরাধ পুনরায় প্রবর্তন করেছিল) বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকা ২০২৩ সালের ১২৩৪ নং দেওয়ানি আপিলের দ্রুত শুনানির জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ২৯৫ক এবং ২৯৮ ধারা এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারা বাতিল করা উচিত বলে সুপারিশ করেছে কমিশন।
একটি প্রতিষ্ঠান একটি গণমাধ্যমের মালিক হতে পারবে: গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের কমিশনের বেশ কিছু প্রস্তাবের কথা জানিয়ে কামাল আহমেদ বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান একটি গণমাধ্যমের মালিক হতে পারবে- এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাসসকে জাতীয় সম্প্রচার সংস্থার সাথে একীভূত করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
কামাল আহমেদ বলেন, এক প্রতিষ্ঠান একটিমাত্র গণমাধ্যমের মালিক হতে পারবেন এমন প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। ওয়ান হাউস ওয়ান মিডিয়ার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারকে স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। দুটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা তৈরি করতে হবে। এই সংস্থাকে স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, বিসিএস ক্যাডারদের এন্ট্রি ৯ম গ্রেডের যে বেতন, সাংবাদিকতা শুরুর বেতন তার সঙ্গে মিল রেখে যেন করা হয় প্রতিবেদনে সেই সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটা সারা দেশেই নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া ঢাকায় এর পাশাপাশি ‘ঢাকা ভাতা’ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সাংবাদিকতা করতে হলে ন্যূনতম স্নাতক পাসের যোগ্যতা থাকতে হবে। প্রথমে ‘শিক্ষানবিশ সাংবাদিক’ হিসেবে কাজ করতে হবে। শিক্ষানবিশ হিসেবে এক বছর কাজ করতে হবে। এরপর প্রমোশন পাবে।
কমিশন প্রধান বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইন তৈরির সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সেই আইনের খসড়াও তৈরি করে দেয়া হয়েছে। সরকারের হিসাবে ৬০০ পত্রিকা রয়েছে যারা সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়ার যোগ্যতা রাখে, কিন্তু বাস্তবে প্রকাশিত বিক্রিত পত্রিকার সংখ্যা মাত্র ৫২টি। প্রতারণা করে সরকারি বিজ্ঞাপন হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
কামাল আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমে কালো টাকা ঢুকেছে। রাজনৈতিক পরিচয় ও অন্ধকারে রেখেই গণমাধ্যমের মালিকানা দেওয়া হয়েছে। সব কয়টি টেলিভিশনের আবেদনে দেখা গেছে জনস্বার্থ কোনোটিতেই ছিল না। সবগুলোই রাজনৈতিক পরিচয়ে দেওয়া হয়েছে।
আর্থিক নিরাপত্তা ও আইনের বিষয়ে সুপারিশ: সাংবাদিকতা পেশায় বেতন-ভাতা ক্রমেই কমছে বা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তাসহ সার্বিক সংস্কারের জন্য বর্তমান সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করে বর্তমান সরকার। সংস্কার কমিশন বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা দিয়েছে সরকারকে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণমাধ্যমের সংখ্যাধিক্য ও দেশের ক্রমবর্ধমান শিক্ষিত বেকারত্বের পটভূমিতে সাংবাদিকতা পেশায় বেতন-ভাতা ক্রমেই কমছে বা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের প্রবণতা বাড়ছে, যেখানে প্রাপ্য বিভিন্ন ভাতা বাদ পড়ছে এবং চাকরির স্থায়িত্ব অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। অথচ জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা ছাড়া সাংবাদিকতায় আপসকামিতা ও দুর্নীতির ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, যা বস্তুনিষ্ঠ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি।
সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও শ্রম আইন সম্পর্কে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে-
১. কোনো গণমাধ্যম নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয়পত্র ছাড়া এবং বিনা বেতনে কোনো সাংবাদিককে অস্থায়ী, স্থায়ী কিংবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করতে পারবে না।
২. সাংবাদিকদের শিক্ষানবিশ চাকরির মেয়াদ এক বছরের অধিক হবে না। এক্ষেত্রে তাকে সম্মানজনক শিক্ষানবিশ ভাতা প্রধান করতে হবে।
৩. সারা দেশের সাংবাদিকদের স্থায়ী চাকরির শুরুতে একটি অভিন্ন ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করা প্রয়োজন। যা হবে সরকারি প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মূল বেতনের সমান। ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় অত্যধিক বেশি হওয়ার দরুন ঢাকায় নিয়োজিত সাংবাদিকরা মূল বেতনের সঙ্গে ঢাকা ভাতা (অ্যালাউন্স) প্রাপ্য হবেন। তিন বছর সংবাদদাতা (রিটেইনার) হিসেবে কাজ করার পর ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরা নিজস্ব প্রতিবেদক (স্টাফ করেসপনডেন্ট) হিসেবে পদোন্নতি লাভ করবেন। ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা ও মর্যাদার এই বৈষম্য দূর করার প্রয়োজনীয়তার কথা প্রথম প্রেস কমিশন রিপোর্টেও বলা আছে।
৪. মূল বেতনের বাইরে সাংবাদিকরা বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, মূল বেতনের সমপরিমাণ উৎসব ভাতা, ঝুঁকি ভাতা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), ফোন বিল, ইন্টারনেট বিল, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অবসর ভাতা কিংবা গ্র্যাচুইটি প্রাপ্য হবেন।
৫. প্রতিবছরের শুরুতে পূর্ব বছরের গড় মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাংবাদিকদের বেতন বৃদ্ধি হবে। অন্যান্য ভাতার ক্ষেত্রেও অন্তত দুই বছর পরপর মূল্যস্ফীতি সামঞ্জস্য করে পুনর্নির্ধারণ করতে হবে।
৬. ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের জন্য আলাদা একটি নিয়োগ বিধি এবং একটি ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ বিনা পারিশ্রমিকে কাউকে কাজ করানো যাবে না।
৭. কোনো গণমাধ্যমে সাংবাদিককে সার্কুলেশন তদারকি এবং বিজ্ঞাপন সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত করা যাবে না।
৮. কর্মক্ষেত্রে সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত করার জন্য নিউজপেপার এমপ্লয়িজ (কন্ডিশনস অব সার্ভিসেস অ্যাক্ট) ১৯৭৩ এবং শ্রম আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৯. গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান আলোকচিত্রী/ভিডিও সাংবাদিকদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করবে।
১০. গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান সব সাংবাদিকের প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিরাপত্তাসামগ্রী ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করবে। পেশাগত কারণে যে কোনো মামলা-মোকদ্দমা নিরসনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের আইনি সহায়তা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হবে।
১১. গণমাধ্যমের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা (সাংবাদিক নন) বর্তমানে যে হারে বেতন-ভাতা প্রাপ্ত হন, তা সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সঙ্গে সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের অন্য সদস্য- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, দ্য ফিন্যানসিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধি শামসুল হক জাহিদ, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন ওনার্স (অ্যাটকো) প্রতিনিধি অঞ্জন চৌধুরী, নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সচিব আখতার হোসেন খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক উপ মহাপরিচালক কামরুন নেসা হাসান, মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক সাংবাদিক জিমি আমির, ডেইলি স্টারের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি মোস্তফা সবুজ, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর টিটু দত্ত গুপ্ত এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন।