ডা. এটিএম সুলাইমান কবীর
মানবদেহের অতিগুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, কিডনি ফুসফুস ও যকৃৎ। তার মধ্যে এক জোড়া কিডনি হচ্ছে অন্যতম প্রধান রেচন অঙ্গ। খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের ফলে শরীরের বিভিন্ন বিপাকীয় প্রক্রিয়া উৎপন্ন নাইট্রো জেনাস বর্জ্য পদার্থ মূত্র তৈরির মাধ্যমে নিষ্কাশন করা, শরীরে পানি ও লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা এবং অমø ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করা কিডনির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
সম্পূর্ণরূপে কর্মক্ষম কিডনি কোনো কারণে হঠাৎ করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে অল্প সময়ের জন্য কাজ বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থাকে বলা হয় স্বল্পমেয়াদি কিডনি বিকল বলে। এ অবস্থা সাধারণত সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
বিকলের কারণ: কিডনিতে রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়া, পানিস্বল্পতা, অতিরিক্ত বমি ও পাতলা পায়খানা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, হার্ট ফেইলিউর, লিভার ফেইলিউর ইত্যাদি। কিডনির নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। ইনফেকশন, কিছু ওষুধের জন্য যেমন- ব্যথানাশক ওষুধ। অটোইমিউন ডিজিজ, গ্লুমেরিওল নেফ্রাইটিস, মূত্রপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে, কিডনিতে পাথর হলে, প্রস্টেট বড় হলে, মূত্র সংবহনতন্ত্রে কোনো টিউমার হলে বা রক্ত জমে গেলে কিডনি বিকল হতে পারে।
লক্ষণ: প্রস্রাব কমে যাওয়া বা বন্ধ হওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, শরীর ফুলে যাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা, ক্ষুধামান্দ্য, বমি ভাব ও হেঁচকি ওঠা। রক্তচাপ কমে যাওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, জ্বর হওয়া ইত্যাদি।
পরীক্ষা: রক্তের সিবিসি পরীক্ষা করা; প্রস্রাব পরীক্ষা করা; রক্তের ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা; লবণ পরীক্ষা করা, সনোগ্রাফি করা এবং রক্তের জিএফআর নির্ণয় করা।
চিকিৎসা: এ রোগের চিকিৎসা বিভিন্ন রোগের কারণ, লক্ষণ আর ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন রোগীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়। শিগগিরই সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী যেমন পূর্ণ সুস্থতা অর্জন করতে পারে, ঠিক তেমনি বিনা চিকিৎসার ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে মূল চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে বমি, পাতলা পায়খানা বন্ধ করা, পানিস্বল্পতা পূরণ করা (খাবার স্যালাইন আইভি ফ্লুইড), রক্তের ইনফেকশন হলে বিশেষ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে রক্ত দেওয়া, কিডনিতে পাথর, টিউমার ও প্রোস্টেট বেশি বড় হলে কিডনি সার্জনের পরামর্শ নেওয়া।
কোনো কোনো কারণে সঠিক চিকিৎসার পরও সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না। তখন দীর্ঘমেয়াদি বিকল হয়ে যায়। সাধারণত ৩ মাস পরে এই অবস্থান বোঝা যায়। এক্ষেত্রে করণীয় হলো- খাদ্য ও পানীয় নিয়ন্ত্রণ করা, ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা, ডায়ালাইসিস করে যাওয়া। যদি রোগের লক্ষণ বাড়তে থাকে, রক্তের ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিন বাড়ায় শ্বাসকষ্ট, মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দেয়, রক্তে পটাসিয়াম অতিরিক্ত বেশি হয়, তখন রোগীর ডায়ালাইসিস দরকার হয়। কিডনি ঠিক হতে সাধারণত এক থেকে বারো সপ্তাহ সময় লাগে। এ সময় প্রয়োজন অনুসারে ডায়ালাইসিস করা হয়।
প্রতিরোধের উপায়: প্রতিদিন প্রায় ২-৩ লিটার পানি পান করা; চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়া; বমি, পাতলা পায়খানা হলে খাবার স্যালাইন খাওয়া ও দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। স্বল্পময়াদি কিডনি বিকল যদিও মারাত্মক সমস্যা, তবুও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা ও দ্রুত সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
লেখক: কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ