ঢাকা ১১:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
মাইলস্ট্রোন ট্র্যাজেডি

স্বজনদের গগনবিদারী আহাজারি

  • আপডেট সময় : ০৯:৩৮:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে

নাতনিকে হারিয়ে আহাজারি করছেন মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন - বিডিনিউজ থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ২০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে প্রায় সবাই শিশু শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে গোটা জাতি। স্বজনদের গগনবিদারী আহাজারিতে ভারী হয়েছে বাতাস।

আমার কলিজারে আজরাইলে নিছে: নিহতদের মধ্যে নাহিদ হাসান নামের একজন রয়েছে। নিজের নাতনিকে হারিয়ে আহাজারি করছেন মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমার প্রিয় নাতনি নাহিদ হাসান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ত। বাসা থেকে হেঁটে আসতে ৫/৭ মিনিট লাগে। আমার কলিজার টুকরা নাই। না করছি, বড় স্কুল কলেজে পড়াইস না। আজরাইলে নিছেরে, আমার কলিজারে আজরাইলে নিছে।
সোমবার (২১ জুলাই) জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে রাস্তায় বসে এভাবেই আহাজারি করেন মোসলেম উদ্দিন। এর আগে দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল বলে জানা গেছে। যাদের বেশিরভাগই হতাহত হয়েছে। দুর্ঘটনার পরপর উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। উত্তরাসহ আশপাশের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের উদ্ধার করা শুরু করে। পরে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় বিজিবি ও সেনাবাহিনী। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।

মিস আমার বাচ্চা কই: একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স ছুটে চলছে সাইরেন বাজিয়ে, সেগুলোকে পাহারা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সামরিক যান। বাশি ফুঁয়ে ভিড় সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এর মাঝেই এক নারী চিৎকার করতে করতে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। ফোনের ওপাশে ব্যক্তিকে কাঁদতে কাঁদতে বার বার জিজ্ঞেস করছেন ‘মিস আমার বাচ্চা কই’।
ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই দগ্ধ বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সন্তানের খোঁজে অভিভাবক ও স্বজনরা ছুটে আসেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে। মোবাইল ফোনে শিক্ষকের কাছে সন্তানের খোঁজ করা ওই নারী তাদেরই একজন। তিনি যখন চিৎকার করে কাঁদছিলেন তখন স্কুল ফটকে জড়ো হওয়া স্থানীয়রা তার সন্তানের এবং ক্লাসের নাম জানতে চান। তিনি বলেছেন তার ছেলের নাম সাজ্জাদ সাদী, ছেলেটি দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সেখানে উপস্থিত একজন এই অভিভাবককে আশ্বস্ত করে বলেন, আপা একদম চিন্তা করবেন না। ক্লাস টেনের বাচ্চাদের কিছুই হয়নি। আমরা ভেতরে গিয়েছিলাম। ক্লাস ফোর আর ক্লাস ফাইভের বাচ্চারাই মূলত বেশি হতাহত হয়েছে। ওই অভিভাবক বলেন, আমার ছেলের প্রিটেস্ট পরীক্ষা চলছে। ওর কাছে ফোন নেই, এতটা সময় হয়ে গেল কিন্তু ও কোনো খবরও দেয়নি। আমি কোনোরকমে এসেছি। ওর ক্লাস টিচারকে ফোন করেছি তিনি কিছু জানেন না। ওর মিসরাও কোন খবর দিতে পারেননি। সাদীর মায়ের মত তানিয়া আহমেদ নামের আরো এক অভিভাবক বলেছেন তার মেয়ে রাইসা আহমেদ উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী। তার খোঁজ তিনি পাচ্ছেন না।

আল্লাহ আমার সন্তানরে ফিরাইয়া দেও: ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের চিকিৎসা চলছে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।

সেখানকার জরুরি বিভাগে চিকিৎসা চলছে ১১ বছর বয়সী চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিদ হাসান আরিয়ান, সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া শায়ান, তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া জুনায়েদ হাসানসহ আরো বহু শিক্ষার্থীর। জরুরি বিভাগের বাইরে অপেক্ষায় আছেন এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। যাদের আহাজারিতে ভারি ওঠে সেখানকার পরিবেশ। ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন এখন পর্যন্ত ৬০ জনকে জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে। সারা শরীর পুড়ে যাওয়া ১১ বছর বয়সী আরিয়ানের যখন জরুরি বিভাগের ভেতরে চিকিৎসা চলছিল, বাইরে বসে তার মা মনিকা আক্তার আঁখি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আল্লাহ আমার সন্তানরে আমার কাছে ফিরাইয়া দেও। সকাল পৌনে আটটায় স্কুলে গেছে। দেড়টায় ছুটি হওয়ার কথা ছিল, এরপর দেড়টা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত কোচিং। সকালে ছেলেরে খাবার দিয়া দিছি, এরমধ্যে এই ঘটনা ঘটল।

স্কুলের কাছেই তাদের বাসা, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছেলের খোঁজে স্কুলে ছুটে যান বলে জানিয়েছেন আঁখি; এরপর গিয়ে ওই মা ছেলেকে দগ্ধ অবস্থায় পান। সেখান থেকে তাকে প্রথমে বাংলাদেশ মেডিকেলে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতাল থেকে আরিয়ানকে বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। সপ্তম শ্রেণির শায়ানের শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ফুপু রুবিনা আক্তার। উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের এই বাসিন্দা বলেন, সকাল বেলা সুস্থ ছেলেটা বাসা থেকে বের হইল, আর এখন হাসপাতালে। তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া জুনায়েদ হাসানের মা ঝর্না আক্তারও জরুরি বিভাগের সামনে কাঁদছিলেন। নয়া নগরের এই বাসিন্দা জানিয়েছেন, তার ছেলেকে আইসিউতে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আর একটু পরেই ছুটি হইলে ছেলে বাসায় চলে যেত। আর এখন ছেলে আমার আইসিইউতে। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইয়ুম খান বলেন, জুনিয়রদের শিফটটা সকাল থেকে শুরু হয়। ঘটনার সময় ক্লাসে ছিলাম। তারপর বিকট শব্দ শুনে দেখি আগুন, অবস্থা খারাপ। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। তারপর ফায়ার সার্ভিস আসে। এক আন্টি বলেন বাবা আমার মেয়েকে একটু ধরো, তার দুই হাত পুড়ে গেছে। পরে তাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মাইলস্ট্রোন ট্র্যাজেডি

স্বজনদের গগনবিদারী আহাজারি

আপডেট সময় : ০৯:৩৮:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ২০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে প্রায় সবাই শিশু শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে গোটা জাতি। স্বজনদের গগনবিদারী আহাজারিতে ভারী হয়েছে বাতাস।

আমার কলিজারে আজরাইলে নিছে: নিহতদের মধ্যে নাহিদ হাসান নামের একজন রয়েছে। নিজের নাতনিকে হারিয়ে আহাজারি করছেন মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমার প্রিয় নাতনি নাহিদ হাসান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ত। বাসা থেকে হেঁটে আসতে ৫/৭ মিনিট লাগে। আমার কলিজার টুকরা নাই। না করছি, বড় স্কুল কলেজে পড়াইস না। আজরাইলে নিছেরে, আমার কলিজারে আজরাইলে নিছে।
সোমবার (২১ জুলাই) জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে রাস্তায় বসে এভাবেই আহাজারি করেন মোসলেম উদ্দিন। এর আগে দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল বলে জানা গেছে। যাদের বেশিরভাগই হতাহত হয়েছে। দুর্ঘটনার পরপর উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। উত্তরাসহ আশপাশের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের উদ্ধার করা শুরু করে। পরে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় বিজিবি ও সেনাবাহিনী। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।

মিস আমার বাচ্চা কই: একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স ছুটে চলছে সাইরেন বাজিয়ে, সেগুলোকে পাহারা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সামরিক যান। বাশি ফুঁয়ে ভিড় সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এর মাঝেই এক নারী চিৎকার করতে করতে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। ফোনের ওপাশে ব্যক্তিকে কাঁদতে কাঁদতে বার বার জিজ্ঞেস করছেন ‘মিস আমার বাচ্চা কই’।
ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই দগ্ধ বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সন্তানের খোঁজে অভিভাবক ও স্বজনরা ছুটে আসেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে। মোবাইল ফোনে শিক্ষকের কাছে সন্তানের খোঁজ করা ওই নারী তাদেরই একজন। তিনি যখন চিৎকার করে কাঁদছিলেন তখন স্কুল ফটকে জড়ো হওয়া স্থানীয়রা তার সন্তানের এবং ক্লাসের নাম জানতে চান। তিনি বলেছেন তার ছেলের নাম সাজ্জাদ সাদী, ছেলেটি দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সেখানে উপস্থিত একজন এই অভিভাবককে আশ্বস্ত করে বলেন, আপা একদম চিন্তা করবেন না। ক্লাস টেনের বাচ্চাদের কিছুই হয়নি। আমরা ভেতরে গিয়েছিলাম। ক্লাস ফোর আর ক্লাস ফাইভের বাচ্চারাই মূলত বেশি হতাহত হয়েছে। ওই অভিভাবক বলেন, আমার ছেলের প্রিটেস্ট পরীক্ষা চলছে। ওর কাছে ফোন নেই, এতটা সময় হয়ে গেল কিন্তু ও কোনো খবরও দেয়নি। আমি কোনোরকমে এসেছি। ওর ক্লাস টিচারকে ফোন করেছি তিনি কিছু জানেন না। ওর মিসরাও কোন খবর দিতে পারেননি। সাদীর মায়ের মত তানিয়া আহমেদ নামের আরো এক অভিভাবক বলেছেন তার মেয়ে রাইসা আহমেদ উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী। তার খোঁজ তিনি পাচ্ছেন না।

আল্লাহ আমার সন্তানরে ফিরাইয়া দেও: ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের চিকিৎসা চলছে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।

সেখানকার জরুরি বিভাগে চিকিৎসা চলছে ১১ বছর বয়সী চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিদ হাসান আরিয়ান, সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া শায়ান, তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া জুনায়েদ হাসানসহ আরো বহু শিক্ষার্থীর। জরুরি বিভাগের বাইরে অপেক্ষায় আছেন এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। যাদের আহাজারিতে ভারি ওঠে সেখানকার পরিবেশ। ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন এখন পর্যন্ত ৬০ জনকে জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে। সারা শরীর পুড়ে যাওয়া ১১ বছর বয়সী আরিয়ানের যখন জরুরি বিভাগের ভেতরে চিকিৎসা চলছিল, বাইরে বসে তার মা মনিকা আক্তার আঁখি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আল্লাহ আমার সন্তানরে আমার কাছে ফিরাইয়া দেও। সকাল পৌনে আটটায় স্কুলে গেছে। দেড়টায় ছুটি হওয়ার কথা ছিল, এরপর দেড়টা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত কোচিং। সকালে ছেলেরে খাবার দিয়া দিছি, এরমধ্যে এই ঘটনা ঘটল।

স্কুলের কাছেই তাদের বাসা, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছেলের খোঁজে স্কুলে ছুটে যান বলে জানিয়েছেন আঁখি; এরপর গিয়ে ওই মা ছেলেকে দগ্ধ অবস্থায় পান। সেখান থেকে তাকে প্রথমে বাংলাদেশ মেডিকেলে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতাল থেকে আরিয়ানকে বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। সপ্তম শ্রেণির শায়ানের শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ফুপু রুবিনা আক্তার। উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের এই বাসিন্দা বলেন, সকাল বেলা সুস্থ ছেলেটা বাসা থেকে বের হইল, আর এখন হাসপাতালে। তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া জুনায়েদ হাসানের মা ঝর্না আক্তারও জরুরি বিভাগের সামনে কাঁদছিলেন। নয়া নগরের এই বাসিন্দা জানিয়েছেন, তার ছেলেকে আইসিউতে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আর একটু পরেই ছুটি হইলে ছেলে বাসায় চলে যেত। আর এখন ছেলে আমার আইসিইউতে। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইয়ুম খান বলেন, জুনিয়রদের শিফটটা সকাল থেকে শুরু হয়। ঘটনার সময় ক্লাসে ছিলাম। তারপর বিকট শব্দ শুনে দেখি আগুন, অবস্থা খারাপ। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। তারপর ফায়ার সার্ভিস আসে। এক আন্টি বলেন বাবা আমার মেয়েকে একটু ধরো, তার দুই হাত পুড়ে গেছে। পরে তাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি।