নিজস্ব প্রতিবেদক: স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে আমরা একমত আছি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার।
মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার বৈঠকের বিরতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
সারোয়ার তুষার বলেন, জাতীয় নির্বাচন দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হোক—এটা সবাই চায়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনও যদি দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হয় সেটা ভালো হবে। কিন্তু টেকনিক্যাল দিকগুলো নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে। আপাতত আমরা নীতিগতভাবে এটার সাথে একমত আছি। তিনি বলেন, কোনো কোনো দল প্রস্তাব দিচ্ছে, আমরা এটা ভেবে দেখছি যে স্থানীয় মানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ চার মাসের জায়গায় ছয় মাস হতে পারে কিনা। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে এখনও আলোচনা হয়নি। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে আমরা একমত আছি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ নিয়ে দলের অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ইতোপূর্বে বলেছি যে তিন মাস হোক আর চার মাস হোক, এটার নাম হতে হবে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার। এটা আমরা একেবারে শুরু থেকে প্রস্তাবটা দিয়েছি। কারণ আপনারা জানেন এর আগে ২০০৭ সালে যখন এক-এগারো এসেছে তখন এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে কী কী হয়েছে। এ কারণে এটার নাম সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকার হোক। মেয়াদ চার মাস কিংবা তিন মাস যেটাই হোক আমরা এ ব্যাপারে ফ্লেক্সিবল (নমনীয়) থাকবো। তবে যদি স্থানীয় সরকার অন্তর্ভুক্ত হয় সেক্ষেত্রে চার মাস প্রয়োজন হতে পারে।
তিনি বলেন, বিএনপি বলেছে জাতীয় নিরাপত্তার কথা। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তাটা যেহেতু ডিফাইনড না এবং এটা আমাদের কাছে মনে হচ্ছে যে সেই একই ৭০ অনুচ্ছেদ, বা যেকোনও কিছুই যেখানে আপনি জাতীয় নিরাপত্তার নামে নিজের দলের সদস্যদের মতামত দেওয়াটাকে বন্ধ করতে পারবেন। এ কারণে এটা দরকার আছে বলে আমরা মনে করি না। যখন সত্যি সত্যি দেশে কোনো সংকট তৈরি হবে সেই ক্ষেত্রে আসলে এমনি একটা কনসেন্সাস (ঐকমত্য) তৈরি হয়ে যায় সেজন্য সেই অনুচ্ছেদের কোনো প্রয়োজন নাই।
এনসিপির এই নেতা বলেন, আজকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরু হয়েছে এবং সেখানে সুনির্দিষ্ট চারটি এজেন্ডায় কথাবার্তা হচ্ছে। একটা এজেন্ডার আলোচনা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং আপনারা বলতে পারেন যে একটা সিদ্ধান্তে বা সবাই একটা কনসেন্সাসে এসেছে। সেটা হচ্ছে ৭০ অনুচ্ছেদের ব্যাপারে। এটা আপনারা জানেন যে কমিশন যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে তার মধ্যে এটা খুবই ভাইটাল (অত্যাবশ্যক) একটা ব্যাপার এবং প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলেরই এ ব্যাপারে খুব জোরালো মতামত আছে। এক্ষেত্রে এখন যেটা হয়েছে আমরা বলেছি যে অর্থবিল এবং আস্থা ভোটে দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া—এই দুটো বাদে অন্যান্য সব ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারবে। এই দুটো নিয়ে আমরা বলেছি আমাদের জায়গা থেকে। আরো কথা এসেছে যে সংবিধান সংশোধনী এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ৭০ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হবে কিনা? আমরা বলেছি যে সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে দলের পক্ষে থাকাটা বাধ্যতামূলক হবে কিনা এটা আরো আলোচনার দাবি রাখে। এই কারণে আমাদের সর্বশেষ পজিশন হচ্ছে যে সরকারের স্থিতিশীলতা এবং সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা—দুটো জিনিসই গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে অর্থবিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্যান্য সব ক্ষেত্রে যেকোনও সংসদ সদস্য দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, তিনটি বিষয়ে প্রস্তাব আছে—আস্থা ভোট, অর্থবিল এবং সংবিধান সংশোধনী। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনটা আজকে নতুন করে এসেছে। বেশির ভাগ দল বলেছে যে সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে দেওয়া উচিত।