নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৪ সালে সৌদি আরবের একজন ইমাম বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন তিনি বাগেরহাটে ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে যান। এসময় সৌদি ওই ইমামের সঙ্গে পরিচয় হয় ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত আলোচিত এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান মাওলানা রাগীব আহসানের। তাকে দিয়ে (সৌদি ইমামকে) একটি ওয়াজেরও আয়োজন করেন রাগীব।
তখন সৌদির ওই ইমাম বলেছিলেন, ‘আমি ওয়াজ শেষে বাংলাতে কিছু বলতে চাই। আপনি (রাগীব) আমাকে আরবিতে সেটা লিখে দেবেন। যাতে দেখে দেখে সহজে বলতে পারি।’ এসময় রাগীব আহসান বলেছিলেন- আপনি কী বলতে চান বলেন, আমি লিখে দেব। সৌদি ইমাম বলেছিলেন, ‘আমি বাংলাদেশে এসে ধন্য; আমি আপনাদের ভালোবাসায় মুগ্ধ।’ এটা লিখে দেন। কিন্তু রাগীব আহসান লিখে দিয়েছিলেন- ‘এসহান গ্রুপে বেশি বেশি বিনিয়োগ করুন, এটা শরিয়তসম্মত।’
সৌদি ইমামের এমন কথায় অনেকেই প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করেছিলেন। যাদের সবাই প্রতারিত হয়ে এখন নিজেদের সহায়-সম্পদ হারিয়েছেন।
গতকাল শনিবার র্যাব সূত্র একটি সংবাদমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে। গত শুক্রবার ভোররাতে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রাহকের ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎকারী এই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এলিট ফোর্সটি বলছে, নিজের বা স্বজনদের নামে-বেনামে ১৭টি প্রতিষ্ঠান গড়ে গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়েছেন রাগীব আহসান। তার নামে ১৫টি মামলা চলমান। এছাড়া শতাধিক গ্রাহক তার নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছেন।
কে এই রাগীব আহসান? এক সময় মসজিদে ইমামতি করতেন মাওলানা রাগীব আহসান। পরে ৯০০ টাকা বেতনে ঢাকার একটি এমএলএম কোম্পানিতে চাকরি নেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলেন ‘এহসান গ্রুপ’। নিজের তিন ভাই, বোন, তার শ্বশুর, বোন জামাইসহ নিকটাত্মীয়দের প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসান রাগীব। এরপরই প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের ১৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।
ঘন ঘন সৌদি যেতেন রাগীব : র্যাব সূত্রে জানা গেছে, মূলত করোনাকাল আসার পর থেকে রাগীব বেশি সমস্যায় পড়েন। ওই সময় চারটি বিলাসবহুল গাড়িও বিক্রি করে দেন। ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও মামলা দায়েরের পর তিনি সঙ্গে আইনজীবী নিয়ে ঘুরতেন, যাতে তাকে গ্রেপ্তার করা না যায়। এছাড়া রাগীব ঘন ঘন সৌদি আরবে যাওয়ার তথ্য পেয়েছে র্যাব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, আত্মসাৎ করা টাকার বড় একটি অংশ বিদেশে পাচার করেছেন রাগীব।
লিমিটেড কোম্পানি খুলতে পারেননি যে কারণে : বিভিন্ন সময় রাগীবের প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন গ্রাহকরা। শরিয়তসম্মত বিনিয়োগের প্রলোভন দেখানোয় অনেকে তার প্রতিষ্ঠানে টাকা দেন। সেই পুঁজি দিয়ে ১৭ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন রাগীব। এরমধ্যে রয়েছে, হাউজিং, ল্যান্ড প্রজেক্ট, মার্কেট-দোকান, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এর আড়ালেই তিনি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এতগুলো প্রতিষ্ঠান থাকায় তিনি লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নাম লেখাতে আবেদন করেন। যেখানে চেয়ারম্যান করেন নিজের স্ত্রীকে। তবে তার স্ত্রী পঞ্চম শ্রেণি পাস হওয়ায় সেই আবেদন বাতিল হয়ে যায়। এদিকে গ্রাহকদের অভিযোগ, কথা ছিল নির্দিষ্ট সময়ে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেওয়া হবে। কিন্তু দিনের পর দিন তাদের কোনো লভ্যাংশ না দিয়ে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করে ফেলেন। আত্মসাৎ করা এসব টাকা বিনিয়োগ করেছেন ব্যক্তিগত বিভিন্ন ব্যবসায়। এছাড়া পাচার করেছেন বিদেশে। কোম্পানির কর্তাদের কাছ থেকে লাঞ্ছনা বঞ্চনার শিকারও হয়েছেন তারা।
সৌদি ইমামের সঙ্গেও প্রতারণা করেছিলেন রাগীব!
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ