সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার দুপুরে এক মহারথ দেখাল বাংলাদেশ ‘এ’ দল। নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৮৭ রানের বড় জয় তুলে নিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা। সিরিজের শেষ ম্যাচ এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে কেবল হোয়াইটওয়াশ নিশ্চিত করার মিশন।
ম্যাচজয়ী নায়ক দুইজন—অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। দুর্দান্ত এই জুটির ব্যাটে রচিত হয় অসাধারণ সেঞ্চুরি, যা দলের বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেয়। তাদের জোড়া শতকে ৫ উইকেটে ৩৪৪ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। জবাবে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দল থামে ২৫৭ রানে।
অধিনায়কের দায়িত্বশীল নেতৃত্বে দৃঢ় ভিত
অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। চতুর্থ উইকেটে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন ২২৫ রানের রেকর্ড জুটি। শুরুটা যদিও ছিল ধীর গতির, তবে ধীরে ধীরে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এই জুটি।
সোহান তার ১০১ বলের ইনিংসে ৭টি চার ও ৭টি ছক্কার সাহায্যে করেন ১১২ রান। নির্ভরতার প্রতীক হয়ে যিনি একের পর এক বাউন্ডারি মেরে দলকে পৌঁছে দেন নিরাপদ লক্ষ্যে।
অঙ্কনের ব্যাটে ঝলমলে প্রতিভা
অন্যদিকে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ইনিংসটি ছিল পরিণত ও সংযত। ১০৮ বল মোকাবিলা করে ৭ চার ও ৫ ছক্কায় সাজান নিজের ১০৫ রানের ইনিংস। প্রথমবার ‘এ’ দলে সুযোগ পেয়ে যেন মেলে ধরলেন নিজের সম্ভাবনা। এই ইনিংস ভবিষ্যতের জাতীয় দলের দরজাও খুলে দিতে পারে তার জন্য।
শুরুর অবদানও কম নয়
তবে শুরুটা এনে দেন ওপেনার নাঈম শেখ (৪০) ও এনামুল হক বিজয় (৩৯)। তাদের দায়িত্বশীল শুরুতেই ভর করে দলের ইনিংস গড়ায় দেড়শ পেরোনোর আগে কোনো বিপর্যয় ছাড়াই। এরপরই আসে সোহান-অঙ্কনের ঝড়।
কিউইদের শুরু ভালো, শেষ কাহিনী করুণ
৩৪৫ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা দারুণ করেছিল নিউজিল্যান্ড ‘এ’। ডেল ফিলিপস ও কার্টিস হেফি গড়েন ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটি। তবে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বলে হেফির বিদায়ের পর শুরু হয় ধস।
ডেল ফিলিপস অবশ্য একপ্রান্তে লড়ে যান। ৫৪ বলে তার ৭৯ রানের ইনিংস সাজানো ছিল ১৪টি চার ও ২টি ছক্কায়। তবে দলের বাকিরা কেউই তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি।
সৈকতের ঘূর্ণিতে কিউইদের পতন
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের স্পিন ঘূর্ণিতে এলোমেলো হয়ে যায় কিউই ব্যাটিং। একাই তুলে নেন ৩ উইকেট, যার মধ্যে ছিল মাঝের ওভারগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু। তার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়েই মূলত ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়।
শেষের প্রতিরোধও ব্যর্থ
শেষ দিকে মিচ হেই (৩৮) ও ক্রিস্টিয়ান ক্লার্ক (৩৯*) কিছুটা চেষ্টা করলেও তা আর ম্যাচে ফেরার জন্য যথেষ্ট ছিল না। ধারাবাহিকভাবে উইকেট হারাতে থাকায় তারা চাপে ভেঙে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত গুটিয়ে যায় ২৫৭ রানে।
বাংলাদেশের পক্ষে সৈকতের ৩ উইকেটের পাশাপাশি শরীফুল ইসলাম, তানভীর ইসলাম ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী নেন ২টি করে উইকেট। এই ঘূর্ণিজালে বন্দী হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের ব্যাটিং।
হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্যে শেষ ম্যাচ
সিরিজের শেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ১০ মে, একই ভেন্যু সিলেটে। সেখানে জিতলে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিতে পারবে স্বাগতিকরা। মাঠে নামার আগে দলের আত্মবিশ্বাস থাকবে তুঙ্গে। আর সোহান-অঙ্কনের ফর্ম ধরে রাখতে পারলে সাফল্য দূরে নয়।
তরুণদের উজ্জ্বল বার্তা
এই সিরিজ জয় কেবল একটি জয় নয়, বরং ভবিষ্যতের জাতীয় দলের জন্য এক সম্ভাবনার বার্তা। অঙ্কনের ব্যাটিং, সৈকতের বোলিং এবং সোহানের নেতৃত্ব সবাইকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে নির্বাচকদের।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ব্যাটিং অস্থিরতার কথা মাথায় রাখলে এই তরুণদের পারফরম্যান্স অনেকটাই আশার আলো। বিশেষ করে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ধৈর্যপূর্ণ ইনিংস চোখে পড়ার মতো।
ক্রিকেট কেবল একটা খেলা নয়, এটা আবেগ, আত্মবিশ্বাস এবং ভবিষ্যতের পথে যাত্রা। বাংলাদেশের ‘এ’ দল যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নেমেছে এবং জয় ছিনিয়ে এনেছে, তা নিঃসন্দেহে দেশের ক্রিকেটের জন্য বড় সুখবর। এখন দেখার পালা, ১০ মে তারা হোয়াইটওয়াশ সম্পূর্ণ করে সেই উল্লাস দ্বিগুণ করতে পারে কিনা।