ঢাকা ০৯:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

সোহরাওয়ার্দীতে আপাতত গাছ কাটা যাবে না

  • আপডেট সময় : ১০:০৩:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মে ২০২১
  • ১০২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আপাতত গাছ কাটা বন্ধ রাখতে বলেছে হাই কোর্ট। সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তাকে আদালত বলেছে, তিনি যেন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়ে দেন। ‘আদালতের রায় উপেক্ষা করে’ উদ্যানে গাছ কাটায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এক আইনজীবীর আনা ‘আদালত অবমাননার’ অভিযোগের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট এ আদেশ দিয়েছে।
বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক মামনুর রহমান বলেন, “আমাদের আদেশটা হচ্ছে, আগামী ২০ তারিখ (২০ মে) আসবে (শুনানির জন্য)। আপনি (অ্যাটর্নি জেনারেল) মৌখিকভাবে বলে দিয়েন, আপাতত যাতে গাছ না কাটে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এ সময় আদালতকে আশ্বস্ত করে বলেন, “আমি এখনি কথা বলছি।”
অভিযোগকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ নিজেও আদালতে আবেদনটির ওপর শুনানিতে ছিলেন। গাছ কাটা বন্ধে সরকারকে উকিল নোটিস পাঠানোর পর তাতে সাড়া না পেয়ে গত রোববার তিনি ‘আদালত অবমাননার’এই অভিযোগ দায়ের করেন হাই কোর্টে।
‘আদালতের রায় উপেক্ষা করে’ উদ্যানের গাছ কাটায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামিম আকতার এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মঞ্জুরুর রহমানের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না- সেই প্রশ্নে রুল চাওয়া হয়েছে তার আবেদনে।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সেদিন বলেন, তিনজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল চাওয়ার পাশাপাশি উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধ করা, রেস্তোরাঁ নির্মাণ কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোন প্রকল্পের অধীনে সরকার উদ্যানে কী কী কাজ করছে তার বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন হলফনামা করে আদালতে দাখিলের নির্দেশনা চেয়েছেন তিনি।
স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্মৃতিকেন্দ্র নির্মাণে গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু গাছ ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে। কাটার জন্য আরও কিছু গাছ চিহ্নিত করা হয়েছে।
সেখানে ‘রেস্তোরাঁ ও হাঁটার পথ’ নির্মাণের জন্য গাছ কাটা হচ্ছে অভিযোগ করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। গত কয়েকদিন ধরেই সেখানে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন প্রতিবাদকারীরা।
অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, ঐতিহাসিক এই উদ্যানে ‘আন্তর্জাতিক মানের স্মৃতিকেন্দ্র’ গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘কিছু গাছ’ কাটা হয়েছে। গাছ কাটা নিয়ে ‘খ-িত তথ্য’ প্রচার হওয়ায় জনমনে ‘বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে’।
আর প্রকল্প পরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম বলেছেন, “যখনই যেই গাছ কাটা পড়বে, সেই গাছের বিপরীতে ১০টা গাছ লাগানো হবে। আর সামগ্রিকভাবে অন্তত এক হাজার গাছ লাগানো আমাদের লক্ষ্য।”

উদ্যানের ‘সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে’ গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার সরকারের তিনটি দপ্তরে উকিল নোটিস পাঠান মনজিল মোরসেদ। নোটিসে ২০০৯ সালে হাই কোর্টের দেওয়া রায় তুলে ধরে বলা হয়, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিছক একটি এলাকা নয়। এই এলাকাটি ঢাকা শহর পত্তনের সময় থেকে একটি বিশেষ এলাকা হিসেবে বিবেচিত।
“এই এলাকার ঐতিহাসিক ও পরিবেশগত ঐতিহ্য আছে। শুধু তাই নয়, দেশের সকল গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্র এই এলাকা। ফলে সম্পূর্ণ এলাকাটি একটি বিশেষ এলাকা হিসাবে সংরক্ষণের দাবি রাখে।”
দুই দিনের সময় দিয়ে নোটিসে বলা হয়েছিল, ‘রেস্তোরাঁ নির্মাণের জন্য’ গাছ কাটা বন্ধ করা না হলে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে। তাতে গাছ কাটা বন্ধ না হওয়ায় ‘আদালত অবমাননার’ অভিযোগ নিয়ে রোববার হাই কোর্টে আসেন মনজিল মোরসেদ। তিনি সেদিন বলেন “গত ১১ বছর হাই কোর্টের ওই রায় বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পূর্ত মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। যখনই যোগাযোগ করেছি তখনই বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
“কিন্তু আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আসলে কী হচ্ছে গত ১১ বছরেও আমরা জানতে পারিনি। এমনকি সংবাদ মাধ্যমেও এ সংক্রান্ত বিস্তারিত কিছু আসেনি। ফলে মনে হচ্ছে আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করা হচ্ছে বা পাশ কাটানো হচ্ছে।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সোহরাওয়ার্দীতে আপাতত গাছ কাটা যাবে না

আপডেট সময় : ১০:০৩:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মে ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আপাতত গাছ কাটা বন্ধ রাখতে বলেছে হাই কোর্ট। সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তাকে আদালত বলেছে, তিনি যেন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়ে দেন। ‘আদালতের রায় উপেক্ষা করে’ উদ্যানে গাছ কাটায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এক আইনজীবীর আনা ‘আদালত অবমাননার’ অভিযোগের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট এ আদেশ দিয়েছে।
বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক মামনুর রহমান বলেন, “আমাদের আদেশটা হচ্ছে, আগামী ২০ তারিখ (২০ মে) আসবে (শুনানির জন্য)। আপনি (অ্যাটর্নি জেনারেল) মৌখিকভাবে বলে দিয়েন, আপাতত যাতে গাছ না কাটে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এ সময় আদালতকে আশ্বস্ত করে বলেন, “আমি এখনি কথা বলছি।”
অভিযোগকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ নিজেও আদালতে আবেদনটির ওপর শুনানিতে ছিলেন। গাছ কাটা বন্ধে সরকারকে উকিল নোটিস পাঠানোর পর তাতে সাড়া না পেয়ে গত রোববার তিনি ‘আদালত অবমাননার’এই অভিযোগ দায়ের করেন হাই কোর্টে।
‘আদালতের রায় উপেক্ষা করে’ উদ্যানের গাছ কাটায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামিম আকতার এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মঞ্জুরুর রহমানের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না- সেই প্রশ্নে রুল চাওয়া হয়েছে তার আবেদনে।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সেদিন বলেন, তিনজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল চাওয়ার পাশাপাশি উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধ করা, রেস্তোরাঁ নির্মাণ কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোন প্রকল্পের অধীনে সরকার উদ্যানে কী কী কাজ করছে তার বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন হলফনামা করে আদালতে দাখিলের নির্দেশনা চেয়েছেন তিনি।
স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্মৃতিকেন্দ্র নির্মাণে গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু গাছ ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে। কাটার জন্য আরও কিছু গাছ চিহ্নিত করা হয়েছে।
সেখানে ‘রেস্তোরাঁ ও হাঁটার পথ’ নির্মাণের জন্য গাছ কাটা হচ্ছে অভিযোগ করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। গত কয়েকদিন ধরেই সেখানে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন প্রতিবাদকারীরা।
অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, ঐতিহাসিক এই উদ্যানে ‘আন্তর্জাতিক মানের স্মৃতিকেন্দ্র’ গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘কিছু গাছ’ কাটা হয়েছে। গাছ কাটা নিয়ে ‘খ-িত তথ্য’ প্রচার হওয়ায় জনমনে ‘বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে’।
আর প্রকল্প পরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম বলেছেন, “যখনই যেই গাছ কাটা পড়বে, সেই গাছের বিপরীতে ১০টা গাছ লাগানো হবে। আর সামগ্রিকভাবে অন্তত এক হাজার গাছ লাগানো আমাদের লক্ষ্য।”

উদ্যানের ‘সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে’ গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার সরকারের তিনটি দপ্তরে উকিল নোটিস পাঠান মনজিল মোরসেদ। নোটিসে ২০০৯ সালে হাই কোর্টের দেওয়া রায় তুলে ধরে বলা হয়, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিছক একটি এলাকা নয়। এই এলাকাটি ঢাকা শহর পত্তনের সময় থেকে একটি বিশেষ এলাকা হিসেবে বিবেচিত।
“এই এলাকার ঐতিহাসিক ও পরিবেশগত ঐতিহ্য আছে। শুধু তাই নয়, দেশের সকল গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্র এই এলাকা। ফলে সম্পূর্ণ এলাকাটি একটি বিশেষ এলাকা হিসাবে সংরক্ষণের দাবি রাখে।”
দুই দিনের সময় দিয়ে নোটিসে বলা হয়েছিল, ‘রেস্তোরাঁ নির্মাণের জন্য’ গাছ কাটা বন্ধ করা না হলে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে। তাতে গাছ কাটা বন্ধ না হওয়ায় ‘আদালত অবমাননার’ অভিযোগ নিয়ে রোববার হাই কোর্টে আসেন মনজিল মোরসেদ। তিনি সেদিন বলেন “গত ১১ বছর হাই কোর্টের ওই রায় বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পূর্ত মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। যখনই যোগাযোগ করেছি তখনই বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
“কিন্তু আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আসলে কী হচ্ছে গত ১১ বছরেও আমরা জানতে পারিনি। এমনকি সংবাদ মাধ্যমেও এ সংক্রান্ত বিস্তারিত কিছু আসেনি। ফলে মনে হচ্ছে আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করা হচ্ছে বা পাশ কাটানো হচ্ছে।”