নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি সমাবেশ করতে চায় নয়া পল্টনে, সরকার বলছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করতে; এনিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হল, ‘গ্রহণযোগ্য বিকল্প’ পেলে তারা বিবেচনা করতে পারে। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কোনোভাবেই যেতে রাজি নন বলে গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করেছেন বিএনপির নেতারা। দুপুরে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর বিএনপি নেতারা নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়েও যান। সেখানেও তারা বলে আসেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কোনোভাবেই যাবেন না তারা। এরপর ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ১০ ডিসেম্বর বিএনপির জনসভার সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণের আগে মতিঝিল, আরামবাগ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তিনটি স্থান পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভাগী সমাবেশ শেষ করে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের কর্মসূচি দেয় বিএনপি, স্থান হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় নয়া পল্টন। তবে তারা পুলিশের কাছে আবেদন জমা দিলে ২৬টি শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের জনসভার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে বিএনপি তখন থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে।
ঘোষিত সমাবেশের ছয় দিন আগে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “দেখেন আব্বাস ভাই (মির্জা আব্বাস) গত (শনিবার) প্রেস ব্রিফিং করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ঠিক আছে বিকল্প কী আছে আপনারা বলেন? এই জিনিসগুলো তো আছে। সেটা (বিকল্প প্রস্তাব) দিলে আমরা বিবেচনা করব, আলোচনা সাপেক্ষে চিন্তা করে দেখব।”
১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা মির্জা আব্বাসও এই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বিকল্প প্রস্তাব যদি গ্রহণযোগ্য হয় সোহরাওয়ার্দী ছাড়া, আমরা চিন্তা করে দেখব এটা। তবে সোহরাওয়ার্দী আর পল্টন এক না।” সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে না যাওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তি দেখিয়ে ফখরুল কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন, “সেই জায়গায় আমরা কমফোর্টেবল নই। চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা, চর্তুদিকে যাওয়ার রাস্তা নেই। একটা মাত্র গেইট যে গেইট দিয়ে এক-দুই জন মানুষ ঢুকতে পারে, বেরুতে পারে না।”
রোববারের সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল আবার বলেন, নয়া পল্টনে সমাবেশ করতে চাওয়ার অবস্থানে এখনও রয়েছেন তারা। নয়া পল্টনে তো অনুমতি দেয়নি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দিয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা তো আপনি জানতে পারবেন- কখন কী করছি না করছি। আগে জিজ্ঞাসা করছেন কেন?
“আমরা তো বলেছি। আপনারা প্রত্যাহার করেন আপনাদের আদেশ (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)। প্রত্যাহার করেন। দেখেন।” বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করব। আবারও রিপিট করছি, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবেই এই সমাবেশ হবে।” কোথায় হবে- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “সেটা (নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে) তো আপনারা আগেই জানেন। আমরা তো বলেছি এটা।”
বিএনপির সমাবেশ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের আশঙ্কা প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল মাস খানেক ধরে বিভিন্ন বিভাগে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কথা বলেন। তিনি বলেন, “৯টা সমাবেশের কোথাও কোনো ইনসিডেন্ট হয়নি। লাখ লাখ মানুষের সমাবেশে। আমরা এই কথা খুব পরিষ্কার করে বলতে পারি, ঢাকাতে যে সমাবেশ হবে সেই সমাবেশ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে।
“এখানে কেউ কোনো রকমের কোনো নাশকতার সৃষ্টি করলে সেটা সরকার করবে। তার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ সরকারকেই করতে হবে।”
ফখরুল বলেন, “গতকাল পুলিশের আইজি সাহেব সুন্দর কথা বলেছেন। আমি তাকে ধন্যবাদ দিই। তিনি বলেছেন, ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে ঘিরে নাশকতার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই্। তাহলে কেনো এই মামলাগুলো দেন, এইগুলো কেনো করছেন।” তিনি আরও বলেন, “যে কোনো স্থানে আমার সমাবেশ করার অধিকার আছে- এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার, এটা আমার সাংবিধানিক অধিকার। সেখানে আগ বাড়িয়ে যে এখানে নাশকতা হবে, অমুক হবে, তমুক হবে বলার অর্থ হচ্ছে আমার সাংবিধানিক অধিকারকে আপনি কেড়ে নিচ্ছেন। এটা প্রশ্নই উঠতে পারে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে দেখা করেন। বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঙ্গে ডিএমপি কমিশনারের বৈঠকে সমাবেশের স্থান নিয়ে আলোচনা হয়। আবদুস সালাম আজাদ বলেন, “আমরা সমাবেশের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। দেড় ঘণ্টার এই বৈঠক হয়েছে। আমরা কমিশনার সাহেবকে বলেছি, আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করব না, আমরা না বলে এসেছি। “আমরা কমিশনার সাহেবকে বলেছি, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চাই নয়া পল্টনে আমাদের কার্যালয়ের সামনে।” বিকল্প কোনো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়া অন্য কোনো প্রস্তাব থাকলে আপনারা জানান।”
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, “বিএনপির প্রতিনিধি দল নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য কমিশনার মহোদয়কে অনুরোধ করেছেন। “একই সঙ্গে তারা বলেছেন যে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তৃতীয় পক্ষ কোনো অঘটন ঘটিয়ে বিএনপির উপর দায় চাপাতে পারে।” সেক্ষত্রে সিদ্ধান্ত কী দাঁড়িয়েছে- জানতে চাইলে উপ-কমিশনার ফারুক বলেন, “ডিসি মতিঝিল হায়াতুল ইসলাম খান ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যে মতিঝিল, আরামবাগ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখে প্রতিবেদন কমিশনারকে জানাবেন।” এরপরই বিষয়টির ফয়সালা হবে বলে আশা করছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
খালেদা জিয়ার বাসার সামনে থেকে তল্লাশি চৌকি সরিয়ে নেওয়ার দাবি: ঢাকার গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসা ‘ফিরোজা’র সামনে পুলিশের বসানো তল্লাশি চৌকি সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে তার দল বিএনপি। দুর্নীতির দুই মামলায় দ-িত বিএনপি চেয়ারপারসন সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি নিয়ে ওই বাড়িতে রয়েছেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের আগে শনিবার রাতে খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনেও তল্লাশি চৌকি বসায় পুলিশ। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রোববার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার বাসার সামনে সেই বালির ট্রাকের কায়দায় চেক পোস্ট-ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ অবরোধ করে রেখেছে। এটি দেশনেত্রীর উপর নিপীড়নের আরেকটা নতুন মাত্রা। “আওয়ামী সরকারের এহেন আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি এই মুহূর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে থেকে চেক পোস্ট ও ব্যারিকেড তুলে নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।”
গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই তল্লাশি চৌকি বসানো হয় বলে খালেদা জিয়ার বাসার নিরাপত্তাকর্মী জানান। তবে সড়কে বসানো ওই তল্লাশি চৌকির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বাড়ির কোনো সম্পর্ক নেই বলে পুলিশের দাবি। ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার আব্দুল আহাদের ভাষ্যে, “বনানীসহ বিভিন্ন স্থানে মাদক ব্যবসায়ী, জঙ্গি ও অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চলছে। এর অংশ হিসেবে গুলশান এলাকায়ও তল্লাশি চৌকির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।” তবে বিএনপি মনে করছে, খালেদা জিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফখরুল বলেন, “একজন জনপ্রিয় নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে কারারুদ্ধ রেখে চিকিৎসার সকল পথ রুদ্ধ করে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী সরকার।
“তার বাসভবন অবরোধ করে এবং তাকে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে, তাকে মানসিক চাপে রাখা হচ্ছে।”
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘গ্রহণযোগ্য বিকল্প’ বিবেচনা করবে বিএনপি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ