প্রত্যাশা ডেস্ক : সামাজিক মাধ্যমে দৈনিক আধা ঘণ্টার চেয়ে কম সময় কাটানো ছাত্রদের উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ও একাকীত্বের মাত্রাও অনেক কমে আসে। ফলে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার বেড়ে গেলে তাদের মানসিক স্বাস্থেরও অবনতি ঘটে। এই গবেষণাকে একধাপ এগিয়ে ২৩০ জন কলেজ ছাত্রের ওপর দুই সপ্তাহের জন্য পরীক্ষা চালান যুক্তরাষ্ট্রের ‘আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা। অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেককে দৈনিক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার আধা ঘণ্টায় কমিয়ে আনতে বলা হয়। এর জন্য প্রতিদিন স্বয়ংক্রিয় রিমাইন্ডারও পেতেন তারা।
‘টেকনোলজি, মাইন্ড অ্যান্ড বিহেভিয়র’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় উঠে এসেছে, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নিয়ন্ত্রিত দলের চেয়ে অন্য দলটি ‘উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, হারানোর ভয়ের’ মতো বিষয়ে অনেক কম নাম্বার পেয়েছে। আর নিয়ন্ত্রিত দলটির জীবনের প্রতি তুলনামূলক উজ্জ্বল দৃষ্টিভঙ্গি থাকার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এই ‘ইতিবাচক প্রভাব’-এর কারণেই তারা পরীক্ষায় বেশি নাম্বার পেয়েছে। আর গবেষকরা এটি বর্ণনা করছেন “উত্তেজিত’ ও ‘গর্বিত’ এমন শব্দ ব্যবহার করে ইতিবাচক আবেগ অনুভবের প্রবণতা’ হিসেবে।
“এটা দেখে আমি অবাক হয়েছি যে অংশগ্রহণকারীর মানসিক সুস্থতা নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে কেবল নয়, বরং সবদিক দিয়েই উন্নত হয়েছে। প্রতিদিন রিমাইন্ডার পাঠানোর মতো সহজ ব্যবস্থা মানুষের আচরণ বদলাতে ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের অভ্যাস উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে, তা জেনেও আমি আনন্দিত।” –বলেন গবেষণার সহ-লেখক এলা ফাউলহাবার। মাঝে মাঝে ৩০ মিনিটের সময়সীমা অতিক্রম করা ব্যক্তিরাও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার কমিয়ে আনার মানসিক সুবিধা পেয়েছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা ‘নিখুঁত হওয়ার’ বিষয় নয়। বরং এমন প্রচেষ্টা, যা ‘পরিবর্তন আনতে’ পারে। পূর্ববর্তী গবেষণায় সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার সীমিত করা বা এড়িয়ে চলার সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়িত হলেও এই গবেষণায় উঠে এসেছে, বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া ব্যবস্থার ভারী তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি কোনো অ্যাপ মুছে ফেলতে বা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার বন্ধ বা সীমিত করার লক্ষ্যে বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা আছে।
“যখন কোনো অর্জিত স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়, তখন আমরা প্রতিরোধ শুরু করি।” –বলেন গবেষণার আরেক লেখক ডগলাস এ. জেনটাইল। তিনি আরও যোগ করেন, সামাজিক মাধ্যম থেকে একেবারে সরে এলে বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে সংযোগের মতো সুবিধাও থাকবে না। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার কমাতে চাওয়া ব্যবহারকারীকে এর পেছনে সময় কাটানোর সীমা বেঁধে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
“সময়সীমা অনুসারে চলা সহজ নয়, এটা সত্যি। কারণ সামাজিক মাধ্যমের অ্যাপগুলো এমনভাবে নকশা করা, যা আপনাকে সম্পৃক্ত রাখবে।” –এক বিবৃতিতে বলেন গবেষকরা। তবে, এর জন্য মানুষকে হাল ছেড়ে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গবেষকরা। কারণ, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার কমিয়ে আনলে দৈনন্দিন জীবনেও সত্যিকারের সুবিধা পাওয়া যাবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট। “আমরা বিষণ্ণতার যুগে বাস করি। অনেক সূচকেই দেখা গেছে, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ও একাকীত্ব সবই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এতে আমরা অসহায় বোধ করতে পারি। তবে এমন কিছু বিষয়ও আছে, যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য সহায়ক।” –বলেন ড. জেনটাইল।
সোশ্যাল মিডিয়া কম ব্যবহারে ছাত্রদের উদ্বেগ কমে
জনপ্রিয় সংবাদ