ঢাকা ১২:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারদের চাহিদা এখন আকাশছোঁয়া

  • আপডেট সময় : ১১:৩৪:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ এপ্রিল ২০২২
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : হাল আমলের অত্যন্ত আকর্ষণীয় এক ট্রেন্ড বা চল হচ্ছে সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবশালী তারকাদের কাজে লাগিয়ে ব্র্যান্ডিং বা প্রচার করা। এত দিন বিষয়টিকে মূলধারার বাইরের ব্র্যান্ড মার্কেটিং ট্রেন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন সে অবস্থা আর নেই।
প্রভাবশালী তারকাদের কাজে লাগিয়ে এভাবে প্রচারকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই মহাগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কয়েকটি জায়গায় তো সরকারের আয়কর বিভাগের নজরও পড়ে গেছে। ফলে সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার এখন মূলধারায় পৌঁছে গেছে বলে মনে করছে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট।
গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ওপর চীনের কর আদায়কারী কর্তৃপক্ষের ব্যাপক খবরদারির বিষয়টি সবার নজরে আসার কথা। এসব সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার মূলত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে তাঁদের পণ্য ফলোয়ার বা অনুসারীদের কাছে প্রচার করে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এসব তারকার ভক্তরা প্রিয় তারকার প্রচার করা পণ্যের প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়েন। এতে ব্র্যান্ডগুলো যেমন প্রচার পায়, তেমনি বিক্রিও বাড়ে। এর বিনিময়ে ব্র্যান্ডগুলো ওই তারকার জন্য অঢেল অর্থ খরচে পিছপা হয় না। চীনের এমনই একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বড় তারকা ভিয়া। তাঁর আরেক নাম হুয়াং উয়ি। তবে লাইভ স্ট্রিম রানি হিসেবেই ব্যাপক পরিচিত তিনি।
চীনের সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, ৩৬ বছর বয়সী এই তারকার চীনের ওয়েবুতে ১ কোটি ৮০ লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে। এ ছাড়া তাওবাওতে রয়েছে ৮ কোটির বেশি অনুসারী। ইন্টারনেটের এই তারকা ই-কমার্স খাতের বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। লাইভ স্ট্রিম বা সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে খ্যাতি পেয়েছেন তিনি।
ভিয়ার সম্পর্কে বলা হয়, অনলাইনে যেকোনো কিছু বেচে দিতে পারেন তিনি। তবে এ খাতে তাঁর ব্যাপক আয়ের বিষয়টি আয়কর বিভাগকে জানাননি তিনি। এতেই বেকায়দায় পড়েছেন। তাঁকে ২১ কোটি মার্কিন ডলার জরিমানা করেছে চীন সরকার।
ভিয়ার ওপর চীন সরকারের আরোপ করা জরিমানা দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এ খাতের বিশালতা কোথায় পৌঁছেছে। জেনে রাখুন, চীনের অনলাইনে বেচাকেনার ১২ শতাংশই এখন এ ধরনের সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারের মাধ্যমে হচ্ছে। চীনের বাইরের অবস্থাও বেশ রমরমা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তারকারা এখন ই-কমার্স খাতের প্রসারে জোরালো ভূমিকা রাখছেন। বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও এ খাতের প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে বাজার এখন সাত ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাব জাহির করে পণ্য কেনাবেচা করার বিষয়টি আর কেবল শখের জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই।
তারকাখ্যাতিকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত প্রচারের বিষয়টি একেবারে নতুন নয়। ১৯৫০ সালে এলিজাবেথ টেলর কোলগেট-পামঅলিভ শ্যাম্পুর প্রচার করেছেন। ১৯৮৪ সালে বাস্কেটবল আর ব্র্যান্ডিংকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন মাইকেল জর্ডান। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সাররা মাথা খাটিয়ে বিষয়টিকে আরও এক ধাপ সামনে নিয়ে গেছেন। পণ্য প্রচারের পাশাপাশি বিক্রির বিষয়টি তাঁদের আরও বেশি পরিচিত ও বিখ্যাত করে তুলেছে। বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ আর ফিল্টার করা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে গ্রাহকের কাছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য কেনার পরামর্শ তুলে ধরেন তাঁরা। এর মধ্যে তাঁরা যুক্ত করে দেন তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু মুহূর্তও। এতে ওই কৃত্রিম প্রচারের বিষয়টির পক্ষে একটা সত্যতার আভা দেওয়া হয়। অনেক সময় এ ধরনের প্রচারের জন্য অর্থ নেওয়ার বিষয়টি কেউ কেউ সামনে আনেন। আবার অধিকাংশ সময় তা আড়ালে থাকে।
ইকোনমিস্ট বলছে, নতুন প্রজন্মের এ উদ্যোগ বা ব্যবসাকে এখন বড় ব্যবসা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময়ে তা আরও ব্যাপকভাবে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে।
গবেষকেরা বলছেন, এ বছরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে ইনফ্লুয়েন্সারদের ক্ষেত্রে ব্যয় ১৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। চীনের বাইরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের ইনফ্লুয়েন্সার হতে আগ্রহী ব্যক্তির সংখ্যা লাখো হলেও ১০ লাখের বেশি ফলোয়ার বা অনুসারী আছে, এমন তারকার সংখ্যা এক লাখের কাছাকাছি। এ খাতের বেশির ভাগ আয় তাঁদের পকেটেই যাচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ফ্যাশন শো বা আয়োজনের সামনের সারির আসনগুলো এখন তাঁদের জন্যই বরাদ্দ থাকছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তারকাখ্যাতির বিষয়টিকে নানাভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা অর্থসাশ্রয়ী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের কথাই ধরুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে তাঁর অনলাইন উপস্থিতি টেসলার জন্য ব্যাপক কাজে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির জন্য আলাদা করে প্রচলিত ধারার বিজ্ঞাপনের পেছনে অর্থ খরচের প্রয়োজন পড়ছে না। অন্যদিকে টেসলার প্রতিদ্বন্দ্বী জেনারেল মোটরস ২০২১ সালে ৩৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিজ্ঞাপন খাতে খরচ করেছে। এ ছাড়া ইনফ্লুয়েন্সারদের নেটওয়ার্ক নতুন দর্শক বা গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে; বিশেষ করে তরুণ ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে।
বৈশ্বিক বিভিন্ন ব্র্যান্ড এসব তারকার সঙ্গে চুক্তি করে তাদের পণ্যগুলো স্থানীয় বাজারেও নিয়ে যেতে পারে। যেমন চীনে স্থানীয় কেনাকাটার আয়োজন বা স্টাইলের বিষয়গুলো স্থানীয় তারকাদের ওপর নির্ভর করে। সেখানে পশ্চিমা কায়দার মার্কেটিং ক্যাম্পেইন বা প্রচার কর্মসূচি খুব ভালো ফল দেয় না। এর বাইরে সামাজিক যোগাযোগের এসব তারকা প্রযুক্তিকে দ্রুত গ্রহণ করে নেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা পুরোনো ধ্যানধারণার পণ্যদূতদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকেন। টিকটকের মতো নতুন প্ল্যাটফর্মেও তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিয়েছেন। এর বাইরে ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মেও তাঁদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়।
তবে এ ক্ষেত্রে আশ্চর্যের বিষয়, এক-তৃতীয়াংশ ব্র্যান্ড এখনো এ ধরনের সামাজিক যোগাযোগ ক্ষেত্রের তারকাদের দ্বারস্থ হয়নি। তারা সুনামের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে থাকে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কিছু তারকার বিতর্কিত কোনো পোস্ট দীর্ঘদিনের সুনাম নষ্ট করে ব্র্যান্ডকে কলঙ্কিত করার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বেশ কিছু নেতিবাচক দিক সত্ত্বেও এখনকার যুগের চাহিদা বিবেচনায় ইন্টারনেট তারকাদের একেবারে অবহেলা করার বিষয়টি ভুল হবে। বৈশ্বিক পর্যায়ে বর্তমানে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে এসব তারকার জন্য যে বাজেট থাকে, তা মোট খরচের ৩ শতাংশের কম। তবে এ হার বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে আরেক গুরুত্বপূর্ণ দিক, গুগল ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মে নতুন প্রাইভেসি (গোপনীয়তা) নীতিমালা যুক্ত হওয়ার বিষয়টি। এতে ২০১০ সালে গুগল ও ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার যে মার্কেটিং কৌশল জনপ্রিয় হয়েছিল, তা হুমকির মুখে পড়েছে। এখন অ্যাপলের আইফোনের মতো জনপ্রিয় ডিভাইস থেকে গ্রাহকের তথ্য নেওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ব্র্যান্ডগুলো সরাসরি গ্রাহকের পছন্দের বিষয়টি লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন দিতে পারছে না।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারদের চাহিদা এখন আকাশছোঁয়া

আপডেট সময় : ১১:৩৪:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ এপ্রিল ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : হাল আমলের অত্যন্ত আকর্ষণীয় এক ট্রেন্ড বা চল হচ্ছে সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবশালী তারকাদের কাজে লাগিয়ে ব্র্যান্ডিং বা প্রচার করা। এত দিন বিষয়টিকে মূলধারার বাইরের ব্র্যান্ড মার্কেটিং ট্রেন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন সে অবস্থা আর নেই।
প্রভাবশালী তারকাদের কাজে লাগিয়ে এভাবে প্রচারকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই মহাগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কয়েকটি জায়গায় তো সরকারের আয়কর বিভাগের নজরও পড়ে গেছে। ফলে সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার এখন মূলধারায় পৌঁছে গেছে বলে মনে করছে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট।
গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ওপর চীনের কর আদায়কারী কর্তৃপক্ষের ব্যাপক খবরদারির বিষয়টি সবার নজরে আসার কথা। এসব সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার মূলত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে তাঁদের পণ্য ফলোয়ার বা অনুসারীদের কাছে প্রচার করে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এসব তারকার ভক্তরা প্রিয় তারকার প্রচার করা পণ্যের প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়েন। এতে ব্র্যান্ডগুলো যেমন প্রচার পায়, তেমনি বিক্রিও বাড়ে। এর বিনিময়ে ব্র্যান্ডগুলো ওই তারকার জন্য অঢেল অর্থ খরচে পিছপা হয় না। চীনের এমনই একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বড় তারকা ভিয়া। তাঁর আরেক নাম হুয়াং উয়ি। তবে লাইভ স্ট্রিম রানি হিসেবেই ব্যাপক পরিচিত তিনি।
চীনের সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, ৩৬ বছর বয়সী এই তারকার চীনের ওয়েবুতে ১ কোটি ৮০ লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে। এ ছাড়া তাওবাওতে রয়েছে ৮ কোটির বেশি অনুসারী। ইন্টারনেটের এই তারকা ই-কমার্স খাতের বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। লাইভ স্ট্রিম বা সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে খ্যাতি পেয়েছেন তিনি।
ভিয়ার সম্পর্কে বলা হয়, অনলাইনে যেকোনো কিছু বেচে দিতে পারেন তিনি। তবে এ খাতে তাঁর ব্যাপক আয়ের বিষয়টি আয়কর বিভাগকে জানাননি তিনি। এতেই বেকায়দায় পড়েছেন। তাঁকে ২১ কোটি মার্কিন ডলার জরিমানা করেছে চীন সরকার।
ভিয়ার ওপর চীন সরকারের আরোপ করা জরিমানা দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এ খাতের বিশালতা কোথায় পৌঁছেছে। জেনে রাখুন, চীনের অনলাইনে বেচাকেনার ১২ শতাংশই এখন এ ধরনের সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারের মাধ্যমে হচ্ছে। চীনের বাইরের অবস্থাও বেশ রমরমা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তারকারা এখন ই-কমার্স খাতের প্রসারে জোরালো ভূমিকা রাখছেন। বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও এ খাতের প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে বাজার এখন সাত ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাব জাহির করে পণ্য কেনাবেচা করার বিষয়টি আর কেবল শখের জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই।
তারকাখ্যাতিকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত প্রচারের বিষয়টি একেবারে নতুন নয়। ১৯৫০ সালে এলিজাবেথ টেলর কোলগেট-পামঅলিভ শ্যাম্পুর প্রচার করেছেন। ১৯৮৪ সালে বাস্কেটবল আর ব্র্যান্ডিংকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন মাইকেল জর্ডান। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সাররা মাথা খাটিয়ে বিষয়টিকে আরও এক ধাপ সামনে নিয়ে গেছেন। পণ্য প্রচারের পাশাপাশি বিক্রির বিষয়টি তাঁদের আরও বেশি পরিচিত ও বিখ্যাত করে তুলেছে। বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ আর ফিল্টার করা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে গ্রাহকের কাছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য কেনার পরামর্শ তুলে ধরেন তাঁরা। এর মধ্যে তাঁরা যুক্ত করে দেন তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু মুহূর্তও। এতে ওই কৃত্রিম প্রচারের বিষয়টির পক্ষে একটা সত্যতার আভা দেওয়া হয়। অনেক সময় এ ধরনের প্রচারের জন্য অর্থ নেওয়ার বিষয়টি কেউ কেউ সামনে আনেন। আবার অধিকাংশ সময় তা আড়ালে থাকে।
ইকোনমিস্ট বলছে, নতুন প্রজন্মের এ উদ্যোগ বা ব্যবসাকে এখন বড় ব্যবসা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময়ে তা আরও ব্যাপকভাবে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে।
গবেষকেরা বলছেন, এ বছরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে ইনফ্লুয়েন্সারদের ক্ষেত্রে ব্যয় ১৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। চীনের বাইরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের ইনফ্লুয়েন্সার হতে আগ্রহী ব্যক্তির সংখ্যা লাখো হলেও ১০ লাখের বেশি ফলোয়ার বা অনুসারী আছে, এমন তারকার সংখ্যা এক লাখের কাছাকাছি। এ খাতের বেশির ভাগ আয় তাঁদের পকেটেই যাচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ফ্যাশন শো বা আয়োজনের সামনের সারির আসনগুলো এখন তাঁদের জন্যই বরাদ্দ থাকছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তারকাখ্যাতির বিষয়টিকে নানাভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা অর্থসাশ্রয়ী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের কথাই ধরুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে তাঁর অনলাইন উপস্থিতি টেসলার জন্য ব্যাপক কাজে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির জন্য আলাদা করে প্রচলিত ধারার বিজ্ঞাপনের পেছনে অর্থ খরচের প্রয়োজন পড়ছে না। অন্যদিকে টেসলার প্রতিদ্বন্দ্বী জেনারেল মোটরস ২০২১ সালে ৩৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিজ্ঞাপন খাতে খরচ করেছে। এ ছাড়া ইনফ্লুয়েন্সারদের নেটওয়ার্ক নতুন দর্শক বা গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে; বিশেষ করে তরুণ ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে।
বৈশ্বিক বিভিন্ন ব্র্যান্ড এসব তারকার সঙ্গে চুক্তি করে তাদের পণ্যগুলো স্থানীয় বাজারেও নিয়ে যেতে পারে। যেমন চীনে স্থানীয় কেনাকাটার আয়োজন বা স্টাইলের বিষয়গুলো স্থানীয় তারকাদের ওপর নির্ভর করে। সেখানে পশ্চিমা কায়দার মার্কেটিং ক্যাম্পেইন বা প্রচার কর্মসূচি খুব ভালো ফল দেয় না। এর বাইরে সামাজিক যোগাযোগের এসব তারকা প্রযুক্তিকে দ্রুত গ্রহণ করে নেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা পুরোনো ধ্যানধারণার পণ্যদূতদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকেন। টিকটকের মতো নতুন প্ল্যাটফর্মেও তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিয়েছেন। এর বাইরে ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মেও তাঁদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়।
তবে এ ক্ষেত্রে আশ্চর্যের বিষয়, এক-তৃতীয়াংশ ব্র্যান্ড এখনো এ ধরনের সামাজিক যোগাযোগ ক্ষেত্রের তারকাদের দ্বারস্থ হয়নি। তারা সুনামের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে থাকে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কিছু তারকার বিতর্কিত কোনো পোস্ট দীর্ঘদিনের সুনাম নষ্ট করে ব্র্যান্ডকে কলঙ্কিত করার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বেশ কিছু নেতিবাচক দিক সত্ত্বেও এখনকার যুগের চাহিদা বিবেচনায় ইন্টারনেট তারকাদের একেবারে অবহেলা করার বিষয়টি ভুল হবে। বৈশ্বিক পর্যায়ে বর্তমানে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে এসব তারকার জন্য যে বাজেট থাকে, তা মোট খরচের ৩ শতাংশের কম। তবে এ হার বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে আরেক গুরুত্বপূর্ণ দিক, গুগল ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মে নতুন প্রাইভেসি (গোপনীয়তা) নীতিমালা যুক্ত হওয়ার বিষয়টি। এতে ২০১০ সালে গুগল ও ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার যে মার্কেটিং কৌশল জনপ্রিয় হয়েছিল, তা হুমকির মুখে পড়েছে। এখন অ্যাপলের আইফোনের মতো জনপ্রিয় ডিভাইস থেকে গ্রাহকের তথ্য নেওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ব্র্যান্ডগুলো সরাসরি গ্রাহকের পছন্দের বিষয়টি লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন দিতে পারছে না।