ঢাকা ০১:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

সেলফি তুলি ইউটিউব করি বই কিনিনা

  • আপডেট সময় : ০৯:৩৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৬১ বার পড়া হয়েছে

উম্মুল ওয়ারা সুইটি : পেশাগত কারণে বিকেল বেলাটা অফিসেই থাকতে হয়। ফলে রিপোর্টিং জীবনের সেই যে বছরটা মেলা কভার করেছি মানে বইমেলার রিপোর্ট করেছি তার বাইরে বইমেলায় সময় দেওয়া হয় খুব কম। যা একটু দেয়া হয় ডে অফের দিন কিংবা অফিস ছুটি নিয়ে।
তারপরও ছাত্রজীবন থেকে লম্বা সময় বইমেলায় দীর্ঘ আড্ডা, বইমেলায় ঘোরাঘুরি এভাবে মেলা সম্পর্কে একটা ধারণা হয়ে গেছে। প্রকাশনীগুলো সম্পর্কেও ধারণা আছে।
৯০’ এর দশক থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মেলায় বই কেনার উৎসাহ উদ্দীপনা দেখেছি। হুমায়ূন আহমেদ মেলায় পাঠক এনেছেন এটা বলতেই হবে। এই তালিকায় যুক্ত আছেন ইমদাদুল হক মিলনসহ অনেক লেখক।
এখনকার মত এত বাহারি উৎসব বছরব্যাপী ছিল না বললেই চলে। এক মাস টানা বইমেলা সারা বছরের কেন্দ্রে ছিল। এখন তো নানা জায়গায় বইমেলা হয়, তখন সেটাও ছিল না। যাই হোক সময় তার গতিতে যাবে। অনেক কিছুর পরিবর্তন আসবে, নতুন নতুন সংস্করণ সংযোজন হবে। তবে বড় বিষয় হলো নীতি আদর্শের কতটা পরিবর্তন হওয়া উচিত? সততা নিষ্ঠা কোনোদিনই কি কোন কিছুর বিকল্প হতে পারে, পারেনা?
যাই হোক। আবারো মেলায় ফিরি। বইমেলায় সবাই সব সময় বই কিনতে আসে তেমন নয়। বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়া নতুন লেখকের সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং কী কী বই আসলো পরে সময় হলে সামর্থ্যের মধ্যে সে বইগুলো কেনা এটাও বইমেলায় আগতদের একটা উদ্দেশ্য। একটা সময় দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত দুপাশে স্টল থাকতো সেখানে আবৃত্তির ক্যাসেট বাজতো। নানা কারণে সেটি উঠিয়ে দেয়া হয়, এরপর থেকে কেমন জানি আবৃতি চর্চাটা সীমিত হয়ে গেছে।
এবারের মেলায় প্রথম দিন থেকেই মানুষের ঢল। পরিচিত প্রকাশক লেখকদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়। প্রথম চার পাঁচ দিন মানুষের এই উপস্থিতি দেখে তাদের মধ্যে একটা আশা জাগে। এই যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে হা হুতাশ, কাগজের দাম বৃদ্ধি এবং বইয়ের দাম তুলনামূলক বেশি। ফলে প্রকাশক লেখকদের মধ্যে শঙ্কাটা শুরু থেকেই ছিল। মেলায় লোক আসবে তো? বই বিক্রি হবে তো?
প্রথম পাঁচ দিন লোকসমাগমে তারা আশান্বিত হয়েছে। দুই বছর করোনায় মেলা ছিল সীমিত, অনেকেই ঢুকতে পারেনি। এবার উন্মুক্ত মেলা, লোকও আসছে। যত দিন যায় লোকের চাপ বাড়ছে। সেই সাথে লেখক প্রকাশক ও মেলার আয়োজকদের মধ্যে হতাশা চাপ বাড়তে থাকে। এটা আর বইমেলায় আসা সেই চেতনার মধ্যে নেই। এটা একটা উৎসব স্থল হয়ে গেছে। ছবি তোলা, ফেসবুক লাইভ এবং ইউটিউবারদের কনটেন্ট তৈরি একটা মহাউৎসব।
আরেকটা কথা না বললেই নয়, অনেক কবি লেখক দাঁড়িয়ে থাকেন পরিচিত জন পেলেই নিজের বইটি কেনার জন্য চাপ দেন ক্রমাগত। আমি এর বিস্তারিত লিখব। আজ ছোট্ট করে একটা সামগ্রিক চিত্র দিলাম।
মেলার শেষ শুক্রবার বই মেলায় ছিল প্রচ- ভিড়। মেলা প্রাঙ্গনে ঘুরছে সবাই। চমৎকার একটি স্টল নাম ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্স। প্রকাশনাটির সামনে অনেক ভিড়। ভাবলাম হয়তো বই বিক্রির হিড়িক। কিন্তু গিয়ে দেখি স্টলটি বিশেষ নজর কেড়েছে ছবির জন্য। মেলায় আগতরা দলে দলে স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছে, কেউ সেলফি আবার কেউ কেউ ফেসবুক লাইভ দিচ্ছে। বিকেল তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত ছিলাম। সব স্টলেই একই চিত্র। ৫০-৬০ জনের একটি দল একটি স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে একটি বই নিচ্ছে আর সেটি ধরে সেলফি তুলছে এবং ফোনে ছবি তুলছে। আর ইউটিউবার একজন তাদের বইমেলা সম্পর্কে অনুভূতি নিচ্ছে। তারাও কথা বলে যাচ্ছে। মোটামুটি আমি তাদেরকে ফলো করলাম, এক ঘন্টা পর এই দলটি মেলার মধ্যে থাকা চটপটি ফুচকার দোকানে গিয়ে খেয়ে-দেয়ে একটি বইও না কিনে মেলা প্রাঙ্গণ ত্যাগ করলো।
প্রকাশকদের কাছে জানতে চাইলাম কি অবস্থা এবার তো অনেক লোক এসেছে এবং আপনারা শুরু থেকে বেশ আশান্বিতও ছিলেন। একজন প্রকাশক বললেন, সত্যি আশা জাগার মতো। ভাবলাম প্রথম কিছুদিন বই দেখবে কিংবা আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে মেলায় যতো বেশি লোক আসবে ততো বেশি বিক্রি। তরুণ-তরুণীরা আসলে অন্তত একটা দুইটা বই একে অপরকে উপহারের দেয়ার জন্য হলেও কেনে। এর সঙ্গে আসে বইপোকারা। এই বইপোকারাও তরুণ দল। তরুণরা বই না কিনলে কে কিনবে? কিন্তু আশার গুড়ে বালি। শুধুই সেলফি, ইউটিউব আর হুড়োহুড়ির কা-।
আরেকজন প্রকাশক সাহেব বললেন, দেখেন এরা বইমেলায় এসেছে নাকি কোনো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এসেছে। যাক আমরা তাও খুশি, বইমেলাটাকে উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু করতে পেরেছি। বই বিক্রি না হোক তারা মেলায় এসে ঘুরছে গল্প করছে, এইতো। বইমেলা নিয়ে কোনো চেতনা বলে আর কিছু নেই। আমাদের এ নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রকাশক সাহেব উল্টো আমাকে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা বলেন তো ৫ বছর আগেও মেলায় যারা আসতেন তাদের আচার-আচরণ পোশাক কেমন ছিল। আর এখন দেখেন কারো হাতে কোনো একটি বইয়ের ব্যাগ আছে?
প্রকাশকদের কষ্টটা বুঝতে পারলাম। তাদেরও অনেক দায় আছে সেটি নিয়ে পরে লিখব। আর আয়োজকপক্ষ বাংলা একাডেমির দায় তো অনেক বেশি। বিগত সময়ের মেলার চিত্র চোখে ভেসে উঠলো। মেলায় যারা বই না কিনে দেখতেও আসতেন কিংবা মেলায় ঘুরতে আসতেন তাদের চেহারাগুলো কেন জানি এখনকার মত ছিল না। হয়তো সবকিছু পাল্টেছে আমি আর কতটুকু কত জায়গায় দেখতে পাচ্ছি। একুশের বইমেলা আমার কাছে ছিল একটা জাতীয়তাবোধের স্মরণের আয়োজন। বরাবরই বইমেলায় নানা ধরনের মানুষ আসত, এই আসার মধ্য দিয়ে তারা যে যে পেশার কিংবা যে কাজেরই হোক না কেন শাহবাগ এবং টিএসসির বইমেলার বড় গেট দিয়ে ঢুকলেই অন্যরকম একটা আবহের মধ্যে ঢুকে যেতে হতো।
নানা কারণে সবার তো আর সংস্কৃতি, সাহিত্য, ইতিহাস, ভাষার প্রতি চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি চর্চা সবসময় করা হয়ে ওঠেনা। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারি এবং একে ঘিরে যে বইমেলা সেটি এক ধরনের সামগ্রিক আবহ তৈরি করে। তারপরই আসে মার্চ। বইমেলার সেই চেতনা পুরো মার্চ জুড়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে টিএসসি, শাহবাগ শিল্পকলা এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে যেসব অনুষ্ঠান হয় তার একটা অন্যরকম অনুভূতি থাকে। এবারের বইমেলায় মনে হলো সেলফি আর ইউটিউবময় মেলা চলছে। এবারের মেলায় প্রথম দিন থেকেই মানুষের ঢল। পরিচিত প্রকাশক লেখকদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়। প্রথম চার পাঁচ দিন মানুষ মনে হয় একে অপরকে বলছে, চল মেলায় যাই। ভালো সেলফি হবে। ইউটিউবাররা বলছে বড় জায়গা এবং দোকানগুলো এমন ডেকোরেশন করা আর সব কথা পটু আসবে তো সেই রকম ভিডিও হবে এবং সাথে ইন্টারভিউ খাবে ভালো। আর লেখকরা তো ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য মুখিয়েই আছে।
লেখক: প্রধান প্রতিবেদক, দৈনিক দেশ রূপান্তর।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সেলফি তুলি ইউটিউব করি বই কিনিনা

আপডেট সময় : ০৯:৩৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

উম্মুল ওয়ারা সুইটি : পেশাগত কারণে বিকেল বেলাটা অফিসেই থাকতে হয়। ফলে রিপোর্টিং জীবনের সেই যে বছরটা মেলা কভার করেছি মানে বইমেলার রিপোর্ট করেছি তার বাইরে বইমেলায় সময় দেওয়া হয় খুব কম। যা একটু দেয়া হয় ডে অফের দিন কিংবা অফিস ছুটি নিয়ে।
তারপরও ছাত্রজীবন থেকে লম্বা সময় বইমেলায় দীর্ঘ আড্ডা, বইমেলায় ঘোরাঘুরি এভাবে মেলা সম্পর্কে একটা ধারণা হয়ে গেছে। প্রকাশনীগুলো সম্পর্কেও ধারণা আছে।
৯০’ এর দশক থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মেলায় বই কেনার উৎসাহ উদ্দীপনা দেখেছি। হুমায়ূন আহমেদ মেলায় পাঠক এনেছেন এটা বলতেই হবে। এই তালিকায় যুক্ত আছেন ইমদাদুল হক মিলনসহ অনেক লেখক।
এখনকার মত এত বাহারি উৎসব বছরব্যাপী ছিল না বললেই চলে। এক মাস টানা বইমেলা সারা বছরের কেন্দ্রে ছিল। এখন তো নানা জায়গায় বইমেলা হয়, তখন সেটাও ছিল না। যাই হোক সময় তার গতিতে যাবে। অনেক কিছুর পরিবর্তন আসবে, নতুন নতুন সংস্করণ সংযোজন হবে। তবে বড় বিষয় হলো নীতি আদর্শের কতটা পরিবর্তন হওয়া উচিত? সততা নিষ্ঠা কোনোদিনই কি কোন কিছুর বিকল্প হতে পারে, পারেনা?
যাই হোক। আবারো মেলায় ফিরি। বইমেলায় সবাই সব সময় বই কিনতে আসে তেমন নয়। বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়া নতুন লেখকের সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং কী কী বই আসলো পরে সময় হলে সামর্থ্যের মধ্যে সে বইগুলো কেনা এটাও বইমেলায় আগতদের একটা উদ্দেশ্য। একটা সময় দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত দুপাশে স্টল থাকতো সেখানে আবৃত্তির ক্যাসেট বাজতো। নানা কারণে সেটি উঠিয়ে দেয়া হয়, এরপর থেকে কেমন জানি আবৃতি চর্চাটা সীমিত হয়ে গেছে।
এবারের মেলায় প্রথম দিন থেকেই মানুষের ঢল। পরিচিত প্রকাশক লেখকদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়। প্রথম চার পাঁচ দিন মানুষের এই উপস্থিতি দেখে তাদের মধ্যে একটা আশা জাগে। এই যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে হা হুতাশ, কাগজের দাম বৃদ্ধি এবং বইয়ের দাম তুলনামূলক বেশি। ফলে প্রকাশক লেখকদের মধ্যে শঙ্কাটা শুরু থেকেই ছিল। মেলায় লোক আসবে তো? বই বিক্রি হবে তো?
প্রথম পাঁচ দিন লোকসমাগমে তারা আশান্বিত হয়েছে। দুই বছর করোনায় মেলা ছিল সীমিত, অনেকেই ঢুকতে পারেনি। এবার উন্মুক্ত মেলা, লোকও আসছে। যত দিন যায় লোকের চাপ বাড়ছে। সেই সাথে লেখক প্রকাশক ও মেলার আয়োজকদের মধ্যে হতাশা চাপ বাড়তে থাকে। এটা আর বইমেলায় আসা সেই চেতনার মধ্যে নেই। এটা একটা উৎসব স্থল হয়ে গেছে। ছবি তোলা, ফেসবুক লাইভ এবং ইউটিউবারদের কনটেন্ট তৈরি একটা মহাউৎসব।
আরেকটা কথা না বললেই নয়, অনেক কবি লেখক দাঁড়িয়ে থাকেন পরিচিত জন পেলেই নিজের বইটি কেনার জন্য চাপ দেন ক্রমাগত। আমি এর বিস্তারিত লিখব। আজ ছোট্ট করে একটা সামগ্রিক চিত্র দিলাম।
মেলার শেষ শুক্রবার বই মেলায় ছিল প্রচ- ভিড়। মেলা প্রাঙ্গনে ঘুরছে সবাই। চমৎকার একটি স্টল নাম ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্স। প্রকাশনাটির সামনে অনেক ভিড়। ভাবলাম হয়তো বই বিক্রির হিড়িক। কিন্তু গিয়ে দেখি স্টলটি বিশেষ নজর কেড়েছে ছবির জন্য। মেলায় আগতরা দলে দলে স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছে, কেউ সেলফি আবার কেউ কেউ ফেসবুক লাইভ দিচ্ছে। বিকেল তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত ছিলাম। সব স্টলেই একই চিত্র। ৫০-৬০ জনের একটি দল একটি স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে একটি বই নিচ্ছে আর সেটি ধরে সেলফি তুলছে এবং ফোনে ছবি তুলছে। আর ইউটিউবার একজন তাদের বইমেলা সম্পর্কে অনুভূতি নিচ্ছে। তারাও কথা বলে যাচ্ছে। মোটামুটি আমি তাদেরকে ফলো করলাম, এক ঘন্টা পর এই দলটি মেলার মধ্যে থাকা চটপটি ফুচকার দোকানে গিয়ে খেয়ে-দেয়ে একটি বইও না কিনে মেলা প্রাঙ্গণ ত্যাগ করলো।
প্রকাশকদের কাছে জানতে চাইলাম কি অবস্থা এবার তো অনেক লোক এসেছে এবং আপনারা শুরু থেকে বেশ আশান্বিতও ছিলেন। একজন প্রকাশক বললেন, সত্যি আশা জাগার মতো। ভাবলাম প্রথম কিছুদিন বই দেখবে কিংবা আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে মেলায় যতো বেশি লোক আসবে ততো বেশি বিক্রি। তরুণ-তরুণীরা আসলে অন্তত একটা দুইটা বই একে অপরকে উপহারের দেয়ার জন্য হলেও কেনে। এর সঙ্গে আসে বইপোকারা। এই বইপোকারাও তরুণ দল। তরুণরা বই না কিনলে কে কিনবে? কিন্তু আশার গুড়ে বালি। শুধুই সেলফি, ইউটিউব আর হুড়োহুড়ির কা-।
আরেকজন প্রকাশক সাহেব বললেন, দেখেন এরা বইমেলায় এসেছে নাকি কোনো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এসেছে। যাক আমরা তাও খুশি, বইমেলাটাকে উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু করতে পেরেছি। বই বিক্রি না হোক তারা মেলায় এসে ঘুরছে গল্প করছে, এইতো। বইমেলা নিয়ে কোনো চেতনা বলে আর কিছু নেই। আমাদের এ নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রকাশক সাহেব উল্টো আমাকে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা বলেন তো ৫ বছর আগেও মেলায় যারা আসতেন তাদের আচার-আচরণ পোশাক কেমন ছিল। আর এখন দেখেন কারো হাতে কোনো একটি বইয়ের ব্যাগ আছে?
প্রকাশকদের কষ্টটা বুঝতে পারলাম। তাদেরও অনেক দায় আছে সেটি নিয়ে পরে লিখব। আর আয়োজকপক্ষ বাংলা একাডেমির দায় তো অনেক বেশি। বিগত সময়ের মেলার চিত্র চোখে ভেসে উঠলো। মেলায় যারা বই না কিনে দেখতেও আসতেন কিংবা মেলায় ঘুরতে আসতেন তাদের চেহারাগুলো কেন জানি এখনকার মত ছিল না। হয়তো সবকিছু পাল্টেছে আমি আর কতটুকু কত জায়গায় দেখতে পাচ্ছি। একুশের বইমেলা আমার কাছে ছিল একটা জাতীয়তাবোধের স্মরণের আয়োজন। বরাবরই বইমেলায় নানা ধরনের মানুষ আসত, এই আসার মধ্য দিয়ে তারা যে যে পেশার কিংবা যে কাজেরই হোক না কেন শাহবাগ এবং টিএসসির বইমেলার বড় গেট দিয়ে ঢুকলেই অন্যরকম একটা আবহের মধ্যে ঢুকে যেতে হতো।
নানা কারণে সবার তো আর সংস্কৃতি, সাহিত্য, ইতিহাস, ভাষার প্রতি চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি চর্চা সবসময় করা হয়ে ওঠেনা। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারি এবং একে ঘিরে যে বইমেলা সেটি এক ধরনের সামগ্রিক আবহ তৈরি করে। তারপরই আসে মার্চ। বইমেলার সেই চেতনা পুরো মার্চ জুড়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে টিএসসি, শাহবাগ শিল্পকলা এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে যেসব অনুষ্ঠান হয় তার একটা অন্যরকম অনুভূতি থাকে। এবারের বইমেলায় মনে হলো সেলফি আর ইউটিউবময় মেলা চলছে। এবারের মেলায় প্রথম দিন থেকেই মানুষের ঢল। পরিচিত প্রকাশক লেখকদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়। প্রথম চার পাঁচ দিন মানুষ মনে হয় একে অপরকে বলছে, চল মেলায় যাই। ভালো সেলফি হবে। ইউটিউবাররা বলছে বড় জায়গা এবং দোকানগুলো এমন ডেকোরেশন করা আর সব কথা পটু আসবে তো সেই রকম ভিডিও হবে এবং সাথে ইন্টারভিউ খাবে ভালো। আর লেখকরা তো ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য মুখিয়েই আছে।
লেখক: প্রধান প্রতিবেদক, দৈনিক দেশ রূপান্তর।