ঢাকা ০১:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বন্ধক আমার দ্বারা হবে না: শেখ হাসিনা

  • আপডেট সময় : ০২:০৭:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ জুন ২০২৩
  • ১১৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বএনপি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা বাংলাদেশকে বিদেশিদের কাছে বন্ধক দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায় কি-না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে গতকাল বুধবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখনও যদি বলি যে, না, ওই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেব, তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নাই, আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।”
বিদেশে সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী সব সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ডাকেন। তাতে সফরের একটি লিখিত বিবরণ যেমন থাকে, তেমনি প্রশ্নোত্তরে উঠে আসে সাম্প্রতিক আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা। জানা যায় সরকারের অবস্থান, উঠে আসে তাদের পরিকল্পনা, বিরোধী দলের সম্পর্কে মনোভাব। এই সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন সেন্ট মার্টির দ্বীপ প্রসঙ্গেও।
বাংলাদেশের নির্বাচন ও নানা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নানা বক্তব্য ও পদক্ষেপের পর ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সম্প্রতি জাতীয় সংসদে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চায়। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়। শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে খেলতে দেওয়া হবে না। আমার দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাবে, কাউকে অ্যাটাক করবে বা এ ধরনের কাজ- আমরা হতে দেব না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, আমরা শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাস করি।
“কিছু কিছু তো আছে, আমি আগে বললাম অন্য দেশের তাবেদারি করবে..দেশের মাটি ব্যবহার করে অন্য দেশে আক্রমণ করবে, আমার দেশকে নিয়ে খেলবে, এটাতো আমি অন্তত হতে দিতে পারি না। এটা তো আমি হতে দেব না।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করেন, ২০০১ সালে বিএনপি ‘গ্যাস বিক্রি করার’ মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। তিনি প্রশ্ন রাখেন, “এখন তারা দেশ বিক্রি করবে, নাকি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়?
“আমি তো এটুকু বলতে পারি যে, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের কন্যা। আমার হাত থেকে এদেশের কোনো সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে আমি ক্ষমতায় আসতে চাই না। ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”
বাংলাদেশে নির্বাচন ‘বাধাগ্রস্তকারীদের’ উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা ছয় মার্কিন কংগ্রেস সদস্যের চিঠির বিষয়টি ইঙ্গিত করেও কথা বলেন শেখ হাসিনা। সেই চিঠিতে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা চাপে আছে। তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি, দেশের মানুষকে সচেতন হতে হবে। ঠিক যেভাবে আমাদের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায় প্রতিবাদ করেছে। বলেছে যে, না, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুয়া তথ্য, সেভাবে সকলকে সোচ্চার হতে হবে।” নির্বাচন যত কাছে আসবে, তত বেশি বেশি পরিমাণে এ ধরনের ‘অপপ্রচার’ চালাবে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “মানুষকে তারা বিভ্রান্ত করছে এটা ঠিক। কাজেই আমি দেশবাসীকে বলব এ সমস্ত অপপ্রচারে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না।
“এরা বলতেই থাকবে, যত ইলেকশন সামনে আসবে আরও বেশি বলবে। কিন্তু নিজেদের মনে নিজে প্রশ্ন করতে হবে, আসলে ভালো আছেন কি-না, দেশটা ভালো চলছে কি-না, দেশটা এগোচ্ছে কি-না, দেশটার আরও উন্নতি হবে কি-না।”
সংবাদ সম্মেলনে একজন গণমাধ্যমকর্মী প্রশ্ন রাখেন রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এলেও ‘শান্তির নীতিতে’ চলার কারণে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশ কোনো ‘ঝগড়া’ করেনি। তিনি বলেন, “আমরা সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়- এই নীতিতে বিশ্বাস করি, সেভাবে আমরা মেনে চলব।”
তত্ত্বাবধায়ক নষ্ট করেছে তারাই, আবার কি জরুরি অবস্থা চায়? বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ‘নষ্ট’ করার জন্য এই সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। এখন নির্বাচন তার আলোকেই হবে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো গণতান্ত্রিক ধারাকে ‘নষ্ট করার জন্য’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। বিরোধী দলগুলো ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের ‘ধরপাকড়’ ও জরুরি অবস্থায় ফিরে যেতে চায় কি না, সে প্রশ্নও তিনি রেখেছেন। গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে নির্বাচনকালীন সরকার এবং বিরোধীদের আন্দোলন নিয়ে এভাবেই নিজের অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বিদেশে সফর শেষে সরকারপ্রধান সব সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ডাকেন। তাতে সফরের একটি লিখিত বিবরণ যেমন থাকে, তেমনি প্রশ্নোত্তরে উঠে আসে সাম্প্রতিক আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা। জানা যায় সরকারের অবস্থান, উঠে আসে তাদের পরিকল্পনা, বিরোধী দলের সম্পর্কে মনোভাব। সাংবাদিকদের একটি প্রশ্ন ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির দাবির বিষয়ে। এ সরকার ব্যবস্থা ছাড়া দলটি ভোটে অংশ না নেওয়ার, এমনকি ভোট হতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নির্বাচনকালীন সময়ে আমাদের বিরোধী দল থেকে নানা রকম প্রস্তাব…এখন আবার তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে খালেদা জিয়ারই উক্তি ছিল যে, ‘পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। “একবার যেটা তারাই বাদ দিয়েছে, এই পদ্ধতিটা তারাই নষ্ট করেছে, তারাই কিন্তু এটা রাখেনি, সেটাকে আবার তারা ফেরত চাচ্ছে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আদালতের রায়ের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন আওয়ামী লীগ প্রধান। তিনি বলেন, “উচ্চ আদালতের রায় আছে এবং সেই মোতাবেক আমাদের সংবিধানও সংশোধন করা হয়েছে যে, একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধান আরেকজন নির্বাচিত সরকার প্রধান দ্বারাই প্রতিস্থাপিত হবেন। এর বাইরে অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না।”
বিরোধী দলগুলোকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, “তারা (বিএনপি) কি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চান? অর্থনৈতিক উন্নতি চান? দেশের মানুষের কল্যাণ হোক সেটা চান? “নাকি আবার সেই ২০০৭-এর মত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আবার সেই ইমার্জেন্সি, আবার সেই ধরপাকড় সেইগুলি চায়? এটা তো দেশের মানুষকে বিবেচনা করতে হবে।”
তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে বিতর্ক: আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখেই ১৯৯৬ সালে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজন করে বিএনপি। তখন সিদ্ধান্ত হয়, সবশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান। তিনি রাজি না হলে সব দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে একজন হবেন এই সরকারের প্রধান। আর আলোচনায় কাউকে পাওয়া না গেলে হবেন রাষ্ট্রপতি। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোটে জিতে ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ। সেই মেয়াদ শেষে ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে জিতে বিএনপি-জামায়াত জোট আসে ক্ষমতায়। তবে সেই সরকারের আমলে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বাড়ানো নিয়ে তৈরি হয় রাজনৈতিক বিরোধ। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের। তিনি এককালে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ফলে তাকে মেনে নিতে রাজি ছিল না আওয়ামী লীগ। আন্দোলনের একপর্যায়ে কে এম হাসান জানান, তিনি ওই পদের জন্য আগ্রহী নন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের পদে কে আসবেন, এ নিয়ে বিরোধের মধ্যেই বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেন। তখন ইয়াজউদ্দিনের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট যায় আন্দোলনে। একবার পিছিয়ে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়। একতরফা নির্বাচনের দিকে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন ভোটের ১১ দিন আগে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। ইয়াজউদ্দিন আহমেদ জরুরি অবস্থা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের পদ ছেড়ে দেন। দায়িত্ব নেন ফখরুদ্দীন আহমেদ। সেই সরকার প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভোট দেয়। সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জিতে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সংবিধানের যে সংশোধনীর মাধ্যমে এই সরকারব্যবস্থা চালু হয়েছিল, সেই ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজন রিট আবেদন করেছিলেন। শুনানি নিয়ে ২০০৪ সালে হাই কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের রায় যায় রিট আবেদনকারী পক্ষ। ২০১০ সালের ১১ মে আপিল বিভাগ হাই কোর্টের রায় পাল্টে এই সরকারব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করে। আপিল বিভাগের সেই আদেশের ওপর ভিত্তি করে ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপের পাশাপাশি অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ বিবেচনায় সর্বোচ্চ দ-ের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়। সংবিধানের এই সংশোধনী মেনে না নিয়ে ২০১৪ সালেরর ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে যায় বিএনপি। তবে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তারা অংশ নেয় নির্বাচিত সরকারের অধীনেই। সেই নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে এখন আবার পুরনো দাবিতে ফিরে গেছে দলটি।
সব জেনেও সংবিধানের ধারাবাহিকতা নষ্টের চেষ্টা: প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, উচ্চ আদালতের রায়ের বিষয়টি জেনেও বিএনপির আন্দোলনের উদ্দেশ্যটা হল ‘অসাংবিধানিক সরকার’ আনা। তিনি বলেন, “যেহেতু আমাদের গণতন্ত্রটা ওয়েস্ট মিনস্টার টাইপ অব ডেমোক্রেসি, ঠিক ইংল্যান্ডের মত জায়গায় যেভাবে নির্বাচনটা হয়, ঠিক সেভাবে আমাদের এখানে নির্বাচন হবে। “এটা যেমন উচ্চ আদালতের রায় আছে, আবার আমাদের সংবিধানেও কিন্তু সেটা আছে। তো, যতক্ষণ পর্যন্ত আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান ক্ষমতা না নেবে, সেটা পরিবর্তন হবে না। একজন নির্বাচিতর জায়গায় আরেকজন নির্বাচিতই আসতে হবে। এটাও সকলেই জানে। জানার পরেও, আমি জানি না কেন এই সাংবিধানিক জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে? উদ্দেশ্যটা কী?”
পরে নিজেই প্রশ্নের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, “তার মানে এই গণতান্ত্রিক ধারাটাকে নষ্ট করা। এই যে দীর্ঘ সাড়ে ১৪ বছরের বাংলাদেশটা যে সুষ্ঠুভাবে চলছে, আর্থ সামাজিক উন্নতি করছে সেটাকে নষ্ট করা। তো, দেশবাসী এটা কীভাবে নেয়, সেটাই আমার প্রশ্ন।”
দেশ ছেড়ে পালানো অপরাধীরাই এখন মানবাধিকারের বিরাট প্রবক্তা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা দেশে অপরাধ করেছে, দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, তারা বিদেশে গিয়ে এখন মানবাধিকারের বিরাট প্রবক্তা হয়ে গেছে। কেউ কেউ দুর্নীতির প্রবক্তাও হয়ে গেছে।’ গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংখ্যালঘু নির্যাতন ও তাদের সংখ্যা কমে যাওয়া সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। যার যার ধর্ম সেই সেই পালন করবে, সেই নীতিতে বিশ্বাস করে। ২০০১ সালের পরে সংখ্যালঘুদের ওপর যে অত্যাচার, বীভৎস ঘটনা, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, এমনকি মুসলমানরাও রেহাই পায়নি। একটা পাড়া পর্যন্ত তারা (বিএনপি) জ্বালিয়ে দিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে। মন্দির ভেঙেছে, মসজিদ ভেঙেছে। বিএনপি-জামায়াত এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এখানকার (বাংলাদেশ) বিভিন্ন ধর্মীয় প্রধানরা বিবৃতি দিয়েছেন, চিঠিও দিয়ে বলছেন-তারা ভালো আছেন। আমাদের কাউকে বলতে হয়নি। তারা নিজেরাই বলেছেন যে, চিঠিটি ভুয়া ও মিথ্যা। সবাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখেই চলছে।’ দেশের মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরাই করে দিয়েছি। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নানা ধরনের অপপ্রচার করছে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরা যেভাবে প্রতিবাদ করছেন, বলছেন যে, এটা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
মূল্যস্ফীতিতেও অভাব নেই: নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং এ নিয়ে সরকারের চেষ্টা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “মানুষ দুবেলা পেট ভরে ভাত খাচ্ছে। এত ইনফ্লেশনের মধ্যেও মানুষের খাবারের অভাব তো ওভাবে হচ্ছে না। “হ্যাঁ, একটু চাপে আছে মানুষ, আমি জানি। সেই কষ্টটা আমি বুঝি। বুঝি বলেই আমাদের প্রচেষ্টা আছে, মানুষের দুঃখকষ্ট সহজ করার চেষ্টা করছি।” শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “এই সাড়ে ১৪ বছর আমরা এই অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন, যত রকমের অপপ্রচার-এই সবগুলো মোকাবেলা করেই কিন্তু দেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। “তো, সেটাই মানুষ চাইবে, না আবার সেই সন্ত্রাস যুগে প্রবেশ করবে, ভোট চুরির, ভোট ডাকাতির যুগে প্রবেশ করবে, জনগণের উপর ছেড়ে দিচ্ছি। জনগণের উপর ছেড়ে দিচ্ছি, তারা ঠিক করুক কী করবে।”
‘এক কানে শুনি, আরেক কান খালেদা জিয়া গ্রেনেড দিয়ে দিছে শেষ করে’: ‘মাইকে মাইকে। আমি এক কানে শুনি ভাই, আরেক কান তো খালেদা জিয়া গ্রেনেড হামলা করে দিছে শেষ করে। খুনির দল; সে একটা খুনি, তার স্বামী একটা খুনি, তার একটা ছেলেও খুনি।’
বুধবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিকের কথা স্পষ্ট শুনতে না পেয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে প্রধানমন্ত্রী চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করে বলা হচ্ছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করে; যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে, সেই নীতিতে বিশ্বাস করে। ২০০১-এর পর সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন, যে বীভৎস ঘটনা ঘটেছে, সেদিন তো হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলমান কেউ রেহাই পায়নি। মানুষ হত্যা করেছে, মসজিদ ভেঙেছে, মন্দির ভেঙেছে, কোনটা না করেছে তারা? তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত সে সময় এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ, অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুঁড়া গুঁড়া করেও মানুষ হত্যা করেছে। শুধু তা-ই নয়, সেনাবাহিনীর অফিসারদের চাকরি থেকে বিদায় দিয়ে দেওয়া, কারও সাত-আট বছর হয়েছে, তাদের বিদায় দিয়ে দেওয়া, প্রশাসন থেকে ভালো ভালো অফিসারদের বিদায় দেওয়া, একই দিনে একযোগে ১৩ জনকে ওএসডি করে দেয়। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রথম দিনেই এটা করেছে তারা। এভাবে অত্যাচার করেছে। তিনি বলেন, তারপর রাজনীতি, প্রশাসন সব হাতে নিয়ে, হাওয়া ভবন খুলে একাকার। কারও স্বাধীন ব্যবসা করার সুযোগ ছিল না। কারণ হাওয়া ভবনে দিতে হতো একভাগ, খালেদা জিয়াকে একভাগ, সবাই এভাবে দিতে হতো। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তো এসব নাই।
এক কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত: ঈদুল আজহা উপলক্ষে এক কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গণভবনে করা সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করার পরে চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন সরকারপ্রধান। এ সময় তিনি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন। করোনার সময় প্রণোদনা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় ব্যবসায়ীদের জন্য সব ধরনের প্রণোদনা দিয়েছি। গ্রামের মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেটা দেখেছি। এখন ঈদ উপলক্ষে এক কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় খাবার দেবো, এটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বর্ষাকালে আমাদের মানুষের একটু কষ্ট হয়। সেই সময় যাতে কষ্ট না হয়, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। টিসিবি থেকে আমরা কার্ড দিচ্ছি। এখন আমরা সবাইকে ডিজিটাল কার্ড দিয়ে দেবো। সেই কার্ড দিয়ে যেন তারা টাকা তুলতে পারে। ঈদের কোরবানির গরু বিক্রি করার ক্ষেত্রে প্রতিটি হাটের কাছে ব্যাংকিং সিস্টেম রেখে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর ক্যাশ টাকা নিয়ে ঘুরতে হবে না। টাকা ওখানে তারা জমা দেবে ব্যাংকে, বাড়ি গিয়ে তুলতে পারবে। টাকা চুরি হওয়ার আর কোনও আশঙ্কা থাকবে না। আমরা সেভাবে ডিজিটাল ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। বিদ্যুৎ সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, খুব সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে, ঠান্ডা বাতাস পাওয়া যাচ্ছে। হ্যাঁ, একটু বিদ্যুতের সমস্যা ছিল। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছিলাম। সেই সমস্যাটাও আস্তে আস্তে কেটে যাবে। একটু তো সহনশীল হতে হবে। আজকে ১৭ কোটি মানুষের সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। যেখানে মাত্র ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছিল, সেখানে ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি।
কাঁচা মরিচ শুকিয়ে বর্ষাকালে খাওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্ষাকালে কাঁচা মরিচের ক্ষেতে কেউ মরিচ তুলতে যেতে পারে না। কাঁচা মরিচের দাম বাড়লে সবাই চিৎকার করে। সবাইকে আহ্বান করবো, এখন থেকে কাঁচা মরিচ কিনে রোদে শুকিয়ে রেখে দেন, বর্ষাকালে যখন দাম বাড়বে তখন সেখান থেকে খাওয়া যাবে। একটু পানি লাগলেই তাজা হয়ে যায়, আবার রান্না করে খাওয়া যায়, সহজ বুদ্ধি। বুধবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করার পরে চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত টমেটো হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অতিরিক্ত টমেটো হয়েছে, বললো কী করবো? আমি বলেছি, শুকিয়ে রেখে দেন। সানড্রাই টমেটো তো খুব… বিদেশে ভীষণভাবে চলে। আমরাও সব কিছু করবো। পেঁয়াজেও তাই। যখন উৎপাদন বেড়েছে, তখন পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবো। দেশে উৎপাদিত জিনিসপত্র সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে উৎপাদন হবে, সেটাকে একটু দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণ করার জন্য আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছি। সেভাবেই আমরা চিলিং সিস্টেম বা ফ্রিজার সিস্টেম করবো সব বিভাগীয় শহরে। যাতে অতিরিক্ত উৎপাদিত পণ্যগুলো সংরক্ষণ করতে পারি আপৎকালীন সময়ের জন্য। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বন্যা, কালকে ঝড় হতে পারে। সেই সময় যেন আমাদের বাইরের ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়। আমাদের খাবারদাবার যেন আমরা সংরক্ষণ করতে পারি এবং আপৎকালীন মানুষকে দিতে পারি সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সবাইকে ছাদে বা ঘরের পাশে কাঁচা মরিচ গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সবাই অন্তত নিজের বাড়ির ছাদের ওপরে অথবা ঘরে একটা কাঁচা মরিচ গাছ লাগান। ছাদের ওপরে আমার কাঁচা মরিচ গাছে আজকে দেখলাম খুব সুন্দর ফুল আসছে। বর্ষা আসলে তো কাঁচা মরিচ লাগবে। আমার তো কাঁচা মরিচ কিনতে হবে না, ওখান থেকে ছিঁড়ে খেতে পারবো। এভাবে যদি সবাই করে, তাহলে তো আর কষ্ট থাকে না। আমাদের মাটি খুবই উর্বর। পৃথিবীর অন্য কোথাও, কোনও দেশে এমন মাটি নেই। একটা বীজ ফেললেই তো গাছ হয়।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বন্ধক আমার দ্বারা হবে না: শেখ হাসিনা

আপডেট সময় : ০২:০৭:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ জুন ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : বএনপি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা বাংলাদেশকে বিদেশিদের কাছে বন্ধক দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায় কি-না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে গতকাল বুধবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখনও যদি বলি যে, না, ওই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেব, তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নাই, আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।”
বিদেশে সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী সব সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ডাকেন। তাতে সফরের একটি লিখিত বিবরণ যেমন থাকে, তেমনি প্রশ্নোত্তরে উঠে আসে সাম্প্রতিক আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা। জানা যায় সরকারের অবস্থান, উঠে আসে তাদের পরিকল্পনা, বিরোধী দলের সম্পর্কে মনোভাব। এই সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন সেন্ট মার্টির দ্বীপ প্রসঙ্গেও।
বাংলাদেশের নির্বাচন ও নানা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নানা বক্তব্য ও পদক্ষেপের পর ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সম্প্রতি জাতীয় সংসদে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চায়। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়। শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে খেলতে দেওয়া হবে না। আমার দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাবে, কাউকে অ্যাটাক করবে বা এ ধরনের কাজ- আমরা হতে দেব না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, আমরা শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাস করি।
“কিছু কিছু তো আছে, আমি আগে বললাম অন্য দেশের তাবেদারি করবে..দেশের মাটি ব্যবহার করে অন্য দেশে আক্রমণ করবে, আমার দেশকে নিয়ে খেলবে, এটাতো আমি অন্তত হতে দিতে পারি না। এটা তো আমি হতে দেব না।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করেন, ২০০১ সালে বিএনপি ‘গ্যাস বিক্রি করার’ মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। তিনি প্রশ্ন রাখেন, “এখন তারা দেশ বিক্রি করবে, নাকি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়?
“আমি তো এটুকু বলতে পারি যে, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের কন্যা। আমার হাত থেকে এদেশের কোনো সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে আমি ক্ষমতায় আসতে চাই না। ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”
বাংলাদেশে নির্বাচন ‘বাধাগ্রস্তকারীদের’ উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা ছয় মার্কিন কংগ্রেস সদস্যের চিঠির বিষয়টি ইঙ্গিত করেও কথা বলেন শেখ হাসিনা। সেই চিঠিতে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা চাপে আছে। তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি, দেশের মানুষকে সচেতন হতে হবে। ঠিক যেভাবে আমাদের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায় প্রতিবাদ করেছে। বলেছে যে, না, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুয়া তথ্য, সেভাবে সকলকে সোচ্চার হতে হবে।” নির্বাচন যত কাছে আসবে, তত বেশি বেশি পরিমাণে এ ধরনের ‘অপপ্রচার’ চালাবে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “মানুষকে তারা বিভ্রান্ত করছে এটা ঠিক। কাজেই আমি দেশবাসীকে বলব এ সমস্ত অপপ্রচারে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না।
“এরা বলতেই থাকবে, যত ইলেকশন সামনে আসবে আরও বেশি বলবে। কিন্তু নিজেদের মনে নিজে প্রশ্ন করতে হবে, আসলে ভালো আছেন কি-না, দেশটা ভালো চলছে কি-না, দেশটা এগোচ্ছে কি-না, দেশটার আরও উন্নতি হবে কি-না।”
সংবাদ সম্মেলনে একজন গণমাধ্যমকর্মী প্রশ্ন রাখেন রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এলেও ‘শান্তির নীতিতে’ চলার কারণে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশ কোনো ‘ঝগড়া’ করেনি। তিনি বলেন, “আমরা সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়- এই নীতিতে বিশ্বাস করি, সেভাবে আমরা মেনে চলব।”
তত্ত্বাবধায়ক নষ্ট করেছে তারাই, আবার কি জরুরি অবস্থা চায়? বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ‘নষ্ট’ করার জন্য এই সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। এখন নির্বাচন তার আলোকেই হবে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো গণতান্ত্রিক ধারাকে ‘নষ্ট করার জন্য’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। বিরোধী দলগুলো ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের ‘ধরপাকড়’ ও জরুরি অবস্থায় ফিরে যেতে চায় কি না, সে প্রশ্নও তিনি রেখেছেন। গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে নির্বাচনকালীন সরকার এবং বিরোধীদের আন্দোলন নিয়ে এভাবেই নিজের অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বিদেশে সফর শেষে সরকারপ্রধান সব সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ডাকেন। তাতে সফরের একটি লিখিত বিবরণ যেমন থাকে, তেমনি প্রশ্নোত্তরে উঠে আসে সাম্প্রতিক আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা। জানা যায় সরকারের অবস্থান, উঠে আসে তাদের পরিকল্পনা, বিরোধী দলের সম্পর্কে মনোভাব। সাংবাদিকদের একটি প্রশ্ন ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির দাবির বিষয়ে। এ সরকার ব্যবস্থা ছাড়া দলটি ভোটে অংশ না নেওয়ার, এমনকি ভোট হতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নির্বাচনকালীন সময়ে আমাদের বিরোধী দল থেকে নানা রকম প্রস্তাব…এখন আবার তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে খালেদা জিয়ারই উক্তি ছিল যে, ‘পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। “একবার যেটা তারাই বাদ দিয়েছে, এই পদ্ধতিটা তারাই নষ্ট করেছে, তারাই কিন্তু এটা রাখেনি, সেটাকে আবার তারা ফেরত চাচ্ছে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আদালতের রায়ের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন আওয়ামী লীগ প্রধান। তিনি বলেন, “উচ্চ আদালতের রায় আছে এবং সেই মোতাবেক আমাদের সংবিধানও সংশোধন করা হয়েছে যে, একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধান আরেকজন নির্বাচিত সরকার প্রধান দ্বারাই প্রতিস্থাপিত হবেন। এর বাইরে অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না।”
বিরোধী দলগুলোকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, “তারা (বিএনপি) কি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চান? অর্থনৈতিক উন্নতি চান? দেশের মানুষের কল্যাণ হোক সেটা চান? “নাকি আবার সেই ২০০৭-এর মত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আবার সেই ইমার্জেন্সি, আবার সেই ধরপাকড় সেইগুলি চায়? এটা তো দেশের মানুষকে বিবেচনা করতে হবে।”
তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে বিতর্ক: আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখেই ১৯৯৬ সালে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজন করে বিএনপি। তখন সিদ্ধান্ত হয়, সবশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান। তিনি রাজি না হলে সব দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে একজন হবেন এই সরকারের প্রধান। আর আলোচনায় কাউকে পাওয়া না গেলে হবেন রাষ্ট্রপতি। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোটে জিতে ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ। সেই মেয়াদ শেষে ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে জিতে বিএনপি-জামায়াত জোট আসে ক্ষমতায়। তবে সেই সরকারের আমলে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বাড়ানো নিয়ে তৈরি হয় রাজনৈতিক বিরোধ। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের। তিনি এককালে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ফলে তাকে মেনে নিতে রাজি ছিল না আওয়ামী লীগ। আন্দোলনের একপর্যায়ে কে এম হাসান জানান, তিনি ওই পদের জন্য আগ্রহী নন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের পদে কে আসবেন, এ নিয়ে বিরোধের মধ্যেই বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেন। তখন ইয়াজউদ্দিনের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট যায় আন্দোলনে। একবার পিছিয়ে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়। একতরফা নির্বাচনের দিকে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন ভোটের ১১ দিন আগে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। ইয়াজউদ্দিন আহমেদ জরুরি অবস্থা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের পদ ছেড়ে দেন। দায়িত্ব নেন ফখরুদ্দীন আহমেদ। সেই সরকার প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভোট দেয়। সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জিতে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সংবিধানের যে সংশোধনীর মাধ্যমে এই সরকারব্যবস্থা চালু হয়েছিল, সেই ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজন রিট আবেদন করেছিলেন। শুনানি নিয়ে ২০০৪ সালে হাই কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের রায় যায় রিট আবেদনকারী পক্ষ। ২০১০ সালের ১১ মে আপিল বিভাগ হাই কোর্টের রায় পাল্টে এই সরকারব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করে। আপিল বিভাগের সেই আদেশের ওপর ভিত্তি করে ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপের পাশাপাশি অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ বিবেচনায় সর্বোচ্চ দ-ের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়। সংবিধানের এই সংশোধনী মেনে না নিয়ে ২০১৪ সালেরর ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে যায় বিএনপি। তবে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তারা অংশ নেয় নির্বাচিত সরকারের অধীনেই। সেই নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে এখন আবার পুরনো দাবিতে ফিরে গেছে দলটি।
সব জেনেও সংবিধানের ধারাবাহিকতা নষ্টের চেষ্টা: প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, উচ্চ আদালতের রায়ের বিষয়টি জেনেও বিএনপির আন্দোলনের উদ্দেশ্যটা হল ‘অসাংবিধানিক সরকার’ আনা। তিনি বলেন, “যেহেতু আমাদের গণতন্ত্রটা ওয়েস্ট মিনস্টার টাইপ অব ডেমোক্রেসি, ঠিক ইংল্যান্ডের মত জায়গায় যেভাবে নির্বাচনটা হয়, ঠিক সেভাবে আমাদের এখানে নির্বাচন হবে। “এটা যেমন উচ্চ আদালতের রায় আছে, আবার আমাদের সংবিধানেও কিন্তু সেটা আছে। তো, যতক্ষণ পর্যন্ত আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান ক্ষমতা না নেবে, সেটা পরিবর্তন হবে না। একজন নির্বাচিতর জায়গায় আরেকজন নির্বাচিতই আসতে হবে। এটাও সকলেই জানে। জানার পরেও, আমি জানি না কেন এই সাংবিধানিক জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে? উদ্দেশ্যটা কী?”
পরে নিজেই প্রশ্নের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, “তার মানে এই গণতান্ত্রিক ধারাটাকে নষ্ট করা। এই যে দীর্ঘ সাড়ে ১৪ বছরের বাংলাদেশটা যে সুষ্ঠুভাবে চলছে, আর্থ সামাজিক উন্নতি করছে সেটাকে নষ্ট করা। তো, দেশবাসী এটা কীভাবে নেয়, সেটাই আমার প্রশ্ন।”
দেশ ছেড়ে পালানো অপরাধীরাই এখন মানবাধিকারের বিরাট প্রবক্তা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা দেশে অপরাধ করেছে, দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, তারা বিদেশে গিয়ে এখন মানবাধিকারের বিরাট প্রবক্তা হয়ে গেছে। কেউ কেউ দুর্নীতির প্রবক্তাও হয়ে গেছে।’ গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংখ্যালঘু নির্যাতন ও তাদের সংখ্যা কমে যাওয়া সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। যার যার ধর্ম সেই সেই পালন করবে, সেই নীতিতে বিশ্বাস করে। ২০০১ সালের পরে সংখ্যালঘুদের ওপর যে অত্যাচার, বীভৎস ঘটনা, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, এমনকি মুসলমানরাও রেহাই পায়নি। একটা পাড়া পর্যন্ত তারা (বিএনপি) জ্বালিয়ে দিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে। মন্দির ভেঙেছে, মসজিদ ভেঙেছে। বিএনপি-জামায়াত এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এখানকার (বাংলাদেশ) বিভিন্ন ধর্মীয় প্রধানরা বিবৃতি দিয়েছেন, চিঠিও দিয়ে বলছেন-তারা ভালো আছেন। আমাদের কাউকে বলতে হয়নি। তারা নিজেরাই বলেছেন যে, চিঠিটি ভুয়া ও মিথ্যা। সবাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখেই চলছে।’ দেশের মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরাই করে দিয়েছি। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নানা ধরনের অপপ্রচার করছে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরা যেভাবে প্রতিবাদ করছেন, বলছেন যে, এটা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
মূল্যস্ফীতিতেও অভাব নেই: নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং এ নিয়ে সরকারের চেষ্টা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “মানুষ দুবেলা পেট ভরে ভাত খাচ্ছে। এত ইনফ্লেশনের মধ্যেও মানুষের খাবারের অভাব তো ওভাবে হচ্ছে না। “হ্যাঁ, একটু চাপে আছে মানুষ, আমি জানি। সেই কষ্টটা আমি বুঝি। বুঝি বলেই আমাদের প্রচেষ্টা আছে, মানুষের দুঃখকষ্ট সহজ করার চেষ্টা করছি।” শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “এই সাড়ে ১৪ বছর আমরা এই অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন, যত রকমের অপপ্রচার-এই সবগুলো মোকাবেলা করেই কিন্তু দেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। “তো, সেটাই মানুষ চাইবে, না আবার সেই সন্ত্রাস যুগে প্রবেশ করবে, ভোট চুরির, ভোট ডাকাতির যুগে প্রবেশ করবে, জনগণের উপর ছেড়ে দিচ্ছি। জনগণের উপর ছেড়ে দিচ্ছি, তারা ঠিক করুক কী করবে।”
‘এক কানে শুনি, আরেক কান খালেদা জিয়া গ্রেনেড দিয়ে দিছে শেষ করে’: ‘মাইকে মাইকে। আমি এক কানে শুনি ভাই, আরেক কান তো খালেদা জিয়া গ্রেনেড হামলা করে দিছে শেষ করে। খুনির দল; সে একটা খুনি, তার স্বামী একটা খুনি, তার একটা ছেলেও খুনি।’
বুধবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিকের কথা স্পষ্ট শুনতে না পেয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে প্রধানমন্ত্রী চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করে বলা হচ্ছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করে; যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে, সেই নীতিতে বিশ্বাস করে। ২০০১-এর পর সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন, যে বীভৎস ঘটনা ঘটেছে, সেদিন তো হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলমান কেউ রেহাই পায়নি। মানুষ হত্যা করেছে, মসজিদ ভেঙেছে, মন্দির ভেঙেছে, কোনটা না করেছে তারা? তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত সে সময় এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ, অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুঁড়া গুঁড়া করেও মানুষ হত্যা করেছে। শুধু তা-ই নয়, সেনাবাহিনীর অফিসারদের চাকরি থেকে বিদায় দিয়ে দেওয়া, কারও সাত-আট বছর হয়েছে, তাদের বিদায় দিয়ে দেওয়া, প্রশাসন থেকে ভালো ভালো অফিসারদের বিদায় দেওয়া, একই দিনে একযোগে ১৩ জনকে ওএসডি করে দেয়। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রথম দিনেই এটা করেছে তারা। এভাবে অত্যাচার করেছে। তিনি বলেন, তারপর রাজনীতি, প্রশাসন সব হাতে নিয়ে, হাওয়া ভবন খুলে একাকার। কারও স্বাধীন ব্যবসা করার সুযোগ ছিল না। কারণ হাওয়া ভবনে দিতে হতো একভাগ, খালেদা জিয়াকে একভাগ, সবাই এভাবে দিতে হতো। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তো এসব নাই।
এক কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত: ঈদুল আজহা উপলক্ষে এক কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গণভবনে করা সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করার পরে চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন সরকারপ্রধান। এ সময় তিনি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন। করোনার সময় প্রণোদনা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় ব্যবসায়ীদের জন্য সব ধরনের প্রণোদনা দিয়েছি। গ্রামের মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেটা দেখেছি। এখন ঈদ উপলক্ষে এক কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় খাবার দেবো, এটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বর্ষাকালে আমাদের মানুষের একটু কষ্ট হয়। সেই সময় যাতে কষ্ট না হয়, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। টিসিবি থেকে আমরা কার্ড দিচ্ছি। এখন আমরা সবাইকে ডিজিটাল কার্ড দিয়ে দেবো। সেই কার্ড দিয়ে যেন তারা টাকা তুলতে পারে। ঈদের কোরবানির গরু বিক্রি করার ক্ষেত্রে প্রতিটি হাটের কাছে ব্যাংকিং সিস্টেম রেখে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর ক্যাশ টাকা নিয়ে ঘুরতে হবে না। টাকা ওখানে তারা জমা দেবে ব্যাংকে, বাড়ি গিয়ে তুলতে পারবে। টাকা চুরি হওয়ার আর কোনও আশঙ্কা থাকবে না। আমরা সেভাবে ডিজিটাল ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। বিদ্যুৎ সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, খুব সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে, ঠান্ডা বাতাস পাওয়া যাচ্ছে। হ্যাঁ, একটু বিদ্যুতের সমস্যা ছিল। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছিলাম। সেই সমস্যাটাও আস্তে আস্তে কেটে যাবে। একটু তো সহনশীল হতে হবে। আজকে ১৭ কোটি মানুষের সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। যেখানে মাত্র ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছিল, সেখানে ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি।
কাঁচা মরিচ শুকিয়ে বর্ষাকালে খাওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্ষাকালে কাঁচা মরিচের ক্ষেতে কেউ মরিচ তুলতে যেতে পারে না। কাঁচা মরিচের দাম বাড়লে সবাই চিৎকার করে। সবাইকে আহ্বান করবো, এখন থেকে কাঁচা মরিচ কিনে রোদে শুকিয়ে রেখে দেন, বর্ষাকালে যখন দাম বাড়বে তখন সেখান থেকে খাওয়া যাবে। একটু পানি লাগলেই তাজা হয়ে যায়, আবার রান্না করে খাওয়া যায়, সহজ বুদ্ধি। বুধবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করার পরে চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত টমেটো হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অতিরিক্ত টমেটো হয়েছে, বললো কী করবো? আমি বলেছি, শুকিয়ে রেখে দেন। সানড্রাই টমেটো তো খুব… বিদেশে ভীষণভাবে চলে। আমরাও সব কিছু করবো। পেঁয়াজেও তাই। যখন উৎপাদন বেড়েছে, তখন পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবো। দেশে উৎপাদিত জিনিসপত্র সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে উৎপাদন হবে, সেটাকে একটু দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণ করার জন্য আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছি। সেভাবেই আমরা চিলিং সিস্টেম বা ফ্রিজার সিস্টেম করবো সব বিভাগীয় শহরে। যাতে অতিরিক্ত উৎপাদিত পণ্যগুলো সংরক্ষণ করতে পারি আপৎকালীন সময়ের জন্য। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বন্যা, কালকে ঝড় হতে পারে। সেই সময় যেন আমাদের বাইরের ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়। আমাদের খাবারদাবার যেন আমরা সংরক্ষণ করতে পারি এবং আপৎকালীন মানুষকে দিতে পারি সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সবাইকে ছাদে বা ঘরের পাশে কাঁচা মরিচ গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সবাই অন্তত নিজের বাড়ির ছাদের ওপরে অথবা ঘরে একটা কাঁচা মরিচ গাছ লাগান। ছাদের ওপরে আমার কাঁচা মরিচ গাছে আজকে দেখলাম খুব সুন্দর ফুল আসছে। বর্ষা আসলে তো কাঁচা মরিচ লাগবে। আমার তো কাঁচা মরিচ কিনতে হবে না, ওখান থেকে ছিঁড়ে খেতে পারবো। এভাবে যদি সবাই করে, তাহলে তো আর কষ্ট থাকে না। আমাদের মাটি খুবই উর্বর। পৃথিবীর অন্য কোথাও, কোনও দেশে এমন মাটি নেই। একটা বীজ ফেললেই তো গাছ হয়।