নিজস্ব প্রতিবেদক: ৫ আগস্ট ২০২৪। বেলা সাড়ে ১১টা। রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় জড়ো হচ্ছিলেন হাজারও ছাত্র-জনতা। মোড়ের উল্টো দিকে ছিল বহু পুলিশ। আর পুলিশের পোশাক পরা কেউ কেউ হিন্দি ভাষায় কথা বলছিলেন। তাদের কথা শোনেন শহীদ আহম্মেদ নামে একজন। সাক্ষী হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সেই বর্ণনা তুলে ধরেছেন তিনি।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পাঁচ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন শহীদ। তিনি সম্পর্কে শহীদ মো. ইয়াকুবের চাচা।
বুধবার (১৩ আগস্ট) তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
জবানবন্দিতে ৪০ বছর বয়সী শহীদ আহম্মেদ বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে আমি, আমার ভাতিজা ইয়াকুব, আমার ছেলে সালমান, এলাকার রাসেল, সুমন, সোহেলসহ আরো অনেকে গণভবনের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। সাড়ে ১১টায় চানখারপুল এলাকায় পৌঁছালে দেখি হাজার হাজার লোক চারদিক থেকে জড়ো হচ্ছিলেন। তখন চানখারপুল মোড়ের উল্টো পাশে অনেক পুলিশ ও ছাপা পোশাকধারী পুলিশ ছিল। ওই সময় পুলিশের পোশাক পরিহিত লোকদের হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শুনি। এমনকি তারা আমাদের বাধা দিচ্ছিল। একইসঙ্গে আমাদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তিনি বলেন, ফাঁকা গুলি ছুড়তেই আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। আবার আমরা সামনে যাওয়ার চেষ্টা করি। তখন আমাদের লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি চালায় পুলিশ। এতে আমার পাশের একজনের পায়ে গুলি লাগে। তাকে আমি সরাচ্ছিলাম। ঠিক তখনই একজন বলে ওঠেন ‘আপনার ভাতিজা ইয়াকুবের গায়ে গুলি লেগেছে।’ আমি ওই ছেলেকে আরেকজনের কাছে রেখে ভাতিজার কাছে যাই। পরে আরো দুজনসহ ভাতিজাকে অটোরিকশায় করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাই।
হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা বলেন, ‘ইয়াকুব মারা গেছে। আমি আমার ছেলে সালমানকে ফোন করে ইয়াকুবের মাকে জানানোর জন্য বলি। তাকেও হাসপাতালে আসতে বলা হয়।’
সাক্ষী শহীদ আহম্মেদ বলেন, ইয়াকুবকে কারা গুলি করেছে তা পরে জেনেছি। গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। ডিএমপির মো. ইমরুল, ইন্সপেক্টর আরশাদের উপস্থিতিতে কনস্টেবল সুজন, নাসিরুল ও ইমাজ গুলি করেছিলেন। আরো অনেকেই ছিলেন। আমি আসামিদের বিচার চাই।