চাঁদপুর সংবাদদাতা : টানা বর্ষণে চাঁদপুরের মতলব উত্তরের মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও চাঁদপুর সেচ প্রকল্পে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ফসল তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। বিশেষ করে আমন বীজতলাগুলো এখন পানির নীচে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা হলে এই ক্ষতি আরও বাড়বে বলে জানান কৃষকরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্পের মধ্যে মেঘনা ধনাগোদা ও চাঁদপুর সেচ প্রকল্প অন্যতম। দুটি সেচ প্রকল্পের মধ্যে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের আওতায় ২২ হাজার হেক্টর জমি আবাদযোগ্য এবং মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে আবাদযোগ্য জমি ১৪ দশমিক ১ হেক্টর। সেচ প্রকল্প এলাকায় বছর জুড়ে বোরো, আউশ ও আমন আবাদ হয়। চলতি সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে আমন রোপণ। তবে জলাবদ্ধতার কারণে অনেক জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। বীজ তলা কয়েক ফুট পানির নীচে থাকায় এগুলো তুলতে পারছে না কৃষকরা। ফলে অনেকটা হতাশার মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার কৃষক। মতলব উত্তর উপজেলার ইসলামাবাদ গ্রামের কৃষক লিয়াকত আলী ও অলি উল্লাহ জানান, আমাদের এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য দুইটি খাল রয়েছে। ওই দুইটি খালই দখল হয়ে আছে। আমাদের ইউপি চেয়ারম্যান সাজেদুল হাসান বাবু (বাতেন) পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপ লাইন করে দিয়েছে, তাও একটি এখন বন্ধ রয়েছে। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই। লতরদি গ্রামের কৃষক সুলতান মোল্লা জানান, আমাদের এলাকার রোপা ফসল, মৎস্য খামার ও বসতঘরসহ বহু স্থাপনা তলিয়ে গেছে। এছাড়াও ভারি বর্ষণে উপজেলার ইসলামাবাদ, দুর্গাপুর, লতরদি, এখলাছপুর, ফতেপুর, লুধুয়াসহ একাধিক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে বহু মানুষ। তবে মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সরকার মোঃ আলাউদ্দিন জানান, ভারি বর্ষণ হওয়ায় তিনটি পাম্প চালানো হয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুত জলাবদ্ধতা কেটে যাবে। মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সালাউদ্দিন বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে কিছু সংখ্যক ফসল ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। সেচ কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য আমরা অনুরোধ করেছি। এদিকে, চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকার সদর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় আউশ ধান কাটতে গিয়ে বিপাকে কৃষকরা। অনেকেই ধান কেটে জমিতেই রেখে দিয়েছেন। পাকা ধান এখন পানির নিচে। আবার অনেক কৃষক আমন রোপণ করতে পারছেন না জলাবদ্ধতার কারণে। বীজতলা পানির নীচে। আখ, মৌসুমী সবজিসহ অনেক ফসলেরই ক্ষতি হয়েছে এই প্রকল্প এলাকায়। সদর উপজেলার বাগাদী, বালিয়া, ইব্রাহীমপুর, চান্দ্রা, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের কৃষকরা তাদের আমন বীজতলা থেকে বীজ উঠাতে না পারায় রোপণ করতে পারছে না। আবার যারা চলতি সপ্তাহে রোপণ করেছেন তাদেরগুলো কয়েক ফুট পানির নীচে রয়েছে। একই অবস্থা ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব, বালিথুবা পশ্চিম, গোবিন্দপুরসহ আশাপাশের ইউনিয়নের। এসব ইউনিয়নে বৃষ্টির পানিতে অধিকাংশ আখের জমিগুলো ক্ষতির সম্মুখীন। তবে আগামী ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে আমন রোপণ করার শেষ সময়। এই সময়ের মধ্যেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। বালিয়া এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের এই দুর্ভোগের অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনও আসছে না। দ্রুত জলাবদ্ধতা দূর করতে না পারলে এ বছর আমন রোপণে ব্যাপক সমস্যা হবে। চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের উপসহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সিয়াম আলী বলেন, আমরা পুরো সেচ প্রকল্প এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি। কৃষকদের অভিযোগ আছে, আমাদের লোকজন খোঁজ খবর রাখে না। মূলত আমাদের লোকবল অনেক সংকট আছে। যে পরিমাণ লোক আছে তাতে কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যার কারণে মাঠ পর্যায়ে যেতে পারছে না। এছাড়াও যারা যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে এলাকার কৃষকের সমন্বয়ের অভাব দেখা দিয়েছে।